সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখনো কৌতূহলের বিষয় হিসেবেই বিবেচিত। গোড়া থেকেই বাঙালি অভিজাতশ্রেণি বাংলা ভাষাকে তাদের শ্রেণিগত স্বার্থে অবজ্ঞা করে আসছে। এই অবজ্ঞা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। জনগণের মঙ্গলার্থে প্রয়োগের চেষ্টা করেনি বা আজও করছে না। তারা যেমনি নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় রাষ্ট্রকে মহাসংকটে নিপতিত করেছে, তেমনি ভাষাকেও। বাংলা ভাষার যে সংকট, তা মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরই সংকট। প্রকৃত অর্থে শাসকশ্রেণির নিজেদেরই সংকট।
ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে বাঙালির বিশেষভাবে সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের কাল। এ মাসকে কেন্দ্র করেই বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, জ্ঞান সাধনার ফলটুকু এই জাতির মননচর্চাকারীরা গ্রন্থাকারে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে চর্চার ওই নদীপ্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে এবং শূন্যস্থান পূর্ণ করছে মেধাহীনরা। এদের সঙ্গী বই ব্যবসায়ীরা। কথা ছিল বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার নেতৃত্বটা থাকবে বাংলা একাডেমির হাতে। রয়েছেও সেখানেই। কিন্তু বাণিজ্যের আক্রমণে বইমেলার অনেকটা এখন জ্ঞানপিপাসু তরুণদের বদলে বিনোদনপ্রিয় তরুণদের দখলে চলে গেছে।
দরকার ছিল গ্রন্থাগার আন্দোলনের। পঞ্চাশ বছরেও তা আর গড়ে উঠল না। আন্দোলনের পেছনে থাকে মহৎ উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য আজ হারিয়ে গেছে। তাই আন্দোলনও নেই। প্রয়োজন ছিল সৃষ্টিশীল বইয়ের বাজার সৃষ্টি। তা আর হলো কই। নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেননা, ভাষা আন্দোলনের মাতৃভূমি তো হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কাঁটাবনের যে পশু-পাখির বাজার, সেখানে গেলে অরণ্যচারী, আকাশচারী পশুপাখির বন্দিশালা চোখে পড়ে। বন্দিদশায় মুক্তির আশায় তাদের চিৎকার, আর্তনাদ শোনা যায়। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে অতীতে মুক্তির গান শুনিয়েছে, তারই জমিন কাঁটাবন স্বাধীন প্রাণীদের জেলখানায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল সেখানে বইয়ের বাজার হবে। তা আর হলো না।
অন্য সবকিছুর মতো বইয়েরও বিপণন চাই। তার জন্য প্রতিটি শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বিপণনকেন্দ্র গড়ে তোলা। লোকে জানবে বই কোথায় পাওয়া যায়। সেখানে যেমন শিক্ষার্থীরা যাবে, তেমনি যাবে গ্রন্থপ্রেমীকেরাও। জানা থাকবে যে সেখানে গেলে কেবল বই নয়, বইয়ের খবরও পাওয়া যাবে। কোনো কর্তৃপক্ষেরই এদিকে খেয়াল নেই, বই তো ভোগ্যপণ্য নয় যে মানুষ বাধ্য থাকবে কিনতে; বইয়ের মূল্য যতই বৃদ্ধি পাক। প্রকাশকেরা বইকে মুনাফার উপাদানে পরিণত করেছেন সাধারণ পাঠকের ক্রয়ের সীমাকে তোয়াক্কা না করেই। মুদ্রণ ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেখানে সরকারের দেখভাল করা দরকার ছিল। অথচ সরকার ভোগ্যপণ্যে ভর্তুকি দেয়, বইয়ের বেলায় নয়। ব্যাংক প্রকাশনা খাতে ঋণ দেয় না। উচিত ছিল বই প্রকাশ আর বিপণনের বিষয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। দরকার ছিল কাগজ আমদানি, মুদ্রণযন্ত্র আমদানির বেলায় ট্যাক্স মওকুফ করা। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলা বানানরীতি। এটি নিয়ে নানা হইচই হয়েছে এবং হচ্ছে। নানাজন নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। বাংলা একাডেমি প্রমিত রীতির কথা বলেছে। সংবাদপত্রগুলোও একক কোনো রীতি মানছে না। পাঠ্যপুস্তকেরও একই দশা। ভাষা একটি অথচ তার বানানরীতিতে ঐক্য নেই। এটা হচ্ছে ভাষার ক্ষেত্রে, বানানের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা খুবই জরুরি।
বাংলা ভাষার দুর্দশাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখ মেললেই। টিভির পর্দা, দোকানের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পণ্যের বিজ্ঞাপন—সবকিছুতেই বাক্য আর বানানে ভুলের ছড়াছড়ি। এতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারেরও নেই কোনো দায়। আসলে অর্থনীতিতে, সমাজে, পারিবারিক জীবনে আজ যে নৈরাজ্য চলছে, বাংলা ভাষার দুর্দশা তারই অংশ।
মানুষের জীবনে ভাষা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে তো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ভাষার ব্যবহার না থাকলে মানুষ মানুষ থাকে না, তার আত্মপ্রকাশের পথ যায় রুদ্ধ হয়ে, আত্মপরিচয় অবলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে, আত্মসম্মান যে বৃদ্ধি পাবে, সে আশা বজায় থাকে না। ভাষা তো কেবল ওপরকাঠামোর অংশ নয়। তার যোগ অবকাঠামোর সঙ্গেও। শিক্ষা, দক্ষতা, যোগাযোগ—কোনো কিছুই বৃদ্ধি পায় না ভাষার অনুশীলন ভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান, বাংলা ভাষা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। তদুপরি বিশ্বের ছাব্বিশ-সাতাশ কোটি মানুষের সে মাতৃভাষা। বাংলাকে উপেক্ষা করার মতো অন্যায় কাজ আমাদের জন্য কল্পনা করা কঠিন। কেবল ফেব্রুয়ারি নয়, বছরজুড়েই আমাদের ভাষাচেতনা অক্ষয় থাকুক ও শক্তিশালী হোক।
২. জনমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি অতি পুরোনো প্রশ্ন, কিন্তু তার আবির্ভাব নিত্যনতুন এবং অব্যাহত। প্রশ্নটার তো মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা, কেননা জনমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন বস্তু এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র কল্পকাহিনি মাত্র। আমাদের এই ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দায়িত্ব হওয়ার কথা আইন প্রণয়ন, সরকারের নির্বাহী অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, সরকারকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, সরকারি নির্বাহী কার্যক্রমের স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রের বৈদেশিক চুক্তি ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। কিন্তু আমাদের সংসদে এসব কাজ যে প্রচুর পরিমাণে করা হচ্ছে, এমনটা বলার কোনো সুযোগই নেই।
সংসদে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়, উত্তেজনা যে সৃষ্টি হয় না, তা-ও নয়; কিন্তু জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সেখানে ভীষণ অনীহা দেখা যায়। জাতীয় সংসদে সম্প্রতি জনমাধ্যমের কার্যকলাপের যে কঠিন সমালোচনা কয়েকজন সদস্য করেছেন, তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলেছে, সেটি আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে।
ঘটনাটি বেদনাদায়ক বটে, অপ্রত্যাশিতও বৈকি; তবে একে যে অস্বাভাবিক বলা যাবে, তা নয়। কেননা, আমাদের শাসকশ্রেণি সমালোচনার স্পর্শ মাত্র সহ্য করতে প্রস্তুত নয়, এ ব্যাপারে তারা বড়ই স্পর্শকাতর। এর কারণ হচ্ছে তারা নৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। এটা তাদের জানাই আছে যে তারা নানা ছলচাতুরীতে ক্ষমতায় এসেছে এবং যখন ক্ষমতা তাদের কোনো অংশের একচ্ছত্র হয়ে পড়ে, তখনো এটা তাদের অজানা থাকার কথা নয় যে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থই শুধু দেখে, জনগণের স্বার্থ নিয়ে মোটেই চিন্তা করে না। সমালোচনার আওয়াজ শুনলেই তারা খেপে ওঠে, ভাবে তাদের বুঝি পতন ঘটবে।
ওদিকে এরা নিজেরা নানা ধরনের আওয়াজ তোলে। কেউ বলে দিনবদল ঘটিয়ে তবে ছাড়বে, কেউ বলে তাদের উন্নয়নের বন্যায় ভেসে লোকে আনন্দে নৃত্য করবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তারা চায় সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকে স্তব্ধ করে দিতে। কেউ যদি প্রতিবাদী আওয়াজ তোলে তাহলে তার গলা চেপে ধরতে উদ্যত হয়। কণ্ঠরোধের এই কাজটাই তারা করতে চায়, যে জন্য জনমাধ্যমের ওপর বিষোদ্গার করাটা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। তাদের ভঙ্গিটা এ রকমের যে আমরা যেহেতু রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পেয়ে গেছি, তাই আওয়াজ যা দেওয়ার আমরাই দেব, অন্যরা তা শুনবে। এসব ধ্বনি আবার আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। তারা নিজেরা ধ্বনি দেবে এবং সেই ধ্বনি সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হবে, এটাই তাদের কামনা।
তবে সরকারি দল যে সব সময় এক গলায় কথা বলে, তা নয়। ভিন্ন ভিন্ন স্বর ও সুর শোনা যায়। যেমন মন্ত্রীদের একজন বলেছিলেন যে তাঁরা দ্রব্যমূল্যকে কবজার ভেতর নিয়ে আসতে পারবেন। কেননা, সরকারি টিসিবিকে তাঁরা আবার চালু করবেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক মন্ত্রী আওয়াজ দিয়েছেন, না, তা নয়, আমরা মুক্তবাজার চালু রাখব। বাজারই দাম নামিয়ে আনবে। ফলে টিসিবি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে এবং দাম মোটেই নামেনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা থাকাটা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস বলছে, এখানে কোনো বিরোধী দলই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সরকারপক্ষ থেকে বাধা এসেছে, বিরোধী দলের নিজের মধ্যেও সেই নৈতিক জোরটা দেখা যায়নি, যার ওপরে ভর করে রুখে দাঁড়াবে; তদুপরি জনগণের কাছে তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তা-ও নয়। এ ক্ষেত্রে সমালোচনা যেটুকু পাওয়া যায় তা আসে জনমাধ্যমের কাছ থেকেই। তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া আর একনায়কত্ব কায়েমের ভেতর বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না।
জনমাধ্যমকে যখন সবাক ও নির্বাক উভয় প্রকারের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, তখন বর্তমান সরকারই আবার সংসদে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস করেছে। এই আইনের উদ্দেশ্য হবে জনগণকে ক্ষমতাবান করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন। এমন বৈপরীত্য আমাদের দেশের বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও যে দেখা যাচ্ছে সে আর বিচিত্র কী! এই আইন প্রণয়নের পেছনে অবশ্য তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছিল। অনুমান করা অন্যায় হবে না যে সরকার যখন সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকেই অসহ্য মনে করে, তখন এই আইন নামে থাকবে, কিন্তু জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
শাসকশ্রেণি স্বেচ্ছায় জনগণকে ক্ষমতাবান করা দূরে থাক, জনমাধ্যমে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো রকম প্রকাশকেই সহ্য করবে না। সহ্য যাতে করে তার জন্য চাপ প্রয়োগ দরকার হবে। আর সেই চাপটা যে দুটি জায়গা থেকে আসতে পারে—তাদের একটি হচ্ছে ওই জনমাধ্যম নিজে এবং অপরটি, যেটি আরও জরুরি, সেটি হলো বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। দ্বিতীয়টি গড়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু প্রথমটি, অর্থাৎ জনমাধ্যম, দ্রুতই নিজেকে সংগঠিত করে তুলতে পারে যদি জনমাধ্যমের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। সাংবাদিকের ঐক্য পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি, যে জন্য কোনো সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠত। সেই ঐক্যটা এখন আর নেই। শাসকশ্রেণি সাংবাদিক ও জনমাধ্যমের কর্মীদের বিভক্ত করে ফেলেছে, আর এ জন্যই জনমাধ্যম এখন অতটা বিপন্ন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখনো কৌতূহলের বিষয় হিসেবেই বিবেচিত। গোড়া থেকেই বাঙালি অভিজাতশ্রেণি বাংলা ভাষাকে তাদের শ্রেণিগত স্বার্থে অবজ্ঞা করে আসছে। এই অবজ্ঞা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। জনগণের মঙ্গলার্থে প্রয়োগের চেষ্টা করেনি বা আজও করছে না। তারা যেমনি নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় রাষ্ট্রকে মহাসংকটে নিপতিত করেছে, তেমনি ভাষাকেও। বাংলা ভাষার যে সংকট, তা মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরই সংকট। প্রকৃত অর্থে শাসকশ্রেণির নিজেদেরই সংকট।
ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে বাঙালির বিশেষভাবে সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের কাল। এ মাসকে কেন্দ্র করেই বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, জ্ঞান সাধনার ফলটুকু এই জাতির মননচর্চাকারীরা গ্রন্থাকারে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে চর্চার ওই নদীপ্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে এবং শূন্যস্থান পূর্ণ করছে মেধাহীনরা। এদের সঙ্গী বই ব্যবসায়ীরা। কথা ছিল বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার নেতৃত্বটা থাকবে বাংলা একাডেমির হাতে। রয়েছেও সেখানেই। কিন্তু বাণিজ্যের আক্রমণে বইমেলার অনেকটা এখন জ্ঞানপিপাসু তরুণদের বদলে বিনোদনপ্রিয় তরুণদের দখলে চলে গেছে।
দরকার ছিল গ্রন্থাগার আন্দোলনের। পঞ্চাশ বছরেও তা আর গড়ে উঠল না। আন্দোলনের পেছনে থাকে মহৎ উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য আজ হারিয়ে গেছে। তাই আন্দোলনও নেই। প্রয়োজন ছিল সৃষ্টিশীল বইয়ের বাজার সৃষ্টি। তা আর হলো কই। নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেননা, ভাষা আন্দোলনের মাতৃভূমি তো হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কাঁটাবনের যে পশু-পাখির বাজার, সেখানে গেলে অরণ্যচারী, আকাশচারী পশুপাখির বন্দিশালা চোখে পড়ে। বন্দিদশায় মুক্তির আশায় তাদের চিৎকার, আর্তনাদ শোনা যায়। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে অতীতে মুক্তির গান শুনিয়েছে, তারই জমিন কাঁটাবন স্বাধীন প্রাণীদের জেলখানায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল সেখানে বইয়ের বাজার হবে। তা আর হলো না।
অন্য সবকিছুর মতো বইয়েরও বিপণন চাই। তার জন্য প্রতিটি শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বিপণনকেন্দ্র গড়ে তোলা। লোকে জানবে বই কোথায় পাওয়া যায়। সেখানে যেমন শিক্ষার্থীরা যাবে, তেমনি যাবে গ্রন্থপ্রেমীকেরাও। জানা থাকবে যে সেখানে গেলে কেবল বই নয়, বইয়ের খবরও পাওয়া যাবে। কোনো কর্তৃপক্ষেরই এদিকে খেয়াল নেই, বই তো ভোগ্যপণ্য নয় যে মানুষ বাধ্য থাকবে কিনতে; বইয়ের মূল্য যতই বৃদ্ধি পাক। প্রকাশকেরা বইকে মুনাফার উপাদানে পরিণত করেছেন সাধারণ পাঠকের ক্রয়ের সীমাকে তোয়াক্কা না করেই। মুদ্রণ ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেখানে সরকারের দেখভাল করা দরকার ছিল। অথচ সরকার ভোগ্যপণ্যে ভর্তুকি দেয়, বইয়ের বেলায় নয়। ব্যাংক প্রকাশনা খাতে ঋণ দেয় না। উচিত ছিল বই প্রকাশ আর বিপণনের বিষয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। দরকার ছিল কাগজ আমদানি, মুদ্রণযন্ত্র আমদানির বেলায় ট্যাক্স মওকুফ করা। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলা বানানরীতি। এটি নিয়ে নানা হইচই হয়েছে এবং হচ্ছে। নানাজন নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। বাংলা একাডেমি প্রমিত রীতির কথা বলেছে। সংবাদপত্রগুলোও একক কোনো রীতি মানছে না। পাঠ্যপুস্তকেরও একই দশা। ভাষা একটি অথচ তার বানানরীতিতে ঐক্য নেই। এটা হচ্ছে ভাষার ক্ষেত্রে, বানানের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা খুবই জরুরি।
বাংলা ভাষার দুর্দশাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখ মেললেই। টিভির পর্দা, দোকানের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পণ্যের বিজ্ঞাপন—সবকিছুতেই বাক্য আর বানানে ভুলের ছড়াছড়ি। এতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারেরও নেই কোনো দায়। আসলে অর্থনীতিতে, সমাজে, পারিবারিক জীবনে আজ যে নৈরাজ্য চলছে, বাংলা ভাষার দুর্দশা তারই অংশ।
মানুষের জীবনে ভাষা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে তো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ভাষার ব্যবহার না থাকলে মানুষ মানুষ থাকে না, তার আত্মপ্রকাশের পথ যায় রুদ্ধ হয়ে, আত্মপরিচয় অবলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে, আত্মসম্মান যে বৃদ্ধি পাবে, সে আশা বজায় থাকে না। ভাষা তো কেবল ওপরকাঠামোর অংশ নয়। তার যোগ অবকাঠামোর সঙ্গেও। শিক্ষা, দক্ষতা, যোগাযোগ—কোনো কিছুই বৃদ্ধি পায় না ভাষার অনুশীলন ভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান, বাংলা ভাষা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। তদুপরি বিশ্বের ছাব্বিশ-সাতাশ কোটি মানুষের সে মাতৃভাষা। বাংলাকে উপেক্ষা করার মতো অন্যায় কাজ আমাদের জন্য কল্পনা করা কঠিন। কেবল ফেব্রুয়ারি নয়, বছরজুড়েই আমাদের ভাষাচেতনা অক্ষয় থাকুক ও শক্তিশালী হোক।
২. জনমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি অতি পুরোনো প্রশ্ন, কিন্তু তার আবির্ভাব নিত্যনতুন এবং অব্যাহত। প্রশ্নটার তো মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা, কেননা জনমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন বস্তু এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র কল্পকাহিনি মাত্র। আমাদের এই ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দায়িত্ব হওয়ার কথা আইন প্রণয়ন, সরকারের নির্বাহী অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, সরকারকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, সরকারি নির্বাহী কার্যক্রমের স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রের বৈদেশিক চুক্তি ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। কিন্তু আমাদের সংসদে এসব কাজ যে প্রচুর পরিমাণে করা হচ্ছে, এমনটা বলার কোনো সুযোগই নেই।
সংসদে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়, উত্তেজনা যে সৃষ্টি হয় না, তা-ও নয়; কিন্তু জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সেখানে ভীষণ অনীহা দেখা যায়। জাতীয় সংসদে সম্প্রতি জনমাধ্যমের কার্যকলাপের যে কঠিন সমালোচনা কয়েকজন সদস্য করেছেন, তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলেছে, সেটি আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে।
ঘটনাটি বেদনাদায়ক বটে, অপ্রত্যাশিতও বৈকি; তবে একে যে অস্বাভাবিক বলা যাবে, তা নয়। কেননা, আমাদের শাসকশ্রেণি সমালোচনার স্পর্শ মাত্র সহ্য করতে প্রস্তুত নয়, এ ব্যাপারে তারা বড়ই স্পর্শকাতর। এর কারণ হচ্ছে তারা নৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। এটা তাদের জানাই আছে যে তারা নানা ছলচাতুরীতে ক্ষমতায় এসেছে এবং যখন ক্ষমতা তাদের কোনো অংশের একচ্ছত্র হয়ে পড়ে, তখনো এটা তাদের অজানা থাকার কথা নয় যে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থই শুধু দেখে, জনগণের স্বার্থ নিয়ে মোটেই চিন্তা করে না। সমালোচনার আওয়াজ শুনলেই তারা খেপে ওঠে, ভাবে তাদের বুঝি পতন ঘটবে।
ওদিকে এরা নিজেরা নানা ধরনের আওয়াজ তোলে। কেউ বলে দিনবদল ঘটিয়ে তবে ছাড়বে, কেউ বলে তাদের উন্নয়নের বন্যায় ভেসে লোকে আনন্দে নৃত্য করবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তারা চায় সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকে স্তব্ধ করে দিতে। কেউ যদি প্রতিবাদী আওয়াজ তোলে তাহলে তার গলা চেপে ধরতে উদ্যত হয়। কণ্ঠরোধের এই কাজটাই তারা করতে চায়, যে জন্য জনমাধ্যমের ওপর বিষোদ্গার করাটা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। তাদের ভঙ্গিটা এ রকমের যে আমরা যেহেতু রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পেয়ে গেছি, তাই আওয়াজ যা দেওয়ার আমরাই দেব, অন্যরা তা শুনবে। এসব ধ্বনি আবার আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। তারা নিজেরা ধ্বনি দেবে এবং সেই ধ্বনি সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হবে, এটাই তাদের কামনা।
তবে সরকারি দল যে সব সময় এক গলায় কথা বলে, তা নয়। ভিন্ন ভিন্ন স্বর ও সুর শোনা যায়। যেমন মন্ত্রীদের একজন বলেছিলেন যে তাঁরা দ্রব্যমূল্যকে কবজার ভেতর নিয়ে আসতে পারবেন। কেননা, সরকারি টিসিবিকে তাঁরা আবার চালু করবেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক মন্ত্রী আওয়াজ দিয়েছেন, না, তা নয়, আমরা মুক্তবাজার চালু রাখব। বাজারই দাম নামিয়ে আনবে। ফলে টিসিবি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে এবং দাম মোটেই নামেনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা থাকাটা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস বলছে, এখানে কোনো বিরোধী দলই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সরকারপক্ষ থেকে বাধা এসেছে, বিরোধী দলের নিজের মধ্যেও সেই নৈতিক জোরটা দেখা যায়নি, যার ওপরে ভর করে রুখে দাঁড়াবে; তদুপরি জনগণের কাছে তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তা-ও নয়। এ ক্ষেত্রে সমালোচনা যেটুকু পাওয়া যায় তা আসে জনমাধ্যমের কাছ থেকেই। তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া আর একনায়কত্ব কায়েমের ভেতর বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না।
জনমাধ্যমকে যখন সবাক ও নির্বাক উভয় প্রকারের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, তখন বর্তমান সরকারই আবার সংসদে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস করেছে। এই আইনের উদ্দেশ্য হবে জনগণকে ক্ষমতাবান করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন। এমন বৈপরীত্য আমাদের দেশের বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও যে দেখা যাচ্ছে সে আর বিচিত্র কী! এই আইন প্রণয়নের পেছনে অবশ্য তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছিল। অনুমান করা অন্যায় হবে না যে সরকার যখন সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকেই অসহ্য মনে করে, তখন এই আইন নামে থাকবে, কিন্তু জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
শাসকশ্রেণি স্বেচ্ছায় জনগণকে ক্ষমতাবান করা দূরে থাক, জনমাধ্যমে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো রকম প্রকাশকেই সহ্য করবে না। সহ্য যাতে করে তার জন্য চাপ প্রয়োগ দরকার হবে। আর সেই চাপটা যে দুটি জায়গা থেকে আসতে পারে—তাদের একটি হচ্ছে ওই জনমাধ্যম নিজে এবং অপরটি, যেটি আরও জরুরি, সেটি হলো বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। দ্বিতীয়টি গড়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু প্রথমটি, অর্থাৎ জনমাধ্যম, দ্রুতই নিজেকে সংগঠিত করে তুলতে পারে যদি জনমাধ্যমের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। সাংবাদিকের ঐক্য পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি, যে জন্য কোনো সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠত। সেই ঐক্যটা এখন আর নেই। শাসকশ্রেণি সাংবাদিক ও জনমাধ্যমের কর্মীদের বিভক্ত করে ফেলেছে, আর এ জন্যই জনমাধ্যম এখন অতটা বিপন্ন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখনো কৌতূহলের বিষয় হিসেবেই বিবেচিত। গোড়া থেকেই বাঙালি অভিজাতশ্রেণি বাংলা ভাষাকে তাদের শ্রেণিগত স্বার্থে অবজ্ঞা করে আসছে। এই অবজ্ঞা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। জনগণের মঙ্গলার্থে প্রয়োগের চেষ্টা করেনি বা আজও করছে না। তারা যেমনি নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় রাষ্ট্রকে মহাসংকটে নিপতিত করেছে, তেমনি ভাষাকেও। বাংলা ভাষার যে সংকট, তা মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরই সংকট। প্রকৃত অর্থে শাসকশ্রেণির নিজেদেরই সংকট।
ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে বাঙালির বিশেষভাবে সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের কাল। এ মাসকে কেন্দ্র করেই বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, জ্ঞান সাধনার ফলটুকু এই জাতির মননচর্চাকারীরা গ্রন্থাকারে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে চর্চার ওই নদীপ্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে এবং শূন্যস্থান পূর্ণ করছে মেধাহীনরা। এদের সঙ্গী বই ব্যবসায়ীরা। কথা ছিল বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার নেতৃত্বটা থাকবে বাংলা একাডেমির হাতে। রয়েছেও সেখানেই। কিন্তু বাণিজ্যের আক্রমণে বইমেলার অনেকটা এখন জ্ঞানপিপাসু তরুণদের বদলে বিনোদনপ্রিয় তরুণদের দখলে চলে গেছে।
দরকার ছিল গ্রন্থাগার আন্দোলনের। পঞ্চাশ বছরেও তা আর গড়ে উঠল না। আন্দোলনের পেছনে থাকে মহৎ উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য আজ হারিয়ে গেছে। তাই আন্দোলনও নেই। প্রয়োজন ছিল সৃষ্টিশীল বইয়ের বাজার সৃষ্টি। তা আর হলো কই। নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেননা, ভাষা আন্দোলনের মাতৃভূমি তো হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কাঁটাবনের যে পশু-পাখির বাজার, সেখানে গেলে অরণ্যচারী, আকাশচারী পশুপাখির বন্দিশালা চোখে পড়ে। বন্দিদশায় মুক্তির আশায় তাদের চিৎকার, আর্তনাদ শোনা যায়। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে অতীতে মুক্তির গান শুনিয়েছে, তারই জমিন কাঁটাবন স্বাধীন প্রাণীদের জেলখানায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল সেখানে বইয়ের বাজার হবে। তা আর হলো না।
অন্য সবকিছুর মতো বইয়েরও বিপণন চাই। তার জন্য প্রতিটি শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বিপণনকেন্দ্র গড়ে তোলা। লোকে জানবে বই কোথায় পাওয়া যায়। সেখানে যেমন শিক্ষার্থীরা যাবে, তেমনি যাবে গ্রন্থপ্রেমীকেরাও। জানা থাকবে যে সেখানে গেলে কেবল বই নয়, বইয়ের খবরও পাওয়া যাবে। কোনো কর্তৃপক্ষেরই এদিকে খেয়াল নেই, বই তো ভোগ্যপণ্য নয় যে মানুষ বাধ্য থাকবে কিনতে; বইয়ের মূল্য যতই বৃদ্ধি পাক। প্রকাশকেরা বইকে মুনাফার উপাদানে পরিণত করেছেন সাধারণ পাঠকের ক্রয়ের সীমাকে তোয়াক্কা না করেই। মুদ্রণ ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেখানে সরকারের দেখভাল করা দরকার ছিল। অথচ সরকার ভোগ্যপণ্যে ভর্তুকি দেয়, বইয়ের বেলায় নয়। ব্যাংক প্রকাশনা খাতে ঋণ দেয় না। উচিত ছিল বই প্রকাশ আর বিপণনের বিষয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। দরকার ছিল কাগজ আমদানি, মুদ্রণযন্ত্র আমদানির বেলায় ট্যাক্স মওকুফ করা। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলা বানানরীতি। এটি নিয়ে নানা হইচই হয়েছে এবং হচ্ছে। নানাজন নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। বাংলা একাডেমি প্রমিত রীতির কথা বলেছে। সংবাদপত্রগুলোও একক কোনো রীতি মানছে না। পাঠ্যপুস্তকেরও একই দশা। ভাষা একটি অথচ তার বানানরীতিতে ঐক্য নেই। এটা হচ্ছে ভাষার ক্ষেত্রে, বানানের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা খুবই জরুরি।
বাংলা ভাষার দুর্দশাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখ মেললেই। টিভির পর্দা, দোকানের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পণ্যের বিজ্ঞাপন—সবকিছুতেই বাক্য আর বানানে ভুলের ছড়াছড়ি। এতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারেরও নেই কোনো দায়। আসলে অর্থনীতিতে, সমাজে, পারিবারিক জীবনে আজ যে নৈরাজ্য চলছে, বাংলা ভাষার দুর্দশা তারই অংশ।
মানুষের জীবনে ভাষা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে তো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ভাষার ব্যবহার না থাকলে মানুষ মানুষ থাকে না, তার আত্মপ্রকাশের পথ যায় রুদ্ধ হয়ে, আত্মপরিচয় অবলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে, আত্মসম্মান যে বৃদ্ধি পাবে, সে আশা বজায় থাকে না। ভাষা তো কেবল ওপরকাঠামোর অংশ নয়। তার যোগ অবকাঠামোর সঙ্গেও। শিক্ষা, দক্ষতা, যোগাযোগ—কোনো কিছুই বৃদ্ধি পায় না ভাষার অনুশীলন ভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান, বাংলা ভাষা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। তদুপরি বিশ্বের ছাব্বিশ-সাতাশ কোটি মানুষের সে মাতৃভাষা। বাংলাকে উপেক্ষা করার মতো অন্যায় কাজ আমাদের জন্য কল্পনা করা কঠিন। কেবল ফেব্রুয়ারি নয়, বছরজুড়েই আমাদের ভাষাচেতনা অক্ষয় থাকুক ও শক্তিশালী হোক।
২. জনমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি অতি পুরোনো প্রশ্ন, কিন্তু তার আবির্ভাব নিত্যনতুন এবং অব্যাহত। প্রশ্নটার তো মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা, কেননা জনমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন বস্তু এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র কল্পকাহিনি মাত্র। আমাদের এই ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দায়িত্ব হওয়ার কথা আইন প্রণয়ন, সরকারের নির্বাহী অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, সরকারকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, সরকারি নির্বাহী কার্যক্রমের স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রের বৈদেশিক চুক্তি ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। কিন্তু আমাদের সংসদে এসব কাজ যে প্রচুর পরিমাণে করা হচ্ছে, এমনটা বলার কোনো সুযোগই নেই।
সংসদে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়, উত্তেজনা যে সৃষ্টি হয় না, তা-ও নয়; কিন্তু জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সেখানে ভীষণ অনীহা দেখা যায়। জাতীয় সংসদে সম্প্রতি জনমাধ্যমের কার্যকলাপের যে কঠিন সমালোচনা কয়েকজন সদস্য করেছেন, তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলেছে, সেটি আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে।
ঘটনাটি বেদনাদায়ক বটে, অপ্রত্যাশিতও বৈকি; তবে একে যে অস্বাভাবিক বলা যাবে, তা নয়। কেননা, আমাদের শাসকশ্রেণি সমালোচনার স্পর্শ মাত্র সহ্য করতে প্রস্তুত নয়, এ ব্যাপারে তারা বড়ই স্পর্শকাতর। এর কারণ হচ্ছে তারা নৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। এটা তাদের জানাই আছে যে তারা নানা ছলচাতুরীতে ক্ষমতায় এসেছে এবং যখন ক্ষমতা তাদের কোনো অংশের একচ্ছত্র হয়ে পড়ে, তখনো এটা তাদের অজানা থাকার কথা নয় যে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থই শুধু দেখে, জনগণের স্বার্থ নিয়ে মোটেই চিন্তা করে না। সমালোচনার আওয়াজ শুনলেই তারা খেপে ওঠে, ভাবে তাদের বুঝি পতন ঘটবে।
ওদিকে এরা নিজেরা নানা ধরনের আওয়াজ তোলে। কেউ বলে দিনবদল ঘটিয়ে তবে ছাড়বে, কেউ বলে তাদের উন্নয়নের বন্যায় ভেসে লোকে আনন্দে নৃত্য করবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তারা চায় সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকে স্তব্ধ করে দিতে। কেউ যদি প্রতিবাদী আওয়াজ তোলে তাহলে তার গলা চেপে ধরতে উদ্যত হয়। কণ্ঠরোধের এই কাজটাই তারা করতে চায়, যে জন্য জনমাধ্যমের ওপর বিষোদ্গার করাটা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। তাদের ভঙ্গিটা এ রকমের যে আমরা যেহেতু রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পেয়ে গেছি, তাই আওয়াজ যা দেওয়ার আমরাই দেব, অন্যরা তা শুনবে। এসব ধ্বনি আবার আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। তারা নিজেরা ধ্বনি দেবে এবং সেই ধ্বনি সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হবে, এটাই তাদের কামনা।
তবে সরকারি দল যে সব সময় এক গলায় কথা বলে, তা নয়। ভিন্ন ভিন্ন স্বর ও সুর শোনা যায়। যেমন মন্ত্রীদের একজন বলেছিলেন যে তাঁরা দ্রব্যমূল্যকে কবজার ভেতর নিয়ে আসতে পারবেন। কেননা, সরকারি টিসিবিকে তাঁরা আবার চালু করবেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক মন্ত্রী আওয়াজ দিয়েছেন, না, তা নয়, আমরা মুক্তবাজার চালু রাখব। বাজারই দাম নামিয়ে আনবে। ফলে টিসিবি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে এবং দাম মোটেই নামেনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা থাকাটা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস বলছে, এখানে কোনো বিরোধী দলই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সরকারপক্ষ থেকে বাধা এসেছে, বিরোধী দলের নিজের মধ্যেও সেই নৈতিক জোরটা দেখা যায়নি, যার ওপরে ভর করে রুখে দাঁড়াবে; তদুপরি জনগণের কাছে তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তা-ও নয়। এ ক্ষেত্রে সমালোচনা যেটুকু পাওয়া যায় তা আসে জনমাধ্যমের কাছ থেকেই। তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া আর একনায়কত্ব কায়েমের ভেতর বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না।
জনমাধ্যমকে যখন সবাক ও নির্বাক উভয় প্রকারের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, তখন বর্তমান সরকারই আবার সংসদে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস করেছে। এই আইনের উদ্দেশ্য হবে জনগণকে ক্ষমতাবান করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন। এমন বৈপরীত্য আমাদের দেশের বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও যে দেখা যাচ্ছে সে আর বিচিত্র কী! এই আইন প্রণয়নের পেছনে অবশ্য তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছিল। অনুমান করা অন্যায় হবে না যে সরকার যখন সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকেই অসহ্য মনে করে, তখন এই আইন নামে থাকবে, কিন্তু জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
শাসকশ্রেণি স্বেচ্ছায় জনগণকে ক্ষমতাবান করা দূরে থাক, জনমাধ্যমে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো রকম প্রকাশকেই সহ্য করবে না। সহ্য যাতে করে তার জন্য চাপ প্রয়োগ দরকার হবে। আর সেই চাপটা যে দুটি জায়গা থেকে আসতে পারে—তাদের একটি হচ্ছে ওই জনমাধ্যম নিজে এবং অপরটি, যেটি আরও জরুরি, সেটি হলো বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। দ্বিতীয়টি গড়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু প্রথমটি, অর্থাৎ জনমাধ্যম, দ্রুতই নিজেকে সংগঠিত করে তুলতে পারে যদি জনমাধ্যমের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। সাংবাদিকের ঐক্য পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি, যে জন্য কোনো সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠত। সেই ঐক্যটা এখন আর নেই। শাসকশ্রেণি সাংবাদিক ও জনমাধ্যমের কর্মীদের বিভক্ত করে ফেলেছে, আর এ জন্যই জনমাধ্যম এখন অতটা বিপন্ন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখনো কৌতূহলের বিষয় হিসেবেই বিবেচিত। গোড়া থেকেই বাঙালি অভিজাতশ্রেণি বাংলা ভাষাকে তাদের শ্রেণিগত স্বার্থে অবজ্ঞা করে আসছে। এই অবজ্ঞা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। জনগণের মঙ্গলার্থে প্রয়োগের চেষ্টা করেনি বা আজও করছে না। তারা যেমনি নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় রাষ্ট্রকে মহাসংকটে নিপতিত করেছে, তেমনি ভাষাকেও। বাংলা ভাষার যে সংকট, তা মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরই সংকট। প্রকৃত অর্থে শাসকশ্রেণির নিজেদেরই সংকট।
ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে বাঙালির বিশেষভাবে সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের কাল। এ মাসকে কেন্দ্র করেই বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, জ্ঞান সাধনার ফলটুকু এই জাতির মননচর্চাকারীরা গ্রন্থাকারে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে চর্চার ওই নদীপ্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে এবং শূন্যস্থান পূর্ণ করছে মেধাহীনরা। এদের সঙ্গী বই ব্যবসায়ীরা। কথা ছিল বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার নেতৃত্বটা থাকবে বাংলা একাডেমির হাতে। রয়েছেও সেখানেই। কিন্তু বাণিজ্যের আক্রমণে বইমেলার অনেকটা এখন জ্ঞানপিপাসু তরুণদের বদলে বিনোদনপ্রিয় তরুণদের দখলে চলে গেছে।
দরকার ছিল গ্রন্থাগার আন্দোলনের। পঞ্চাশ বছরেও তা আর গড়ে উঠল না। আন্দোলনের পেছনে থাকে মহৎ উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য আজ হারিয়ে গেছে। তাই আন্দোলনও নেই। প্রয়োজন ছিল সৃষ্টিশীল বইয়ের বাজার সৃষ্টি। তা আর হলো কই। নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেননা, ভাষা আন্দোলনের মাতৃভূমি তো হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কাঁটাবনের যে পশু-পাখির বাজার, সেখানে গেলে অরণ্যচারী, আকাশচারী পশুপাখির বন্দিশালা চোখে পড়ে। বন্দিদশায় মুক্তির আশায় তাদের চিৎকার, আর্তনাদ শোনা যায়। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে অতীতে মুক্তির গান শুনিয়েছে, তারই জমিন কাঁটাবন স্বাধীন প্রাণীদের জেলখানায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল সেখানে বইয়ের বাজার হবে। তা আর হলো না।
অন্য সবকিছুর মতো বইয়েরও বিপণন চাই। তার জন্য প্রতিটি শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বিপণনকেন্দ্র গড়ে তোলা। লোকে জানবে বই কোথায় পাওয়া যায়। সেখানে যেমন শিক্ষার্থীরা যাবে, তেমনি যাবে গ্রন্থপ্রেমীকেরাও। জানা থাকবে যে সেখানে গেলে কেবল বই নয়, বইয়ের খবরও পাওয়া যাবে। কোনো কর্তৃপক্ষেরই এদিকে খেয়াল নেই, বই তো ভোগ্যপণ্য নয় যে মানুষ বাধ্য থাকবে কিনতে; বইয়ের মূল্য যতই বৃদ্ধি পাক। প্রকাশকেরা বইকে মুনাফার উপাদানে পরিণত করেছেন সাধারণ পাঠকের ক্রয়ের সীমাকে তোয়াক্কা না করেই। মুদ্রণ ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেখানে সরকারের দেখভাল করা দরকার ছিল। অথচ সরকার ভোগ্যপণ্যে ভর্তুকি দেয়, বইয়ের বেলায় নয়। ব্যাংক প্রকাশনা খাতে ঋণ দেয় না। উচিত ছিল বই প্রকাশ আর বিপণনের বিষয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। দরকার ছিল কাগজ আমদানি, মুদ্রণযন্ত্র আমদানির বেলায় ট্যাক্স মওকুফ করা। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলা বানানরীতি। এটি নিয়ে নানা হইচই হয়েছে এবং হচ্ছে। নানাজন নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। বাংলা একাডেমি প্রমিত রীতির কথা বলেছে। সংবাদপত্রগুলোও একক কোনো রীতি মানছে না। পাঠ্যপুস্তকেরও একই দশা। ভাষা একটি অথচ তার বানানরীতিতে ঐক্য নেই। এটা হচ্ছে ভাষার ক্ষেত্রে, বানানের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা খুবই জরুরি।
বাংলা ভাষার দুর্দশাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখ মেললেই। টিভির পর্দা, দোকানের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পণ্যের বিজ্ঞাপন—সবকিছুতেই বাক্য আর বানানে ভুলের ছড়াছড়ি। এতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারেরও নেই কোনো দায়। আসলে অর্থনীতিতে, সমাজে, পারিবারিক জীবনে আজ যে নৈরাজ্য চলছে, বাংলা ভাষার দুর্দশা তারই অংশ।
মানুষের জীবনে ভাষা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে তো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ভাষার ব্যবহার না থাকলে মানুষ মানুষ থাকে না, তার আত্মপ্রকাশের পথ যায় রুদ্ধ হয়ে, আত্মপরিচয় অবলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে, আত্মসম্মান যে বৃদ্ধি পাবে, সে আশা বজায় থাকে না। ভাষা তো কেবল ওপরকাঠামোর অংশ নয়। তার যোগ অবকাঠামোর সঙ্গেও। শিক্ষা, দক্ষতা, যোগাযোগ—কোনো কিছুই বৃদ্ধি পায় না ভাষার অনুশীলন ভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান, বাংলা ভাষা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। তদুপরি বিশ্বের ছাব্বিশ-সাতাশ কোটি মানুষের সে মাতৃভাষা। বাংলাকে উপেক্ষা করার মতো অন্যায় কাজ আমাদের জন্য কল্পনা করা কঠিন। কেবল ফেব্রুয়ারি নয়, বছরজুড়েই আমাদের ভাষাচেতনা অক্ষয় থাকুক ও শক্তিশালী হোক।
২. জনমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি অতি পুরোনো প্রশ্ন, কিন্তু তার আবির্ভাব নিত্যনতুন এবং অব্যাহত। প্রশ্নটার তো মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা, কেননা জনমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন বস্তু এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র কল্পকাহিনি মাত্র। আমাদের এই ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দায়িত্ব হওয়ার কথা আইন প্রণয়ন, সরকারের নির্বাহী অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, সরকারকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, সরকারি নির্বাহী কার্যক্রমের স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রের বৈদেশিক চুক্তি ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। কিন্তু আমাদের সংসদে এসব কাজ যে প্রচুর পরিমাণে করা হচ্ছে, এমনটা বলার কোনো সুযোগই নেই।
সংসদে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়, উত্তেজনা যে সৃষ্টি হয় না, তা-ও নয়; কিন্তু জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সেখানে ভীষণ অনীহা দেখা যায়। জাতীয় সংসদে সম্প্রতি জনমাধ্যমের কার্যকলাপের যে কঠিন সমালোচনা কয়েকজন সদস্য করেছেন, তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলেছে, সেটি আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে।
ঘটনাটি বেদনাদায়ক বটে, অপ্রত্যাশিতও বৈকি; তবে একে যে অস্বাভাবিক বলা যাবে, তা নয়। কেননা, আমাদের শাসকশ্রেণি সমালোচনার স্পর্শ মাত্র সহ্য করতে প্রস্তুত নয়, এ ব্যাপারে তারা বড়ই স্পর্শকাতর। এর কারণ হচ্ছে তারা নৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। এটা তাদের জানাই আছে যে তারা নানা ছলচাতুরীতে ক্ষমতায় এসেছে এবং যখন ক্ষমতা তাদের কোনো অংশের একচ্ছত্র হয়ে পড়ে, তখনো এটা তাদের অজানা থাকার কথা নয় যে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থই শুধু দেখে, জনগণের স্বার্থ নিয়ে মোটেই চিন্তা করে না। সমালোচনার আওয়াজ শুনলেই তারা খেপে ওঠে, ভাবে তাদের বুঝি পতন ঘটবে।
ওদিকে এরা নিজেরা নানা ধরনের আওয়াজ তোলে। কেউ বলে দিনবদল ঘটিয়ে তবে ছাড়বে, কেউ বলে তাদের উন্নয়নের বন্যায় ভেসে লোকে আনন্দে নৃত্য করবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তারা চায় সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকে স্তব্ধ করে দিতে। কেউ যদি প্রতিবাদী আওয়াজ তোলে তাহলে তার গলা চেপে ধরতে উদ্যত হয়। কণ্ঠরোধের এই কাজটাই তারা করতে চায়, যে জন্য জনমাধ্যমের ওপর বিষোদ্গার করাটা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। তাদের ভঙ্গিটা এ রকমের যে আমরা যেহেতু রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পেয়ে গেছি, তাই আওয়াজ যা দেওয়ার আমরাই দেব, অন্যরা তা শুনবে। এসব ধ্বনি আবার আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। তারা নিজেরা ধ্বনি দেবে এবং সেই ধ্বনি সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হবে, এটাই তাদের কামনা।
তবে সরকারি দল যে সব সময় এক গলায় কথা বলে, তা নয়। ভিন্ন ভিন্ন স্বর ও সুর শোনা যায়। যেমন মন্ত্রীদের একজন বলেছিলেন যে তাঁরা দ্রব্যমূল্যকে কবজার ভেতর নিয়ে আসতে পারবেন। কেননা, সরকারি টিসিবিকে তাঁরা আবার চালু করবেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক মন্ত্রী আওয়াজ দিয়েছেন, না, তা নয়, আমরা মুক্তবাজার চালু রাখব। বাজারই দাম নামিয়ে আনবে। ফলে টিসিবি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে এবং দাম মোটেই নামেনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা থাকাটা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস বলছে, এখানে কোনো বিরোধী দলই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সরকারপক্ষ থেকে বাধা এসেছে, বিরোধী দলের নিজের মধ্যেও সেই নৈতিক জোরটা দেখা যায়নি, যার ওপরে ভর করে রুখে দাঁড়াবে; তদুপরি জনগণের কাছে তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তা-ও নয়। এ ক্ষেত্রে সমালোচনা যেটুকু পাওয়া যায় তা আসে জনমাধ্যমের কাছ থেকেই। তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া আর একনায়কত্ব কায়েমের ভেতর বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না।
জনমাধ্যমকে যখন সবাক ও নির্বাক উভয় প্রকারের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, তখন বর্তমান সরকারই আবার সংসদে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস করেছে। এই আইনের উদ্দেশ্য হবে জনগণকে ক্ষমতাবান করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন। এমন বৈপরীত্য আমাদের দেশের বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও যে দেখা যাচ্ছে সে আর বিচিত্র কী! এই আইন প্রণয়নের পেছনে অবশ্য তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছিল। অনুমান করা অন্যায় হবে না যে সরকার যখন সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকেই অসহ্য মনে করে, তখন এই আইন নামে থাকবে, কিন্তু জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
শাসকশ্রেণি স্বেচ্ছায় জনগণকে ক্ষমতাবান করা দূরে থাক, জনমাধ্যমে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো রকম প্রকাশকেই সহ্য করবে না। সহ্য যাতে করে তার জন্য চাপ প্রয়োগ দরকার হবে। আর সেই চাপটা যে দুটি জায়গা থেকে আসতে পারে—তাদের একটি হচ্ছে ওই জনমাধ্যম নিজে এবং অপরটি, যেটি আরও জরুরি, সেটি হলো বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। দ্বিতীয়টি গড়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু প্রথমটি, অর্থাৎ জনমাধ্যম, দ্রুতই নিজেকে সংগঠিত করে তুলতে পারে যদি জনমাধ্যমের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। সাংবাদিকের ঐক্য পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি, যে জন্য কোনো সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠত। সেই ঐক্যটা এখন আর নেই। শাসকশ্রেণি সাংবাদিক ও জনমাধ্যমের কর্মীদের বিভক্ত করে ফেলেছে, আর এ জন্যই জনমাধ্যম এখন অতটা বিপন্ন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫