ড. মইনুল ইসলাম

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তাই উত্তর পাড়ের বন্দরের জেটিগুলোর নাব্যতা সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছর খননকাজ চালাতে হয়, কয়েক বছর পরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছর আগে যখন চট্টগ্রাম নৌবন্দর গড়ে উঠেছিল, তখন প্রধানত কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়েই বন্দরের অবস্থান ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে যখন আধুনিক বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তখন তদানীন্তন ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাংশের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজে ও সুলভে প্রতিষ্ঠার যুক্তিতে বন্দরের জেটিগুলো নদীর উত্তর পাড়েই নির্মাণ করা হয়, যার ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যকেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকাগুলোও ওই বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠে। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সম্প্রসারিত হয়নি, যেহেতু বন্দরের অবস্থানের কারণে চাক্তাই খালের মোহনা থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত নদীতে কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। নব্বইয়ের দশকে বাকলিয়ায় সেতু নির্মাণের আগে শুধু জলপথেই ওই এলাকার জনগণ চট্টগ্রাম শহরে আসতে পারত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী এখনো চট্টগ্রামের সবচেয়ে অনুন্নত দুটি উপজেলা রয়ে গেছে, যদিও আকাশপথে এ দুটি উপজেলা চট্টগ্রাম নগরী থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী এলাকা।
গত ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউবের একটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। দুই লেনের এই টিউব জানুয়ারি মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুরো কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় কর্ণফুলী টানেলই হবে নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল। আমি এই প্রকল্পের একজন বড় সমর্থক। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদে এই টানেলের সুদূরপ্রসারী ও বহুল বিস্তৃত ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী উপকার সাধন করবে। অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে কয়েক বছর টানেলটি স্বল্প ব্যবহৃত থাকবে। সে জন্য সাধারণ জনগণের কাছে এই প্রকল্পকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। টানেলটি নির্মাণের জন্য মোট ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যে ঋণ পরিশোধের বার্ষিক কিস্তি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসেবে চেপে বসবে।
টানেল নির্মাণের কাজে যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তারাও কয়েকবার প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নিয়েছে। মনে হতে পারে যে টানেলটি বাংলাদেশের আরেকটি ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পেরই নজির। কারণ, প্রথম কয়েক বছর এই টানেল স্বল্প ব্যবহৃত (আন্ডার-ইউটিলাইজড) সড়কপথ হিসেবে থেকে গেলে এর টোলের আয় থেকে ঋণের বার্ষিক কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা যাবে না।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওপরে উল্লিখিত বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতেই হবে। বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতুর যেখানে অবস্থান, সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর ভাটি অঞ্চলের ২০ কিলোমিটারে আর কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের কারণে। অতএব, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার কমে যাচ্ছে এই ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে। নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেল এতদঞ্চলের এই সীমাবদ্ধতাগুলো চিরতরে দূর করে দেবে। অবিলম্বে নগর-পরিকল্পনা গ্রহণ করলে কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’-এ পরিণত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।
টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিল্পায়ন, আবাসন ও বাণিজ্য উন্নয়নের প্রধান বাধাগুলো আর না থাকায় অঞ্চলজুড়ে দ্রুত উন্নয়ন ও শিল্পায়নযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। উপরন্তু, চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকটি জেটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে নির্মাণের সুযোগও সৃষ্টি হয়ে যাবে। ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য বহুদিন ধরেই হাপিত্যেশ করছে। কয়েকটি নতুন জেটি নির্মাণ করা গেলে এই অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি সহজেই চট্টগ্রাম বন্দরকে আঞ্চলিক ব্যবহারের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলবে। ইতিমধ্যে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড স্থাপিত হয়ে গেছে। চীনের জন্যও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কর্ণফুলী টানেল স্থাপিত হয়ে গেলে ওই অঞ্চলে ‘শিল্প এলাকা’ গড়ে তোলার হিড়িক পড়বে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারণ, টানেল নির্মীয়মাণ থাকতেই দেশের বড় বড় শিল্পপতি তাঁদের শিল্পকারখানা ওই অঞ্চলে সম্প্রসারিত করে ফেলেছেন। টানেলের পার্শ্ববর্তী আনোয়ারায় অবস্থিত কর্ণফুলী সার কারখানা ও চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) টানেলের ফলে সরাসরি পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ের মাধ্যমে উপকৃত হবে এবং আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকত অতিদ্রুত একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।
কিন্তু কর্ণফুলী টানেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবহার নিশ্চিত হবে যখন মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর কক্সবাজার পর্যন্ত প্রস্তাবিত ‘মেরিন ড্রাইভ’ সড়ক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভটি মিরসরাই থেকে কর্ণফুলী টানেল পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক এবং টানেলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চার লেনের সড়ক হিসেবে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে খবর দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। বলা হচ্ছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। আমার মতে, এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি সুবিশাল আবাসন ও শিল্পায়ন জোন গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ গভীর সমুদ্রবন্দরের বহুল বিস্তৃত ও যথাযথ অর্থনৈতিক উপযোগিতা এবং ব্যয় সাশ্রয়সংক্রান্ত উপকার পেতে হলে এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প অগ্রাধিকার সহকারে গড়ে তোলা সরকারের জন্য ‘ফরজ’ হয়ে পড়েছে নিঃসন্দেহে। অতএব, এ ব্যাপারে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব অচিরেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই মেরিন ড্রাইভ কর্ণফুলী টানেলকেও ‘অপটিমাম লেভেলে ব্যবহারের’ পথ সুগম করে দেবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরী থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার হ্রাস করবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যাতায়াতকারী এতদঞ্চলের ট্রাফিক চট্টগ্রাম নগরীতে না ঢুকে সরাসরি নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে পারবে টানেলের মাধ্যমে, যার ফলে যানবাহনগুলোর সময় ও খরচ বিপুলভাবে সাশ্রয় হবে। চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যারও উল্লেখযোগ্য সমাধান আসবে এর ফলে। আউটার রিং রোড ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নগরী থেকে এতদঞ্চলে যাতায়াতকারী ট্রাফিকও টানেল ব্যবহার করে প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
আরেকটি বিষয়কেও বিবেচনায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। শুধু শিল্পায়ন জোন নয়, এই পুরো এলাকাকে একটি বিশ্বমানের ‘পর্যটন ও আবাসন জোন’ হিসেবে গড়ে তোলার যে সুযোগ কর্ণফুলী টানেল সৃষ্টি করতে যাচ্ছে, সেটার গুরুত্বকেও খাটো করা মোটেই সমীচীন হবে না। আরও আকর্ষণীয়, যেসব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এই এলাকা ধারণ করছে, তা হলো সমুদ্র উপকূলে ভবিষ্যতে আরও অনেকগুলো বন্দর ও ‘আউটার এনকোরেজ’ গড়ে তোলার সুযোগ। কয়েক বছরের মধ্যে সাঙ্গু নদীর মোহনায় ও নিকটবর্তী সাগর উপকূলে আরেকটি বন্দর গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করলে অসুবিধা কোথায়? আমি আবারও বলছি, কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামের পাশাপাশি পুরো দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে। পুরো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকাকে ‘দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর’ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে কর্ণফুলী টানেল। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এই টানেলও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফসল। আমি প্রধানমন্ত্রীকে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তাই উত্তর পাড়ের বন্দরের জেটিগুলোর নাব্যতা সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছর খননকাজ চালাতে হয়, কয়েক বছর পরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছর আগে যখন চট্টগ্রাম নৌবন্দর গড়ে উঠেছিল, তখন প্রধানত কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়েই বন্দরের অবস্থান ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে যখন আধুনিক বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তখন তদানীন্তন ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাংশের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজে ও সুলভে প্রতিষ্ঠার যুক্তিতে বন্দরের জেটিগুলো নদীর উত্তর পাড়েই নির্মাণ করা হয়, যার ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যকেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকাগুলোও ওই বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠে। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সম্প্রসারিত হয়নি, যেহেতু বন্দরের অবস্থানের কারণে চাক্তাই খালের মোহনা থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত নদীতে কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। নব্বইয়ের দশকে বাকলিয়ায় সেতু নির্মাণের আগে শুধু জলপথেই ওই এলাকার জনগণ চট্টগ্রাম শহরে আসতে পারত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী এখনো চট্টগ্রামের সবচেয়ে অনুন্নত দুটি উপজেলা রয়ে গেছে, যদিও আকাশপথে এ দুটি উপজেলা চট্টগ্রাম নগরী থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী এলাকা।
গত ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউবের একটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। দুই লেনের এই টিউব জানুয়ারি মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুরো কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় কর্ণফুলী টানেলই হবে নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল। আমি এই প্রকল্পের একজন বড় সমর্থক। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদে এই টানেলের সুদূরপ্রসারী ও বহুল বিস্তৃত ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী উপকার সাধন করবে। অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে কয়েক বছর টানেলটি স্বল্প ব্যবহৃত থাকবে। সে জন্য সাধারণ জনগণের কাছে এই প্রকল্পকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। টানেলটি নির্মাণের জন্য মোট ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যে ঋণ পরিশোধের বার্ষিক কিস্তি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসেবে চেপে বসবে।
টানেল নির্মাণের কাজে যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তারাও কয়েকবার প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নিয়েছে। মনে হতে পারে যে টানেলটি বাংলাদেশের আরেকটি ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পেরই নজির। কারণ, প্রথম কয়েক বছর এই টানেল স্বল্প ব্যবহৃত (আন্ডার-ইউটিলাইজড) সড়কপথ হিসেবে থেকে গেলে এর টোলের আয় থেকে ঋণের বার্ষিক কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা যাবে না।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওপরে উল্লিখিত বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতেই হবে। বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতুর যেখানে অবস্থান, সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর ভাটি অঞ্চলের ২০ কিলোমিটারে আর কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের কারণে। অতএব, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার কমে যাচ্ছে এই ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে। নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেল এতদঞ্চলের এই সীমাবদ্ধতাগুলো চিরতরে দূর করে দেবে। অবিলম্বে নগর-পরিকল্পনা গ্রহণ করলে কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’-এ পরিণত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।
টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিল্পায়ন, আবাসন ও বাণিজ্য উন্নয়নের প্রধান বাধাগুলো আর না থাকায় অঞ্চলজুড়ে দ্রুত উন্নয়ন ও শিল্পায়নযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। উপরন্তু, চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকটি জেটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে নির্মাণের সুযোগও সৃষ্টি হয়ে যাবে। ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য বহুদিন ধরেই হাপিত্যেশ করছে। কয়েকটি নতুন জেটি নির্মাণ করা গেলে এই অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি সহজেই চট্টগ্রাম বন্দরকে আঞ্চলিক ব্যবহারের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলবে। ইতিমধ্যে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড স্থাপিত হয়ে গেছে। চীনের জন্যও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কর্ণফুলী টানেল স্থাপিত হয়ে গেলে ওই অঞ্চলে ‘শিল্প এলাকা’ গড়ে তোলার হিড়িক পড়বে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারণ, টানেল নির্মীয়মাণ থাকতেই দেশের বড় বড় শিল্পপতি তাঁদের শিল্পকারখানা ওই অঞ্চলে সম্প্রসারিত করে ফেলেছেন। টানেলের পার্শ্ববর্তী আনোয়ারায় অবস্থিত কর্ণফুলী সার কারখানা ও চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) টানেলের ফলে সরাসরি পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ের মাধ্যমে উপকৃত হবে এবং আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকত অতিদ্রুত একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।
কিন্তু কর্ণফুলী টানেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবহার নিশ্চিত হবে যখন মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর কক্সবাজার পর্যন্ত প্রস্তাবিত ‘মেরিন ড্রাইভ’ সড়ক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভটি মিরসরাই থেকে কর্ণফুলী টানেল পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক এবং টানেলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চার লেনের সড়ক হিসেবে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে খবর দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। বলা হচ্ছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। আমার মতে, এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি সুবিশাল আবাসন ও শিল্পায়ন জোন গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ গভীর সমুদ্রবন্দরের বহুল বিস্তৃত ও যথাযথ অর্থনৈতিক উপযোগিতা এবং ব্যয় সাশ্রয়সংক্রান্ত উপকার পেতে হলে এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প অগ্রাধিকার সহকারে গড়ে তোলা সরকারের জন্য ‘ফরজ’ হয়ে পড়েছে নিঃসন্দেহে। অতএব, এ ব্যাপারে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব অচিরেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই মেরিন ড্রাইভ কর্ণফুলী টানেলকেও ‘অপটিমাম লেভেলে ব্যবহারের’ পথ সুগম করে দেবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরী থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার হ্রাস করবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যাতায়াতকারী এতদঞ্চলের ট্রাফিক চট্টগ্রাম নগরীতে না ঢুকে সরাসরি নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে পারবে টানেলের মাধ্যমে, যার ফলে যানবাহনগুলোর সময় ও খরচ বিপুলভাবে সাশ্রয় হবে। চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যারও উল্লেখযোগ্য সমাধান আসবে এর ফলে। আউটার রিং রোড ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নগরী থেকে এতদঞ্চলে যাতায়াতকারী ট্রাফিকও টানেল ব্যবহার করে প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
আরেকটি বিষয়কেও বিবেচনায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। শুধু শিল্পায়ন জোন নয়, এই পুরো এলাকাকে একটি বিশ্বমানের ‘পর্যটন ও আবাসন জোন’ হিসেবে গড়ে তোলার যে সুযোগ কর্ণফুলী টানেল সৃষ্টি করতে যাচ্ছে, সেটার গুরুত্বকেও খাটো করা মোটেই সমীচীন হবে না। আরও আকর্ষণীয়, যেসব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এই এলাকা ধারণ করছে, তা হলো সমুদ্র উপকূলে ভবিষ্যতে আরও অনেকগুলো বন্দর ও ‘আউটার এনকোরেজ’ গড়ে তোলার সুযোগ। কয়েক বছরের মধ্যে সাঙ্গু নদীর মোহনায় ও নিকটবর্তী সাগর উপকূলে আরেকটি বন্দর গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করলে অসুবিধা কোথায়? আমি আবারও বলছি, কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামের পাশাপাশি পুরো দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে। পুরো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকাকে ‘দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর’ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে কর্ণফুলী টানেল। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এই টানেলও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফসল। আমি প্রধানমন্ত্রীকে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ড. মইনুল ইসলাম

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তাই উত্তর পাড়ের বন্দরের জেটিগুলোর নাব্যতা সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছর খননকাজ চালাতে হয়, কয়েক বছর পরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছর আগে যখন চট্টগ্রাম নৌবন্দর গড়ে উঠেছিল, তখন প্রধানত কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়েই বন্দরের অবস্থান ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে যখন আধুনিক বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তখন তদানীন্তন ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাংশের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজে ও সুলভে প্রতিষ্ঠার যুক্তিতে বন্দরের জেটিগুলো নদীর উত্তর পাড়েই নির্মাণ করা হয়, যার ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যকেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকাগুলোও ওই বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠে। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সম্প্রসারিত হয়নি, যেহেতু বন্দরের অবস্থানের কারণে চাক্তাই খালের মোহনা থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত নদীতে কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। নব্বইয়ের দশকে বাকলিয়ায় সেতু নির্মাণের আগে শুধু জলপথেই ওই এলাকার জনগণ চট্টগ্রাম শহরে আসতে পারত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী এখনো চট্টগ্রামের সবচেয়ে অনুন্নত দুটি উপজেলা রয়ে গেছে, যদিও আকাশপথে এ দুটি উপজেলা চট্টগ্রাম নগরী থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী এলাকা।
গত ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউবের একটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। দুই লেনের এই টিউব জানুয়ারি মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুরো কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় কর্ণফুলী টানেলই হবে নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল। আমি এই প্রকল্পের একজন বড় সমর্থক। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদে এই টানেলের সুদূরপ্রসারী ও বহুল বিস্তৃত ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী উপকার সাধন করবে। অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে কয়েক বছর টানেলটি স্বল্প ব্যবহৃত থাকবে। সে জন্য সাধারণ জনগণের কাছে এই প্রকল্পকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। টানেলটি নির্মাণের জন্য মোট ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যে ঋণ পরিশোধের বার্ষিক কিস্তি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসেবে চেপে বসবে।
টানেল নির্মাণের কাজে যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তারাও কয়েকবার প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নিয়েছে। মনে হতে পারে যে টানেলটি বাংলাদেশের আরেকটি ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পেরই নজির। কারণ, প্রথম কয়েক বছর এই টানেল স্বল্প ব্যবহৃত (আন্ডার-ইউটিলাইজড) সড়কপথ হিসেবে থেকে গেলে এর টোলের আয় থেকে ঋণের বার্ষিক কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা যাবে না।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওপরে উল্লিখিত বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতেই হবে। বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতুর যেখানে অবস্থান, সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর ভাটি অঞ্চলের ২০ কিলোমিটারে আর কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের কারণে। অতএব, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার কমে যাচ্ছে এই ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে। নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেল এতদঞ্চলের এই সীমাবদ্ধতাগুলো চিরতরে দূর করে দেবে। অবিলম্বে নগর-পরিকল্পনা গ্রহণ করলে কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’-এ পরিণত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।
টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিল্পায়ন, আবাসন ও বাণিজ্য উন্নয়নের প্রধান বাধাগুলো আর না থাকায় অঞ্চলজুড়ে দ্রুত উন্নয়ন ও শিল্পায়নযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। উপরন্তু, চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকটি জেটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে নির্মাণের সুযোগও সৃষ্টি হয়ে যাবে। ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য বহুদিন ধরেই হাপিত্যেশ করছে। কয়েকটি নতুন জেটি নির্মাণ করা গেলে এই অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি সহজেই চট্টগ্রাম বন্দরকে আঞ্চলিক ব্যবহারের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলবে। ইতিমধ্যে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড স্থাপিত হয়ে গেছে। চীনের জন্যও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কর্ণফুলী টানেল স্থাপিত হয়ে গেলে ওই অঞ্চলে ‘শিল্প এলাকা’ গড়ে তোলার হিড়িক পড়বে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারণ, টানেল নির্মীয়মাণ থাকতেই দেশের বড় বড় শিল্পপতি তাঁদের শিল্পকারখানা ওই অঞ্চলে সম্প্রসারিত করে ফেলেছেন। টানেলের পার্শ্ববর্তী আনোয়ারায় অবস্থিত কর্ণফুলী সার কারখানা ও চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) টানেলের ফলে সরাসরি পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ের মাধ্যমে উপকৃত হবে এবং আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকত অতিদ্রুত একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।
কিন্তু কর্ণফুলী টানেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবহার নিশ্চিত হবে যখন মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর কক্সবাজার পর্যন্ত প্রস্তাবিত ‘মেরিন ড্রাইভ’ সড়ক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভটি মিরসরাই থেকে কর্ণফুলী টানেল পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক এবং টানেলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চার লেনের সড়ক হিসেবে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে খবর দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। বলা হচ্ছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। আমার মতে, এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি সুবিশাল আবাসন ও শিল্পায়ন জোন গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ গভীর সমুদ্রবন্দরের বহুল বিস্তৃত ও যথাযথ অর্থনৈতিক উপযোগিতা এবং ব্যয় সাশ্রয়সংক্রান্ত উপকার পেতে হলে এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প অগ্রাধিকার সহকারে গড়ে তোলা সরকারের জন্য ‘ফরজ’ হয়ে পড়েছে নিঃসন্দেহে। অতএব, এ ব্যাপারে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব অচিরেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই মেরিন ড্রাইভ কর্ণফুলী টানেলকেও ‘অপটিমাম লেভেলে ব্যবহারের’ পথ সুগম করে দেবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরী থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার হ্রাস করবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যাতায়াতকারী এতদঞ্চলের ট্রাফিক চট্টগ্রাম নগরীতে না ঢুকে সরাসরি নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে পারবে টানেলের মাধ্যমে, যার ফলে যানবাহনগুলোর সময় ও খরচ বিপুলভাবে সাশ্রয় হবে। চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যারও উল্লেখযোগ্য সমাধান আসবে এর ফলে। আউটার রিং রোড ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নগরী থেকে এতদঞ্চলে যাতায়াতকারী ট্রাফিকও টানেল ব্যবহার করে প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
আরেকটি বিষয়কেও বিবেচনায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। শুধু শিল্পায়ন জোন নয়, এই পুরো এলাকাকে একটি বিশ্বমানের ‘পর্যটন ও আবাসন জোন’ হিসেবে গড়ে তোলার যে সুযোগ কর্ণফুলী টানেল সৃষ্টি করতে যাচ্ছে, সেটার গুরুত্বকেও খাটো করা মোটেই সমীচীন হবে না। আরও আকর্ষণীয়, যেসব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এই এলাকা ধারণ করছে, তা হলো সমুদ্র উপকূলে ভবিষ্যতে আরও অনেকগুলো বন্দর ও ‘আউটার এনকোরেজ’ গড়ে তোলার সুযোগ। কয়েক বছরের মধ্যে সাঙ্গু নদীর মোহনায় ও নিকটবর্তী সাগর উপকূলে আরেকটি বন্দর গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করলে অসুবিধা কোথায়? আমি আবারও বলছি, কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামের পাশাপাশি পুরো দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে। পুরো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকাকে ‘দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর’ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে কর্ণফুলী টানেল। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এই টানেলও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফসল। আমি প্রধানমন্ত্রীকে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তাই উত্তর পাড়ের বন্দরের জেটিগুলোর নাব্যতা সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছর খননকাজ চালাতে হয়, কয়েক বছর পরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছর আগে যখন চট্টগ্রাম নৌবন্দর গড়ে উঠেছিল, তখন প্রধানত কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়েই বন্দরের অবস্থান ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে যখন আধুনিক বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তখন তদানীন্তন ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাংশের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজে ও সুলভে প্রতিষ্ঠার যুক্তিতে বন্দরের জেটিগুলো নদীর উত্তর পাড়েই নির্মাণ করা হয়, যার ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যকেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকাগুলোও ওই বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠে। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সম্প্রসারিত হয়নি, যেহেতু বন্দরের অবস্থানের কারণে চাক্তাই খালের মোহনা থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত নদীতে কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। নব্বইয়ের দশকে বাকলিয়ায় সেতু নির্মাণের আগে শুধু জলপথেই ওই এলাকার জনগণ চট্টগ্রাম শহরে আসতে পারত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী এখনো চট্টগ্রামের সবচেয়ে অনুন্নত দুটি উপজেলা রয়ে গেছে, যদিও আকাশপথে এ দুটি উপজেলা চট্টগ্রাম নগরী থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী এলাকা।
গত ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউবের একটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। দুই লেনের এই টিউব জানুয়ারি মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুরো কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় কর্ণফুলী টানেলই হবে নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল। আমি এই প্রকল্পের একজন বড় সমর্থক। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদে এই টানেলের সুদূরপ্রসারী ও বহুল বিস্তৃত ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী উপকার সাধন করবে। অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে কয়েক বছর টানেলটি স্বল্প ব্যবহৃত থাকবে। সে জন্য সাধারণ জনগণের কাছে এই প্রকল্পকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। টানেলটি নির্মাণের জন্য মোট ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যে ঋণ পরিশোধের বার্ষিক কিস্তি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসেবে চেপে বসবে।
টানেল নির্মাণের কাজে যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তারাও কয়েকবার প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নিয়েছে। মনে হতে পারে যে টানেলটি বাংলাদেশের আরেকটি ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পেরই নজির। কারণ, প্রথম কয়েক বছর এই টানেল স্বল্প ব্যবহৃত (আন্ডার-ইউটিলাইজড) সড়কপথ হিসেবে থেকে গেলে এর টোলের আয় থেকে ঋণের বার্ষিক কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা যাবে না।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওপরে উল্লিখিত বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতেই হবে। বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতুর যেখানে অবস্থান, সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর ভাটি অঞ্চলের ২০ কিলোমিটারে আর কোনো সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের কারণে। অতএব, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার কমে যাচ্ছে এই ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে। নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেল এতদঞ্চলের এই সীমাবদ্ধতাগুলো চিরতরে দূর করে দেবে। অবিলম্বে নগর-পরিকল্পনা গ্রহণ করলে কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’-এ পরিণত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।
টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিল্পায়ন, আবাসন ও বাণিজ্য উন্নয়নের প্রধান বাধাগুলো আর না থাকায় অঞ্চলজুড়ে দ্রুত উন্নয়ন ও শিল্পায়নযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। উপরন্তু, চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকটি জেটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে নির্মাণের সুযোগও সৃষ্টি হয়ে যাবে। ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য বহুদিন ধরেই হাপিত্যেশ করছে। কয়েকটি নতুন জেটি নির্মাণ করা গেলে এই অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি সহজেই চট্টগ্রাম বন্দরকে আঞ্চলিক ব্যবহারের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলবে। ইতিমধ্যে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড স্থাপিত হয়ে গেছে। চীনের জন্যও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে ‘ইকোনমিক জোন’ স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কর্ণফুলী টানেল স্থাপিত হয়ে গেলে ওই অঞ্চলে ‘শিল্প এলাকা’ গড়ে তোলার হিড়িক পড়বে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারণ, টানেল নির্মীয়মাণ থাকতেই দেশের বড় বড় শিল্পপতি তাঁদের শিল্পকারখানা ওই অঞ্চলে সম্প্রসারিত করে ফেলেছেন। টানেলের পার্শ্ববর্তী আনোয়ারায় অবস্থিত কর্ণফুলী সার কারখানা ও চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) টানেলের ফলে সরাসরি পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ের মাধ্যমে উপকৃত হবে এবং আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকত অতিদ্রুত একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।
কিন্তু কর্ণফুলী টানেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবহার নিশ্চিত হবে যখন মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর কক্সবাজার পর্যন্ত প্রস্তাবিত ‘মেরিন ড্রাইভ’ সড়ক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভটি মিরসরাই থেকে কর্ণফুলী টানেল পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক এবং টানেলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চার লেনের সড়ক হিসেবে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে খবর দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। বলা হচ্ছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। আমার মতে, এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি সুবিশাল আবাসন ও শিল্পায়ন জোন গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ গভীর সমুদ্রবন্দরের বহুল বিস্তৃত ও যথাযথ অর্থনৈতিক উপযোগিতা এবং ব্যয় সাশ্রয়সংক্রান্ত উপকার পেতে হলে এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প অগ্রাধিকার সহকারে গড়ে তোলা সরকারের জন্য ‘ফরজ’ হয়ে পড়েছে নিঃসন্দেহে। অতএব, এ ব্যাপারে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব অচিরেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই মেরিন ড্রাইভ কর্ণফুলী টানেলকেও ‘অপটিমাম লেভেলে ব্যবহারের’ পথ সুগম করে দেবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরী থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার হ্রাস করবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যাতায়াতকারী এতদঞ্চলের ট্রাফিক চট্টগ্রাম নগরীতে না ঢুকে সরাসরি নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে পারবে টানেলের মাধ্যমে, যার ফলে যানবাহনগুলোর সময় ও খরচ বিপুলভাবে সাশ্রয় হবে। চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যারও উল্লেখযোগ্য সমাধান আসবে এর ফলে। আউটার রিং রোড ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নগরী থেকে এতদঞ্চলে যাতায়াতকারী ট্রাফিকও টানেল ব্যবহার করে প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
আরেকটি বিষয়কেও বিবেচনায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। শুধু শিল্পায়ন জোন নয়, এই পুরো এলাকাকে একটি বিশ্বমানের ‘পর্যটন ও আবাসন জোন’ হিসেবে গড়ে তোলার যে সুযোগ কর্ণফুলী টানেল সৃষ্টি করতে যাচ্ছে, সেটার গুরুত্বকেও খাটো করা মোটেই সমীচীন হবে না। আরও আকর্ষণীয়, যেসব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এই এলাকা ধারণ করছে, তা হলো সমুদ্র উপকূলে ভবিষ্যতে আরও অনেকগুলো বন্দর ও ‘আউটার এনকোরেজ’ গড়ে তোলার সুযোগ। কয়েক বছরের মধ্যে সাঙ্গু নদীর মোহনায় ও নিকটবর্তী সাগর উপকূলে আরেকটি বন্দর গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করলে অসুবিধা কোথায়? আমি আবারও বলছি, কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামের পাশাপাশি পুরো দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে। পুরো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকাকে ‘দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর’ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে কর্ণফুলী টানেল। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এই টানেলও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফসল। আমি প্রধানমন্ত্রীকে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বা
৩১ ডিসেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বা
৩১ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বা
৩১ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরী বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশের বেশ কয়েক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। অথচ নদীর স্বাভাবিক খাঁড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়সংলগ্ন জলধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে আসা পলিমাটি জমা হওয়াই স্বা
৩১ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫