Ajker Patrika

৯ গেরিলা শায়িত এখানে

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ০২
৯ গেরিলা শায়িত এখানে

ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস আজ ১১ নভেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের বেতিয়ারা এলাকায় গেরিলা বাহিনীর ৯ জন বীরযোদ্ধা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এই ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল করে রাখতে প্রতিবছর ১১ নভেম্বর পালিত হয় বেতিয়ারা শহীদ দিবস।

১৯৭১ সালের এই দিন সেখানে প্রাণ হারান নিজাম উদ্দিন আজাদ (ছাত্রনেতা), সিরাজুল মনির, জহিরুল হক দুদু, মোহাম্মদ সফিউল্যাহ, আওলাদ হোসেন, আবদুল কাইউম, বশিরুল ইসলাম, মো. শহীদ উল্যাহ ও কাদের মিয়া।

দিবসটি উপলক্ষে শহীদ পরিবারের সদস্যরা পৃথকভাবে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দোয়া-মোনাজাত করবে বলে জানিয়েছেন বেতিয়ারা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি জিয়াউল হোসেন জিবু। তিনিসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা সভাপতি মনজুরুল আহসান খানসহ যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৭৮ জন সদস্য ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার উদ্দেশে তাঁরা ভারতের বাইকোয়া বেইজ ক্যাম্প থেকে ১০ নভেম্বর রাতে চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী ভৈরবনগর সাব ক্যাম্পে পৌঁছান।

ওই ক্যাম্পের দুই মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের ও সামসুল আলম ১১ নভেম্বর রাতে তাঁদের নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পরিকল্পনা করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক শত্রুমুক্ত কি না পরীক্ষা করার জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের ও আবদুল মন্নানকে ওই সড়কে পাঠানো হয়। এ সময় সিগনালের দায়িত্বে থাকা কাদের ও মন্নান মহাসড়ক শত্রুমুক্ত বলে রাত ১২টায় মূল বাহিনীকে জানান। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ গেরিলা বাহিনীর ৩৮ জনের এ দলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অতিক্রমের জন্য এগিয়ে আসে। এ সময় সড়কের অন্য (পশ্চিম) পাশে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিত গুলি চালায়। এতে ৯ গেরিলা যোদ্ধা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।

এর এক সপ্তাহ পর স্থানীয় লোকজন ধানখেত থেকে শহীদদের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দেন। ২৮ নভেম্বর চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদীঘি নামের ওই অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়। পরদিন ২৯ নভেম্বর স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা গর্ত থেকে মরদেহ উঠিয়ে জানাজা দিয়ে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে দ্বিতীয়বার দাফন করেন। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হলে ৯ শহীদের গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ মহাসড়কের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে চার লেন প্রকল্পের ঠিকাদার ২০১৪ সালের জুনে গণকবরটি মহাসড়কের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথের ৪০ শতক জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত