Ajker Patrika

বর্ণবাদে বিভোর পশ্চিমা গণমাধ্যম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ১১: ১০
বর্ণবাদে বিভোর পশ্চিমা গণমাধ্যম

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যে ১৫ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে বিদেশিরাও আছেন। ইউক্রেন ত্যাগের সময় আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ও ভারতের নাগরিকদের দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাধা দেওয়ার ও চরম অসহযোগিতার খবর পাওয়া গেছে।

শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কিছু গণমাধ্যমকে নগ্ন বর্ণবাদী মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এসব আচরণ থেকে বাদ যাননি পশ্চিমা রাজনীতিবিদেরাও। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে পশ্চিমাদের হৃদয়ের অতলে ঘাপটি মেরে থাকা বর্ণবাদ প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

কেনিয়ার লেখক ও কার্টুনিস্ট প্যাট্রিক গাথারা আল জাজিরায় লেখেন, রুশ হামলার পর পশ্চিমা গণমাধ্যমের বিভিন্ন লেখায় ও টেলিভিশনের ভাষ্যে বর্ণবাদ যে রগরগে ভাষায় হাজির হচ্ছে, তা অত্যন্ত পরিহাসমূলক। তাদের মননে-মগজে এ চিন্তা গেঁথে আছে যে ইউরোপীয়রা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে ড্যানিয়েল হানা নামের এক সাংবাদিক লেখেন, ‘ইউক্রেনের লোকজন দেখতে আমাদের মতোই। যুদ্ধ ইউরোপে কেন? তা তো হবে গরিব দেশে।’ ফরাসি এক টিভিতে আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এটা তো ইরাক বা আফগানিস্তান নয়। একবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে, তা বিশ্বাস করা যায় না।’

যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন সিবিএস নিউজে প্রতিবেদক চার্লি ডি’আগাটা মন্তব্য করেন, ইউক্রেন তো ইরাক বা আফগানিস্তান নয়। তারা তুলনামূলকভাবে সভ্য ও ইউরোপীয়।

প্যাট্রিক গাথারা লেখেন, ইউরোপীয়দের আজকের বর্ণবাদী আচরণে নতুন কিছু নেই। নাইজেরিয়ার ঔপন্যাসিক চিনুয়া আচেবে (১৯৩০-২০১৩) পোলিশ-ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জোসেফ কনরাডের (১৮৫৭-১৯২৪) উপন্যাস ‘হার্ট অব ডার্কনেস’ নিয়ে মন্তব্য করেন, এ উপন্যাসে ইউরোপীয়দের গভীর মনস্তত্ত্ব ধরা পড়েছে। নিজেদের সভ্যতার অধঃপতন নিয়ে তাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। তাই এ উপন্যাসে ইউরোপীয় চরিত্রগুলোকে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করার জন্য সব সময় আফ্রিকার উপমা টানতে হয়। অর্থাৎ আফ্রিকার মানুষ কত বর্বর তা উল্লেখ করতে হয়।

এরপর গাথারা মন্তব্য করেন, ইউরোপীয়দের নৈতিকতার কতটা পতন হয়েছে, অবিচার কতটা গভীর হয়েছে—এ সবকিছু তাদের সাম্প্রতিক আচরণে, মন্তব্যে সুস্পষ্ট।

রাজনীতিবিদের মধ্যে বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিরিল পেটকভকে বলতে শোনা গেছে, ইউক্রেনের শরণার্থীরা অন্য (অশ্বেতাঙ্গ) শরণার্থীদের চেয়ে ভিন্ন। এরা বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকিও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু সম্প্রতি বেলারুশ থেকে পোল্যান্ড হয়ে ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার কিছু শরণার্থী পশ্চিম ইউরোপে যেতে চেয়েছিল। তাদের তো যেতে দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে উল্টো লঙ্কাকাণ্ড তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমারা ভুলে যান—মধ্যপ্রাচ্যে, আফ্রিকায় তাঁদের সৃষ্ট যুদ্ধ, ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা থেকে বাঁচতেই স্থানীয়রা উদ্বাস্তু হচ্ছেন। ইউরোপের দরজায় দরজায় ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত