Ajker Patrika

শিগগির যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা কম

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৪: ১৫
শিগগির যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা কম

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু উপায়ে করার জন্য সহায়তা হিসেবে ঘোষিত ভিসা নীতি কী ফল দেয়, আপাতত সেটাই দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এতে কাজ না হলে কী করবে দেশটি? এ বিষয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের মত, মার্কিন সরকারের রয়েসয়ে এগোনোর সম্ভাবনাই বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা তাঁরা দেখছেন না। তবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সে ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা তেমন নেই বলে মনে করেন তাঁরা। 

যুক্তরাষ্ট্র ‘পুরস্কার ও সাজার’ সমন্বয়ে তৈরি নীতি প্রয়োগ করে থাকে বলে জানান দেশটির একজন গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান, যিনি ওয়াশিংটনে দ্য উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক। 

গতকাল বুধবার ঢাকায় হোটেল র‍্যাডিসনে আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে কুগেলম্যান বলেন, মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের জন্য র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা হিসেবে ভিসা নীতি দেওয়ার ফল কী হয়, তা দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের আগপর্যন্ত কথাবার্তা ও দর-কষাকষি চলতে থাকবে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়ার কথা বলা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের নতুন নিষেধাজ্ঞা আসবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। 

নিষেধাজ্ঞা যদি আসেই, তা যখনই হোক, কেমন হতে পারে, এমন প্রশ্নে কুগেলম্যান বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ অনেক রকম হতে পারে। কোনো কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আমি বিস্মিত হব, যদি যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দিকে যায়।’ 

কারণ হিসেবে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদি শুল্ক আরোপ করে (বাংলাদেশ থেকে) আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো কোনো ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র আরোপ করতে যায়, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু রাজনৈতিক কারণে এমনটি করলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা বড় ধরনের ভুল হবে।

মার্কিন এই বিশেষজ্ঞ যা বললেন, সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয় বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবিরের কাছে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির সরকার ও নাগরিকদের ওপর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সাধারণত তা বিবেচনায় নিয়ে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশে যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখে, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। 

আর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, তা মূলত রাজনৈতিক কারণে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। 

নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে চলেছে বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) সমমনা দলগুলো। তা না হলে ভোটে অংশ নেবে না, বলছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে কদিন আগে ঢাকা ঘুরে গেলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দেন তিনি। 

এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি দেশ তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে চায়। 

এ প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালের নীতি নিয়ে হয়তো তাঁর কিছু উদ্বেগ থাকতে পারে। কিন্তু এখানে সরকারের নীতির সমালোচনা করলে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টার কথা বলা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশও সরকারের অনেক নীতির সমালোচনা করছে। তারা সবাই সরকারকে সরাতে চায়, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। 

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহ নিতান্তই দেশটির আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক নীতির অংশ। 

এ বিষয়ে কুগেলম্যানের মত, শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব দেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ওই সব দেশের সঙ্গে অন্য শক্তিশালী দেশগুলোর (যেমন চীন ও রাশিয়া) সম্পর্ক কেমন, তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র নিজের বলয়ে নিতে চায়। এটা যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সম্ভব হয়নি, এটা যুক্তরাষ্ট্র জানে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশকে আংশিকভাবে হলেও চীনের প্রভাবমুক্ত রাখা। 

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রর কৌশলগত নিবিড় সম্পর্কের কারণে কখনো কখনো কিছু বিষয়ে দেশটির মত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারতের মত প্রাধান্য পায়, বিষয়টি এমন নয়। ভারতের উদ্বেগ দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় না। যদি তাই হতো, তাহলে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিসা নীতি হতো না। 

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে এখনো সব দিকেই কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতিও জড়িয়ে গেছে। সে কারণে শেষ পর্যন্ত হয়তো একটা সমাধান হবে। তবে তা যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই মঙ্গল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

জামায়াতের কেউ ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে পারবে না: আটঘরিয়ায় হাবিব

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

দায়িত্ব পেয়েই ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ মাসুদ রানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত