ড. মইনুল ইসলাম

একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে যত দিন এই হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা কাঠামো চাঙা থাকবে, তত দিন ডলারের দাম স্থিতিশীল হবে না, কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তেই থাকবে। আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম যত থাকবে, হুন্ডিওয়ালারা তার চেয়ে ৭-৮ টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনে নেবে পুঁজি পাচারকারীদের কাছে হুন্ডি ডলারের প্রবল চাহিদার কারণে। পুঁজি পাচারকারীদের কাছে ১ ডলারের দাম ১১০ টাকা হলো, নাকি ১২০ টাকা হলো তাতে কিছুই যায়-আসে না, কারণ বেশির ভাগ পাচারকারী যেহেতু তাদের অবৈধ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যেতেই হুন্ডি ব্যবস্থার সহায়তা নিয়ে থাকে, তাই এ দেশে ডলারের দামকে বাজার ব্যবস্থার কাছে সোপর্দ করে সুফল পাওয়ার পরিবর্তে বিপদকে ডেকে আনা হবে, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। হুন্ডিওয়ালারা ‘হুন্ডি ডলারের’ চাহিদাকারীদের প্রয়োজন মোতাবেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে আকর্ষণীয় দামে (৭-৮ টাকা বেশি দামে) ডলার সংগ্রহ করেই যাবে। এভাবে লাগামহীনভাবে ডলারের দাম ক্রমাগতভাবে বেড়ে ১ ডলার ১৩০-১৪০-১৫০ টাকায় পৌঁছে গেলে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া যেভাবে দাবড়ানো শুরু করবে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশের আমদানি ব্যয় এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়তেই থাকবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও তাহলে থামানো যাবে না। সাধারণ জনজীবনও এর ফলে অসহনীয় বিপর্যয়ে পতিত হবে। অতএব, আমার মতে সরকারের এখনকার করণীয় হলো হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য অবিলম্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর দমন-কার্যক্রম বাস্তবায়নে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সময় এ দেশে এখনো আসেনি।
আমার ব্যাখ্যা দেখুন: 
 ডলার বাজারের বর্তমান লাগামহীন অস্থিরতার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিদেশে অব্যাহত পুঁজি পাচার। ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। (মানে, সিআইডির দাবি ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই আসছে না। অথচ, এই পরিমাণ টাকা হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমা হয়ে যাচ্ছে)। এর সঙ্গে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার লাগামহীন বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণ আবার চাঙা হওয়া (২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে ফর্মাল চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহকে তেমন একটা বাড়ানো যায়নি)।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর চাহিদা এবং সরবরাহ উভয় দিক থেকে হুন্ডি ব্যবসা অনেকখানি গুটিয়ে গিয়েছিল, যার সুফল হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই কারণেই ওই দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। এরপর শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন। ২০২৩ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী ৩২.৫২ বিলিয়ন ডলার হলেও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পরবর্তী পেমেন্ট দেওয়ার পর সেটা ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজার ব্যবস্থাকে কিছুটা মেনে নিলেও কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনো ৭-৮ টাকা রয়ে গেছে। এই দুই দামের এত বড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙা করছে, যার ফলে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে বাধ্য। (অর্থমন্ত্রীর মতে, দেশের রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ এখন হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসছে। আমার মতে অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে)! পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণগ্রহীতারা। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় যে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সিআইডি, তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলো। অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্ কা বাত্’ বানিয়ে রেখে পুঁজি পাচার সমস্যার সত্যিকার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি।
আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম পুঁজি পাচারের প্রধান প্রধান গন্তব্য কয়েকটি দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম পাঠিয়ে পুঁজি পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা, হালহকিকত সংগ্রহ করতে। সরকার রাজি হচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই এবং ইতালিতে আটটি তদন্ত টিম প্রেরণ কিংবা গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ কি এতই ব্যয়বহুল যে সরকার সেটা এখনো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে নারাজ? শুধু নাম-ঠিকানা সংগ্রহ এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য হবে না।
নিচে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে:
১. এসব পুঁজি পাচারকারীকে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা এবং পরিচালনা বোর্ড থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে
২. এসব পাচারকারীকে ব্যাংকঋণ থেকে অবিলম্বে খারিজ করতে হবে
৩. এদের কাছে যেসব ব্যাংকঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে বছরের পর বছর আটকে আছে, সেগুলো আদায় করার জন্য অবিলম্বে ‘খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে
৪. যেসব চাকরিরত আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার এবং কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা পাচারকারী হিসেবে উদ্ঘাটিত হবে, তাঁদের বরখাস্ত করে চাকরি-পরবর্তী সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করতে হবে
৫. যেসব রাজনীতিবিদের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা যদি ক্ষমতাসীন দলের কেউ হন, তাঁদের সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করতে হবে
৬. যেসব রপ্তানিকারকের নাম উঠে আসবে, তাঁদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে সেগুলো আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। উপরন্তু, তাঁরা তাঁদের রপ্তানি আয় নিয়মিতভাবে দেশে ফেরত আনছেন কি না, সেটা কঠোরভাবে পরীক্ষা করতে হবে
৭. যেসব আমদানিকারকের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা ওভারইনভয়েসিং করছেন কি না তা কঠোরভাবে পরখ করতে হবে
৮. পুঁজি পাচারকারীর নাম-ঠিকানা সংসদে উত্থাপন করতে হবে এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে।
আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হলো, দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হোক, কারণ বেশির ভাগ এক্সচেঞ্জ হাউস হুন্ডি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা খবর পাচ্ছি। আমদানি এলসির ওভারইনভয়েসিং কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্যও আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, মনে হচ্ছে তা এখন করা হচ্ছে। রপ্তানি আয় রপ্তানিকারকদের নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পরিমাণকে (অনুপাতকে) আগামী কিছুদিনের জন্য কঠোরভাবে সীমিত করা এবং একই সঙ্গে কত দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে, সে সময়সীমাকে কঠোরভাবে নামিয়ে আনা সম্পর্কিত আমার পরামর্শকে এখনো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। টাকার এই অবচয়ন অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতিকে প্রবলভাবে উসকে দিচ্ছে। অতএব এখনকার প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ডলারের দামকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া বর্তমান পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিতে ঘৃতাহুতির শামিল হবে।
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে যত দিন এই হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা কাঠামো চাঙা থাকবে, তত দিন ডলারের দাম স্থিতিশীল হবে না, কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তেই থাকবে। আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম যত থাকবে, হুন্ডিওয়ালারা তার চেয়ে ৭-৮ টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনে নেবে পুঁজি পাচারকারীদের কাছে হুন্ডি ডলারের প্রবল চাহিদার কারণে। পুঁজি পাচারকারীদের কাছে ১ ডলারের দাম ১১০ টাকা হলো, নাকি ১২০ টাকা হলো তাতে কিছুই যায়-আসে না, কারণ বেশির ভাগ পাচারকারী যেহেতু তাদের অবৈধ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যেতেই হুন্ডি ব্যবস্থার সহায়তা নিয়ে থাকে, তাই এ দেশে ডলারের দামকে বাজার ব্যবস্থার কাছে সোপর্দ করে সুফল পাওয়ার পরিবর্তে বিপদকে ডেকে আনা হবে, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। হুন্ডিওয়ালারা ‘হুন্ডি ডলারের’ চাহিদাকারীদের প্রয়োজন মোতাবেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে আকর্ষণীয় দামে (৭-৮ টাকা বেশি দামে) ডলার সংগ্রহ করেই যাবে। এভাবে লাগামহীনভাবে ডলারের দাম ক্রমাগতভাবে বেড়ে ১ ডলার ১৩০-১৪০-১৫০ টাকায় পৌঁছে গেলে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া যেভাবে দাবড়ানো শুরু করবে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশের আমদানি ব্যয় এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়তেই থাকবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও তাহলে থামানো যাবে না। সাধারণ জনজীবনও এর ফলে অসহনীয় বিপর্যয়ে পতিত হবে। অতএব, আমার মতে সরকারের এখনকার করণীয় হলো হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য অবিলম্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর দমন-কার্যক্রম বাস্তবায়নে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সময় এ দেশে এখনো আসেনি।
আমার ব্যাখ্যা দেখুন: 
 ডলার বাজারের বর্তমান লাগামহীন অস্থিরতার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিদেশে অব্যাহত পুঁজি পাচার। ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। (মানে, সিআইডির দাবি ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই আসছে না। অথচ, এই পরিমাণ টাকা হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমা হয়ে যাচ্ছে)। এর সঙ্গে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার লাগামহীন বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণ আবার চাঙা হওয়া (২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে ফর্মাল চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহকে তেমন একটা বাড়ানো যায়নি)।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর চাহিদা এবং সরবরাহ উভয় দিক থেকে হুন্ডি ব্যবসা অনেকখানি গুটিয়ে গিয়েছিল, যার সুফল হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই কারণেই ওই দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। এরপর শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন। ২০২৩ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী ৩২.৫২ বিলিয়ন ডলার হলেও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পরবর্তী পেমেন্ট দেওয়ার পর সেটা ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজার ব্যবস্থাকে কিছুটা মেনে নিলেও কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনো ৭-৮ টাকা রয়ে গেছে। এই দুই দামের এত বড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙা করছে, যার ফলে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে বাধ্য। (অর্থমন্ত্রীর মতে, দেশের রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ এখন হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসছে। আমার মতে অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে)! পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণগ্রহীতারা। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় যে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সিআইডি, তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলো। অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্ কা বাত্’ বানিয়ে রেখে পুঁজি পাচার সমস্যার সত্যিকার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি।
আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম পুঁজি পাচারের প্রধান প্রধান গন্তব্য কয়েকটি দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম পাঠিয়ে পুঁজি পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা, হালহকিকত সংগ্রহ করতে। সরকার রাজি হচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই এবং ইতালিতে আটটি তদন্ত টিম প্রেরণ কিংবা গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ কি এতই ব্যয়বহুল যে সরকার সেটা এখনো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে নারাজ? শুধু নাম-ঠিকানা সংগ্রহ এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য হবে না।
নিচে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে:
১. এসব পুঁজি পাচারকারীকে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা এবং পরিচালনা বোর্ড থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে
২. এসব পাচারকারীকে ব্যাংকঋণ থেকে অবিলম্বে খারিজ করতে হবে
৩. এদের কাছে যেসব ব্যাংকঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে বছরের পর বছর আটকে আছে, সেগুলো আদায় করার জন্য অবিলম্বে ‘খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে
৪. যেসব চাকরিরত আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার এবং কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা পাচারকারী হিসেবে উদ্ঘাটিত হবে, তাঁদের বরখাস্ত করে চাকরি-পরবর্তী সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করতে হবে
৫. যেসব রাজনীতিবিদের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা যদি ক্ষমতাসীন দলের কেউ হন, তাঁদের সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করতে হবে
৬. যেসব রপ্তানিকারকের নাম উঠে আসবে, তাঁদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে সেগুলো আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। উপরন্তু, তাঁরা তাঁদের রপ্তানি আয় নিয়মিতভাবে দেশে ফেরত আনছেন কি না, সেটা কঠোরভাবে পরীক্ষা করতে হবে
৭. যেসব আমদানিকারকের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা ওভারইনভয়েসিং করছেন কি না তা কঠোরভাবে পরখ করতে হবে
৮. পুঁজি পাচারকারীর নাম-ঠিকানা সংসদে উত্থাপন করতে হবে এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে।
আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হলো, দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হোক, কারণ বেশির ভাগ এক্সচেঞ্জ হাউস হুন্ডি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা খবর পাচ্ছি। আমদানি এলসির ওভারইনভয়েসিং কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্যও আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, মনে হচ্ছে তা এখন করা হচ্ছে। রপ্তানি আয় রপ্তানিকারকদের নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পরিমাণকে (অনুপাতকে) আগামী কিছুদিনের জন্য কঠোরভাবে সীমিত করা এবং একই সঙ্গে কত দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে, সে সময়সীমাকে কঠোরভাবে নামিয়ে আনা সম্পর্কিত আমার পরামর্শকে এখনো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। টাকার এই অবচয়ন অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতিকে প্রবলভাবে উসকে দিচ্ছে। অতএব এখনকার প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ডলারের দামকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া বর্তমান পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিতে ঘৃতাহুতির শামিল হবে।
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ড. মইনুল ইসলাম

একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে যত দিন এই হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা কাঠামো চাঙা থাকবে, তত দিন ডলারের দাম স্থিতিশীল হবে না, কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তেই থাকবে। আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম যত থাকবে, হুন্ডিওয়ালারা তার চেয়ে ৭-৮ টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনে নেবে পুঁজি পাচারকারীদের কাছে হুন্ডি ডলারের প্রবল চাহিদার কারণে। পুঁজি পাচারকারীদের কাছে ১ ডলারের দাম ১১০ টাকা হলো, নাকি ১২০ টাকা হলো তাতে কিছুই যায়-আসে না, কারণ বেশির ভাগ পাচারকারী যেহেতু তাদের অবৈধ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যেতেই হুন্ডি ব্যবস্থার সহায়তা নিয়ে থাকে, তাই এ দেশে ডলারের দামকে বাজার ব্যবস্থার কাছে সোপর্দ করে সুফল পাওয়ার পরিবর্তে বিপদকে ডেকে আনা হবে, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। হুন্ডিওয়ালারা ‘হুন্ডি ডলারের’ চাহিদাকারীদের প্রয়োজন মোতাবেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে আকর্ষণীয় দামে (৭-৮ টাকা বেশি দামে) ডলার সংগ্রহ করেই যাবে। এভাবে লাগামহীনভাবে ডলারের দাম ক্রমাগতভাবে বেড়ে ১ ডলার ১৩০-১৪০-১৫০ টাকায় পৌঁছে গেলে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া যেভাবে দাবড়ানো শুরু করবে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশের আমদানি ব্যয় এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়তেই থাকবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও তাহলে থামানো যাবে না। সাধারণ জনজীবনও এর ফলে অসহনীয় বিপর্যয়ে পতিত হবে। অতএব, আমার মতে সরকারের এখনকার করণীয় হলো হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য অবিলম্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর দমন-কার্যক্রম বাস্তবায়নে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সময় এ দেশে এখনো আসেনি।
আমার ব্যাখ্যা দেখুন: 
 ডলার বাজারের বর্তমান লাগামহীন অস্থিরতার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিদেশে অব্যাহত পুঁজি পাচার। ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। (মানে, সিআইডির দাবি ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই আসছে না। অথচ, এই পরিমাণ টাকা হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমা হয়ে যাচ্ছে)। এর সঙ্গে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার লাগামহীন বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণ আবার চাঙা হওয়া (২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে ফর্মাল চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহকে তেমন একটা বাড়ানো যায়নি)।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর চাহিদা এবং সরবরাহ উভয় দিক থেকে হুন্ডি ব্যবসা অনেকখানি গুটিয়ে গিয়েছিল, যার সুফল হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই কারণেই ওই দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। এরপর শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন। ২০২৩ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী ৩২.৫২ বিলিয়ন ডলার হলেও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পরবর্তী পেমেন্ট দেওয়ার পর সেটা ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজার ব্যবস্থাকে কিছুটা মেনে নিলেও কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনো ৭-৮ টাকা রয়ে গেছে। এই দুই দামের এত বড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙা করছে, যার ফলে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে বাধ্য। (অর্থমন্ত্রীর মতে, দেশের রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ এখন হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসছে। আমার মতে অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে)! পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণগ্রহীতারা। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় যে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সিআইডি, তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলো। অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্ কা বাত্’ বানিয়ে রেখে পুঁজি পাচার সমস্যার সত্যিকার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি।
আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম পুঁজি পাচারের প্রধান প্রধান গন্তব্য কয়েকটি দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম পাঠিয়ে পুঁজি পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা, হালহকিকত সংগ্রহ করতে। সরকার রাজি হচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই এবং ইতালিতে আটটি তদন্ত টিম প্রেরণ কিংবা গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ কি এতই ব্যয়বহুল যে সরকার সেটা এখনো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে নারাজ? শুধু নাম-ঠিকানা সংগ্রহ এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য হবে না।
নিচে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে:
১. এসব পুঁজি পাচারকারীকে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা এবং পরিচালনা বোর্ড থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে
২. এসব পাচারকারীকে ব্যাংকঋণ থেকে অবিলম্বে খারিজ করতে হবে
৩. এদের কাছে যেসব ব্যাংকঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে বছরের পর বছর আটকে আছে, সেগুলো আদায় করার জন্য অবিলম্বে ‘খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে
৪. যেসব চাকরিরত আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার এবং কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা পাচারকারী হিসেবে উদ্ঘাটিত হবে, তাঁদের বরখাস্ত করে চাকরি-পরবর্তী সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করতে হবে
৫. যেসব রাজনীতিবিদের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা যদি ক্ষমতাসীন দলের কেউ হন, তাঁদের সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করতে হবে
৬. যেসব রপ্তানিকারকের নাম উঠে আসবে, তাঁদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে সেগুলো আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। উপরন্তু, তাঁরা তাঁদের রপ্তানি আয় নিয়মিতভাবে দেশে ফেরত আনছেন কি না, সেটা কঠোরভাবে পরীক্ষা করতে হবে
৭. যেসব আমদানিকারকের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা ওভারইনভয়েসিং করছেন কি না তা কঠোরভাবে পরখ করতে হবে
৮. পুঁজি পাচারকারীর নাম-ঠিকানা সংসদে উত্থাপন করতে হবে এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে।
আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হলো, দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হোক, কারণ বেশির ভাগ এক্সচেঞ্জ হাউস হুন্ডি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা খবর পাচ্ছি। আমদানি এলসির ওভারইনভয়েসিং কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্যও আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, মনে হচ্ছে তা এখন করা হচ্ছে। রপ্তানি আয় রপ্তানিকারকদের নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পরিমাণকে (অনুপাতকে) আগামী কিছুদিনের জন্য কঠোরভাবে সীমিত করা এবং একই সঙ্গে কত দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে, সে সময়সীমাকে কঠোরভাবে নামিয়ে আনা সম্পর্কিত আমার পরামর্শকে এখনো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। টাকার এই অবচয়ন অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতিকে প্রবলভাবে উসকে দিচ্ছে। অতএব এখনকার প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ডলারের দামকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া বর্তমান পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিতে ঘৃতাহুতির শামিল হবে।
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে যত দিন এই হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা কাঠামো চাঙা থাকবে, তত দিন ডলারের দাম স্থিতিশীল হবে না, কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তেই থাকবে। আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম যত থাকবে, হুন্ডিওয়ালারা তার চেয়ে ৭-৮ টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনে নেবে পুঁজি পাচারকারীদের কাছে হুন্ডি ডলারের প্রবল চাহিদার কারণে। পুঁজি পাচারকারীদের কাছে ১ ডলারের দাম ১১০ টাকা হলো, নাকি ১২০ টাকা হলো তাতে কিছুই যায়-আসে না, কারণ বেশির ভাগ পাচারকারী যেহেতু তাদের অবৈধ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যেতেই হুন্ডি ব্যবস্থার সহায়তা নিয়ে থাকে, তাই এ দেশে ডলারের দামকে বাজার ব্যবস্থার কাছে সোপর্দ করে সুফল পাওয়ার পরিবর্তে বিপদকে ডেকে আনা হবে, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। হুন্ডিওয়ালারা ‘হুন্ডি ডলারের’ চাহিদাকারীদের প্রয়োজন মোতাবেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে আকর্ষণীয় দামে (৭-৮ টাকা বেশি দামে) ডলার সংগ্রহ করেই যাবে। এভাবে লাগামহীনভাবে ডলারের দাম ক্রমাগতভাবে বেড়ে ১ ডলার ১৩০-১৪০-১৫০ টাকায় পৌঁছে গেলে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া যেভাবে দাবড়ানো শুরু করবে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশের আমদানি ব্যয় এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়তেই থাকবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও তাহলে থামানো যাবে না। সাধারণ জনজীবনও এর ফলে অসহনীয় বিপর্যয়ে পতিত হবে। অতএব, আমার মতে সরকারের এখনকার করণীয় হলো হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য অবিলম্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর দমন-কার্যক্রম বাস্তবায়নে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সময় এ দেশে এখনো আসেনি।
আমার ব্যাখ্যা দেখুন: 
 ডলার বাজারের বর্তমান লাগামহীন অস্থিরতার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিদেশে অব্যাহত পুঁজি পাচার। ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। (মানে, সিআইডির দাবি ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই আসছে না। অথচ, এই পরিমাণ টাকা হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমা হয়ে যাচ্ছে)। এর সঙ্গে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার লাগামহীন বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণ আবার চাঙা হওয়া (২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে ফর্মাল চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহকে তেমন একটা বাড়ানো যায়নি)।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর চাহিদা এবং সরবরাহ উভয় দিক থেকে হুন্ডি ব্যবসা অনেকখানি গুটিয়ে গিয়েছিল, যার সুফল হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই কারণেই ওই দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। এরপর শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন। ২০২৩ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী ৩২.৫২ বিলিয়ন ডলার হলেও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পরবর্তী পেমেন্ট দেওয়ার পর সেটা ২৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজার ব্যবস্থাকে কিছুটা মেনে নিলেও কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনো ৭-৮ টাকা রয়ে গেছে। এই দুই দামের এত বড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙা করছে, যার ফলে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে বাধ্য। (অর্থমন্ত্রীর মতে, দেশের রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ এখন হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসছে। আমার মতে অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে)! পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণগ্রহীতারা। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় যে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সিআইডি, তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলো। অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্ কা বাত্’ বানিয়ে রেখে পুঁজি পাচার সমস্যার সত্যিকার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি।
আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম পুঁজি পাচারের প্রধান প্রধান গন্তব্য কয়েকটি দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম পাঠিয়ে পুঁজি পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা, হালহকিকত সংগ্রহ করতে। সরকার রাজি হচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই এবং ইতালিতে আটটি তদন্ত টিম প্রেরণ কিংবা গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ কি এতই ব্যয়বহুল যে সরকার সেটা এখনো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে নারাজ? শুধু নাম-ঠিকানা সংগ্রহ এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য হবে না।
নিচে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে:
১. এসব পুঁজি পাচারকারীকে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা এবং পরিচালনা বোর্ড থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে
২. এসব পাচারকারীকে ব্যাংকঋণ থেকে অবিলম্বে খারিজ করতে হবে
৩. এদের কাছে যেসব ব্যাংকঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে বছরের পর বছর আটকে আছে, সেগুলো আদায় করার জন্য অবিলম্বে ‘খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে
৪. যেসব চাকরিরত আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার এবং কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা পাচারকারী হিসেবে উদ্ঘাটিত হবে, তাঁদের বরখাস্ত করে চাকরি-পরবর্তী সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করতে হবে
৫. যেসব রাজনীতিবিদের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা যদি ক্ষমতাসীন দলের কেউ হন, তাঁদের সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করতে হবে
৬. যেসব রপ্তানিকারকের নাম উঠে আসবে, তাঁদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে সেগুলো আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। উপরন্তু, তাঁরা তাঁদের রপ্তানি আয় নিয়মিতভাবে দেশে ফেরত আনছেন কি না, সেটা কঠোরভাবে পরীক্ষা করতে হবে
৭. যেসব আমদানিকারকের নাম পাওয়া যাবে, তাঁরা ওভারইনভয়েসিং করছেন কি না তা কঠোরভাবে পরখ করতে হবে
৮. পুঁজি পাচারকারীর নাম-ঠিকানা সংসদে উত্থাপন করতে হবে এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে।
আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হলো, দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হোক, কারণ বেশির ভাগ এক্সচেঞ্জ হাউস হুন্ডি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা খবর পাচ্ছি। আমদানি এলসির ওভারইনভয়েসিং কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্যও আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, মনে হচ্ছে তা এখন করা হচ্ছে। রপ্তানি আয় রপ্তানিকারকদের নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পরিমাণকে (অনুপাতকে) আগামী কিছুদিনের জন্য কঠোরভাবে সীমিত করা এবং একই সঙ্গে কত দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে, সে সময়সীমাকে কঠোরভাবে নামিয়ে আনা সম্পর্কিত আমার পরামর্শকে এখনো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। টাকার এই অবচয়ন অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতিকে প্রবলভাবে উসকে দিচ্ছে। অতএব এখনকার প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ডলারের দামকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া বর্তমান পর্যায়ে মূল্যস্ফীতিতে ঘৃতাহুতির শামিল হবে।
ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী
১১ মার্চ ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী
১১ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী
১১ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আহসান এইচ মনসুর ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, তাহলে এক ডলারের দাম ১১২-১১৫ টাকায় স্থিতিশীল হবে। আমি তাঁর এই পরামর্শের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, হুন্ডি ডলারের ‘প্যারালাল মার্কেটের’ অত্যন্ত শক্তিশালী
১১ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫