Ajker Patrika

যমুনায় সেতুর জরিপ, উচ্ছ্বাস

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫৯
Thumbnail image

বগুড়ার সারিয়াকান্দি এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সড়কপথে সংযোগ স্থাপনের জন্য যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতিমধ্যে সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌঘাটে ট্রাফিক জরিপ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এ খবরে যমুনার দুই তীরের মানুষেরা উচ্ছ্বসিত। তাঁদের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার।

সেতুটি নির্মাণ করা হলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ সুগম হবে। বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা যেতে সড়কপথের দূরত্ব কমবে ৮০ কিলোমিটার। উত্তরাঞ্চলের মানুষ ময়মনসিংহ এবং রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে কম সময়ে। 
সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌঘাটে গত বুধবার সকালে ট্রাফিক জরিপ শুরু করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এ জরিপ আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চলার কথা। 
জরিপ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যানবাহন থামিয়ে চালকদের কাছে নানা বিষয়ে তথ্য জানতে চাইছেন। এর মধ্যে রয়েছে নদী পারাপার হতে কত ভাড়া লাগে, কত সময় লাগে, সেতু হলে তাঁরা কত টাকা টোল দিতে পারবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯১২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট চালু হয়। পরে ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। এই নৌপথে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও বগুড়া জেলার বাসিন্দারা বাহাদুরাবাদ স্টেশন থেকে ট্রেনে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ যাতায়াত করতেন।

এদিকে ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর গতিপথ বদলে যায়। এতে নাব্যতাসংকট দেখা দেয়। এ কারণে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর প্রথমে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পরে মালবাহী ওয়াগন পারাপার বন্ধ হয়ে যায়।এরপর শুরু হয় যমুনার এপারে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালীতলা ও মথুরাপাড়া নৌঘাট হয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও কাজলাঘাটে মানুষের যাতায়াত।

সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌঘাটের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। অথচ সড়কপথে মাদারগঞ্জ যেতে হলে সারিয়াকান্দি থেকে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জেলা শহর বগুড়ায় যেতে হয়। সারিয়াকান্দি থেকে মাদারগঞ্জ নৌকায় জনপ্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। রিজার্ভ নৌকা ভাড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা।মোটরসাইকেলের ভাড়া ৮০টাকা এবং কুলি খরচ দুই পাশে মোট ৬০ টাকা।

সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হলে উত্তরের মানুষের সঙ্গে আবার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন হবে। কৃষিপণ্যের দ্রুত সরবরাহ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং ঢাকার সড়ক-মহাসড়কে যানজট কমবে। তাই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার খবর পেয়ে দুই পাড়ের বাসিন্দারা আনন্দিত। 
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির ইসলাম। তিনি সারিয়াকান্দির হাটফুলবাড়ির বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সেতুটি নির্মিত হলে যখন ইচ্ছে বাড়ি আসা যাবে। আবার ভার্সিটি যাওয়া যাবে। বিষয়টি সত্যিই আনন্দের। এ উপজেলার অনন্ত ২০ জন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। আমাদের জন্য এটি সত্যি সুখবর।’ 
সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল করিম মন্টু বলেন, সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌপথে যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি। সেতুটি নির্মাণের জরিপ হচ্ছে শোনার পর এলাকাবাসী খুবই আনন্দিত।

সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান মতি বলেন, সেতু নির্মিত হলে যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমবে। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দলের সার্ভিস সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বগুড়া ও জামালপুর জেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে সেতু নির্মাণের জন্য সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌঘাটে ট্রাফিক জরিপ চলছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এ সেতু নির্মাণ সারিয়াকান্দিবাসীর জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। সেতুটি নির্মিত হলে যমুনা নদীর পূর্ব এবং পশ্চিমের কয়েকটি বিভাগের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত