Ajker Patrika

ভূগর্ভের পানি তুলে পাট জাগ

মো. মফিজুর রহমান, ফরিদপুর
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ১২: ২৫
Thumbnail image

ফরিদপুরের পাটচাষিরা পানিসংকটে দিশেহারা। বর্ষা মৌসুমেও পানির অভাব। তাই বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনে পানি তুলে পাট জাগের উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। এলাকাভিত্তিক চাঁদা তুলে শ্যালো মেশিনে পানি তুলে খালে দিচ্ছেন। এতে চলতি মৌসুমে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার কথা বলছেন চাষিরা।

জানা গেছে, এ বছর ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৭ হাজার হেক্টর। আবাদ বেশ ভালোই হয়েছে। কিন্তু পাট কাটার সময় দেখা দেয় পানিসংকট। এতে কাটা পাট জাগ দিতে পারছিলেন না চাষিরা। আবার অনেকে পাট কাটতে সাহস পাননি। ফলে খেতে শুকিয়ে যায় পাট। এতে বিপাকে পড়েন চাষিরা। বাধ্য হয়ে পাট জাগ দিতে এলাকাভিত্তিক চাঁদা তুলে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন। তবে এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন পাটচাষিরা।

ফরিদপুরের নগরকান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে হয়ে খালে দিচ্ছেন। এ জন্য তাঁরা খালের দুই মুখ বেঁধে ফেলেছেন। এরপর পাট জাগ দিচ্ছেন। চাষিরা প্রতিদিন সকাল-বিকেল শ্যালো মেশিনে পানি তুলছেন। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

জেলার নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের উত্তর গোপিনাথপুরের পাটচাষি খোকন শেখ, সিদ্দিক মোল্লা, সুমি আক্তার, কুদ্দুস জমাদারসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, এর আগে কখনো এমন পানিসংকট হয়নি। প্রতিবছর উৎপাদন কম-বেশি হলেও সময়মতো পানি পাওয়া গেছে। ফলে পাট পচাতে বেগ পেতে হয়নি। ঠিকঠাক পচাতে পারায় পাটের রংও ছিল ভালো। কিন্তু এবার আবাদ ভালো হলেও পাট পচানো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু বৃষ্টি নেই। খেতে পাট রেখে দেওয়ায় নষ্ট হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে খালের দুই মুখ বেঁধে ৫–৬টি শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। এভাবে যতটুকু পারা যায় পাট জাগ দিয়ে পচানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

চাষিরা জানান, শুধু পানিসংকটের কারণেই এবারের পাটের উৎপাদন খরচ যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হচ্ছে। তবে প্রত্যাশিত দাম না পেলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

ফরিদপুরের পরিবেশকর্মী সিরাজ-ই কবির খোকন বলেন, দেশে মোট উৎপাদনের অধিকাংশই পাট চাষ হয় ফরিদপুরে। এ জেলার কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস পাট। মৌসুমের এ সময় খাল-বিল ভরা থাকে পানিতে। ফলে পাট জাগ দিতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এবার তা নেই। তাই বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে পাট জাগের ব্যবস্থা করছেন চাষিরা। এতে তাঁদের খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হজরত আলী পানিসংকটের বিষয়ে বলেন, পাট জাগ দেওয়া নিয়ে জেলার কৃষকেরা বিপদে আছে। বৃষ্টি নেই, নিচু জমি, জলাশয়ে পানি নেই। খেতে পাট মরে যাচ্ছে। যে জমিতে দু-তিন ইঞ্চি পানি আছে, সেখানে তীব্র গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাট জাগ দিয়েও স্বস্তিতে নেই তাঁরা। এতে পাটের রং নষ্ট হয়ে যাবে এবং দামও কম পাবে। এতে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা।

ফরিদপুর পাট অধিদপ্তরের উপপরিচালক মরিয়ম বেগম বলেন, পাট সহজে পচানোর জন্য পাট গবেষণা অধিদপ্তর ‘রিবন রেটিং পদ্ধতি’ চালু করেছিল। এ পদ্ধতিতে পাট কাটার পর ছাল আলাদা করে তা পচানো হয়। এতে পানি কম লাগে। তবে কৃষক এ পদ্ধতি গ্রহণ করেনি। কারণ এতে শ্রমিক খরচ বেশি।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাল ৪৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ৭৫ শতাংশ জমিতে। এবারের পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত