Ajker Patrika

স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের রক্তাক্ত অধ্যায়

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের রক্তাক্ত অধ্যায়

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্ম নিয়েছিল এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে। অথচ দেশটাতে ছিল পাঁচটি প্রদেশ, যেগুলোর প্রয়োজন ছিল স্বায়ত্তশাসনের। একই সময়ে ভারতও স্বাধীন হলো ফেডারেল পদ্ধতির রাষ্ট্রব্যবস্থায়। ফলে তাদের প্রতিটি রাজ্যেরই স্বায়ত্তশাসন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর জন্য কাউকে কোনো আন্দোলন করতে হয়নি। কিন্তু আমাদের ‘স্বপ্নের পাকিস্তান’ শুরু থেকে খড়্গ হাতে বাংলাকে পাকিস্তান বানানোর সব অপচেষ্টাই শুরু করে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ভাষা নিয়ে আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ শুরু করে। সংবিধানও তারা দেবে কি দেবে না, তা নিয়ে কয়েক বছর কেটে গেল। আট বছর পর যে সংবিধান দেওয়া হলো, তাতে গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত ছিল। দেশটি হয়ে গেল ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। কিন্তু সেই দেশও সংবিধান হজম করতে পারেনি। সামরিক শাসকেরা এসে সেই সংবিধানও ছুড়ে ফেলে দিল। আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রের এক ভেলকিবাজি শুরু করলেন।

পাকিস্তান এমন একটি রাষ্ট্র হবে জেনেই ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হলো মূলত স্বায়ত্তশাসন ও ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করার জন্য। ভাষা নিয়ে পাকিস্তানিরা অনমনীয় থাকার চেষ্টা করল। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে ছাত্র ধর্মঘটে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছাত্র হত্যা করল, ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করা হলো। সেই থেকে একমাত্র আওয়ামী লীগই স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এ জন্য নেতা-কর্মীদের জেল-জুলুম ও আত্মত্যাগ বরণ করে নিতে হলো। পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে এসে সামরিক শাসকেরা পাকিস্তানকে একটি অগণতান্ত্রিক স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে পাকাপোক্ত রূপ দিতে থাকে। তত দিনে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার বাঙালি বুঝতে পেরেছিল যে পাকিস্তান পূর্ব বাংলার জনগণের রাষ্ট্র কখনো হয়ে উঠবে না। কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক এই রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ছাড়া দ্বিতীয়টি দেখা যাচ্ছিল না। আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিভাজন এবং প্রবীণদের অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস হারিয়ে ফেলেন।

সেই অবস্থায় শেখ মুজিবকেন্দ্রিক যেসব রাজনৈতিক উদীয়মান নেতা-কর্মী পঞ্চাশের দশকের অভিজ্ঞতায় দৃঢ়তা অর্জন করতে শিখলেন, তাঁরাই ষাটের দশকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুতি নিলেন। স্বায়ত্তশাসনের দাবি তখন তাদের কাছে অতীব গ্রহণযোগ্য বলে মনে হলো। ১৯৬৫-এর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে স্বায়ত্তশাসনের দাবির কোনো বিতর্ক রাজনীতিসচেতন মানুষ ভাবতে পারেননি। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৬ দফা উত্থাপন করল এবং দলীয় সম্মেলনে সেটিকে জাতীয় মেনিফেস্টোর মতো মর্যাদা দেওয়া হলো। সম্মেলনের পরেই জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ৬ দফা কী ও কেন—এই ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। দ্রুত মানুষ শেখ মুজিবকে তাদের প্রাণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের নেতা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।

শেখ মুজিব পাকিস্তান আন্দোলন থেকে পাকিস্তান সৃষ্টি ও তার পরবর্তী সময় পর্যন্ত রাজনীতির ‘খনি শ্রমিকের’ মতো বেড়ে ওঠা নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন। মানুষ এই নেতার কথাই তখন বিশ্বাস করতে থাকে। পাকিস্তানের রাজনীতির নিষিদ্ধ মাঠে গোপনে, প্রকাশ্যে অথবা হাত নেড়ে স্বায়ত্তশাসনের ৬ দফাকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সমর্থন জানাতে থাকেন। সেই পরিস্থিতিতে ১৯৬৬ সালের ৮ মে আইয়ুব সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গণহারে বন্দী করতে থাকে। কার্যত যেন আওয়ামী লীগ একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। সেই বিবেচনা থেকে সরকারের তোষণকারী গোষ্ঠী ৬ দফার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে থাকে, ভারতের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করতে থাকে।

জেলখানায় বন্দী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এক চরম বৈরী পরিবেশে প্রত্যক্ষ করেন যে আওয়ামী লীগের পালিয়ে থাকা নেতৃবৃন্দ গোপনে ২০ মে তারিখে দলের সভা ডেকে পাকিস্তান সরকার ও তাদের দোসরদের নতুন চ্যালেঞ্জ জানালেন। সভায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ‘জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, জনাব শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতা ও কর্ম্মীদের মুক্তি, সংবাদপত্রের উপর জারীকৃত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, টেন্ডুপাতা অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার’ এবং অন্যান্য দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৭ জুন প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর চলতে থাকে হরতাল সফল করার জন্য প্রচারাভিযান। পাকিস্তানের রাজনীতিতে এই প্রথম রাষ্ট্রযন্ত্র ও আওয়ামী লীগ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করে।

আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা কারারুদ্ধ থাকা সত্ত্বেও গোপনে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনগুলো হরতাল সফল করার জন্য রাত-দিন প্রচার অব্যাহত রাখে। বঙ্গবন্ধু ও নেতৃবৃন্দ জেলে বসে ভেতরের ও বাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি ৭ জুনের হরতালকে সমর্থন জানায়। ছাত্র ইউনিয়ন এই হরতাল সফল করার জন্য নিজেদের শক্তি নিয়ে গোপনে কাজ করতে থাকে। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ কোথায় কার কার নেতৃত্বে কারা পিকেটিং করবে, সেই পরিকল্পনা মোতাবেক বিভক্ত হয়ে কাজ করতে থাকে। এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন শেখ মনি, সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমেদসহ অনেক ছাত্রনেতা। শ্রমিক সংগঠনগুলোকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, পোস্তগোলা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ সর্বত্র কীভাবে হরতালে যুক্ত করা যায়, সেভাবে গোপনে প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

৭ জুনের হরতালের বিষয়ে পাকিস্তান সরকার কঠোর অবস্থানে ছিল। কিন্তু সরকারের এই মনোভাব জানা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, শ্রমিক সংগঠন ছাড়াও প্রশাসনের অভ্যন্তরে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাবাপন্ন বাঙালি কর্মকর্তারাও গোপনে হরতালকে সমর্থন জানাতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীকে দিয়ে রুহুল কুদ্দুসের কাছে খবর পাঠান, ‘যেভাবেই হোক, ৭ জুন সফল হরতাল দেখতে চাই।’ রুহুল কুদ্দুস এই হরতাল সফল করার জন্য ঢাকা নগরীর একটি ম্যাপ কিনে নিয়ে কোথায় কীভাবে ব্যারিকেড দিতে হবে, কোথায় ছেলেরা লুকিয়ে থাকবে—সবকিছু এঁকে তৈরি করে দেন।

অন্যদিকে তিনি ফোনে সারা পূর্ব বাংলায় অবস্থানরত বিশ্বস্ত বাঙালি সিএসপি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হরতাল সফল করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। মিজানুর রহমান চৌধুরী গোপনে রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হরতাল সফল করতে তাঁর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য আনেন। এভাবেই ৭ জুনের হরতাল সফল করার জন্য গোপনে যে প্রস্তুতি চলছিল, তা পাকিস্তান সরকারের কোনো সংস্থাই আগে অনুমান করতে পারেনি। পাকিস্তানে দীর্ঘদিন কোনো হরতালের ডাক দেওয়ার সাহস অন্য কোনো রাজনৈতিক দল দেখানোর কথা কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু ৭ জুনের হরতালের প্রস্তুতি নীরবে কতটা জনসম্পৃক্ত হয়েছিল, তা বোঝা গেল সেদিন প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের দৃশ্য দেখে।

৭ জুন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আহূত হরতাল সংঘর্ষের রূপ ধারণ করে। এতে সর্বমোট ১১ জন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন। সংঘর্ষ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সেদিন ঢাকায় কয়েক শ সাধারণ ‘পাবলিক’ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জিল্লুর মোরশেদ মিটু, মোহাম্মদ সিরাজীসহ ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন কর্মীও গ্রেপ্তার হন। অন্যদিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ছাত্রলীগের খালেদ মোহাম্মদ আলী ও নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে রেললাইন অবরোধকালে পুলিশ সেখানে আক্রমণ চালায়। তাতে পেপসি-কোলার গাড়িচালক মনু মিয়া তেজগাঁও রেললাইন অবরোধকালে রেলগাড়িতে থাকা পুলিশের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা থেকে শ্রমিকদের ছোট-বড় দল হরতালে পিকেটিং ও মিছিলে অংশ নিয়েছিল। তেজগাঁওয়ে মুজিবুল্লাহ নামে আরেকজন শহীদ হন এবং সেদিন প্রায় ৮০০ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তেজগাঁওয়ের আজাদ এনামেল অ্যান্ড অ্যালুমিনিয়াম কারখানার নোয়াখালীর শ্রমিক আবুল হোসেনকে ইপিআর বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশের গুলিতে ছয়জন শ্রমিক নিহত হন। এ ছাড়া চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় অভূতপূর্ব হরতাল পালিত হয়।

৮ জুনের পত্রপত্রিকায় ৭ জুনের হরতালের সংবাদ প্রকাশে সরকারি বাধানিষেধ ছিল। তথ্য দপ্তর থেকে অত্যন্ত কৌশলে মাঝরাতে পত্রিকা অফিসে ১০ জনের হত্যার সরকারি খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেটিই পত্রিকাগুলো প্রকাশ করে। তখনই জানাজানি হয়ে যায়, পাকিস্তান সৃষ্টির পর সবচেয়ে বড় রক্তাক্ত ঘটনা ৭ জুনের হরতালে সরকারের নির্দেশে পুলিশ ঘটিয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় ৮ জুন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নামধারী বেশ কিছু সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু পরদিন ৮ তারিখ জেলে বসে হরতাল পালনের খবর জানতে পেরে নিশ্চিত হন যে পূর্ব বাংলার জনগণ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং এই আন্দোলন যেকোনো মূল্যে তারা সফল করবে বলে তিনি ‘কারাগারের রোজনামচা’য় দৃঢ়ভাবে আশাবাদ প্রকাশ করেন।

লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

সখীপুরে ইয়াবাসহ শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার, দল থেকে বহিষ্কার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

সখীপুরে ইয়াবাসহ শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার, দল থেকে বহিষ্কার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

সখীপুরে ইয়াবাসহ শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার, দল থেকে বহিষ্কার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

সখীপুরে ইয়াবাসহ শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার, দল থেকে বহিষ্কার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

সখীপুরে ইয়াবাসহ শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার, দল থেকে বহিষ্কার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত