Ajker Patrika

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি মাদারগঞ্জের দুই সংগঠক

মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ১৩
Thumbnail image

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি জামালপুরের দুই ব্যক্তি। তারা হলেন আওয়ামী লীগের মাদারগঞ্জ থানার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও তৎকালীন জাতীয় পরিষদের সদস্য করিমুজ্জামান তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন তালুকদার। তারা দুজনই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তাদের পরিবার ওই দুজনের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান।

তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৫৪ সালে মাদারগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন করিমুজ্জামান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক হন রফিক উদ্দিন তালুকদার।

তাদের গঠিত কমিটি ১৯৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়। ধারাবাহিক এই রাজনৈতিক কার্যক্রম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নজরে আসে। সে কারণে ৭০ এর নির্বাচনে মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান করিমুজ্জামান তালুকদার। এই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন করিমুজ্জামান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন তালুকদার। ১৯৭১ সালে জামালপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম এমপির সভাপতিত্বে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন রফিক উদ্দিন তালুকদার। ওই সভায় জামালপুর মহকুমার ১০ থানায় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। মাদারগঞ্জ থানা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন রফিক উদ্দিন তালুকদার।

করিমুজ্জামান তালুকদার ও রফিক উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে সারা থানায় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য মাঠে মাঠে যুবক ও ছাত্রদের সংগঠিত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের যোগদান করানোর জন্য ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জের তুরায় যান এবং জীবনবাজি রেখে রফিক উদ্দিন তালুকদার এলাকায় থেকে যান। রাজাকার আল বদরদের নানা হুমকি ও হামলার পরেও তিনি এলাকার ছাত্র যুবকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠান। রফিক উদ্দিন তালুকদারের গ্রামের বাড়ির কাছারিঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তোলেন। এখান থেকে এই এলাকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হন করিমুজ্জামান তালুকদার ও রফিক উদ্দিন তালুকদারের চাঁদপুর গ্রামের বাড়ি।

এই বাড়ি পাকিস্তানি বাহিনীরা জ্বালিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ১৯৭১ এর জুলাই মাসে পাকিস্তানী বাহিনী জগন্নাথগঞ্জ ঘাট থেকে প্রচুর গোলা বারুদ ও অস্ত্র নিয়ে বোট যোগে চাঁদপুর গ্রামের কাছে মানচিত্র ভুলে অন্য একটি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। এরপর মাদারগঞ্জ মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরে ১৬ ডিসম্বর দেশ স্বাধীন হয়।

করিমুজ্জামান তালুকদার স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন এবং তিনিসহ রফিক উদ্দিন তালুকদার আনুষ্ঠানিকভাবে বালিজুড়ি এফ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁরা এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি।

রফিক উদ্দিন তালুকদারের ছেলে মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাহিদুর রহমান উজ্জ্বল তালুকদার জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করিমুজ্জামান তালুকদার এবং রফিক উদ্দিন তালুকদারকে যেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত