Ajker Patrika

সংস্কারের পরদিনই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ০১
সংস্কারের পরদিনই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকায় রাস্তার সংস্কারকাজের পরই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। রাস্তার যেকোনো জায়গায় পা দিয়ে আঘাত করলেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। ভটভটি, টেম্পো, ট্রলি এমনকি অটোরিকশা গেলেও কোথাও কোথাও রাস্তা দেবে যাচ্ছে, দেখা দিচ্ছে ফাটল।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো মেরামত করতে বলা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পুরো কাজটিতে বড় ধরনের ঘাপলা হয়েছে। কত জায়গায় মেরামত করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার কাজটি পায় এম এম রহমান নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের প্রকোপের ফলে কাজ শুরুই করা হয়নি। সম্প্রতি ঠিকাদার কাজে হাত দেন। গত রোববার কাজ শেষ হয়েছে। কার্যাদেশে পৌর এলাকার গুবিরপাড়া, কুঠিপাড়া, গোল্লাপাড়া, কালীগঞ্জ ও ভদ্রখণ্ড এলাকার ছোট ছয়টি রাস্তা সংস্কার করতে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গুবিরপাড়া থেকে সেন্দুকাই পর্যন্ত ৫০০ মিটার নতুন করে রাস্তা নির্মাণের কথা। সব মিলিয়ে রাস্তার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। সংস্কারের কাজগুলো হলেও এখনো নতুন রাস্তাটি করা হয়নি। তার পরও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজ শেষ হয়ে গেছে।

গতকাল সোমবার দুপুরে কুঠিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত পরশু এই রাস্তার কাজ হয়েছে। আজই (সোমবার) দেখছি কার্পেটিং উঠে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘এ জন্যই তড়িঘড়ি করে বালু ফেলে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বালু উড়ে যেতেই রাস্তার বাজে অবস্থা বেরিয়ে আসছে। কাজে খুব ঘাপলা হয়েছে।’

গুবিরপাড়া মসজিদের সামনে দুই দিন আগে সংস্কার করা রাস্তা এরই মধ্যে দেবে গেছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ছবি তুলতে দেখে নাদিম মোস্তফা (২০) নামের এক যুবক এগিয়ে এসে বললেন, ‘তোলেন তোলেন। বেশি করে ছবি তুলে ফেসবুকে ভাইরাল করে দেন। দুদিন হলো রাস্তা করা, এখনই বসে গেছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গুবিরপাড়া এলাকার আহমেদের বাড়ি থেকে সেন্দুকাই পর্যন্ত ৫০০ মিটার কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার কথা। কিন্তু গতকাল দেখা গেছে, রাস্তাটি কাঁচাই আছে। তারপরও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তানোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সরদার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘কাজ তো সব শেষ। একটু সংস্কার প্রয়োজন। সেগুলো ঠিকাদার করে দেবে।’

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে নিম্নমানের কাজ দেখে গোল্লাপাড়া বাজারে লোকজন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে তাঁদের ‘ম্যানেজ’ করে তা করা হয়েছে। পৌরসভাকেও ম্যানেজ করে নিম্নমানের কাজ করেছেন ঠিকাদার। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সরদার জাহাঙ্গীর আলম ও কার্যসহকারী মাহবুর আলম কাজটি দেখার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা ঠিকাদারকে সুযোগ করে দিয়েছেন।

দুপুরে তানোর পৌরসভায় গেলে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কার্যসহকারী মাহবুর আলম। রাস্তার কাজ কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো ভালোই বলব। কেমন হয়েছে তা জনগণ বলবে।’ মাহবুর আলম এ সময় ‘যাতায়াত খরচ’ ও ‘চা খাওয়ার জন্য’ এই প্রতিবেদককে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঠিকাদার হাসনাত আলীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

পৌর মেয়র ইমরুল হক বলেন, বেশি আগুনে জ্বাল দেওয়ার জন্য পাথরটা একটু বেশি পুড়ে গিয়েছিল। এই পোড়া পাথর পিচের সঙ্গে থাকছে না। কোথাও কোথাও একটু উঠে যাচ্ছে। সেগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। মেয়র জানান, কাজ ভালো না হওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগেও (এলজিইডি) স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এলজিইডির কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি জানান, এ কাজের জন্য আগের মেয়র কিছু বিল পরিশোধ করেছেন। তিনি কোনো বিল দেননি। কাজ ঠিকঠাকমতো শেষ না করলে বিলও দেবেন না। নতুন করে যে রাস্তা নির্মাণের কথা, সেটিও তিনি বুঝে নেবেন বলে জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত