রজত কান্তি রায়, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন, আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে।
মোনাজাত উদ্দিন যখন ‘লক্ষ্মীটারী’ নামে তাঁর শেষ বইটি লেখেন তখন তাঁর বয়স ৪৯ বছর এবং আমার ১৪ বছর। লক্ষ্মীটারীতে গিয়েছি মোনাজাত উদ্দিন সেখানে যাওয়ার প্রায় ২৮ বছর পরের শীতকালে, এ বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি।
গঙ্গাচড়া থেকে সোজা যাওয়া যায় মহীপুর। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আমাকে নিয়ে চললেন ঘুরপথে। বারবার তাঁকে জিজ্ঞেস করছিলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি, না মানে এটা ইউনিয়ন; লক্ষ্মীটারী নামে কোনো গ্রাম নেই, বলেই চলছিলেন। আমিও রিকশায় বসে আরামে দুদিক দেখতে দেখতে চলেছি। আর আমার স্মৃতিতে দোলা দিয়ে যাচ্ছে গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে দেখা উত্তরবঙ্গের পরিবেশ ও রাস্তাঘাট। সে সময়ের বড় মাটির রাস্তাগুলো এখন পিচ ঢালা পথ। কোথাও চওড়া, কোথাও সরু। বাঁশের চাটাইয়ে ঘেরা বাড়ি। ওপরে টিনের অথবা খড়ের চালা। এখন টিনের চালাই বেশি। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়। সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার ধারে বাঁশের গায়ে শুকাতে দেওয়া গোবর নড়ি (পাটখড়িতে লাগানো গোবর)। গঙ্গাচড়ার এই অঞ্চল এখনো কিছুটা আশি-নব্বইয়ের দশকের মতো আছে। এখনো নিস্তরঙ্গ। তবে সমৃদ্ধির ছোঁয়া যে লেগেছে সেটা বোঝা যায় বিদ্যুতের খুঁটি, মোটর বাইক আর মাঝেমধ্যে ছাদপেটানো পাকা বাড়ি দেখে। শিহরণ জাগে, আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে কাঁধে ব্যাগ আর ক্যামেরা ঝুলিয়ে মোনাজাত উদ্দিন এই সব রাস্তায় ঘুরেছেন।
পুরোটাই যে এককালে তিস্তার চর ছিল, সেটা বোঝা যায় ভূমিরূপ দেখলেই। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার আগে পড়বে খানাটারী নামে একটি গ্রাম। রংপুর অঞ্চলে টারী শব্দটির অর্থ গ্রাম। যেমন দীঘলটারী, দর্জীটারী, শ্যাওড়াটারী...। খানাটারী পার হওয়ার সময় চোখে পড়ল আলুর খেত। যত দূর চোখ যায় শুধুই আলু। বিকেল বলে কোনো মানুষ নেই খেতে। আলুর গাছের পাতায় সকালের শিশির জমে আছে। শীত-বিকেলের কুয়াশামাখা আলোয় সেগুলো গাঢ় সবুজ। মাটির কাঁচা রাস্তা ধরে চলছে আমাদের অটোরিকশা। বাড়িগুলোর সামনের ছোট ছোট জমিতে চাষ করা হয়েছে রসুন, লাফা শাক। বাবর শাক—এতে হলুদ ফুল ফুটেছে। এগুলো বিক্রির জন্য নয়। বাড়িতে খাবারের জন্য। খানাটারীর একটি পাড়ার একটি দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। উৎসুক মানুষ তাকিয়ে দেখছে। বয়স্ক একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি বললেন, হয় হয় বাওয়া। এইটা লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন। যাইমেন কোনটে? বললাম, লক্ষ্মীটারী দেখতে এসেছি। তিনি হাসলেন। বললেন, দেইখবার কী আছে বাহে? আর কিছু না বলে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে চললাম। পাশেই মহীপুর জামে মসজিদের সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। মানে মহীপুর নামের একটি গ্রাম আমরা পার হচ্ছি।
এ রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে উঠলাম আনুর বাজারে। বিখ্যাত কারও নামে রাখা হয়েছে বাজারের নাম। যে রাস্তাটা খানাটারী থেকে আনুর বাজারের পাকা রাস্তায় লেগেছে, সেটা বেশ বড় তিন রাস্তার মোড়। বাজারটিও বেশ জমজমাট। সেই মোড়ের ওপরেই দেখা হলো নুরুল ইসলাম মেম্বারের সঙ্গে। তিনি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত মেম্বার ছিলেন। বয়স্ক বলে জিজ্ঞেস করলাম, বয়স কত চাচা? মেম্বার সাব জানালেন, বয়সবা কত হইল্ বাহে! ১৯৩২ সালে জন্ম হামার। হিসেব করে দেখলাম, নুরুল ইসলাম নামের যে মানুষটির সঙ্গে কথা বলছি তাঁর বয়স কমবেশি ৯০ বছর! কিন্তু তিনি দিব্যি বাজার করতে এসেছেন। অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানালেন, তিস্তার বানে একসময় কিছুই হতো না এলাকায়। এত দিনে লক্ষ্মীটারী এলাকার মানুষের কিছুটা সুখ হয়েছে। এখন এই এলাকায় আলু হয় প্রচুর। কিন্তু দাম পাঁচ টাকা কেজি।
এই আনুর বাজার থেকে মহীপুর প্রায় দুই কিলোমিটার। দুই হাটের মাঝখানে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ। রাস্তাটা পাকা। এটা কাকিনা রোড। রংপুর শহর থেকে এই রোড ধরে সোজা চলে যাওয়া যায় কাকিনা, তুষভাণ্ডার। তার পরে আরও দূরে লালমনিরহাট। সেগুলো তিস্তার ওপারের জায়গা। আনুর বাজার থেকে মহীপুর হাটের দিকে রওনা দিলাম পাকা রাস্তা ধরে। মাঝখানে থামলাম ইউনিয়ন পরিষদে।
মহীপুর একেবারে তিস্তা নদীর তীরে পুরোনো হাট। এই সেই মহীপুর হাট, হাকিমুদ্দিন নামের এক চাষি আজ থেকে ২৮ বছর আগে তামাকের ন্যায্য দাম না পাওয়ার জন্য শতশত মানুষের সামনে, প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি করতে আনা তামাকের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন। সেই খবর মানুষ জেনেছিল মোনাজাত উদ্দিনের কল্যাণে। আজ এত দিন পর মহীপুর কিংবা লক্ষ্মীটারীর মানুষ হাকিমুদ্দিন বা মোনাজাত উদ্দিন কারও নামই আর মনে রাখেনি। হয়তো সেসব কথা মনে রেখে কোনো কাজ নেই। আটাশ বছর পরের সে হাট এখন গমগমে। যোগাযোগ ব্যবস্থার শনৈঃশনৈ উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগের জন্য মহীপুরেই তৈরি হয়েছে মহীপুর ব্রিজ। ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের মহীপুর ব্রিজ এখন এ অঞ্চলের দর্শনীয় বস্তু। প্রতিদিন বিকেলে এখানে ঘুরতে আসেন সুখী মানুষেরা। ২৮ বছর আগে সেখানে ছিল খেয়াঘাট। তাকিয়ে দেখলাম, মহীপুর হাটের প্রায় মাঝখানে আর পাকা রাস্তাটার শ খানিক গজ দূরে একটি ক্লিনিক। সেখানেই কি রাতের বেলা ঘুমিয়েছিলেন মোনাজাত উদ্দিন? সম্ভবত। সে রকমই লিখেছেন তিনি।
মহীপুর হাটের বাঁ দিক দিয়ে তিস্তার বাঁধ ধরে চলতে শুরু করল রিকশা। প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে। কিন্তু এদের মধ্যে প্যানকাটু বর্মণের মতো কাউকে দেখা গেল না। এ এলাকায় সবাই এখন বেশ সুখী। হাড্ডিচর্মসার, কোটর থেকে বেরিয়ে আসা চোখের কোনো মানুষ নেই। শিক্ষার হার বেড়েছে, সরকারি পরিসংখ্যান তা-ই বলে। অনেক স্কুল হয়েছে, চোখেও পড়ে সেটা। নদীর পারের লোকজন হাঁসের খামার তৈরি করেছে—মাংস আর ডিম দুটোই মিলছে। চরে চাষ হচ্ছে ভুট্টা আর ধান। তামাকের চাষ একটু কম হলেও আছে। মাঝখান থেকে তিস্তাই ক্ষয়ে গেছে। চরে-চরে জীর্ণ এ নদীকে কেউ এখন আর মহানদী বলে না। বয়স্করা মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মৃতির জাবর কাটেন। সম্ভবত নদীর এ মৃত্যু তাঁরা চাননি। ভাঙলেও নদী তাঁদের অস্তিত্বের অংশ ছিল।
একটা জনপদ বার্গার বা স্যান্ডুইচের মতো। ওপর আর নিচ থেকে দেখলে এক রকম। কামড় বসালে আর এক রকম। জনপদ আর মানুষের গল্প সরকারি পরিসংখ্যানের চোখে দেখলে এক রকম, রসিকের চোখে আরেক রকম, আর মোনাজাত উদ্দিনের চোখে অন্য রকম। বাম বা ডান চোখে দেখলে আলাদা আলাদা । এনজিও আর উন্নয়নের চোখে দেখলে অন্য রকম। কোন চোখে দেখবেন সে বিবেচনা আপনার। মোনাজাত উদ্দিন এক জটিল রাষ্ট্রীয় কাঠামো আর তার চেয়েও জটিল ভিলেজ পলিটিক্স দেখেছিলেন লক্ষ্মীটারীতে। কিন্তু লিংক-ফার্লঙের হিসেবে ভাঙতে থাকা পারিবারিক গল্পটা দেখেননি। হয়তো সেটা দেখা তাঁর উদ্দেশ্যও ছিল না। কিন্তু ২৮ বছর পরের লক্ষ্মীটারী ভাঙতে ভাঙতে এজমালি শব্দটি এ-তে এসে ঠেকেছে। ইংরেজি এ-র অর্থ একটি। একক। সিঙ্গেল। বহুত্বের ঠাঁই নেই সেখানে। শরিকি পুকুর, শরিকি উঠোন, শরিকি মাটি, শরিকি ছায়া, এজমালি রোদ...শব্দগুলো লক্ষ্মীটারীতে এখন ‘তিস্তার ভাঙন’ শব্দের মতোই ঐতিহাসিক। নুরুল ইসলাম মেম্বার কিংবা মহীপুর হাটের চায়ের দোকানদার আহমদের সময়টাই এখন লিংক-ফার্লঙের হিসেব করে কাটে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মঙ্গা কিংবা তিস্তার উন্মত্ত ঢেউ সামলাবার গল্প এখন নিখোঁজ। উন্মুক্ত অর্থনীতির যুগে সবাই এখন একক। নিঃসঙ্গ।
এজমালি রোদ গোধূলিতে। সূর্য তখন তিস্তার ওপারে কমলা আভা ছড়িয়ে ডুবতে চলেছে। আমরা চলেছি গঙ্গাচড়া শহরে। সন্ধ্যার শীত জেঁকে বসার আগেই পৌঁছাতে হবে সেখানে।
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন, আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে।
মোনাজাত উদ্দিন যখন ‘লক্ষ্মীটারী’ নামে তাঁর শেষ বইটি লেখেন তখন তাঁর বয়স ৪৯ বছর এবং আমার ১৪ বছর। লক্ষ্মীটারীতে গিয়েছি মোনাজাত উদ্দিন সেখানে যাওয়ার প্রায় ২৮ বছর পরের শীতকালে, এ বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি।
গঙ্গাচড়া থেকে সোজা যাওয়া যায় মহীপুর। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আমাকে নিয়ে চললেন ঘুরপথে। বারবার তাঁকে জিজ্ঞেস করছিলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি, না মানে এটা ইউনিয়ন; লক্ষ্মীটারী নামে কোনো গ্রাম নেই, বলেই চলছিলেন। আমিও রিকশায় বসে আরামে দুদিক দেখতে দেখতে চলেছি। আর আমার স্মৃতিতে দোলা দিয়ে যাচ্ছে গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে দেখা উত্তরবঙ্গের পরিবেশ ও রাস্তাঘাট। সে সময়ের বড় মাটির রাস্তাগুলো এখন পিচ ঢালা পথ। কোথাও চওড়া, কোথাও সরু। বাঁশের চাটাইয়ে ঘেরা বাড়ি। ওপরে টিনের অথবা খড়ের চালা। এখন টিনের চালাই বেশি। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়। সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার ধারে বাঁশের গায়ে শুকাতে দেওয়া গোবর নড়ি (পাটখড়িতে লাগানো গোবর)। গঙ্গাচড়ার এই অঞ্চল এখনো কিছুটা আশি-নব্বইয়ের দশকের মতো আছে। এখনো নিস্তরঙ্গ। তবে সমৃদ্ধির ছোঁয়া যে লেগেছে সেটা বোঝা যায় বিদ্যুতের খুঁটি, মোটর বাইক আর মাঝেমধ্যে ছাদপেটানো পাকা বাড়ি দেখে। শিহরণ জাগে, আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে কাঁধে ব্যাগ আর ক্যামেরা ঝুলিয়ে মোনাজাত উদ্দিন এই সব রাস্তায় ঘুরেছেন।
পুরোটাই যে এককালে তিস্তার চর ছিল, সেটা বোঝা যায় ভূমিরূপ দেখলেই। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার আগে পড়বে খানাটারী নামে একটি গ্রাম। রংপুর অঞ্চলে টারী শব্দটির অর্থ গ্রাম। যেমন দীঘলটারী, দর্জীটারী, শ্যাওড়াটারী...। খানাটারী পার হওয়ার সময় চোখে পড়ল আলুর খেত। যত দূর চোখ যায় শুধুই আলু। বিকেল বলে কোনো মানুষ নেই খেতে। আলুর গাছের পাতায় সকালের শিশির জমে আছে। শীত-বিকেলের কুয়াশামাখা আলোয় সেগুলো গাঢ় সবুজ। মাটির কাঁচা রাস্তা ধরে চলছে আমাদের অটোরিকশা। বাড়িগুলোর সামনের ছোট ছোট জমিতে চাষ করা হয়েছে রসুন, লাফা শাক। বাবর শাক—এতে হলুদ ফুল ফুটেছে। এগুলো বিক্রির জন্য নয়। বাড়িতে খাবারের জন্য। খানাটারীর একটি পাড়ার একটি দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। উৎসুক মানুষ তাকিয়ে দেখছে। বয়স্ক একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি বললেন, হয় হয় বাওয়া। এইটা লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন। যাইমেন কোনটে? বললাম, লক্ষ্মীটারী দেখতে এসেছি। তিনি হাসলেন। বললেন, দেইখবার কী আছে বাহে? আর কিছু না বলে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে চললাম। পাশেই মহীপুর জামে মসজিদের সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। মানে মহীপুর নামের একটি গ্রাম আমরা পার হচ্ছি।
এ রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে উঠলাম আনুর বাজারে। বিখ্যাত কারও নামে রাখা হয়েছে বাজারের নাম। যে রাস্তাটা খানাটারী থেকে আনুর বাজারের পাকা রাস্তায় লেগেছে, সেটা বেশ বড় তিন রাস্তার মোড়। বাজারটিও বেশ জমজমাট। সেই মোড়ের ওপরেই দেখা হলো নুরুল ইসলাম মেম্বারের সঙ্গে। তিনি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত মেম্বার ছিলেন। বয়স্ক বলে জিজ্ঞেস করলাম, বয়স কত চাচা? মেম্বার সাব জানালেন, বয়সবা কত হইল্ বাহে! ১৯৩২ সালে জন্ম হামার। হিসেব করে দেখলাম, নুরুল ইসলাম নামের যে মানুষটির সঙ্গে কথা বলছি তাঁর বয়স কমবেশি ৯০ বছর! কিন্তু তিনি দিব্যি বাজার করতে এসেছেন। অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানালেন, তিস্তার বানে একসময় কিছুই হতো না এলাকায়। এত দিনে লক্ষ্মীটারী এলাকার মানুষের কিছুটা সুখ হয়েছে। এখন এই এলাকায় আলু হয় প্রচুর। কিন্তু দাম পাঁচ টাকা কেজি।
এই আনুর বাজার থেকে মহীপুর প্রায় দুই কিলোমিটার। দুই হাটের মাঝখানে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ। রাস্তাটা পাকা। এটা কাকিনা রোড। রংপুর শহর থেকে এই রোড ধরে সোজা চলে যাওয়া যায় কাকিনা, তুষভাণ্ডার। তার পরে আরও দূরে লালমনিরহাট। সেগুলো তিস্তার ওপারের জায়গা। আনুর বাজার থেকে মহীপুর হাটের দিকে রওনা দিলাম পাকা রাস্তা ধরে। মাঝখানে থামলাম ইউনিয়ন পরিষদে।
মহীপুর একেবারে তিস্তা নদীর তীরে পুরোনো হাট। এই সেই মহীপুর হাট, হাকিমুদ্দিন নামের এক চাষি আজ থেকে ২৮ বছর আগে তামাকের ন্যায্য দাম না পাওয়ার জন্য শতশত মানুষের সামনে, প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি করতে আনা তামাকের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন। সেই খবর মানুষ জেনেছিল মোনাজাত উদ্দিনের কল্যাণে। আজ এত দিন পর মহীপুর কিংবা লক্ষ্মীটারীর মানুষ হাকিমুদ্দিন বা মোনাজাত উদ্দিন কারও নামই আর মনে রাখেনি। হয়তো সেসব কথা মনে রেখে কোনো কাজ নেই। আটাশ বছর পরের সে হাট এখন গমগমে। যোগাযোগ ব্যবস্থার শনৈঃশনৈ উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগের জন্য মহীপুরেই তৈরি হয়েছে মহীপুর ব্রিজ। ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের মহীপুর ব্রিজ এখন এ অঞ্চলের দর্শনীয় বস্তু। প্রতিদিন বিকেলে এখানে ঘুরতে আসেন সুখী মানুষেরা। ২৮ বছর আগে সেখানে ছিল খেয়াঘাট। তাকিয়ে দেখলাম, মহীপুর হাটের প্রায় মাঝখানে আর পাকা রাস্তাটার শ খানিক গজ দূরে একটি ক্লিনিক। সেখানেই কি রাতের বেলা ঘুমিয়েছিলেন মোনাজাত উদ্দিন? সম্ভবত। সে রকমই লিখেছেন তিনি।
মহীপুর হাটের বাঁ দিক দিয়ে তিস্তার বাঁধ ধরে চলতে শুরু করল রিকশা। প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে। কিন্তু এদের মধ্যে প্যানকাটু বর্মণের মতো কাউকে দেখা গেল না। এ এলাকায় সবাই এখন বেশ সুখী। হাড্ডিচর্মসার, কোটর থেকে বেরিয়ে আসা চোখের কোনো মানুষ নেই। শিক্ষার হার বেড়েছে, সরকারি পরিসংখ্যান তা-ই বলে। অনেক স্কুল হয়েছে, চোখেও পড়ে সেটা। নদীর পারের লোকজন হাঁসের খামার তৈরি করেছে—মাংস আর ডিম দুটোই মিলছে। চরে চাষ হচ্ছে ভুট্টা আর ধান। তামাকের চাষ একটু কম হলেও আছে। মাঝখান থেকে তিস্তাই ক্ষয়ে গেছে। চরে-চরে জীর্ণ এ নদীকে কেউ এখন আর মহানদী বলে না। বয়স্করা মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মৃতির জাবর কাটেন। সম্ভবত নদীর এ মৃত্যু তাঁরা চাননি। ভাঙলেও নদী তাঁদের অস্তিত্বের অংশ ছিল।
একটা জনপদ বার্গার বা স্যান্ডুইচের মতো। ওপর আর নিচ থেকে দেখলে এক রকম। কামড় বসালে আর এক রকম। জনপদ আর মানুষের গল্প সরকারি পরিসংখ্যানের চোখে দেখলে এক রকম, রসিকের চোখে আরেক রকম, আর মোনাজাত উদ্দিনের চোখে অন্য রকম। বাম বা ডান চোখে দেখলে আলাদা আলাদা । এনজিও আর উন্নয়নের চোখে দেখলে অন্য রকম। কোন চোখে দেখবেন সে বিবেচনা আপনার। মোনাজাত উদ্দিন এক জটিল রাষ্ট্রীয় কাঠামো আর তার চেয়েও জটিল ভিলেজ পলিটিক্স দেখেছিলেন লক্ষ্মীটারীতে। কিন্তু লিংক-ফার্লঙের হিসেবে ভাঙতে থাকা পারিবারিক গল্পটা দেখেননি। হয়তো সেটা দেখা তাঁর উদ্দেশ্যও ছিল না। কিন্তু ২৮ বছর পরের লক্ষ্মীটারী ভাঙতে ভাঙতে এজমালি শব্দটি এ-তে এসে ঠেকেছে। ইংরেজি এ-র অর্থ একটি। একক। সিঙ্গেল। বহুত্বের ঠাঁই নেই সেখানে। শরিকি পুকুর, শরিকি উঠোন, শরিকি মাটি, শরিকি ছায়া, এজমালি রোদ...শব্দগুলো লক্ষ্মীটারীতে এখন ‘তিস্তার ভাঙন’ শব্দের মতোই ঐতিহাসিক। নুরুল ইসলাম মেম্বার কিংবা মহীপুর হাটের চায়ের দোকানদার আহমদের সময়টাই এখন লিংক-ফার্লঙের হিসেব করে কাটে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মঙ্গা কিংবা তিস্তার উন্মত্ত ঢেউ সামলাবার গল্প এখন নিখোঁজ। উন্মুক্ত অর্থনীতির যুগে সবাই এখন একক। নিঃসঙ্গ।
এজমালি রোদ গোধূলিতে। সূর্য তখন তিস্তার ওপারে কমলা আভা ছড়িয়ে ডুবতে চলেছে। আমরা চলেছি গঙ্গাচড়া শহরে। সন্ধ্যার শীত জেঁকে বসার আগেই পৌঁছাতে হবে সেখানে।
রজত কান্তি রায়, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন, আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে।
মোনাজাত উদ্দিন যখন ‘লক্ষ্মীটারী’ নামে তাঁর শেষ বইটি লেখেন তখন তাঁর বয়স ৪৯ বছর এবং আমার ১৪ বছর। লক্ষ্মীটারীতে গিয়েছি মোনাজাত উদ্দিন সেখানে যাওয়ার প্রায় ২৮ বছর পরের শীতকালে, এ বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি।
গঙ্গাচড়া থেকে সোজা যাওয়া যায় মহীপুর। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আমাকে নিয়ে চললেন ঘুরপথে। বারবার তাঁকে জিজ্ঞেস করছিলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি, না মানে এটা ইউনিয়ন; লক্ষ্মীটারী নামে কোনো গ্রাম নেই, বলেই চলছিলেন। আমিও রিকশায় বসে আরামে দুদিক দেখতে দেখতে চলেছি। আর আমার স্মৃতিতে দোলা দিয়ে যাচ্ছে গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে দেখা উত্তরবঙ্গের পরিবেশ ও রাস্তাঘাট। সে সময়ের বড় মাটির রাস্তাগুলো এখন পিচ ঢালা পথ। কোথাও চওড়া, কোথাও সরু। বাঁশের চাটাইয়ে ঘেরা বাড়ি। ওপরে টিনের অথবা খড়ের চালা। এখন টিনের চালাই বেশি। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়। সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার ধারে বাঁশের গায়ে শুকাতে দেওয়া গোবর নড়ি (পাটখড়িতে লাগানো গোবর)। গঙ্গাচড়ার এই অঞ্চল এখনো কিছুটা আশি-নব্বইয়ের দশকের মতো আছে। এখনো নিস্তরঙ্গ। তবে সমৃদ্ধির ছোঁয়া যে লেগেছে সেটা বোঝা যায় বিদ্যুতের খুঁটি, মোটর বাইক আর মাঝেমধ্যে ছাদপেটানো পাকা বাড়ি দেখে। শিহরণ জাগে, আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে কাঁধে ব্যাগ আর ক্যামেরা ঝুলিয়ে মোনাজাত উদ্দিন এই সব রাস্তায় ঘুরেছেন।
পুরোটাই যে এককালে তিস্তার চর ছিল, সেটা বোঝা যায় ভূমিরূপ দেখলেই। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার আগে পড়বে খানাটারী নামে একটি গ্রাম। রংপুর অঞ্চলে টারী শব্দটির অর্থ গ্রাম। যেমন দীঘলটারী, দর্জীটারী, শ্যাওড়াটারী...। খানাটারী পার হওয়ার সময় চোখে পড়ল আলুর খেত। যত দূর চোখ যায় শুধুই আলু। বিকেল বলে কোনো মানুষ নেই খেতে। আলুর গাছের পাতায় সকালের শিশির জমে আছে। শীত-বিকেলের কুয়াশামাখা আলোয় সেগুলো গাঢ় সবুজ। মাটির কাঁচা রাস্তা ধরে চলছে আমাদের অটোরিকশা। বাড়িগুলোর সামনের ছোট ছোট জমিতে চাষ করা হয়েছে রসুন, লাফা শাক। বাবর শাক—এতে হলুদ ফুল ফুটেছে। এগুলো বিক্রির জন্য নয়। বাড়িতে খাবারের জন্য। খানাটারীর একটি পাড়ার একটি দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। উৎসুক মানুষ তাকিয়ে দেখছে। বয়স্ক একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি বললেন, হয় হয় বাওয়া। এইটা লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন। যাইমেন কোনটে? বললাম, লক্ষ্মীটারী দেখতে এসেছি। তিনি হাসলেন। বললেন, দেইখবার কী আছে বাহে? আর কিছু না বলে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে চললাম। পাশেই মহীপুর জামে মসজিদের সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। মানে মহীপুর নামের একটি গ্রাম আমরা পার হচ্ছি।
এ রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে উঠলাম আনুর বাজারে। বিখ্যাত কারও নামে রাখা হয়েছে বাজারের নাম। যে রাস্তাটা খানাটারী থেকে আনুর বাজারের পাকা রাস্তায় লেগেছে, সেটা বেশ বড় তিন রাস্তার মোড়। বাজারটিও বেশ জমজমাট। সেই মোড়ের ওপরেই দেখা হলো নুরুল ইসলাম মেম্বারের সঙ্গে। তিনি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত মেম্বার ছিলেন। বয়স্ক বলে জিজ্ঞেস করলাম, বয়স কত চাচা? মেম্বার সাব জানালেন, বয়সবা কত হইল্ বাহে! ১৯৩২ সালে জন্ম হামার। হিসেব করে দেখলাম, নুরুল ইসলাম নামের যে মানুষটির সঙ্গে কথা বলছি তাঁর বয়স কমবেশি ৯০ বছর! কিন্তু তিনি দিব্যি বাজার করতে এসেছেন। অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানালেন, তিস্তার বানে একসময় কিছুই হতো না এলাকায়। এত দিনে লক্ষ্মীটারী এলাকার মানুষের কিছুটা সুখ হয়েছে। এখন এই এলাকায় আলু হয় প্রচুর। কিন্তু দাম পাঁচ টাকা কেজি।
এই আনুর বাজার থেকে মহীপুর প্রায় দুই কিলোমিটার। দুই হাটের মাঝখানে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ। রাস্তাটা পাকা। এটা কাকিনা রোড। রংপুর শহর থেকে এই রোড ধরে সোজা চলে যাওয়া যায় কাকিনা, তুষভাণ্ডার। তার পরে আরও দূরে লালমনিরহাট। সেগুলো তিস্তার ওপারের জায়গা। আনুর বাজার থেকে মহীপুর হাটের দিকে রওনা দিলাম পাকা রাস্তা ধরে। মাঝখানে থামলাম ইউনিয়ন পরিষদে।
মহীপুর একেবারে তিস্তা নদীর তীরে পুরোনো হাট। এই সেই মহীপুর হাট, হাকিমুদ্দিন নামের এক চাষি আজ থেকে ২৮ বছর আগে তামাকের ন্যায্য দাম না পাওয়ার জন্য শতশত মানুষের সামনে, প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি করতে আনা তামাকের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন। সেই খবর মানুষ জেনেছিল মোনাজাত উদ্দিনের কল্যাণে। আজ এত দিন পর মহীপুর কিংবা লক্ষ্মীটারীর মানুষ হাকিমুদ্দিন বা মোনাজাত উদ্দিন কারও নামই আর মনে রাখেনি। হয়তো সেসব কথা মনে রেখে কোনো কাজ নেই। আটাশ বছর পরের সে হাট এখন গমগমে। যোগাযোগ ব্যবস্থার শনৈঃশনৈ উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগের জন্য মহীপুরেই তৈরি হয়েছে মহীপুর ব্রিজ। ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের মহীপুর ব্রিজ এখন এ অঞ্চলের দর্শনীয় বস্তু। প্রতিদিন বিকেলে এখানে ঘুরতে আসেন সুখী মানুষেরা। ২৮ বছর আগে সেখানে ছিল খেয়াঘাট। তাকিয়ে দেখলাম, মহীপুর হাটের প্রায় মাঝখানে আর পাকা রাস্তাটার শ খানিক গজ দূরে একটি ক্লিনিক। সেখানেই কি রাতের বেলা ঘুমিয়েছিলেন মোনাজাত উদ্দিন? সম্ভবত। সে রকমই লিখেছেন তিনি।
মহীপুর হাটের বাঁ দিক দিয়ে তিস্তার বাঁধ ধরে চলতে শুরু করল রিকশা। প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে। কিন্তু এদের মধ্যে প্যানকাটু বর্মণের মতো কাউকে দেখা গেল না। এ এলাকায় সবাই এখন বেশ সুখী। হাড্ডিচর্মসার, কোটর থেকে বেরিয়ে আসা চোখের কোনো মানুষ নেই। শিক্ষার হার বেড়েছে, সরকারি পরিসংখ্যান তা-ই বলে। অনেক স্কুল হয়েছে, চোখেও পড়ে সেটা। নদীর পারের লোকজন হাঁসের খামার তৈরি করেছে—মাংস আর ডিম দুটোই মিলছে। চরে চাষ হচ্ছে ভুট্টা আর ধান। তামাকের চাষ একটু কম হলেও আছে। মাঝখান থেকে তিস্তাই ক্ষয়ে গেছে। চরে-চরে জীর্ণ এ নদীকে কেউ এখন আর মহানদী বলে না। বয়স্করা মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মৃতির জাবর কাটেন। সম্ভবত নদীর এ মৃত্যু তাঁরা চাননি। ভাঙলেও নদী তাঁদের অস্তিত্বের অংশ ছিল।
একটা জনপদ বার্গার বা স্যান্ডুইচের মতো। ওপর আর নিচ থেকে দেখলে এক রকম। কামড় বসালে আর এক রকম। জনপদ আর মানুষের গল্প সরকারি পরিসংখ্যানের চোখে দেখলে এক রকম, রসিকের চোখে আরেক রকম, আর মোনাজাত উদ্দিনের চোখে অন্য রকম। বাম বা ডান চোখে দেখলে আলাদা আলাদা । এনজিও আর উন্নয়নের চোখে দেখলে অন্য রকম। কোন চোখে দেখবেন সে বিবেচনা আপনার। মোনাজাত উদ্দিন এক জটিল রাষ্ট্রীয় কাঠামো আর তার চেয়েও জটিল ভিলেজ পলিটিক্স দেখেছিলেন লক্ষ্মীটারীতে। কিন্তু লিংক-ফার্লঙের হিসেবে ভাঙতে থাকা পারিবারিক গল্পটা দেখেননি। হয়তো সেটা দেখা তাঁর উদ্দেশ্যও ছিল না। কিন্তু ২৮ বছর পরের লক্ষ্মীটারী ভাঙতে ভাঙতে এজমালি শব্দটি এ-তে এসে ঠেকেছে। ইংরেজি এ-র অর্থ একটি। একক। সিঙ্গেল। বহুত্বের ঠাঁই নেই সেখানে। শরিকি পুকুর, শরিকি উঠোন, শরিকি মাটি, শরিকি ছায়া, এজমালি রোদ...শব্দগুলো লক্ষ্মীটারীতে এখন ‘তিস্তার ভাঙন’ শব্দের মতোই ঐতিহাসিক। নুরুল ইসলাম মেম্বার কিংবা মহীপুর হাটের চায়ের দোকানদার আহমদের সময়টাই এখন লিংক-ফার্লঙের হিসেব করে কাটে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মঙ্গা কিংবা তিস্তার উন্মত্ত ঢেউ সামলাবার গল্প এখন নিখোঁজ। উন্মুক্ত অর্থনীতির যুগে সবাই এখন একক। নিঃসঙ্গ।
এজমালি রোদ গোধূলিতে। সূর্য তখন তিস্তার ওপারে কমলা আভা ছড়িয়ে ডুবতে চলেছে। আমরা চলেছি গঙ্গাচড়া শহরে। সন্ধ্যার শীত জেঁকে বসার আগেই পৌঁছাতে হবে সেখানে।
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন, আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে।
মোনাজাত উদ্দিন যখন ‘লক্ষ্মীটারী’ নামে তাঁর শেষ বইটি লেখেন তখন তাঁর বয়স ৪৯ বছর এবং আমার ১৪ বছর। লক্ষ্মীটারীতে গিয়েছি মোনাজাত উদ্দিন সেখানে যাওয়ার প্রায় ২৮ বছর পরের শীতকালে, এ বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি।
গঙ্গাচড়া থেকে সোজা যাওয়া যায় মহীপুর। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আমাকে নিয়ে চললেন ঘুরপথে। বারবার তাঁকে জিজ্ঞেস করছিলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি, না মানে এটা ইউনিয়ন; লক্ষ্মীটারী নামে কোনো গ্রাম নেই, বলেই চলছিলেন। আমিও রিকশায় বসে আরামে দুদিক দেখতে দেখতে চলেছি। আর আমার স্মৃতিতে দোলা দিয়ে যাচ্ছে গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে দেখা উত্তরবঙ্গের পরিবেশ ও রাস্তাঘাট। সে সময়ের বড় মাটির রাস্তাগুলো এখন পিচ ঢালা পথ। কোথাও চওড়া, কোথাও সরু। বাঁশের চাটাইয়ে ঘেরা বাড়ি। ওপরে টিনের অথবা খড়ের চালা। এখন টিনের চালাই বেশি। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়। সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার ধারে বাঁশের গায়ে শুকাতে দেওয়া গোবর নড়ি (পাটখড়িতে লাগানো গোবর)। গঙ্গাচড়ার এই অঞ্চল এখনো কিছুটা আশি-নব্বইয়ের দশকের মতো আছে। এখনো নিস্তরঙ্গ। তবে সমৃদ্ধির ছোঁয়া যে লেগেছে সেটা বোঝা যায় বিদ্যুতের খুঁটি, মোটর বাইক আর মাঝেমধ্যে ছাদপেটানো পাকা বাড়ি দেখে। শিহরণ জাগে, আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে কাঁধে ব্যাগ আর ক্যামেরা ঝুলিয়ে মোনাজাত উদ্দিন এই সব রাস্তায় ঘুরেছেন।
পুরোটাই যে এককালে তিস্তার চর ছিল, সেটা বোঝা যায় ভূমিরূপ দেখলেই। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার আগে পড়বে খানাটারী নামে একটি গ্রাম। রংপুর অঞ্চলে টারী শব্দটির অর্থ গ্রাম। যেমন দীঘলটারী, দর্জীটারী, শ্যাওড়াটারী...। খানাটারী পার হওয়ার সময় চোখে পড়ল আলুর খেত। যত দূর চোখ যায় শুধুই আলু। বিকেল বলে কোনো মানুষ নেই খেতে। আলুর গাছের পাতায় সকালের শিশির জমে আছে। শীত-বিকেলের কুয়াশামাখা আলোয় সেগুলো গাঢ় সবুজ। মাটির কাঁচা রাস্তা ধরে চলছে আমাদের অটোরিকশা। বাড়িগুলোর সামনের ছোট ছোট জমিতে চাষ করা হয়েছে রসুন, লাফা শাক। বাবর শাক—এতে হলুদ ফুল ফুটেছে। এগুলো বিক্রির জন্য নয়। বাড়িতে খাবারের জন্য। খানাটারীর একটি পাড়ার একটি দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। উৎসুক মানুষ তাকিয়ে দেখছে। বয়স্ক একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এটাই কি লক্ষ্মীটারী? তিনি বললেন, হয় হয় বাওয়া। এইটা লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন। যাইমেন কোনটে? বললাম, লক্ষ্মীটারী দেখতে এসেছি। তিনি হাসলেন। বললেন, দেইখবার কী আছে বাহে? আর কিছু না বলে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে চললাম। পাশেই মহীপুর জামে মসজিদের সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। মানে মহীপুর নামের একটি গ্রাম আমরা পার হচ্ছি।
এ রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে উঠলাম আনুর বাজারে। বিখ্যাত কারও নামে রাখা হয়েছে বাজারের নাম। যে রাস্তাটা খানাটারী থেকে আনুর বাজারের পাকা রাস্তায় লেগেছে, সেটা বেশ বড় তিন রাস্তার মোড়। বাজারটিও বেশ জমজমাট। সেই মোড়ের ওপরেই দেখা হলো নুরুল ইসলাম মেম্বারের সঙ্গে। তিনি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত মেম্বার ছিলেন। বয়স্ক বলে জিজ্ঞেস করলাম, বয়স কত চাচা? মেম্বার সাব জানালেন, বয়সবা কত হইল্ বাহে! ১৯৩২ সালে জন্ম হামার। হিসেব করে দেখলাম, নুরুল ইসলাম নামের যে মানুষটির সঙ্গে কথা বলছি তাঁর বয়স কমবেশি ৯০ বছর! কিন্তু তিনি দিব্যি বাজার করতে এসেছেন। অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানালেন, তিস্তার বানে একসময় কিছুই হতো না এলাকায়। এত দিনে লক্ষ্মীটারী এলাকার মানুষের কিছুটা সুখ হয়েছে। এখন এই এলাকায় আলু হয় প্রচুর। কিন্তু দাম পাঁচ টাকা কেজি।
এই আনুর বাজার থেকে মহীপুর প্রায় দুই কিলোমিটার। দুই হাটের মাঝখানে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ। রাস্তাটা পাকা। এটা কাকিনা রোড। রংপুর শহর থেকে এই রোড ধরে সোজা চলে যাওয়া যায় কাকিনা, তুষভাণ্ডার। তার পরে আরও দূরে লালমনিরহাট। সেগুলো তিস্তার ওপারের জায়গা। আনুর বাজার থেকে মহীপুর হাটের দিকে রওনা দিলাম পাকা রাস্তা ধরে। মাঝখানে থামলাম ইউনিয়ন পরিষদে।
মহীপুর একেবারে তিস্তা নদীর তীরে পুরোনো হাট। এই সেই মহীপুর হাট, হাকিমুদ্দিন নামের এক চাষি আজ থেকে ২৮ বছর আগে তামাকের ন্যায্য দাম না পাওয়ার জন্য শতশত মানুষের সামনে, প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি করতে আনা তামাকের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন। সেই খবর মানুষ জেনেছিল মোনাজাত উদ্দিনের কল্যাণে। আজ এত দিন পর মহীপুর কিংবা লক্ষ্মীটারীর মানুষ হাকিমুদ্দিন বা মোনাজাত উদ্দিন কারও নামই আর মনে রাখেনি। হয়তো সেসব কথা মনে রেখে কোনো কাজ নেই। আটাশ বছর পরের সে হাট এখন গমগমে। যোগাযোগ ব্যবস্থার শনৈঃশনৈ উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগের জন্য মহীপুরেই তৈরি হয়েছে মহীপুর ব্রিজ। ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের মহীপুর ব্রিজ এখন এ অঞ্চলের দর্শনীয় বস্তু। প্রতিদিন বিকেলে এখানে ঘুরতে আসেন সুখী মানুষেরা। ২৮ বছর আগে সেখানে ছিল খেয়াঘাট। তাকিয়ে দেখলাম, মহীপুর হাটের প্রায় মাঝখানে আর পাকা রাস্তাটার শ খানিক গজ দূরে একটি ক্লিনিক। সেখানেই কি রাতের বেলা ঘুমিয়েছিলেন মোনাজাত উদ্দিন? সম্ভবত। সে রকমই লিখেছেন তিনি।
মহীপুর হাটের বাঁ দিক দিয়ে তিস্তার বাঁধ ধরে চলতে শুরু করল রিকশা। প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে। কিন্তু এদের মধ্যে প্যানকাটু বর্মণের মতো কাউকে দেখা গেল না। এ এলাকায় সবাই এখন বেশ সুখী। হাড্ডিচর্মসার, কোটর থেকে বেরিয়ে আসা চোখের কোনো মানুষ নেই। শিক্ষার হার বেড়েছে, সরকারি পরিসংখ্যান তা-ই বলে। অনেক স্কুল হয়েছে, চোখেও পড়ে সেটা। নদীর পারের লোকজন হাঁসের খামার তৈরি করেছে—মাংস আর ডিম দুটোই মিলছে। চরে চাষ হচ্ছে ভুট্টা আর ধান। তামাকের চাষ একটু কম হলেও আছে। মাঝখান থেকে তিস্তাই ক্ষয়ে গেছে। চরে-চরে জীর্ণ এ নদীকে কেউ এখন আর মহানদী বলে না। বয়স্করা মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মৃতির জাবর কাটেন। সম্ভবত নদীর এ মৃত্যু তাঁরা চাননি। ভাঙলেও নদী তাঁদের অস্তিত্বের অংশ ছিল।
একটা জনপদ বার্গার বা স্যান্ডুইচের মতো। ওপর আর নিচ থেকে দেখলে এক রকম। কামড় বসালে আর এক রকম। জনপদ আর মানুষের গল্প সরকারি পরিসংখ্যানের চোখে দেখলে এক রকম, রসিকের চোখে আরেক রকম, আর মোনাজাত উদ্দিনের চোখে অন্য রকম। বাম বা ডান চোখে দেখলে আলাদা আলাদা । এনজিও আর উন্নয়নের চোখে দেখলে অন্য রকম। কোন চোখে দেখবেন সে বিবেচনা আপনার। মোনাজাত উদ্দিন এক জটিল রাষ্ট্রীয় কাঠামো আর তার চেয়েও জটিল ভিলেজ পলিটিক্স দেখেছিলেন লক্ষ্মীটারীতে। কিন্তু লিংক-ফার্লঙের হিসেবে ভাঙতে থাকা পারিবারিক গল্পটা দেখেননি। হয়তো সেটা দেখা তাঁর উদ্দেশ্যও ছিল না। কিন্তু ২৮ বছর পরের লক্ষ্মীটারী ভাঙতে ভাঙতে এজমালি শব্দটি এ-তে এসে ঠেকেছে। ইংরেজি এ-র অর্থ একটি। একক। সিঙ্গেল। বহুত্বের ঠাঁই নেই সেখানে। শরিকি পুকুর, শরিকি উঠোন, শরিকি মাটি, শরিকি ছায়া, এজমালি রোদ...শব্দগুলো লক্ষ্মীটারীতে এখন ‘তিস্তার ভাঙন’ শব্দের মতোই ঐতিহাসিক। নুরুল ইসলাম মেম্বার কিংবা মহীপুর হাটের চায়ের দোকানদার আহমদের সময়টাই এখন লিংক-ফার্লঙের হিসেব করে কাটে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মঙ্গা কিংবা তিস্তার উন্মত্ত ঢেউ সামলাবার গল্প এখন নিখোঁজ। উন্মুক্ত অর্থনীতির যুগে সবাই এখন একক। নিঃসঙ্গ।
এজমালি রোদ গোধূলিতে। সূর্য তখন তিস্তার ওপারে কমলা আভা ছড়িয়ে ডুবতে চলেছে। আমরা চলেছি গঙ্গাচড়া শহরে। সন্ধ্যার শীত জেঁকে বসার আগেই পৌঁছাতে হবে সেখানে।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
অটোরিকশাওয়ালা আমাকে ঠকিয়েছেন –বিষয়টি যখন বুঝলাম, তখন হাসি পেল। চালক ভেবেছিলেন, একটু ঘুরিয়ে কিছু বেশি টাকা নেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের একাংশ ঘোরা হয়ে গেছে আমার। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী একটি ইউনিয়নের নাম। তিস্তা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সে জনপদের কথা সবিস্তারে বলে গেছেন
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫