Ajker Patrika

দেড় লাখ ইভিএমের সবগুলোই ‘ত্রুটিযুক্ত’

মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ১২: ২২
Thumbnail image

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পের বাড়তি মেয়াদও শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। এই প্রকল্পের আওতায় কেনা দেড় লাখ ইভিএমের একটিও ত্রুটিমুক্ত নয়। এ অবস্থায় ইভিএমগুলো নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে ইসি।

জানা যায়, বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার অংশ হিসেবে গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে কমিশনের সংগ্রহে থাকা ইভিএমগুলোর নানা ত্রুটি ও অসুবিধার তথ্য তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে মেশিন চালু করার পর অধিকাংশ ইভিএমে প্রকৃত সময় প্রদর্শন করে না। ইউনিট টেস্ট করার পরও ১০ থেকে ২০ মিনিট বিলম্বিত সময় দেখায়। প্রতিটি ইভিএম সেটের বাক্সসহ ওজন ১৮ কেজি, যা সহজে পরিবহনযোগ্য নয়। ব্যালটে ভোট দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করা যায় না।

ভোট দেওয়ার জন্য দুটি বাটন ব্যবহার করতে হয়। ভোট বাতিল করার জন্য ক্যান্সেল বাটন দুইবার ব্যবহার করতে হয়। কার্ড স্লটে প্রবেশ করানোর পর কিছু অংশ বাইরে বের হয়ে থাকে এবং কিছু কার্ড নষ্ট হয় (অডিট ও পোলিং কার্ড)। এ ছাড়া ভিভিপ্যাট সংযুক্ত না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার অভাব এবং ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যার কথাগুলোও তুলে ধরা হয়।

সূত্র জানায়, মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভেন্ডরের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজস্ব কারিগরিসম্পন্ন জনবলের বিষয়ে জোর দিয়েছেন।

ইসির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেকগুলো ইভিএম হয়তো নষ্ট হয়েছে। সেগুলো কীভাবে ঠিক করা যায়, ইভিএম কীভাবে সাসটেইনেবল করা যায়, কীভাবে খরচ আরও কমানো যায়, সে বিষয়ে কমিশন আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে। এটি মূলত একটি প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেকটা ব্রেইন স্টর্মিংয়ের মতো।’

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, এটা কেবল প্রাথমিক আলোচনা। এরপর সিরিজ আলোচনা করা হবে। এ জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির পরামর্শক্রমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বাড়তে পারে প্রকল্পের মেয়াদ
ব্যয় না বাড়িয়ে ইভিএম প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। গতকাল রোববার মেয়াদ শেষের দিন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়েনি। তবে মেয়াদ বাড়বে বলে আশা করছে কমিশন।এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘রোববার ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে পরিকল্পনা কমিশনে ব্যয় না বাড়িয়ে কেবল প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। সকালেও কথা হয়েছে। এক বছর মেয়াদ বাড়বে। হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।’

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ যথাসময়ে না বাড়লেও ইভিএম সংরক্ষণের জন্য জায়গা বরাদ্দ চেয়ে ইতিমধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছে ইসি। ইতিমধ্যে ঢাকার মিরপুরে একটি জায়গার সন্ধান মিলেছে। জায়গার পরিমাণ আনুমানিক ৭৫ শতাংশ। যেকোনো সময় কমিশন থেকে একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শনে যাবে। জায়গাটি বরাদ্দ পেলে সেখানে ইভিএমে সংরক্ষণের জন্য স্থায়ী ওয়্যারহাউজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেবে কমিশন। ইসি জানায়, শুধু টাইমার ঠিক করলে ৭০ হাজারের মতো ইভিএম ব্যবহারযোগ্য হবে। তবে ইভিএম ঠিক না করলে বা ইভিএমের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা না হলে এসব ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম রাখার জন্য জেলা পর্যায়ে গোডাউনের ভাড়া বাবদ প্রতিবছর কমবেশি ৫ কোটি টাকা খরচ হবে ইসির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত