মহিউদ্দিন খান মোহন

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির জন্মকথা বলেছেন, তা যেন প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক কুটিরে নবজাত এক শিশু সুতীব্র চিৎকারে এই আলো-বাতাসের পৃথিবীতে তার আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল। সেদিন ওই শিশুর চিৎকারের ভাষা সেখানে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারেনি। শিশুটি যেন সুকান্তের সেই শিশুর মতো তীব্র চিৎকারে সব অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ব্যক্ত করেছিল। সেদিন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, ওই শিশুটি একদিন বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হবে?
মানুষ একসময় যা কল্পনা করতে পারে না, অনেক সময় সেটাই পরিণত হয় রূঢ় বাস্তবে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন এ দেশ ও জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। জন্মের সময় তিনি যে ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে। তিনি অধিকারহারা বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজস্ব স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশ নামের যে জাতি-রাষ্ট্র আজ প্রতিষ্ঠিত, এর মূল স্থপতি তিনি। এ জন্য তাঁকে পাকিস্তানি শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে জীবনের প্রায় তেরো বছর কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনেক দেশবরেণ্য নেতার অবদান রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পাকিস্তানের পূর্বাংশ হিসেবে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তা পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না। প্রভু বদল হয়েছিল মাত্র। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক-শোষকচক্র পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে ওরা কায়েম করেছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। সেই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রাতঃস্মরণীয় যে কজন নেতা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অনন্য। তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক নেতাই পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভূমিকার জন্য তিনি তাঁদের সবাইকে টপকে গেছেন। সময়ের বরপুত্র ছিলেন তিনি। সময় তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ নামের জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি হয়েছেন ইতিহাসের কিংবদন্তি।
একটি জাতির ইতিহাস বিনির্মাণের বাঁকে বাঁকে একেকজন মহান নেতার অবদান থাকে। তাঁরা একেক পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁরা একেক পর্যায়ে এই ভূখণ্ডের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা সরাসরি বলেছেন দুজন। এক. মওলানা ভাসানী, দুই. শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, ১৯৭১-এ এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে তা পূর্ণতা লাভ করে।
আজকাল কাউকে কাউকে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কুটতর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এসব তর্কে জাতীয় অনেক বরেণ্য নেতাকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস লক্ষণীয়। কেউ কেউ নিজ দলীয় নেতাকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে অপরাপর নেতাদের অপাঙ্ক্তেয় করে রাখতে চান। এটা তাঁরা করেন দলীয় সংকীর্ণতা এবং ইতিহাসকে কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধি থেকে। তারা হয়তো বিস্মৃত হন যে ইতিহাসে কাউকে কলমের খোঁচায় নায়ক বা ভিলেন বানানো যায় না। যার যার ভূমিকাই তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখে। সেখানে চাইলেই কাউকে স্থানচ্যুত করা সম্ভব নয়। জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে গেলে যার যতটুকু ভূমিকা, যতটুকু অবদান তা স্বীকার করতেই হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে ‘শেখ মুজিব’ ছাড়া তা কখনোই পূর্ণতা পাবে না।
তাই বলে কি বঙ্গবন্ধু সমালোচনার ঊর্ধ্বে? অবশ্যই নয়। কারণ তিনি তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ ছিলেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ভুল করা। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো কখনো কখনো ভুল করেছেন। তাঁর অবর্তমানে আমরা সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতেই পারি। তা থেকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক এবং সশ্রদ্ধ চিত্তে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানতেন এবং তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন তাঁর শিক্ষকের কাছে। প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান (সম্পাদক শফিক রেহমানের বাবা) ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি শিক্ষক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী, প্রায়ই গাড়ি পাঠিয়ে প্রিয় শিক্ষককে তিনি গণভবনে নিয়ে যেতেন। শিক্ষাগুরুর সঙ্গে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ চাইতেন। সাইদুর রহমান তাঁর ‘শতাব্দীর স্মৃতি’ গ্রন্থে সেসবের অনেক বিবরণ তুলে ধরেছেন। একদিন ছাত্র শেখ মুজিব শিক্ষক সাইদুর রহমানের কাছে ভালোভাবে দেশ পরিচালনার জন্য ১০০ জন ভালোমানুষের একটি তালিকা চাইলেন। উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু শিক্ষক সেই তালিকা তাঁর প্রিয় ছাত্রকে দিতে পারেননি। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যাসহ নানা কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। এমনিই সময়ে একদিন ছাত্র তাঁর শিক্ষককে ডেকে নিলেন গণভবনে। দেশের সমস্যা ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্র তাঁর প্রিয় শিক্ষককে অনুযোগসহকারে বললেন, ‘স্যার, মনে আছে একবার আপনার কাছে এক শটি ভালো মানুষের তালিকা চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে ভালো মানুষের তালিকাটা কিন্তু আজও দিতে পারেননি।’ এরপর সাইদুর রহমান স্বগতোক্তি করেছেন, ‘সত্যিই সেদিন মুজিবের কথায় আমিও স্বীকার করেছিলাম, দেশে ভালো মানুষের বড় অভাব।’ (পৃষ্ঠা: ৮৫)
ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে এ দেশকে মুক্ত করার ছাড়পত্র হাতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তও করেছিলেন। কিন্তু মধ্য আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাঁর গতিপথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। ফলে তিনি তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। কেন পারেননি, তার কিছুটা বিধৃত হয়েছে প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমানের লেখায়। তারপরও এ দেশের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির জন্মকথা বলেছেন, তা যেন প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক কুটিরে নবজাত এক শিশু সুতীব্র চিৎকারে এই আলো-বাতাসের পৃথিবীতে তার আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল। সেদিন ওই শিশুর চিৎকারের ভাষা সেখানে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারেনি। শিশুটি যেন সুকান্তের সেই শিশুর মতো তীব্র চিৎকারে সব অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ব্যক্ত করেছিল। সেদিন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, ওই শিশুটি একদিন বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হবে?
মানুষ একসময় যা কল্পনা করতে পারে না, অনেক সময় সেটাই পরিণত হয় রূঢ় বাস্তবে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন এ দেশ ও জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। জন্মের সময় তিনি যে ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে। তিনি অধিকারহারা বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজস্ব স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশ নামের যে জাতি-রাষ্ট্র আজ প্রতিষ্ঠিত, এর মূল স্থপতি তিনি। এ জন্য তাঁকে পাকিস্তানি শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে জীবনের প্রায় তেরো বছর কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনেক দেশবরেণ্য নেতার অবদান রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পাকিস্তানের পূর্বাংশ হিসেবে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তা পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না। প্রভু বদল হয়েছিল মাত্র। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক-শোষকচক্র পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে ওরা কায়েম করেছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। সেই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রাতঃস্মরণীয় যে কজন নেতা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অনন্য। তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক নেতাই পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভূমিকার জন্য তিনি তাঁদের সবাইকে টপকে গেছেন। সময়ের বরপুত্র ছিলেন তিনি। সময় তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ নামের জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি হয়েছেন ইতিহাসের কিংবদন্তি।
একটি জাতির ইতিহাস বিনির্মাণের বাঁকে বাঁকে একেকজন মহান নেতার অবদান থাকে। তাঁরা একেক পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁরা একেক পর্যায়ে এই ভূখণ্ডের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা সরাসরি বলেছেন দুজন। এক. মওলানা ভাসানী, দুই. শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, ১৯৭১-এ এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে তা পূর্ণতা লাভ করে।
আজকাল কাউকে কাউকে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কুটতর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এসব তর্কে জাতীয় অনেক বরেণ্য নেতাকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস লক্ষণীয়। কেউ কেউ নিজ দলীয় নেতাকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে অপরাপর নেতাদের অপাঙ্ক্তেয় করে রাখতে চান। এটা তাঁরা করেন দলীয় সংকীর্ণতা এবং ইতিহাসকে কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধি থেকে। তারা হয়তো বিস্মৃত হন যে ইতিহাসে কাউকে কলমের খোঁচায় নায়ক বা ভিলেন বানানো যায় না। যার যার ভূমিকাই তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখে। সেখানে চাইলেই কাউকে স্থানচ্যুত করা সম্ভব নয়। জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে গেলে যার যতটুকু ভূমিকা, যতটুকু অবদান তা স্বীকার করতেই হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে ‘শেখ মুজিব’ ছাড়া তা কখনোই পূর্ণতা পাবে না।
তাই বলে কি বঙ্গবন্ধু সমালোচনার ঊর্ধ্বে? অবশ্যই নয়। কারণ তিনি তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ ছিলেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ভুল করা। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো কখনো কখনো ভুল করেছেন। তাঁর অবর্তমানে আমরা সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতেই পারি। তা থেকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক এবং সশ্রদ্ধ চিত্তে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানতেন এবং তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন তাঁর শিক্ষকের কাছে। প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান (সম্পাদক শফিক রেহমানের বাবা) ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি শিক্ষক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী, প্রায়ই গাড়ি পাঠিয়ে প্রিয় শিক্ষককে তিনি গণভবনে নিয়ে যেতেন। শিক্ষাগুরুর সঙ্গে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ চাইতেন। সাইদুর রহমান তাঁর ‘শতাব্দীর স্মৃতি’ গ্রন্থে সেসবের অনেক বিবরণ তুলে ধরেছেন। একদিন ছাত্র শেখ মুজিব শিক্ষক সাইদুর রহমানের কাছে ভালোভাবে দেশ পরিচালনার জন্য ১০০ জন ভালোমানুষের একটি তালিকা চাইলেন। উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু শিক্ষক সেই তালিকা তাঁর প্রিয় ছাত্রকে দিতে পারেননি। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যাসহ নানা কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। এমনিই সময়ে একদিন ছাত্র তাঁর শিক্ষককে ডেকে নিলেন গণভবনে। দেশের সমস্যা ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্র তাঁর প্রিয় শিক্ষককে অনুযোগসহকারে বললেন, ‘স্যার, মনে আছে একবার আপনার কাছে এক শটি ভালো মানুষের তালিকা চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে ভালো মানুষের তালিকাটা কিন্তু আজও দিতে পারেননি।’ এরপর সাইদুর রহমান স্বগতোক্তি করেছেন, ‘সত্যিই সেদিন মুজিবের কথায় আমিও স্বীকার করেছিলাম, দেশে ভালো মানুষের বড় অভাব।’ (পৃষ্ঠা: ৮৫)
ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে এ দেশকে মুক্ত করার ছাড়পত্র হাতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তও করেছিলেন। কিন্তু মধ্য আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাঁর গতিপথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। ফলে তিনি তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। কেন পারেননি, তার কিছুটা বিধৃত হয়েছে প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমানের লেখায়। তারপরও এ দেশের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
মহিউদ্দিন খান মোহন

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির জন্মকথা বলেছেন, তা যেন প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক কুটিরে নবজাত এক শিশু সুতীব্র চিৎকারে এই আলো-বাতাসের পৃথিবীতে তার আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল। সেদিন ওই শিশুর চিৎকারের ভাষা সেখানে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারেনি। শিশুটি যেন সুকান্তের সেই শিশুর মতো তীব্র চিৎকারে সব অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ব্যক্ত করেছিল। সেদিন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, ওই শিশুটি একদিন বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হবে?
মানুষ একসময় যা কল্পনা করতে পারে না, অনেক সময় সেটাই পরিণত হয় রূঢ় বাস্তবে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন এ দেশ ও জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। জন্মের সময় তিনি যে ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে। তিনি অধিকারহারা বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজস্ব স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশ নামের যে জাতি-রাষ্ট্র আজ প্রতিষ্ঠিত, এর মূল স্থপতি তিনি। এ জন্য তাঁকে পাকিস্তানি শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে জীবনের প্রায় তেরো বছর কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনেক দেশবরেণ্য নেতার অবদান রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পাকিস্তানের পূর্বাংশ হিসেবে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তা পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না। প্রভু বদল হয়েছিল মাত্র। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক-শোষকচক্র পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে ওরা কায়েম করেছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। সেই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রাতঃস্মরণীয় যে কজন নেতা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অনন্য। তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক নেতাই পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভূমিকার জন্য তিনি তাঁদের সবাইকে টপকে গেছেন। সময়ের বরপুত্র ছিলেন তিনি। সময় তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ নামের জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি হয়েছেন ইতিহাসের কিংবদন্তি।
একটি জাতির ইতিহাস বিনির্মাণের বাঁকে বাঁকে একেকজন মহান নেতার অবদান থাকে। তাঁরা একেক পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁরা একেক পর্যায়ে এই ভূখণ্ডের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা সরাসরি বলেছেন দুজন। এক. মওলানা ভাসানী, দুই. শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, ১৯৭১-এ এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে তা পূর্ণতা লাভ করে।
আজকাল কাউকে কাউকে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কুটতর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এসব তর্কে জাতীয় অনেক বরেণ্য নেতাকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস লক্ষণীয়। কেউ কেউ নিজ দলীয় নেতাকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে অপরাপর নেতাদের অপাঙ্ক্তেয় করে রাখতে চান। এটা তাঁরা করেন দলীয় সংকীর্ণতা এবং ইতিহাসকে কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধি থেকে। তারা হয়তো বিস্মৃত হন যে ইতিহাসে কাউকে কলমের খোঁচায় নায়ক বা ভিলেন বানানো যায় না। যার যার ভূমিকাই তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখে। সেখানে চাইলেই কাউকে স্থানচ্যুত করা সম্ভব নয়। জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে গেলে যার যতটুকু ভূমিকা, যতটুকু অবদান তা স্বীকার করতেই হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে ‘শেখ মুজিব’ ছাড়া তা কখনোই পূর্ণতা পাবে না।
তাই বলে কি বঙ্গবন্ধু সমালোচনার ঊর্ধ্বে? অবশ্যই নয়। কারণ তিনি তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ ছিলেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ভুল করা। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো কখনো কখনো ভুল করেছেন। তাঁর অবর্তমানে আমরা সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতেই পারি। তা থেকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক এবং সশ্রদ্ধ চিত্তে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানতেন এবং তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন তাঁর শিক্ষকের কাছে। প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান (সম্পাদক শফিক রেহমানের বাবা) ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি শিক্ষক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী, প্রায়ই গাড়ি পাঠিয়ে প্রিয় শিক্ষককে তিনি গণভবনে নিয়ে যেতেন। শিক্ষাগুরুর সঙ্গে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ চাইতেন। সাইদুর রহমান তাঁর ‘শতাব্দীর স্মৃতি’ গ্রন্থে সেসবের অনেক বিবরণ তুলে ধরেছেন। একদিন ছাত্র শেখ মুজিব শিক্ষক সাইদুর রহমানের কাছে ভালোভাবে দেশ পরিচালনার জন্য ১০০ জন ভালোমানুষের একটি তালিকা চাইলেন। উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু শিক্ষক সেই তালিকা তাঁর প্রিয় ছাত্রকে দিতে পারেননি। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যাসহ নানা কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। এমনিই সময়ে একদিন ছাত্র তাঁর শিক্ষককে ডেকে নিলেন গণভবনে। দেশের সমস্যা ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্র তাঁর প্রিয় শিক্ষককে অনুযোগসহকারে বললেন, ‘স্যার, মনে আছে একবার আপনার কাছে এক শটি ভালো মানুষের তালিকা চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে ভালো মানুষের তালিকাটা কিন্তু আজও দিতে পারেননি।’ এরপর সাইদুর রহমান স্বগতোক্তি করেছেন, ‘সত্যিই সেদিন মুজিবের কথায় আমিও স্বীকার করেছিলাম, দেশে ভালো মানুষের বড় অভাব।’ (পৃষ্ঠা: ৮৫)
ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে এ দেশকে মুক্ত করার ছাড়পত্র হাতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তও করেছিলেন। কিন্তু মধ্য আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাঁর গতিপথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। ফলে তিনি তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। কেন পারেননি, তার কিছুটা বিধৃত হয়েছে প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমানের লেখায়। তারপরও এ দেশের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির জন্মকথা বলেছেন, তা যেন প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক কুটিরে নবজাত এক শিশু সুতীব্র চিৎকারে এই আলো-বাতাসের পৃথিবীতে তার আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল। সেদিন ওই শিশুর চিৎকারের ভাষা সেখানে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারেনি। শিশুটি যেন সুকান্তের সেই শিশুর মতো তীব্র চিৎকারে সব অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ব্যক্ত করেছিল। সেদিন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, ওই শিশুটি একদিন বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হবে?
মানুষ একসময় যা কল্পনা করতে পারে না, অনেক সময় সেটাই পরিণত হয় রূঢ় বাস্তবে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন এ দেশ ও জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। জন্মের সময় তিনি যে ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে। তিনি অধিকারহারা বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজস্ব স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশ নামের যে জাতি-রাষ্ট্র আজ প্রতিষ্ঠিত, এর মূল স্থপতি তিনি। এ জন্য তাঁকে পাকিস্তানি শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে জীবনের প্রায় তেরো বছর কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনেক দেশবরেণ্য নেতার অবদান রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পাকিস্তানের পূর্বাংশ হিসেবে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তা পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না। প্রভু বদল হয়েছিল মাত্র। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক-শোষকচক্র পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে ওরা কায়েম করেছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। সেই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রাতঃস্মরণীয় যে কজন নেতা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অনন্য। তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক নেতাই পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভূমিকার জন্য তিনি তাঁদের সবাইকে টপকে গেছেন। সময়ের বরপুত্র ছিলেন তিনি। সময় তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ নামের জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি হয়েছেন ইতিহাসের কিংবদন্তি।
একটি জাতির ইতিহাস বিনির্মাণের বাঁকে বাঁকে একেকজন মহান নেতার অবদান থাকে। তাঁরা একেক পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁরা একেক পর্যায়ে এই ভূখণ্ডের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা সরাসরি বলেছেন দুজন। এক. মওলানা ভাসানী, দুই. শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, ১৯৭১-এ এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে তা পূর্ণতা লাভ করে।
আজকাল কাউকে কাউকে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কুটতর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এসব তর্কে জাতীয় অনেক বরেণ্য নেতাকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস লক্ষণীয়। কেউ কেউ নিজ দলীয় নেতাকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে অপরাপর নেতাদের অপাঙ্ক্তেয় করে রাখতে চান। এটা তাঁরা করেন দলীয় সংকীর্ণতা এবং ইতিহাসকে কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধি থেকে। তারা হয়তো বিস্মৃত হন যে ইতিহাসে কাউকে কলমের খোঁচায় নায়ক বা ভিলেন বানানো যায় না। যার যার ভূমিকাই তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখে। সেখানে চাইলেই কাউকে স্থানচ্যুত করা সম্ভব নয়। জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে গেলে যার যতটুকু ভূমিকা, যতটুকু অবদান তা স্বীকার করতেই হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে ‘শেখ মুজিব’ ছাড়া তা কখনোই পূর্ণতা পাবে না।
তাই বলে কি বঙ্গবন্ধু সমালোচনার ঊর্ধ্বে? অবশ্যই নয়। কারণ তিনি তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ ছিলেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ভুল করা। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো কখনো কখনো ভুল করেছেন। তাঁর অবর্তমানে আমরা সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতেই পারি। তা থেকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক এবং সশ্রদ্ধ চিত্তে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানতেন এবং তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন তাঁর শিক্ষকের কাছে। প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান (সম্পাদক শফিক রেহমানের বাবা) ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি শিক্ষক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী, প্রায়ই গাড়ি পাঠিয়ে প্রিয় শিক্ষককে তিনি গণভবনে নিয়ে যেতেন। শিক্ষাগুরুর সঙ্গে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ চাইতেন। সাইদুর রহমান তাঁর ‘শতাব্দীর স্মৃতি’ গ্রন্থে সেসবের অনেক বিবরণ তুলে ধরেছেন। একদিন ছাত্র শেখ মুজিব শিক্ষক সাইদুর রহমানের কাছে ভালোভাবে দেশ পরিচালনার জন্য ১০০ জন ভালোমানুষের একটি তালিকা চাইলেন। উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু শিক্ষক সেই তালিকা তাঁর প্রিয় ছাত্রকে দিতে পারেননি। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যাসহ নানা কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। এমনিই সময়ে একদিন ছাত্র তাঁর শিক্ষককে ডেকে নিলেন গণভবনে। দেশের সমস্যা ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্র তাঁর প্রিয় শিক্ষককে অনুযোগসহকারে বললেন, ‘স্যার, মনে আছে একবার আপনার কাছে এক শটি ভালো মানুষের তালিকা চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে ভালো মানুষের তালিকাটা কিন্তু আজও দিতে পারেননি।’ এরপর সাইদুর রহমান স্বগতোক্তি করেছেন, ‘সত্যিই সেদিন মুজিবের কথায় আমিও স্বীকার করেছিলাম, দেশে ভালো মানুষের বড় অভাব।’ (পৃষ্ঠা: ৮৫)
ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে এ দেশকে মুক্ত করার ছাড়পত্র হাতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তও করেছিলেন। কিন্তু মধ্য আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাঁর গতিপথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। ফলে তিনি তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। কেন পারেননি, তার কিছুটা বিধৃত হয়েছে প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমানের লেখায়। তারপরও এ দেশের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির
১৭ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির
১৭ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির
১৭ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির
১৭ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫