সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন। মন্ত্রীদের বক্তব্য আমাদের শুনতে হয়। না শুনে উপায় থাকে না। চোখ-কান খোলা রাখার দরকার পড়ে না। বক্তব্যগুলো চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে। সেসব বক্তব্য সাধারণত আলো দেয় না, অনেক ক্ষেত্রে অন্ধকারই বরং বৃদ্ধি করে। এরই মধ্যে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো এসেছে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্যটি। গত ১৯ আগস্টের কাগজে পড়েছি সেটা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল বৈষম্য বাড়াচ্ছে’এবং ‘খুব সহসা যে তা কমবে এমন সম্ভাবনা নেই।’এ ধরনের সত্য কথা গুরুত্বপূর্ণ লোকদের কাছ থেকে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল সারা বিশ্বে অত্যন্ত প্রশংসিত, অন্যরা অনুকরণে ভীষণ আগ্রহী—এসব কথাই শুনে আসছি। ওই উন্নয়ন যে বৈষম্য বৃদ্ধি করে অধিকাংশ মানুষের দুঃখ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, এ কথাটা তো এমনকি জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকেও সচরাচর শুনতে পাই না। পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং এটা আমাদের মনে পড়ে যে উন্নয়ন পাকিস্তান আমলেও বিস্তর হয়েছে। কিন্তু ওই উন্নতি বৈষম্যমূলক ছিল বলেই তার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে যেতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে। ভয়ংকর রকমের বিপদ মাথায় নিয়ে। তবে পরিকল্পনামন্ত্রীর এই বক্তব্য যে তাঁর সঙ্গের লোকদের কানে পৌঁছাবে এবং উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত হবে, এমন ভরসা একেবারেই নেই। তাঁর সঙ্গের লোকেরা উন্নয়নের বাজনা বাজাচ্ছেন এবং সেই নিনাদে তাঁদের কর্ণে বিপরীত শব্দের প্রবেশ দুঃসাধ্য হওয়ারই কথা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেশবাসীর জন্য সুখ যে বয়ে আনেনি, সেটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। উন্নয়ন বেড়েছে কিন্তু কর্মসংস্থান তার সঙ্গে যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে, তেমনটি ঘটেনি। অথচ মেহনতি মানুষের শ্রমের ওপর ভর করেই সৌধটি দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে খাবে কী? আয়-উপার্জনের কী বন্দোবস্ত? একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। পাবনা অঞ্চলের এক দম্পতি ঢাকা শহরে কাজ করতেন পোশাক কারখানায়। কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরত গেছেন। গ্রামে গিয়ে কাজ না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছেন। দুজন। একসঙ্গে। (কালের কণ্ঠ, ১২-০৭-২১)
ওদিকে আমাদের জন্য মহা সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে বন্যা। উন্নতি বন্যার অভিশাপ নিরসনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কার্যকর হয়নি। বন্যা ফি বছর হয়, সমাধানের দাবি ওঠে, কিন্তু তারপর যে সেই। চাপা পড়ে যায়। এটাই বাস্তবতা। বন্যার কথা খুব করে বলতেন মওলানা ভাসানী। তিনি কৃষকদের দুর্দশা জানতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৭ নম্বরটি ছিল, ‘খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করা হইবে।’ ১৯৬৫ সালে ঘোষিত ন্যাপের ১৪ দফা ছিল গোটা পাকিস্তানের কর্মসূচি, সেখানেও ১৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা প্রতিরোধ করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।’ বহু কষ্টে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা গেছে, কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরেও বন্যার অভিশাপ আমাদের কাঁধ থেকে নামেনি। প্রধান কারণ সমস্যাটা বিত্তবানদের স্পর্শ করে না। পাকিস্তান আমলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এবং গিয়েছিলও যে বন্যা সমস্যার সমাধান মূলত নদীর সমস্যা। যে জন্য ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সময় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সেই ফারাক্কা কার্যকর করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য শুষ্ক মৌসুমে কম পানি ও বর্ষায় প্লাবনের দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে। মওলানা ভাসানী সমস্যাটির গুরুত্ব কখনো ভোলেননি। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এবং অসুস্থ অবস্থায়ও ফারাক্কা লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিস্তাসহ অন্যান্য নদী নিয়েও মস্ত মস্ত সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ভুক্তভোগী হচ্ছি। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্র-কর্তাদের তেমন দুশ্চিন্তা দেখা যায় না। ওদিকে বর্ষা এলেই নদীর ভাঙনকাজ শুরু হয়ে যায়। শত শত মানুষ গৃহহীন হয়। জমি কমে আসে। আবার গ্রীষ্মের সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় নিদারুণ খরা। খাওয়ার পানির আকাল পড়ে। উন্নতির উৎসবের নিচে হারিয়ে যায় বিপন্ন মানুষের উদ্বেগ ও আর্তনাদ।
তবে উন্নতির যথেচ্ছাচারের সংবাদ ও প্রমাণ দেখা যাচ্ছে যত্রতত্রই। যেমন সংসদীয় নির্বাচনে। অভিনবত্বের দিক থেকে আমাদের গত দুটি নির্বাচনই অসামান্য; তবে দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমটিতে বিরোধী দল অংশ নেয়নি; ফলে সরকারি দল ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হতে পেরেছে। দ্বিতীয়টিতে বিরোধী দল কোনো মতে হাজির হয়েছিল; তবে এবার ভোটারদের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি, সরকারি স্বেচ্ছাসেবকেরা ভোটারদের হয়ে মধ্যরাতেই ভোটদানের কষ্টকর কাজটি সম্পন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক তিনটি উপনির্বাচনে দেখা গেল আরেক ধাপ উন্নতি। প্রার্থী কেনাবেচা। ভোট কারচুপি, ভোট কেনাবেচা—এসব আগে শুনেছি, উন্নত পরিস্থিতিতে এবার খবর পাওয়া গেল প্রার্থী কেনাবেচার। বিএনপি শিগগিরই আর ভোটে দাঁড়াচ্ছে না; সেই ফাঁকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হাজির করেছিল তিনটি আসনেই। মনেপ্রাণে সরকার-সমর্থক হলেও তারাই তো এখন বিরোধী দল। ঢাকা ও কুমিল্লা আসনে প্রার্থীরা বিক্রি হয়ে গেছেন। দাম পেয়েছেন খুব ভালো। লক্ষ্মীপুরের প্রার্থীও বিক্রি হওয়ার আশায় ছিলেন; কিন্তু মতিগতি টের পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থীকে বসে পড়তে দেননি, দাঁড় করিয়েই রেখেছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। সরকারি দলের প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ভোট; নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রাপ্তি ১ হাজার ৫৬৮ ভোট। লক্ষ্মীপুরের ওই নির্বাচনী আসনটির অবশ্য একটি পূর্ব ইতিহাস আছে। আগের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে ওই আসনটি পড়েছিল জাপার ভাগে। জাপার সেই প্রার্থী বসে যান, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন; পরে তাঁর স্ত্রীও সংসদের সদস্য হন নারীদের সুরক্ষিত আসন থেকে। এরপর তাঁরা সরকারি দলে যোগ দেন এবং এমপি সাহেব মানব পাচারসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে বহু কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। তবে ধরা পড়েন, শাস্তি হয়; আসন হারান। ক্রয়-বিক্রয়ের ওই শূন্য আসনেই উপনির্বাচন। সেবার জাপার যে প্রার্থী বসে পড়েছিলেন, তিনি তাঁর ওই কাজের বিনিময়ে কয়েক কোটি পেয়েছিলেন বলে শোনা গেছে। জাপার এবারকার প্রার্থীর ক্ষোভ, বসে পড়ার সুযোগ থেকে তাঁকে কেন বঞ্চিত করা হলো? এক যাত্রায় ফল কেন পৃথক হবে?
প্রার্থী বেচাকেনার খবরটা পত্রিকায় যেভাবে এসেছে তাতে কৌতুকের আভাস রয়েছে। ইত্তেফাক লিখেছে, ‘বিনা ভোটে এমপি হওয়ার নতুন খেলা। বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জাপার প্রার্থী’। সমকালের হেডিং একটু ভিন্ন ধরনের, ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা’। প্রথম আলো: ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা “বিক্রি” হচ্ছেন’। কালের কণ্ঠ লিখেছে, ‘জাপার প্রার্থী সরে দাঁড়াচ্ছেন, ক্ষুব্ধ নেতৃত্ব’। পত্রিকাটির খবরে আরও জানা যাচ্ছে, ‘ভোটে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন প্রার্থীর’। প্রশ্নটা করেছেন লক্ষ্মীপুরের প্রার্থী, যিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দণ্ডায়মান থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছে যে তিনি বলির পাঁঠা হয়েছেন। মনে হওয়ার পেছনে যুক্তি যে নেই, তা তো নয়। কোথায় ১ লাখ আর কোথায় ১ হাজার ভোট।
ভবিষ্যতে দেশে আরও কত রকমের উন্নতি হবে, কে জানে। তবে প্রশ্ন থাকবে, পুঁজিবাদের এই যে স্রোত, একে রোধিবে এখন কোন বাঁধ? না, পুঁজিবাদী বাঁধ দিয়ে পুঁজিবাদের প্লাবন রোধ করা যাবে না; সামাজিক মালিকানার দিকে যেতে হবে এবং খুব জরুরিভাবে সেই ব্যবস্থা দরকার হবে, যাতে জনপ্রতিনিধিরা টাকার জোরে নির্বাচিত হবেন না। তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা হবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা, অন্য কিছু নয়। কিন্তু তেমনটি ঘটার আশু কোনো সম্ভাবনা কি দেখা যাচ্ছে? ব্যাপার-স্যাপার মনে হবে কৌতুকের, কিন্তু আসলে কী তাই?
নানা দিক থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। চালের দাম, তেলের দাম বাড়ছে। বলা হচ্ছে সিন্ডিকেট দায়ী। তা সিন্ডিকেটকে কি সরকার চেনে না? সিন্ডিকেট ভাঙা হচ্ছে না কেন? এমনকি ব্যক্তিগত আলাপও তো দেখছি এখন অনিরাপদ। টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রস্তুত রয়েছে খপ্ করে ধরে ফেলার জন্য। কোভিড-১৯ তো তার কাজ করছেই, ডেঙ্গুও আগের অবস্থায় থাকছে না। তার প্রকোপে উন্নতি ঘটেছে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লেগেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। বজ্রপাতেও প্রতিবছর মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর একটা বড় কারণ বৃক্ষনিধন। গাছ যে কতটা উপকারী, সেটা বোঝা হয় না। তা বৃক্ষনিধনের দায়টা কার? এককথায় বলতে গেলে দায় পুঁজিবাদী উন্নয়নের। দেখলাম এই উন্নয়নকারীদের বিরুদ্ধে ভালো একটা অবস্থান নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্ট ভারতের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ৪০ কোটি রুপি জরিমানা করেছেন, ৬০০ গাছ কেটে ফেলার জন্য। কলকাতা শহরের একেবারে কেন্দ্রে একটি খোলা জায়গায় বহুতল আবাসন নির্মাণের অছিলায় প্রতিষ্ঠানটি ওই ৬০০ বৃক্ষ নিধন করেছিল। হাইকোর্টের হিসাবে এতে ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি রুপি। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে জরিমানা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হবে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার কাজে। এটা একটা ভালো দৃষ্টান্ত এবং প্রয়োজনীয় বার্তাপ্রেরণ। কিন্তু কেবল এতে যে কাজ হবে, তা তো নয়; বদলানো চাই উন্নয়নের পুঁজিবাদী ধারণা ও ধারাকেই।

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন। মন্ত্রীদের বক্তব্য আমাদের শুনতে হয়। না শুনে উপায় থাকে না। চোখ-কান খোলা রাখার দরকার পড়ে না। বক্তব্যগুলো চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে। সেসব বক্তব্য সাধারণত আলো দেয় না, অনেক ক্ষেত্রে অন্ধকারই বরং বৃদ্ধি করে। এরই মধ্যে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো এসেছে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্যটি। গত ১৯ আগস্টের কাগজে পড়েছি সেটা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল বৈষম্য বাড়াচ্ছে’এবং ‘খুব সহসা যে তা কমবে এমন সম্ভাবনা নেই।’এ ধরনের সত্য কথা গুরুত্বপূর্ণ লোকদের কাছ থেকে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল সারা বিশ্বে অত্যন্ত প্রশংসিত, অন্যরা অনুকরণে ভীষণ আগ্রহী—এসব কথাই শুনে আসছি। ওই উন্নয়ন যে বৈষম্য বৃদ্ধি করে অধিকাংশ মানুষের দুঃখ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, এ কথাটা তো এমনকি জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকেও সচরাচর শুনতে পাই না। পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং এটা আমাদের মনে পড়ে যে উন্নয়ন পাকিস্তান আমলেও বিস্তর হয়েছে। কিন্তু ওই উন্নতি বৈষম্যমূলক ছিল বলেই তার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে যেতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে। ভয়ংকর রকমের বিপদ মাথায় নিয়ে। তবে পরিকল্পনামন্ত্রীর এই বক্তব্য যে তাঁর সঙ্গের লোকদের কানে পৌঁছাবে এবং উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত হবে, এমন ভরসা একেবারেই নেই। তাঁর সঙ্গের লোকেরা উন্নয়নের বাজনা বাজাচ্ছেন এবং সেই নিনাদে তাঁদের কর্ণে বিপরীত শব্দের প্রবেশ দুঃসাধ্য হওয়ারই কথা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেশবাসীর জন্য সুখ যে বয়ে আনেনি, সেটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। উন্নয়ন বেড়েছে কিন্তু কর্মসংস্থান তার সঙ্গে যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে, তেমনটি ঘটেনি। অথচ মেহনতি মানুষের শ্রমের ওপর ভর করেই সৌধটি দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে খাবে কী? আয়-উপার্জনের কী বন্দোবস্ত? একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। পাবনা অঞ্চলের এক দম্পতি ঢাকা শহরে কাজ করতেন পোশাক কারখানায়। কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরত গেছেন। গ্রামে গিয়ে কাজ না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছেন। দুজন। একসঙ্গে। (কালের কণ্ঠ, ১২-০৭-২১)
ওদিকে আমাদের জন্য মহা সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে বন্যা। উন্নতি বন্যার অভিশাপ নিরসনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কার্যকর হয়নি। বন্যা ফি বছর হয়, সমাধানের দাবি ওঠে, কিন্তু তারপর যে সেই। চাপা পড়ে যায়। এটাই বাস্তবতা। বন্যার কথা খুব করে বলতেন মওলানা ভাসানী। তিনি কৃষকদের দুর্দশা জানতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৭ নম্বরটি ছিল, ‘খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করা হইবে।’ ১৯৬৫ সালে ঘোষিত ন্যাপের ১৪ দফা ছিল গোটা পাকিস্তানের কর্মসূচি, সেখানেও ১৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা প্রতিরোধ করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।’ বহু কষ্টে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা গেছে, কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরেও বন্যার অভিশাপ আমাদের কাঁধ থেকে নামেনি। প্রধান কারণ সমস্যাটা বিত্তবানদের স্পর্শ করে না। পাকিস্তান আমলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এবং গিয়েছিলও যে বন্যা সমস্যার সমাধান মূলত নদীর সমস্যা। যে জন্য ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সময় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সেই ফারাক্কা কার্যকর করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য শুষ্ক মৌসুমে কম পানি ও বর্ষায় প্লাবনের দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে। মওলানা ভাসানী সমস্যাটির গুরুত্ব কখনো ভোলেননি। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এবং অসুস্থ অবস্থায়ও ফারাক্কা লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিস্তাসহ অন্যান্য নদী নিয়েও মস্ত মস্ত সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ভুক্তভোগী হচ্ছি। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্র-কর্তাদের তেমন দুশ্চিন্তা দেখা যায় না। ওদিকে বর্ষা এলেই নদীর ভাঙনকাজ শুরু হয়ে যায়। শত শত মানুষ গৃহহীন হয়। জমি কমে আসে। আবার গ্রীষ্মের সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় নিদারুণ খরা। খাওয়ার পানির আকাল পড়ে। উন্নতির উৎসবের নিচে হারিয়ে যায় বিপন্ন মানুষের উদ্বেগ ও আর্তনাদ।
তবে উন্নতির যথেচ্ছাচারের সংবাদ ও প্রমাণ দেখা যাচ্ছে যত্রতত্রই। যেমন সংসদীয় নির্বাচনে। অভিনবত্বের দিক থেকে আমাদের গত দুটি নির্বাচনই অসামান্য; তবে দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমটিতে বিরোধী দল অংশ নেয়নি; ফলে সরকারি দল ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হতে পেরেছে। দ্বিতীয়টিতে বিরোধী দল কোনো মতে হাজির হয়েছিল; তবে এবার ভোটারদের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি, সরকারি স্বেচ্ছাসেবকেরা ভোটারদের হয়ে মধ্যরাতেই ভোটদানের কষ্টকর কাজটি সম্পন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক তিনটি উপনির্বাচনে দেখা গেল আরেক ধাপ উন্নতি। প্রার্থী কেনাবেচা। ভোট কারচুপি, ভোট কেনাবেচা—এসব আগে শুনেছি, উন্নত পরিস্থিতিতে এবার খবর পাওয়া গেল প্রার্থী কেনাবেচার। বিএনপি শিগগিরই আর ভোটে দাঁড়াচ্ছে না; সেই ফাঁকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হাজির করেছিল তিনটি আসনেই। মনেপ্রাণে সরকার-সমর্থক হলেও তারাই তো এখন বিরোধী দল। ঢাকা ও কুমিল্লা আসনে প্রার্থীরা বিক্রি হয়ে গেছেন। দাম পেয়েছেন খুব ভালো। লক্ষ্মীপুরের প্রার্থীও বিক্রি হওয়ার আশায় ছিলেন; কিন্তু মতিগতি টের পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থীকে বসে পড়তে দেননি, দাঁড় করিয়েই রেখেছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। সরকারি দলের প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ভোট; নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রাপ্তি ১ হাজার ৫৬৮ ভোট। লক্ষ্মীপুরের ওই নির্বাচনী আসনটির অবশ্য একটি পূর্ব ইতিহাস আছে। আগের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে ওই আসনটি পড়েছিল জাপার ভাগে। জাপার সেই প্রার্থী বসে যান, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন; পরে তাঁর স্ত্রীও সংসদের সদস্য হন নারীদের সুরক্ষিত আসন থেকে। এরপর তাঁরা সরকারি দলে যোগ দেন এবং এমপি সাহেব মানব পাচারসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে বহু কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। তবে ধরা পড়েন, শাস্তি হয়; আসন হারান। ক্রয়-বিক্রয়ের ওই শূন্য আসনেই উপনির্বাচন। সেবার জাপার যে প্রার্থী বসে পড়েছিলেন, তিনি তাঁর ওই কাজের বিনিময়ে কয়েক কোটি পেয়েছিলেন বলে শোনা গেছে। জাপার এবারকার প্রার্থীর ক্ষোভ, বসে পড়ার সুযোগ থেকে তাঁকে কেন বঞ্চিত করা হলো? এক যাত্রায় ফল কেন পৃথক হবে?
প্রার্থী বেচাকেনার খবরটা পত্রিকায় যেভাবে এসেছে তাতে কৌতুকের আভাস রয়েছে। ইত্তেফাক লিখেছে, ‘বিনা ভোটে এমপি হওয়ার নতুন খেলা। বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জাপার প্রার্থী’। সমকালের হেডিং একটু ভিন্ন ধরনের, ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা’। প্রথম আলো: ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা “বিক্রি” হচ্ছেন’। কালের কণ্ঠ লিখেছে, ‘জাপার প্রার্থী সরে দাঁড়াচ্ছেন, ক্ষুব্ধ নেতৃত্ব’। পত্রিকাটির খবরে আরও জানা যাচ্ছে, ‘ভোটে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন প্রার্থীর’। প্রশ্নটা করেছেন লক্ষ্মীপুরের প্রার্থী, যিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দণ্ডায়মান থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছে যে তিনি বলির পাঁঠা হয়েছেন। মনে হওয়ার পেছনে যুক্তি যে নেই, তা তো নয়। কোথায় ১ লাখ আর কোথায় ১ হাজার ভোট।
ভবিষ্যতে দেশে আরও কত রকমের উন্নতি হবে, কে জানে। তবে প্রশ্ন থাকবে, পুঁজিবাদের এই যে স্রোত, একে রোধিবে এখন কোন বাঁধ? না, পুঁজিবাদী বাঁধ দিয়ে পুঁজিবাদের প্লাবন রোধ করা যাবে না; সামাজিক মালিকানার দিকে যেতে হবে এবং খুব জরুরিভাবে সেই ব্যবস্থা দরকার হবে, যাতে জনপ্রতিনিধিরা টাকার জোরে নির্বাচিত হবেন না। তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা হবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা, অন্য কিছু নয়। কিন্তু তেমনটি ঘটার আশু কোনো সম্ভাবনা কি দেখা যাচ্ছে? ব্যাপার-স্যাপার মনে হবে কৌতুকের, কিন্তু আসলে কী তাই?
নানা দিক থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। চালের দাম, তেলের দাম বাড়ছে। বলা হচ্ছে সিন্ডিকেট দায়ী। তা সিন্ডিকেটকে কি সরকার চেনে না? সিন্ডিকেট ভাঙা হচ্ছে না কেন? এমনকি ব্যক্তিগত আলাপও তো দেখছি এখন অনিরাপদ। টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রস্তুত রয়েছে খপ্ করে ধরে ফেলার জন্য। কোভিড-১৯ তো তার কাজ করছেই, ডেঙ্গুও আগের অবস্থায় থাকছে না। তার প্রকোপে উন্নতি ঘটেছে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লেগেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। বজ্রপাতেও প্রতিবছর মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর একটা বড় কারণ বৃক্ষনিধন। গাছ যে কতটা উপকারী, সেটা বোঝা হয় না। তা বৃক্ষনিধনের দায়টা কার? এককথায় বলতে গেলে দায় পুঁজিবাদী উন্নয়নের। দেখলাম এই উন্নয়নকারীদের বিরুদ্ধে ভালো একটা অবস্থান নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্ট ভারতের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ৪০ কোটি রুপি জরিমানা করেছেন, ৬০০ গাছ কেটে ফেলার জন্য। কলকাতা শহরের একেবারে কেন্দ্রে একটি খোলা জায়গায় বহুতল আবাসন নির্মাণের অছিলায় প্রতিষ্ঠানটি ওই ৬০০ বৃক্ষ নিধন করেছিল। হাইকোর্টের হিসাবে এতে ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি রুপি। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে জরিমানা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হবে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার কাজে। এটা একটা ভালো দৃষ্টান্ত এবং প্রয়োজনীয় বার্তাপ্রেরণ। কিন্তু কেবল এতে যে কাজ হবে, তা তো নয়; বদলানো চাই উন্নয়নের পুঁজিবাদী ধারণা ও ধারাকেই।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন। মন্ত্রীদের বক্তব্য আমাদের শুনতে হয়। না শুনে উপায় থাকে না। চোখ-কান খোলা রাখার দরকার পড়ে না। বক্তব্যগুলো চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে। সেসব বক্তব্য সাধারণত আলো দেয় না, অনেক ক্ষেত্রে অন্ধকারই বরং বৃদ্ধি করে। এরই মধ্যে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো এসেছে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্যটি। গত ১৯ আগস্টের কাগজে পড়েছি সেটা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল বৈষম্য বাড়াচ্ছে’এবং ‘খুব সহসা যে তা কমবে এমন সম্ভাবনা নেই।’এ ধরনের সত্য কথা গুরুত্বপূর্ণ লোকদের কাছ থেকে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল সারা বিশ্বে অত্যন্ত প্রশংসিত, অন্যরা অনুকরণে ভীষণ আগ্রহী—এসব কথাই শুনে আসছি। ওই উন্নয়ন যে বৈষম্য বৃদ্ধি করে অধিকাংশ মানুষের দুঃখ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, এ কথাটা তো এমনকি জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকেও সচরাচর শুনতে পাই না। পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং এটা আমাদের মনে পড়ে যে উন্নয়ন পাকিস্তান আমলেও বিস্তর হয়েছে। কিন্তু ওই উন্নতি বৈষম্যমূলক ছিল বলেই তার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে যেতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে। ভয়ংকর রকমের বিপদ মাথায় নিয়ে। তবে পরিকল্পনামন্ত্রীর এই বক্তব্য যে তাঁর সঙ্গের লোকদের কানে পৌঁছাবে এবং উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত হবে, এমন ভরসা একেবারেই নেই। তাঁর সঙ্গের লোকেরা উন্নয়নের বাজনা বাজাচ্ছেন এবং সেই নিনাদে তাঁদের কর্ণে বিপরীত শব্দের প্রবেশ দুঃসাধ্য হওয়ারই কথা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেশবাসীর জন্য সুখ যে বয়ে আনেনি, সেটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। উন্নয়ন বেড়েছে কিন্তু কর্মসংস্থান তার সঙ্গে যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে, তেমনটি ঘটেনি। অথচ মেহনতি মানুষের শ্রমের ওপর ভর করেই সৌধটি দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে খাবে কী? আয়-উপার্জনের কী বন্দোবস্ত? একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। পাবনা অঞ্চলের এক দম্পতি ঢাকা শহরে কাজ করতেন পোশাক কারখানায়। কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরত গেছেন। গ্রামে গিয়ে কাজ না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছেন। দুজন। একসঙ্গে। (কালের কণ্ঠ, ১২-০৭-২১)
ওদিকে আমাদের জন্য মহা সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে বন্যা। উন্নতি বন্যার অভিশাপ নিরসনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কার্যকর হয়নি। বন্যা ফি বছর হয়, সমাধানের দাবি ওঠে, কিন্তু তারপর যে সেই। চাপা পড়ে যায়। এটাই বাস্তবতা। বন্যার কথা খুব করে বলতেন মওলানা ভাসানী। তিনি কৃষকদের দুর্দশা জানতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৭ নম্বরটি ছিল, ‘খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করা হইবে।’ ১৯৬৫ সালে ঘোষিত ন্যাপের ১৪ দফা ছিল গোটা পাকিস্তানের কর্মসূচি, সেখানেও ১৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা প্রতিরোধ করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।’ বহু কষ্টে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা গেছে, কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরেও বন্যার অভিশাপ আমাদের কাঁধ থেকে নামেনি। প্রধান কারণ সমস্যাটা বিত্তবানদের স্পর্শ করে না। পাকিস্তান আমলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এবং গিয়েছিলও যে বন্যা সমস্যার সমাধান মূলত নদীর সমস্যা। যে জন্য ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সময় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সেই ফারাক্কা কার্যকর করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য শুষ্ক মৌসুমে কম পানি ও বর্ষায় প্লাবনের দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে। মওলানা ভাসানী সমস্যাটির গুরুত্ব কখনো ভোলেননি। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এবং অসুস্থ অবস্থায়ও ফারাক্কা লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিস্তাসহ অন্যান্য নদী নিয়েও মস্ত মস্ত সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ভুক্তভোগী হচ্ছি। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্র-কর্তাদের তেমন দুশ্চিন্তা দেখা যায় না। ওদিকে বর্ষা এলেই নদীর ভাঙনকাজ শুরু হয়ে যায়। শত শত মানুষ গৃহহীন হয়। জমি কমে আসে। আবার গ্রীষ্মের সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় নিদারুণ খরা। খাওয়ার পানির আকাল পড়ে। উন্নতির উৎসবের নিচে হারিয়ে যায় বিপন্ন মানুষের উদ্বেগ ও আর্তনাদ।
তবে উন্নতির যথেচ্ছাচারের সংবাদ ও প্রমাণ দেখা যাচ্ছে যত্রতত্রই। যেমন সংসদীয় নির্বাচনে। অভিনবত্বের দিক থেকে আমাদের গত দুটি নির্বাচনই অসামান্য; তবে দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমটিতে বিরোধী দল অংশ নেয়নি; ফলে সরকারি দল ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হতে পেরেছে। দ্বিতীয়টিতে বিরোধী দল কোনো মতে হাজির হয়েছিল; তবে এবার ভোটারদের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি, সরকারি স্বেচ্ছাসেবকেরা ভোটারদের হয়ে মধ্যরাতেই ভোটদানের কষ্টকর কাজটি সম্পন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক তিনটি উপনির্বাচনে দেখা গেল আরেক ধাপ উন্নতি। প্রার্থী কেনাবেচা। ভোট কারচুপি, ভোট কেনাবেচা—এসব আগে শুনেছি, উন্নত পরিস্থিতিতে এবার খবর পাওয়া গেল প্রার্থী কেনাবেচার। বিএনপি শিগগিরই আর ভোটে দাঁড়াচ্ছে না; সেই ফাঁকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হাজির করেছিল তিনটি আসনেই। মনেপ্রাণে সরকার-সমর্থক হলেও তারাই তো এখন বিরোধী দল। ঢাকা ও কুমিল্লা আসনে প্রার্থীরা বিক্রি হয়ে গেছেন। দাম পেয়েছেন খুব ভালো। লক্ষ্মীপুরের প্রার্থীও বিক্রি হওয়ার আশায় ছিলেন; কিন্তু মতিগতি টের পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থীকে বসে পড়তে দেননি, দাঁড় করিয়েই রেখেছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। সরকারি দলের প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ভোট; নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রাপ্তি ১ হাজার ৫৬৮ ভোট। লক্ষ্মীপুরের ওই নির্বাচনী আসনটির অবশ্য একটি পূর্ব ইতিহাস আছে। আগের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে ওই আসনটি পড়েছিল জাপার ভাগে। জাপার সেই প্রার্থী বসে যান, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন; পরে তাঁর স্ত্রীও সংসদের সদস্য হন নারীদের সুরক্ষিত আসন থেকে। এরপর তাঁরা সরকারি দলে যোগ দেন এবং এমপি সাহেব মানব পাচারসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে বহু কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। তবে ধরা পড়েন, শাস্তি হয়; আসন হারান। ক্রয়-বিক্রয়ের ওই শূন্য আসনেই উপনির্বাচন। সেবার জাপার যে প্রার্থী বসে পড়েছিলেন, তিনি তাঁর ওই কাজের বিনিময়ে কয়েক কোটি পেয়েছিলেন বলে শোনা গেছে। জাপার এবারকার প্রার্থীর ক্ষোভ, বসে পড়ার সুযোগ থেকে তাঁকে কেন বঞ্চিত করা হলো? এক যাত্রায় ফল কেন পৃথক হবে?
প্রার্থী বেচাকেনার খবরটা পত্রিকায় যেভাবে এসেছে তাতে কৌতুকের আভাস রয়েছে। ইত্তেফাক লিখেছে, ‘বিনা ভোটে এমপি হওয়ার নতুন খেলা। বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জাপার প্রার্থী’। সমকালের হেডিং একটু ভিন্ন ধরনের, ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা’। প্রথম আলো: ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা “বিক্রি” হচ্ছেন’। কালের কণ্ঠ লিখেছে, ‘জাপার প্রার্থী সরে দাঁড়াচ্ছেন, ক্ষুব্ধ নেতৃত্ব’। পত্রিকাটির খবরে আরও জানা যাচ্ছে, ‘ভোটে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন প্রার্থীর’। প্রশ্নটা করেছেন লক্ষ্মীপুরের প্রার্থী, যিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দণ্ডায়মান থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছে যে তিনি বলির পাঁঠা হয়েছেন। মনে হওয়ার পেছনে যুক্তি যে নেই, তা তো নয়। কোথায় ১ লাখ আর কোথায় ১ হাজার ভোট।
ভবিষ্যতে দেশে আরও কত রকমের উন্নতি হবে, কে জানে। তবে প্রশ্ন থাকবে, পুঁজিবাদের এই যে স্রোত, একে রোধিবে এখন কোন বাঁধ? না, পুঁজিবাদী বাঁধ দিয়ে পুঁজিবাদের প্লাবন রোধ করা যাবে না; সামাজিক মালিকানার দিকে যেতে হবে এবং খুব জরুরিভাবে সেই ব্যবস্থা দরকার হবে, যাতে জনপ্রতিনিধিরা টাকার জোরে নির্বাচিত হবেন না। তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা হবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা, অন্য কিছু নয়। কিন্তু তেমনটি ঘটার আশু কোনো সম্ভাবনা কি দেখা যাচ্ছে? ব্যাপার-স্যাপার মনে হবে কৌতুকের, কিন্তু আসলে কী তাই?
নানা দিক থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। চালের দাম, তেলের দাম বাড়ছে। বলা হচ্ছে সিন্ডিকেট দায়ী। তা সিন্ডিকেটকে কি সরকার চেনে না? সিন্ডিকেট ভাঙা হচ্ছে না কেন? এমনকি ব্যক্তিগত আলাপও তো দেখছি এখন অনিরাপদ। টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রস্তুত রয়েছে খপ্ করে ধরে ফেলার জন্য। কোভিড-১৯ তো তার কাজ করছেই, ডেঙ্গুও আগের অবস্থায় থাকছে না। তার প্রকোপে উন্নতি ঘটেছে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লেগেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। বজ্রপাতেও প্রতিবছর মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর একটা বড় কারণ বৃক্ষনিধন। গাছ যে কতটা উপকারী, সেটা বোঝা হয় না। তা বৃক্ষনিধনের দায়টা কার? এককথায় বলতে গেলে দায় পুঁজিবাদী উন্নয়নের। দেখলাম এই উন্নয়নকারীদের বিরুদ্ধে ভালো একটা অবস্থান নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্ট ভারতের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ৪০ কোটি রুপি জরিমানা করেছেন, ৬০০ গাছ কেটে ফেলার জন্য। কলকাতা শহরের একেবারে কেন্দ্রে একটি খোলা জায়গায় বহুতল আবাসন নির্মাণের অছিলায় প্রতিষ্ঠানটি ওই ৬০০ বৃক্ষ নিধন করেছিল। হাইকোর্টের হিসাবে এতে ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি রুপি। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে জরিমানা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হবে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার কাজে। এটা একটা ভালো দৃষ্টান্ত এবং প্রয়োজনীয় বার্তাপ্রেরণ। কিন্তু কেবল এতে যে কাজ হবে, তা তো নয়; বদলানো চাই উন্নয়নের পুঁজিবাদী ধারণা ও ধারাকেই।

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন। মন্ত্রীদের বক্তব্য আমাদের শুনতে হয়। না শুনে উপায় থাকে না। চোখ-কান খোলা রাখার দরকার পড়ে না। বক্তব্যগুলো চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে। সেসব বক্তব্য সাধারণত আলো দেয় না, অনেক ক্ষেত্রে অন্ধকারই বরং বৃদ্ধি করে। এরই মধ্যে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো এসেছে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্যটি। গত ১৯ আগস্টের কাগজে পড়েছি সেটা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল বৈষম্য বাড়াচ্ছে’এবং ‘খুব সহসা যে তা কমবে এমন সম্ভাবনা নেই।’এ ধরনের সত্য কথা গুরুত্বপূর্ণ লোকদের কাছ থেকে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল সারা বিশ্বে অত্যন্ত প্রশংসিত, অন্যরা অনুকরণে ভীষণ আগ্রহী—এসব কথাই শুনে আসছি। ওই উন্নয়ন যে বৈষম্য বৃদ্ধি করে অধিকাংশ মানুষের দুঃখ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, এ কথাটা তো এমনকি জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকেও সচরাচর শুনতে পাই না। পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং এটা আমাদের মনে পড়ে যে উন্নয়ন পাকিস্তান আমলেও বিস্তর হয়েছে। কিন্তু ওই উন্নতি বৈষম্যমূলক ছিল বলেই তার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে যেতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে। ভয়ংকর রকমের বিপদ মাথায় নিয়ে। তবে পরিকল্পনামন্ত্রীর এই বক্তব্য যে তাঁর সঙ্গের লোকদের কানে পৌঁছাবে এবং উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত হবে, এমন ভরসা একেবারেই নেই। তাঁর সঙ্গের লোকেরা উন্নয়নের বাজনা বাজাচ্ছেন এবং সেই নিনাদে তাঁদের কর্ণে বিপরীত শব্দের প্রবেশ দুঃসাধ্য হওয়ারই কথা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেশবাসীর জন্য সুখ যে বয়ে আনেনি, সেটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। উন্নয়ন বেড়েছে কিন্তু কর্মসংস্থান তার সঙ্গে যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে, তেমনটি ঘটেনি। অথচ মেহনতি মানুষের শ্রমের ওপর ভর করেই সৌধটি দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে খাবে কী? আয়-উপার্জনের কী বন্দোবস্ত? একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। পাবনা অঞ্চলের এক দম্পতি ঢাকা শহরে কাজ করতেন পোশাক কারখানায়। কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরত গেছেন। গ্রামে গিয়ে কাজ না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছেন। দুজন। একসঙ্গে। (কালের কণ্ঠ, ১২-০৭-২১)
ওদিকে আমাদের জন্য মহা সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে বন্যা। উন্নতি বন্যার অভিশাপ নিরসনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কার্যকর হয়নি। বন্যা ফি বছর হয়, সমাধানের দাবি ওঠে, কিন্তু তারপর যে সেই। চাপা পড়ে যায়। এটাই বাস্তবতা। বন্যার কথা খুব করে বলতেন মওলানা ভাসানী। তিনি কৃষকদের দুর্দশা জানতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৭ নম্বরটি ছিল, ‘খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করা হইবে।’ ১৯৬৫ সালে ঘোষিত ন্যাপের ১৪ দফা ছিল গোটা পাকিস্তানের কর্মসূচি, সেখানেও ১৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা প্রতিরোধ করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।’ বহু কষ্টে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা গেছে, কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরেও বন্যার অভিশাপ আমাদের কাঁধ থেকে নামেনি। প্রধান কারণ সমস্যাটা বিত্তবানদের স্পর্শ করে না। পাকিস্তান আমলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এবং গিয়েছিলও যে বন্যা সমস্যার সমাধান মূলত নদীর সমস্যা। যে জন্য ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সময় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সেই ফারাক্কা কার্যকর করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য শুষ্ক মৌসুমে কম পানি ও বর্ষায় প্লাবনের দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে। মওলানা ভাসানী সমস্যাটির গুরুত্ব কখনো ভোলেননি। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এবং অসুস্থ অবস্থায়ও ফারাক্কা লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তিস্তাসহ অন্যান্য নদী নিয়েও মস্ত মস্ত সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ভুক্তভোগী হচ্ছি। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্র-কর্তাদের তেমন দুশ্চিন্তা দেখা যায় না। ওদিকে বর্ষা এলেই নদীর ভাঙনকাজ শুরু হয়ে যায়। শত শত মানুষ গৃহহীন হয়। জমি কমে আসে। আবার গ্রীষ্মের সময় অনেক এলাকায় দেখা দেয় নিদারুণ খরা। খাওয়ার পানির আকাল পড়ে। উন্নতির উৎসবের নিচে হারিয়ে যায় বিপন্ন মানুষের উদ্বেগ ও আর্তনাদ।
তবে উন্নতির যথেচ্ছাচারের সংবাদ ও প্রমাণ দেখা যাচ্ছে যত্রতত্রই। যেমন সংসদীয় নির্বাচনে। অভিনবত্বের দিক থেকে আমাদের গত দুটি নির্বাচনই অসামান্য; তবে দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমটিতে বিরোধী দল অংশ নেয়নি; ফলে সরকারি দল ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হতে পেরেছে। দ্বিতীয়টিতে বিরোধী দল কোনো মতে হাজির হয়েছিল; তবে এবার ভোটারদের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি, সরকারি স্বেচ্ছাসেবকেরা ভোটারদের হয়ে মধ্যরাতেই ভোটদানের কষ্টকর কাজটি সম্পন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক তিনটি উপনির্বাচনে দেখা গেল আরেক ধাপ উন্নতি। প্রার্থী কেনাবেচা। ভোট কারচুপি, ভোট কেনাবেচা—এসব আগে শুনেছি, উন্নত পরিস্থিতিতে এবার খবর পাওয়া গেল প্রার্থী কেনাবেচার। বিএনপি শিগগিরই আর ভোটে দাঁড়াচ্ছে না; সেই ফাঁকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হাজির করেছিল তিনটি আসনেই। মনেপ্রাণে সরকার-সমর্থক হলেও তারাই তো এখন বিরোধী দল। ঢাকা ও কুমিল্লা আসনে প্রার্থীরা বিক্রি হয়ে গেছেন। দাম পেয়েছেন খুব ভালো। লক্ষ্মীপুরের প্রার্থীও বিক্রি হওয়ার আশায় ছিলেন; কিন্তু মতিগতি টের পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থীকে বসে পড়তে দেননি, দাঁড় করিয়েই রেখেছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। সরকারি দলের প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ভোট; নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রাপ্তি ১ হাজার ৫৬৮ ভোট। লক্ষ্মীপুরের ওই নির্বাচনী আসনটির অবশ্য একটি পূর্ব ইতিহাস আছে। আগের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে ওই আসনটি পড়েছিল জাপার ভাগে। জাপার সেই প্রার্থী বসে যান, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন; পরে তাঁর স্ত্রীও সংসদের সদস্য হন নারীদের সুরক্ষিত আসন থেকে। এরপর তাঁরা সরকারি দলে যোগ দেন এবং এমপি সাহেব মানব পাচারসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে বহু কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। তবে ধরা পড়েন, শাস্তি হয়; আসন হারান। ক্রয়-বিক্রয়ের ওই শূন্য আসনেই উপনির্বাচন। সেবার জাপার যে প্রার্থী বসে পড়েছিলেন, তিনি তাঁর ওই কাজের বিনিময়ে কয়েক কোটি পেয়েছিলেন বলে শোনা গেছে। জাপার এবারকার প্রার্থীর ক্ষোভ, বসে পড়ার সুযোগ থেকে তাঁকে কেন বঞ্চিত করা হলো? এক যাত্রায় ফল কেন পৃথক হবে?
প্রার্থী বেচাকেনার খবরটা পত্রিকায় যেভাবে এসেছে তাতে কৌতুকের আভাস রয়েছে। ইত্তেফাক লিখেছে, ‘বিনা ভোটে এমপি হওয়ার নতুন খেলা। বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জাপার প্রার্থী’। সমকালের হেডিং একটু ভিন্ন ধরনের, ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা’। প্রথম আলো: ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা “বিক্রি” হচ্ছেন’। কালের কণ্ঠ লিখেছে, ‘জাপার প্রার্থী সরে দাঁড়াচ্ছেন, ক্ষুব্ধ নেতৃত্ব’। পত্রিকাটির খবরে আরও জানা যাচ্ছে, ‘ভোটে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন প্রার্থীর’। প্রশ্নটা করেছেন লক্ষ্মীপুরের প্রার্থী, যিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দণ্ডায়মান থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছে যে তিনি বলির পাঁঠা হয়েছেন। মনে হওয়ার পেছনে যুক্তি যে নেই, তা তো নয়। কোথায় ১ লাখ আর কোথায় ১ হাজার ভোট।
ভবিষ্যতে দেশে আরও কত রকমের উন্নতি হবে, কে জানে। তবে প্রশ্ন থাকবে, পুঁজিবাদের এই যে স্রোত, একে রোধিবে এখন কোন বাঁধ? না, পুঁজিবাদী বাঁধ দিয়ে পুঁজিবাদের প্লাবন রোধ করা যাবে না; সামাজিক মালিকানার দিকে যেতে হবে এবং খুব জরুরিভাবে সেই ব্যবস্থা দরকার হবে, যাতে জনপ্রতিনিধিরা টাকার জোরে নির্বাচিত হবেন না। তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা হবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা, অন্য কিছু নয়। কিন্তু তেমনটি ঘটার আশু কোনো সম্ভাবনা কি দেখা যাচ্ছে? ব্যাপার-স্যাপার মনে হবে কৌতুকের, কিন্তু আসলে কী তাই?
নানা দিক থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। চালের দাম, তেলের দাম বাড়ছে। বলা হচ্ছে সিন্ডিকেট দায়ী। তা সিন্ডিকেটকে কি সরকার চেনে না? সিন্ডিকেট ভাঙা হচ্ছে না কেন? এমনকি ব্যক্তিগত আলাপও তো দেখছি এখন অনিরাপদ। টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রস্তুত রয়েছে খপ্ করে ধরে ফেলার জন্য। কোভিড-১৯ তো তার কাজ করছেই, ডেঙ্গুও আগের অবস্থায় থাকছে না। তার প্রকোপে উন্নতি ঘটেছে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লেগেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। বজ্রপাতেও প্রতিবছর মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর একটা বড় কারণ বৃক্ষনিধন। গাছ যে কতটা উপকারী, সেটা বোঝা হয় না। তা বৃক্ষনিধনের দায়টা কার? এককথায় বলতে গেলে দায় পুঁজিবাদী উন্নয়নের। দেখলাম এই উন্নয়নকারীদের বিরুদ্ধে ভালো একটা অবস্থান নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্ট ভারতের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ৪০ কোটি রুপি জরিমানা করেছেন, ৬০০ গাছ কেটে ফেলার জন্য। কলকাতা শহরের একেবারে কেন্দ্রে একটি খোলা জায়গায় বহুতল আবাসন নির্মাণের অছিলায় প্রতিষ্ঠানটি ওই ৬০০ বৃক্ষ নিধন করেছিল। হাইকোর্টের হিসাবে এতে ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি রুপি। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে জরিমানা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হবে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার কাজে। এটা একটা ভালো দৃষ্টান্ত এবং প্রয়োজনীয় বার্তাপ্রেরণ। কিন্তু কেবল এতে যে কাজ হবে, তা তো নয়; বদলানো চাই উন্নয়নের পুঁজিবাদী ধারণা ও ধারাকেই।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন
২৯ ডিসেম্বর ২০২১
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন
২৯ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন
২৯ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরে উন্নতি যে হয়েছে, তা ঠিক। শত বিপদের মধ্যেও ওই উন্নয়ন থেমে নেই, নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে উন্নতি যে এক বিশেষ প্রকারের, এ-সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের দিয়েছেন
২৯ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫