Ajker Patrika

রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩৬
রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা শত্রুমুক্ত ছিল। ওই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

জানা গেছে, রৌমারীর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে লক্ষাধিক শরণার্থী রৌমারীর মাটি পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখানে বাংলাদেশের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। এই কেন্দ্র থেকে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছেন। কালের সাক্ষী হিসেবে ‘৭১এ নির্মিত বাংলাদেশের একমাত্র চাঁনমারী দাঁড়িয়ে আছে রৌমারীতে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরুর খবর আমরা সকালে জানতে পারি। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় এস কে মজিদ মুকুল, নুরুল ইসলাম পাপু মিয়া, আজিজুল হক, সরুজ্জামান বকুল, হুমায়ুন কবির ও আতাউর রহমানসহ ১৫ থেকে ২০ জন একসঙ্গে বসে আলোচনা করে রৌমারীতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলি। আমাদের এ উদ্যোগে প্রত্যক্ষভাবে অস্ত্র চালানোসহ সকল প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব নেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছুটিতে আসা ফ্লাইট সার্জেন্ট মজিবুর রহমান, নায়েক সুবেদার আব্দুর রহিম, হাবিলদার রিয়াজুল হক, নায়েক সিরাজুল হক ভোলা, নায়েক নজরুল ইসলাম, নায়েক শাহজাহান আলী, নায়েক ফায়জুল হক, নায়েক সোলায়মান আলী, হাবিলদার বদিউজ্জামান ও হাবিলদার আবুল খায়ের।

আজিজুর আরও বলেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের দুই দিন পর ২৮ মার্চ ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে হাবিলদার আলতাফ (আফতাব আলী) রৌমারী সিজি জামান হাইস্কুলকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে উদ্বোধন করেন। সেই থেকে বিদ্যালয়টি সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পটি বিশাল আকার ধারণ করে। পরে রৌমারী কেরামতিয়া মাদ্রাসা, টাপুরচর হাইস্কুল, দাঁতভাঙ্গা হাইস্কুল, যাদুরচর হাইস্কুল ও রাজীবপুর হাইস্কুলেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হয়।

রৌমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল ওয়াদুদ মণ্ডল বলেন, রৌমারীবাসীর ব্যাপক প্রতিরোধের কারণেই পাকিস্তানি বাহিনী রৌমারীর মাটিতে পা রাখতে পারেনি। জুলাই ‘৭১-এ ব্রহ্মপুত্র নদের কোদালকাটি ও কাঁচকোল পয়েন্ট দিয়ে রৌমারীতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। কিন্তু সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের গানবোট ধ্বংস করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরেও সরকার থেকে রৌমারী মুক্তাঞ্চল ঘোষিত না হওয়াটা দুঃখজনক বিষয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নেক্কার আলী বলেন, ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায় অথচ বিজয়ের ৫০ বছরেও রৌমারীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়নি। তাই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তথা সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, রৌমারী উপজেলায় আমরা মোট ২৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা, এর মধ্যে শহীদ হয়েছেন ৯ জন, স্বাধীনের পরে মৃত্যুবরণ করেছেন ১০৫ জন এবং বেঁচে আছি ১৪০ জন। রৌমারীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা শুনে মরতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত