Ajker Patrika

খরচের চেয়ে ধানের দাম কম লোকসানের মুখে কৃষকেরা

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৫: ২০
খরচের চেয়ে ধানের দাম কম  লোকসানের মুখে কৃষকেরা

বিনিয়োগ করে এবং টানা তিন মাস খেটেও লোকসানের মুখে পড়েছেন মধুপুরের কৃষকেরা। উপজেলার অনধিক ৯০ হাজার কৃষকের প্রায় সোয়া ৩৩ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। উৎপাদন ব্যয় আর ধানের মূল্যের তারতম্যের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১২ হাজার ৯৯৭ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৬ মেট্রিক টন। প্রতি বিঘায় গড়ে ১৮ দশমিক ২২ মণ। উপজেলায় অনধিক ৯০ হাজার কৃষক রয়েছেন।

আশুরা গ্রামের আব্দুস সাত্তার, রানিয়াদের রমজান আলীসহ অন্তত ২০ জন কৃষক জানান, প্রতি বিঘায় ইউরিয়া ৩০ কেজি, টিএসপি ২০ কেজি, পটাশ ১৫ কেজি, এমওপি ১০ কেজি দেওয়া হয়েছে। ব্যবহৃত এসব সারের মূল্য ১ হাজার ২৭০ টাকার বেশি। এ ছাড়া কীটনাশক বাবদ কমবেশি ৫০০ টাকা, হাল চাষে ১ হাজার, ধানের চারা ১ হাজার, চারা রোপণ ৩ হাজার ৫০০, নিড়ানি ১ হাজার, সেচ ২ হাজার, ধান কাটা ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ও মাড়াইয়ে খরচ হয়েছে ৭০০ টাকা। এতে বিঘাপ্রতি ধান আবাদে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার ৯৭০ টাকা প্রায়।

এদিকে রানিয়াদের কৃষক তুলা মিয়া, আক্তার হোসেন, জাহিদুলসহ অনেকেই প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ৬৫০ টাকা দরে। অনেকে আবার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ফলে ধান বিক্রি করে প্রতি বিঘা থেকে কৃষকের আয় হয়েছে ১১ হাজার ৮৪০ টাকার কাছাকাছি।

এই হিসাব অনুযায়ী চলতি বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদন করে কৃষকের লোকসান হয়েছে ৩ হাজার ১২৭ টাকা। সে হিসাবে উপজেলার অনধিক ৯০ হাজার কৃষকের লোকসান হয়েছে ৩৩ কোটি ৪১ লাখ ১ হাজার ৬২ টাকা প্রায়। এর সঙ্গে আছে প্রত্যেক কৃষকের বিনা মূল্যের শ্রম।

সরকার মধুপুরে ৪ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ৮ হাজার কেজি ধানবীজ, ২ হাজার ৩০০ কৃষককে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার এবং ৫ কেজি করে ধানবীজ বিনা মূল্যে প্রণোদনা দেয়। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা।

আকাশী গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘৫ হাজার টেহায় কামলা নিয়া ১ বিঘা জমির ধান কাটলাম। মাড়াই করলাম ৭০০ টেহায়। আর ধান বেচলাম সাড়ে ১১ হাজার টেহায়। তাইলে আর কী থাহে? আগামী সিজেনে খাবার নিগা ৪০ শতক ধান আবাদ করমু। বাকি জমি বর্গা দিমু। বর্গা না পাইলে পতিত থাকলেও আবাদে আর যামু না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য কৃষকদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে বলেন, কৃষক যেন দাম বাড়া পর্যন্ত ধান সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, সেই ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে কৃষকদের জন্য ঋণ সুবিধা বাড়াতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, সরকার সার ও বীজ প্রণোদনার পাশাপাশি সার বিতরণ করছে কৃষকদের মধ্যে। এতে উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত