খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু বছরজুড়ে আলোচনায়

২০২১ সালে চট্টগ্রামের খাল-নালায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ ৫ জন। এর জন্য সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ গত ৭ ডিসেম্বর নগরীর ষোলশহর এলাকায় বোতল কুড়াতে গিয়ে খালে পড়ে মারা যায় ১০ বছর বয়সী এক শিশু। পুরো বছরজুড়ে চট্টগ্রামে আলোচনায় ছিল খাল-নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা। এত সমালোচনার পরও নগরীর খাল-নালার চিত্র বদলায়নি। নগরীর অধিকাংশ খাল-নালা রয়ে গেছে খোলা।

নালার ওপর স্ল্যাব না থাকা, খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করাসহ পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। তবে এসব কাজ যে সংস্থার করার কথা সেই সিটি করপোরেশন (চসিক) বলছে ভিন্ন কথা। খাল-নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়ী করছেন চসিক কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, সিডিএর চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় যেসব খাল-নালায় কাজ হচ্ছে সেসব খালে পড়ে হতাহতের ঘটছে।

চসিকের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার নালা রয়েছে। এ ছাড়া নগরীর আওতাধীন ৫৭টি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬১টি কিলোমিটার। ৯৫০ কিলোমিটার নালার মধ্যে খোলা অংশের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

নগরীর অধিকাংশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ চলাচল করে এমন পথের পাশের অধিকাংশ নালার ওপর স্ল্যাব নেই। এ কারণেই গত ২৫ আগস্ট সকালে মুরাদপুর এলাকায় খালে পড়ে তলিয়ে যান সবজি ব্যবসায়ী ছালেহ আহমদ। এখন পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি। একই অবস্থা ছিল গত ৩০ জুন দুই নম্বর গেট এলাকার ঘটনায়। বৃষ্টির মধ্যে দুই নম্বর গেট থেকে মেয়র গলির দিকে যাওয়ার পথে সিঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা খালে পড়ে যায়। প্রচণ্ড স্রোত থাকায় খালে পড়ে তলিয়ে যায় অটোরিকশাটি। এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান অটোরিকশা চালক সুলতান ও যাত্রী খাদিজা বেগম।

এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে মারা যান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। এর ৫ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলের ৩০ গজ ভেতর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত ৭ ডিসেম্বর ওই খালে বোতল কুড়াতে নেমে নিখোঁজ হয় এক শিশু। দুদিন পর অন্য একটি খালে ভেসে উঠে তার মরদেহ।

তবে এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি চসিক। উল্টো সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অজুহাত দিয়ে এত দিন খাল-নালা সংস্কার কাজ বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি। তবে গত ৭ ডিসেম্বর শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সমালোচনার মুখে সম্প্রতি খাল-নালা সংস্কারে উদ্যোগ নেয় তারা।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাইরে থাকা খাল নালাগুলোর তালিকা চেয়ে সিডিএকে চিঠি দেয় চসিক। ওই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল ও ৩০২ কিলোমিটার নালা সংস্কারের কাজ করছে সিডিএ।

এর বাইরে থাকা খাল-নালাগুলো তালিকা হাতে পেলেই এসব খাল-নালার সংস্কার কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, সিডিএর কাজ থেকে তালিকার পাওয়ার পরপরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খননযোগ্য খাল ও নালার সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে ছোট নালাগুলো সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বর্ষার আগেই সব খাল, নালা সংস্কার করা হবে।