Ajker Patrika

আত্মসমর্পণের পর ফের মাদক কারবারে তাঁরা

গনেশ দাস, বগুড়া
আত্মসমর্পণের পর ফের মাদক কারবারে তাঁরা

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপুরা গ্রামের মাচইলপাড়া। ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর এই পাড়ার ১৫ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফেরার শপথ নেন। পুনর্বাসনের জন্য পুরুষদের রিকশা এবং নারীদের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। কিন্তু আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ জন আবারও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আরও সাতজন কারবারি। থানা-পুলিশের তথ্য বলছে, পুরো ইউনিয়নে এখন মাদক কারবারির সংখ্যা ২৫ জন। এর মধ্যে মাচইলপাড়াতেই আছেন ১৫ জন।

গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার এসআই হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুরো বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নজুড়ে কমপক্ষে ২৫ জন মাদক কারবারি আছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে আত্মসমর্পণ করা ১৫ জনের মধ্যে ৮ জন আবারও মাদক কারবারে জড়িয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে মাদকসহ গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজে জড়িয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্যে সোনাপুরা গ্রামবাসী চরম বেকায়দায় রয়েছেন। চুরি-ছিনতাই যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে যে সংগঠনের উদ্যোগে মাদক কারবারিরা আত্মসমর্পণ করেছিলেন, সেই সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় সমস্যা আবার বেড়েছে। 

স্থানীয় কয়েকটি সূত্র বলেছে, ২০১৭ সালে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গঠিত ‘হোয়াইট লাইফ-সাদা জীবন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এলাকায় মাদকের কারবার বন্ধে উদ্যোগ নেয়। সংগঠনের পক্ষে প্রত্যেক মাদক কারবারির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরে ওই সংগঠনের প্রচেষ্টায় মাচইলপাড়ার আব্দুর রশিদ, ফরিদা বেগম, মোর্শেদা আক্তার, রফিকুল ইসলাম, লাভলী বেগম, শাহিনুর আক্তার, হযরত আলী, জিয়ারুল ইসলাম, নুর আলম, শামীম, হাফিজার রহমান, খুকি আক্তার, শরিফুল ইসলাম, সবুজ ও রুপালি বেগম আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের কাছে তাঁরা আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফেরার অঙ্গীকার করেন। পুলিশ সুপার তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এর কিছুদিন পর আত্মসমর্পণকারী জিয়ারুল মারা যান। অপর ১৪ জন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। এরই মধ্যে হোয়াইট লাইফ-সাদা জীবন সংগঠনের সদস্যরা চাকরিসহ নানা কারণে এলাকা থেকে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হন। এতে সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই সুযোগে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ফরিদা বেগম, মোর্শেদা আক্তার, রফিকুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, লাইলী বেগম, শাহিনুর আক্তার, নুর আলম ও মোহাম্মদ শামিম আবারও মাদক কারবারে জড়িয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে ওই পাড়ার আরও ৭ জন যোগ দিয়েছেন মাদক কারবারে।

যোগাযোগ করা হলে হোয়াইট লাইফ-সাদা জীবন সংগঠনের উদ্যোক্তা হযরত আলী বলেন, ‘মাচইলপাড়ায় মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের উৎপাত প্রত্যক্ষ করে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হই। এলাকার তরুণদের নিয়ে কারবারিদের সঙ্গে আলোচনা করে আত্মসমর্পণে রাজি করাই। তৎকালীন পুলিশ সুপারও ইতিবাচকভাবে বিষয়টি নেন।’ তিনি আরও জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে কারবারিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখা হতো। চাকরিসহ নানা কারণে ও প্রয়োজনে তিনিসহ সংগঠনের সদস্যরা এলাকা ছেড়েছেন। এই সুযোগে আত্মসমর্পণ করা অনেকেই আগের পেশায় ফিরেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কঠোর কোনো ভূমিকা না নেওয়ায় তাঁরা এই সাহস পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন হযরত আলী।

বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চঞ্চল বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ পুলিশের কাজ। আমার কাছে এলাকার কেউ মাদক নিয়ে অভিযোগ করেননি। তবে শুনেছি, ওই এলাকায় (মাচইলপাড়া) কিছু মাদক কারবারি রয়েছেন।’

শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। গত ছয় মাসে দুই দফায় মাদকবিরোধী সমাবেশ করা হয়েছে। মাদক কারবারিদের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা এখনো মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন শুনেছি।’

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ‘থানা-পুলিশ কখনোই মাদক কারবারিদের সঙ্গে আপস করে না। প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিছুদিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তাঁরা আবারও মাদক কারবারে জড়াচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত