Ajker Patrika

অধিগ্রহণ ছাড়াই খাল খনন, ফসলের ক্ষতি

মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
অধিগ্রহণ ছাড়াই খাল খনন, ফসলের ক্ষতি

নীলফামারীর ডিমলায় অধিগ্রহণ না করেই তিন ফসলি জমিতে খাল খনন করার অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই এলাকার শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। পরে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে ঠিকাদার খনন বন্ধ করে দেন। উপজেলার দক্ষিণ ঝুনাগাছ চাপানি এলাকায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে এ খাল খনন শুরু হয়।

কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় শতাধিক কৃষকের বৈধ কৃষিজমি দখলে নিয়ে খাল খনন করছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। খননের জন্য সেই প্রভাবশালী চক্র সাধারণ কৃষকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নদী-খাল খনন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার চাপানি এলাকায় ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার খাল খননের কাজ হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান জিয়াউর রহমান নামে এক ঠিকাদার। আইন অনুযায়ী খাল খনন শুরুর আগে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। 
কৃষিজমি অধিগ্রহণের নিয়মে আরও বলা হয়েছে, প্রয়োজনে তিন গুণ বেশি মূল্য দিয়ে অধিগ্রহণ করতে হবে। এ প্রকল্পে কোনো কিছু না মেনে হঠাৎ ঠিকাদার খাল খনন শুরু করেন। এতে শত শত বিঘা জমি এবং ওই সব জমির উঠতি ফসল নষ্ট হয়।

এদিকে জমি অধিগ্রহণ না করে কৃষিজমি দখলের বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সোনাখুলির কৃষকেরা।

অভিযোগে বলা হয়েছে, জমির মালিক ও এলাকাবাসীকে না জানিয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড তিন ফসলি কৃষিজমিতে খাল খনন করছে। কোনো নোটিশ ছাড়াই দুটি ভেকু দিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ৬০ ফুট প্রস্থের ২৫ ফুট গভীর খাল কাটা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে এ খাল খননে কৃষকদের ফসলি জমি, ফসল, গাছপালা, বাঁশঝাড়, মসজিদ ও বসতভিটা  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চাপানি গ্রামের কৃষক আব্দুল গাফফার (৬০) বলেন, ‘আমার কৃষিজমির ওপর দিয়ে খাল খনন করা হয়েছে। ৫ শতাংশ জমির বীজতলা পুরোটাই নষ্ট হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘শুধু আমার জমি থেকেই মাটি তোলা হয়নি, আরও অন্তত ২০০ কৃষকের জমি দখলে নিয়ে জোর করে খাল খনন করা হচ্ছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মাহফুজুর রহমান, আব্দুর রশিদ, দবির উদ্দিনসহ অন্তত ২০ জন বলেন, ‘এসব জমিতে বছরে তিনবার ফসল ফলে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বছরে তিন ধরনের ফসল উৎপাদন হয় এমন জমিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। অথচ আমাদের না জানিয়ে জোরপূর্বক খাল খনন করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের লোকজন জমিতে যেতে নিষেধ করে এবং সেখানে গেলে চাঁদাবাজি মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।’ এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানতে চাইলে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন ঠিকাদার জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, জমির মালিক কৃষকেরা হলেও এটা সরকারের প্রকল্প, তাই জমি অধিগ্রহণ বা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

ডালিয়া পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌলা দাবি করেন, সব নিয়ম মেনেই জমিতে খাল খনন করা হচ্ছে।

ইউএনও বেলায়েত হোসেন বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ওই খাল খনন নিয়ে কৃষকদের অভিযোগ সমাধানের জন্য তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত খনন বন্ধ রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত