Ajker Patrika

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ঈদযাত্রা

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ০৮: ৩৪
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ঈদযাত্রা

কয়েক মাস স্থিতিশীল থাকার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়ছে প্রতিদিন। তাই সবাইকে আবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে সরকার। কিন্তু ঈদুল আজহার আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার উচ্ছ্বাসে সেই আহ্বান খুব একটা কানে তুলছে না কেউ। এ বছর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় যে যেভাবে পারছে বাড়ি ছুটছে। কোরবানির পশুর হাটেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের পর করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, চলমান ওমিক্রন উপধরনে আক্রান্ত রোগীদের ৭০ শতাংশের বেশি ঢাকায় বাস করেন; যাঁরা কিনা এখন ঈদে গ্রামে যাচ্ছেন। এতে পরিবার থেকে শুরু করে সেখানে সামাজিক সংক্রমণ ঘটার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু উপসর্গ দেখা দিলেও অধিকাংশই পরীক্ষা করবেন না। ফলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে না। চলমান উচ্চমুখী অবস্থা চলতি জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত চলতে পারে বলেও মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে সব মিলিয়ে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজারের কিছু বেশি, কিন্তু সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের প্রভাবে শুধু জুন মাসেই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজার ২৭৮ জন। আগের দুই মাসে মারা গেছেন ৯ জন। জুনে সেই সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ রোগী এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫

শনাক্তের পাশাপাশি মৃত্যুও হয়েছে তিনজনের। সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে গত মাস থেকে শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিধিনিষেধ আরোপের পরও গত বছরের জুলাই মাসে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু ঈদুল আজহায় ঘরমুখী মানুষকে আটকাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করতে বাধ্য হয় সরকার। ঈদের পরেই সংক্রমণের হার হু হু করে বেড়েছে। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে দেখা দেয় শয্যার সংকট। হাসপাতালে আনার পথেও প্রাণ গেছে অনেকের। এবারও সেই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে ধরে নিয়ে আগেভাগেই হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে।

গত বছরের এপ্রিল থেকে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে রাজধানীর মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এখানে। গতকাল এ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগেও এখানে হাতে গোনা কয়েকজন রোগী ভর্তি ছিলেন। চলতি মাসে সেই সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে।

হাসপাতালটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক মাস আগেও দু-চারজন রোগী ভর্তি ছিলেন। বর্তমানে চল্লিশের বেশি রোগী ভর্তি আছেন। গতকাল সকাল থেকে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত ২১ জন রোগী এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে ভর্তি রেখে বাকিদের পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।

ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রোগীর চাপ আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রতিদিনই সংক্রমণের হার বাড়ছে, যা এখন ১৬ শতাংশের ওপরে। এটা আমাদের জন্য বিপদের বার্তা। আসছে ঈদে অনেক মানুষ ঢাকা থেকে যাবে-আসবে, কোরবানির জন্য পশুও কিনতে হবে। কিন্তু কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানার পাশাপাশি মাস্কটাও পরছেন না। ফলে ঈদের পর সংক্রমণ বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। তাই আমরা আইসিইউসহ অন্য ব্যবস্থাগুলো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

সংক্রমণের সঙ্গে রোগী বাড়ছে বলে জানান মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নিয়াতুজ্জামান। তিনি বলেন, যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, ঈদের পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা মুশকিল। মাঝে কোনো রোগীই ছিল না, গত মাস থেকে রোগী আসছে। প্রস্তুতিও বাড়ানো হয়েছে।

একই অবস্থা রাজধানীর শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অস্থায়ী কোভিড হাসপাতালে। এপ্রিল-মে মাসে যেখানে অনেকটা রোগী শূন্য ছিল, জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে সেখানে রোগী বাড়ছে। গড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৮-১০ জন রোগী আসছে এ হাসপাতালে। যাঁদের সবাই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগের ভুক্তভোগী।

এ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার শুরু থেকে রোগী আসছেন। যদিও সেটি আগের মতো নয়। আগের দিন এখানে ৩৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) তা ৪২ জনে হয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন সাতজন। মারা গেছেন একজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মানুষকে এখন আটকানোর কোনো উপায় নেই। নিজে থেকে সচেতন না হলে স্বাভাবিকভাবেই ঈদের পর সংক্রমণ বাড়বে, হাসপাতালেও চাপ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত