Ajker Patrika

ফুলের রাজ্যে ফুল উৎসব

ফুলের রাজ্যে ফুল উৎসব

ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া মোড়ে চলছে ফুল উৎসব। গতকাল শুক্রবার ছিল তিন দিনব্যাপী ফুল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় উৎসব এলাকায় ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। আজ শনিবার উৎসব সমাপ্ত হবে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, উৎসব উপলক্ষে সড়কে বসানো হয়েছে তোরণ। সেখানে চলাচল করা অটোরিকশা ও ভ্যানও সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। বিভিন্ন স্টলে শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের ফুল। গদখালী-পানিসারা ও হাড়িয়া এলাকায় বিভিন্ন ফুলের খেতে ঘুরে দেখছেন ফুলপ্রেমীরা। উৎসব উপলক্ষে ফুলখেতগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করা, পানিসারা-হাড়িয়া মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টগুলোকেও ফুলখেতের আদলে রূপ দেওয়া হয়।

গতকাল বাগেরহাট থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা সেলিম রেজার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ফুল চাষকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না। এখানে এসে বিভিন্ন ফুলখেত দেখে ভালো লেগেছে। মিডিয়ায় ফুল উৎসবের খবর শুনে এখানে এসেছি।’

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা থেকে আগত দর্শনার্থী আবু বকর সিদ্দিকও জানান আনন্দ-অনুভূতির কথা। তবে আবু বকর সরু সড়কের কারণে ভিড়ে ভোগান্তির কথাও বলেন।

ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ফুলরাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে এই উৎসব। কর্মসূচিতে ছিল নারী ফুলচাষিদের সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন-দর্শন সম্পর্কে উঠান বৈঠক ও শিশুদের ফুলবিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিশুশিক্ষার্থী চিত্রাঙ্কনে অংশ নেয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রয়েছে উঠান বৈঠকসহ নারী নেতৃত্বে গ্রুপভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, কৃষক সম্মাননা ও সমাপনী অনুষ্ঠান। পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে বৃহত্তর কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলের কৃষি 
উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষিপ্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

সরেজমিনে কথা হয় পানিসারা-হাড়িয়া ফুল মোড়ের মনোয়ার ফ্লাওয়ার পার্কের ব্যবস্থাপক মিন্টু হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু আজকে অন্তত তিন হাজার দর্শনার্থী টিকিট কেটে পার্কের ভেতরে ঢুকেছেন।’

ইসমাইল হোসেনের চন্দ্রমল্লিকার সেটের ব্যবস্থাপক আশাদুল ইসলাম বলেন, ফুলখেত দেখতে এখানে আজ (গতকাল) এক হাজার দর্শনার্থী টিকিট কেটে প্রবেশ করেছেন।

ভাই ভাই ফুল বিতানের স্বত্বাধিকারী লোকমান হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল) শুধু ফুল দিয়ে তৈরি মাথার ব্যান্ড বিক্রি করেছি অন্তত ১০ হাজার টাকার। বুঝতে পারিনি, ফুল উৎসব উপলক্ষে এত লোকের সমাগম হবে।’

যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের নেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘ফুল উৎসবে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ বইছে।’ 
উৎসবে ফুলচাষি, ফুল ব্যবসায়ী, ফুলসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো অংশ নিয়েছে। ২০টি নার্সারি, তিনটি পর্যটন প্যাভিলিয়ন ও ১০টি স্টল সেজেছে উৎসবের সাজে।

ঝিকরগাছা ইউএনও মাহবুবুল হক বলেন, ‘ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ফুলের রাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে এই আয়োজন করা হয়। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে এবং ফুল উৎসব সফল বলে মনে করছি।’

ঝিকরগাছার গদখালী অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। এই এলাকার ছয় হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর সাড়ে তিন শ কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয় ঝিকরগাছায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত