ইসলামছড়ার মুখে বাঁধে শুকিয়ে গেছে খাল, কৃষির ক্ষতি

ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনাবাদি হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে খালের পাশে থাকা প্রায় ১০০ হেক্টর কৃষিজমি।

উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়াকুল এলাকার ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বোয়ালিয়া খালের উজানে বারোমাসি পাহাড়ি ছড়ার পানি তাঁদের চাষাবাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলস সেই ছড়ায় বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় পানিসংকটে চাষাবাদে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে ১০০ হেক্টর জমির ফসল। তাঁরা এই সংকট থেকে উত্তরণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন। পরিদর্শন শেষে তিনি খালের মুখে থাকা ছোট বাঁধটি অপসারণ করেন। এ ছাড়া ছড়ার মাথাভাঙ্গা এলাকায় থাকা বাঁধটি আগামী দুই দিনের মধ্যে অপসারণ করতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ইউএনও।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বোয়ালিয়া খালের দুই পাশে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির বেশির ভাগ তিন ফসলি জমি। এ মৌসুমে এসব জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়। আর এ চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন তিন শতাধিক কৃষক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধ দেওয়ার কারণে ছড়া থেকে সৃষ্ট খালটি পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। খালের পাশের জমিগুলোতে কৃষকেরা শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি রোপণ করলেও পানিসংকটে নিয়মিত সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বোয়ালিয়াকুল এলাকার কৃষক দিদারুল আলম বলেন, শীতকালীন চাষাবাদে তাঁদের পানির একমাত্র উৎস পাহাড়ি ছড়াটিতে চার বছর আগে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে ইউনিটেক্স স্পিনিং মিল কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে প্রতিবছর এই মৌসুমে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাঁধ সামান্য খুলে দিলে কিছু পানি পান। শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি এবারও পানি না ছাড়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। সমস্যা সমাধানে অভিযোগ দেওয়ার পর ইউএনও খালের মুখের ছোট বাঁধটি খুলে দেওয়ায় তাঁদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে মূল বাঁধ অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত সংকট নিরসন হবে না।

বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, ছড়াটির মুখে গত বছরও বাঁধ দিয়ে পানি আটকে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।এবারও দুই কিলোমিটার পাহাড়ের ভেতরে মাথাভাঙ্গা এলাকায় বাঁধ দিয়ে ছড়ার পানি আটকে দিয়েছে। কৃষকদের চাষাবাদে পানিসংকটের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পানি ছাড়তে অনুরোধ জানালেও তারা তা এড়িয়ে গেছে।

ইউনিটেক্স গ্রুপের পরিচালক ফারহান আহমেদ বলেন, ইউএনওর ফোন পেয়ে তিনি পানি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এখনো কেন পানি ছাড়া হয়নি, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, কৃষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও তাৎক্ষণিক ইউনিটেক্স কর্তৃপক্ষকে ফোনে পানি দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবু পানি দেয়নি বলে কৃষকেরা জানান। পরে গতকাল দুপুরে ইউএনওর সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় খালের মুখের বাঁধটি অপসারণ করেন ইউএনও। এ ছাড়া ছড়ার মাথাভাঙ্গা এলাকায় থাকা মূল বাঁধটি দুই দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, তাঁরা যেমন শিল্পকে সচল রাখতে চান, ঠিক তেমনি বাঁচিয়ে রাখতে চান কৃষিকে। কৃষকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। খালের মুখে থাকা বাঁধটি অপসারণ করেছেন। দুই দিনের মধ্যে মূল বাঁধ খুলে দিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।