Ajker Patrika

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নবিদ্ধ

বাসব রায়
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নবিদ্ধ

মানুষ বহুরূপী এবং এটি মানুষ জন্মগতভাবেই অর্জন করে থাকে; বলা যায় সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ অবশ্যই সৃষ্টির সেরা জীব এবং এটি স্বতঃসিদ্ধ। তবু মানুষকে সেরা বলতে কখনো কখনো মনে ভয় জাগে। মানুষ খুবই হিংস্র, চরম স্বার্থপর এবং মারাত্মক লোভী। এতগুলো বিশেষণ থাকলেও মানুষকেই সৃষ্টির সেরা বলতে হয়। আর এখানেই প্রশ্ন জাগে। আসলে কী কারণে সেরা তার ব্যাখ্যা হয়তো শাস্ত্রে আছে, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে ‘সেরা’ বলাটাকে বেশ বাড়াবাড়ি মনে হয়!

মানুষ মানুষের বিপদে ছুটে আসে; মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষিত হয়, মানুষ সবভাবেই একে অপরের কাজে বা উপকারে লাগে। সুতরাং এসব কারণেও মানুষের শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকার করতেই হয়। কিন্তু যখন মানুষ মানুষকে হত্যা করে, মানুষকে নানাভাবে নাজেহাল করে, মানুষ যখন ধর্ষণ বা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, মানুষ যখন মানুষকে আলাদাভাবে দেখে বা মানুষের শ্রেণিবিন্যাস করে এবং সর্বোপরি মানুষ যখন মানুষকে ঘৃণা করে, তখন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হবেই হবে।

মানুষ পৃথিবীজুড়ে নিজেদের অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকতে গিয়ে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ে বিস্তর দুশ্চিন্তা এখন সব মানুষের। প্রকৃতি দিন দিন তার স্বকীয়তা বা বৈচিত্র্য হারিয়ে ফেলছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার কারণ হিসেবে মানুষের নানাবিধ ঋণাত্মক ক্রিয়াকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। মানুষ ক্রমশ অমানুষে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর যুদ্ধবিগ্রহের যে দামামা তা মানুষের জন্যই ক্ষতিকর অথচ জেনে-বুঝে মানুষই এসব করছে অকপটে অবলীলায়।

নীতি এবং নৈতিকতা বিলীন হওয়ার পথে। রাজনৈতিক মেরুকরণে ব্যাপক স্বার্থপরায়ণতা এবং বিকারগ্রস্ত প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষা মানুষের জন্য ব্যাপক ধ্বংস বয়ে নিয়ে আসবে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বৈষম্য সৃষ্টির ফলে নানা রকম শ্রেণির উদ্ভব হচ্ছে, যা শুভ কিছু ফল নিয়ে আনতে পারবে বলে মনে হয় না। অধিকাংশ মানুষ সৃষ্টিকর্তার প্রেমে ধর্ম পালন করে না; বরং ধর্ম পালন করে মানুষের ভয়ে। মানুষ খারাপ ভাববে—এমন ভাবনা বা ভয় থেকে ধর্মচর্চা করে কখনোই ধার্মিক হওয়া যায় না; বরং এমন মনোভাবের মানুষ অন্যদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি বয়ে আনে।

প্রতিহিংসাপরায়ণ মানসিকতার কারণে সুস্থ পৃথিবী উপহার দেওয়া কঠিন। অসুস্থ প্রজন্ম আগামীতে পৃথিবীর বৈচিত্র্য ধরে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। প্রভাব, প্রতিপত্তিশালী জনগোষ্ঠী সাধারণ জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ। মানুষ নিয়মিত এবং পুরোপুরি সচেতন অবস্থায় বৃক্ষনিধনে ব্যতিব্যস্ত; নদী বা জলাশয়ের নাব্যতাকে বিনষ্ট করার অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। দূষণীয় কাজকর্ম থেকে দূরে থাকার প্রবণতা মানুষের কমে যাচ্ছে; বরং হচ্ছে তার উল্টোটা।

মানসিকভাবে মানুষের উন্নয়ন ঘটানো দরকার সবার আগে। মানসিক ভাবনা মানবিক এবং সর্বজনীন না হলে মানুষ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারবে না। মানুষ নিজেদের উন্নতি ঘটাতে গিয়ে আরও বেশি দরিদ্র হয়ে উঠছে এবং জরাজীর্ণ মানসিকতাকে পুঁজি করে একে অপরকে ধ্বংস করার সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাই ব্যাপক স্বার্থে মানুষ নিজেদের ক্ষতিকর ভাবনাগুলো বিদেয় করলে বা দূর করতে পারলে ‘সেরা’ শব্দটির মর্যাদা রক্ষা হয়।

লেখক: কবি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

রেফারি হয়েও গোল দিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, অভিযোগ সালাহউদ্দিনের

১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল

মোদি আকর্ষণীয়, পিতার মতো, কিন্তু খুব কঠিন: ট্রাম্প

শিক্ষকদের সচিবালয়ে ঢোকার চেষ্টা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ পুলিশের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ