Ajker Patrika

দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে শ্রীলঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২০
Thumbnail image

মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে রেকর্ড মাত্রায়, আকাশচুম্বী নিত্যপণ্যের দাম, টান পড়েছে সরকারি কোষাগারেও। সব মিলিয়ে গভীরতর আর্থিক ও মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। ফলে চলতি বছরই দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন বলছে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের নেতৃত্বাধীন সরকার যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, আংশিকভাবে তা মূলত করোনাসংকটের তাৎক্ষণিক প্রভাবের কারণে সৃষ্ট। পর্যটনশিল্পে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হলেও দেশটিতে বেড়েছে সরকারি ব্যয়। ফলে হ্রাস পেয়েছে রাজস্ব। পাশাপাশি চীনের বিশাল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে দেশীয় ঋণ এবং বিদেশি বন্ড পরিশোধের জন্য সরকার টাকা ছাপানোর কারণে বেড়ে গেছে মুদ্রাস্ফীতিও।

বিশ্বব্যাংকের অনুমান, করোনা মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখের বেশি শ্রীলঙ্কান দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, যা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশটির পাঁচ বছরের অগ্রগতির সমতুল্য। গত বছরের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ রেকর্ড ১১ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছায় এবং নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে।

রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর চাল, চিনিসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস সরকারনির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা নিশ্চিত করতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সেনাবাহিনীকে। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে খুব বেশি কাজে আসেনি সরকারি এই উদ্যোগ।

ক্রমবর্ধমান খাবারের খরচ মেটাতে এবং নিজের গাড়ির ঋণ শোধ করার জন্য সম্প্রতি দ্বিতীয় চাকরি নেন অনুরুদ্দা পারানাগামা নামে কলম্বোর একজন গাড়িচালক। কিন্তু এরপরও আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাননি তিনি। অনুরুদ্দা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ করা আমার জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ এবং খাবারের জন্য খরচ মেটানোর পর আমার কাছে একটি টাকাও অবশিষ্ট থাকে না। আমার পরিবার এখন তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা খাবার খায়।’

ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রভাবে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে শ্রীলঙ্কার ২ লাখের বেশি মানুষ তাঁদের জীবিকা হারিয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে পাসপোর্ট অফিসগুলোতে প্রতিদিন মানুষের লম্বা লাইন পড়ছে। কারণ, শ্রীলঙ্কার প্রতি চারজনের মধ্যে একজন দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন, যাদের বেশির ভাগই তরুণ ও শিক্ষিত। আর দেশটির বয়স্ক নাগরিকেরা চলমান পরিস্থিতিকে তুলনা করছেন সত্তরের দশকের সঙ্গে, যখন দেশে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে মৌলিক পণ্যের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ডব্লিউএ উইজেবর্দেনা সতর্ক করে বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আর্থিক সংকটকে বাড়িয়ে তুলবে, যা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে।’

শ্রীলঙ্কার জন্য সবচেয়ে বড় চাপের একটি হলো এর বিশাল বৈদেশিক ঋণের বোঝা, বিশেষ করে চীনের কাছে। চীনের কাছে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ রয়েছে কলম্বোর। এর মধ্যেই তীব্র আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য গত বছর বেইজিংয়ের কাছ থেকে অতিরিক্ত আরও ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা, যা কিস্তিতে পরিশোধ করা হচ্ছে। আগামী ১২ মাসের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে আনুমানিক ৭৩০ কোটি ডলারের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।

ওমিক্রন আতঙ্কে ভারত

ওমিক্রন ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত, যা অনেকটা এড়িয়ে যাচ্ছে দেশটির সরকার। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ওমিক্রন সংক্রমণের হার ভারতের মোট করোনা আক্রান্তের ২ শতাংশের কম। তবে এই পরিসংখ্যানকে ‘অবমূল্যায়ন’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মেহের পান্ডে ও সৌরভ গুপ্তা নামে দুই গবেষকের করা গবেষণার বরাতে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ওমিক্রনের প্রভাবে খুব শিগগিরই বড় ধরনের স্বাস্থ্যসংকটে পড়তে পারে ভারত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি হিসাবে ভারতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার বলা হলেও বাস্তবে তা ১০ গুণেরও বেশি হতে পারে। অর্থাৎ এ সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজারের মতো, যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত