Ajker Patrika

টাকা ছাড়া মেলে না সেবা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২২, ১৪: ০৬
Thumbnail image

পঞ্চগড় সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে টাকা ছাড়া মেলে না সেবা। একজনের জমি অন্যজনের নামে দিয়ে করা হয় হয়রানি। অফিসে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক সেবাগ্রহীতা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের অনেক সেবাপ্রার্থী দীর্ঘদিন হয়রানিসহ নানা কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। এ অঞ্চলে জায়গা-জমির সমস্যা নেই, এমন ভূমি মালিক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অফিসে ত্রিশ ধারা চলাকালীন একজনের বসতবাড়ি অন্যজনকে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। সেবাপ্রার্থীদের সমস্যায় ফেলে অফিসের কর্মকর্তারাই অর্থের বিনিময়ে সমাধান করে দেন। দালালের মাধ্যম ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।

একটি সূত্র জানায়, বর্তমান অফিসের এক সহকারী বিভিন্নভাবে মামলার লোকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। দপ্তরটিকে ঘুষ বাণিজ্যের স্থায়ী ক্ষেত্র বানিয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়ি বগুড়ায় হওয়ায় ওই জেলা থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এখানে বদলি করে আনেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, আব্দুস সালাম নামের এক ব্যক্তির ১৩ শতক জমি দখলে থাকা সত্ত্বেও বাদীর পক্ষ নিয়ে তাঁর নামে করে দিয়েছেন কাজীপাড়া মৌজার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা। এ ছাড়া একই মৌজায় স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ৫০ বছরের দখলীয় সম্পত্তি এক বাদীকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অফিস প্রধান সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (এএসও) আলমগীর শেখের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি।

এএসও আলমগীর হোসেন শেখ দ্বারিকামারি মৌজায় পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের দুই দাগের ৫৪ শতক জমির মধ্যে ৭ শতক ও ২৫ শতক জমির মধ্যে ৫ শতক অন্যকে দেন। একই মৌজায় আবদুল হানিফের ৫৪ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক জমি অন্যকে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করা হলে টাকার বিনিময়ে সংশোধন করে দেন এএসও।

ফুলবাড়ী মৌজায় ৯৯ নম্বর মামলার রায় লেখার পরও বিচারিক এজলাসে কর্মরত এক চেনম্যান আদালতের আদেশ কেটে মজিবর নামের একজনকে বাদী ভুক্ত করে ১ একর ২৫ শতক জমি পরচা করে দেন। প্রকৃতপক্ষে এই জমির মালিক আহসান হাবীব ও তাঁর ভাই আহসান মালেক।

অফিসের আরেকটি সূত্র জানায়, খতিয়ান উত্তোলনে ১২০ টাকা সরকারি ফি হলেও নেওয়া হয় ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাদী বিবাদীর মামলার গুরুত্ব বুঝে নথি গ্রহণে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। কোনো মামলায় দাগ ছাড়া পড়লে ওই মামলায় ছাড়া পড়া দাগ নম্বরটি অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে ১ হাজার থেকে শুরু করে মামলা বা জমির পরিমাণ বা জমির পরিবেশ বুঝে নির্ধারণ করা হয় টাকার অঙ্ক। এ ছাড়া মামলার নোটিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে অফিসের জনবল কাজে না লাগিয়ে পাঠানো হয় কোনো দালালকে।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আলমগীর হোসেন শেখ অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে কোনো অভিযোগ তাঁর কাছে নেই বলে জানান। তিনি বলেন, ‘সুবিধা গ্রহণের কারণে কেউ হয়তো অফিসের কথা বলে অর্থ নিতে পারেন। এর জন্য আমরা দায়ী নই।’

এ বিষয়ে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার শামসুল আজম বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত