জাহীদ রেজা নূর

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
আমাদের এই অঞ্চলে ঘুষের শুরু করেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস—এ রকম একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। মীরজাফরের পত্নী মুন্নী বেগমের কাছ থেকে নাকি হেস্টিংস ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। মুন্নী বেগমের ছেলে নাজিমউদ্দৌলা ১৫ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছিল।
কে প্রথম ঘুষ নিয়েছিলেন, সেটা খুব বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সেই ঘুষপ্রথা অলিখিতভাবে আমাদের সমাজে ভিত্তি পেয়েছে। জরিপ হওয়া দরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঘুষখোরের সংখ্যা বেশি, নাকি সৎমানুষের সংখ্যা বেশি? অনেক সময় আমরা লক্ষ করেছি, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য ঘুষখোরদের কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘আমি নিজে ঘুষ খাই না।
সিস্টেমে এমনিতেই আমার কাছে ঘুষের টাকা চলে আসে। আমি না নিলে বরং আমাকে একঘরে করে ফেলা হবে।’ কথাটা হাস্যকর শোনালেও এ কথার মধ্যে সত্যতা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বুঝতে পারে, এখানে ঘুষ নেওয়া হলে কেউ এসে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করবে না, তখন সেই প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ঘুষের প্রচলন হতে পারে। আমাদের দেশে এই ঘুষপ্রবণতা যেন গণতন্ত্রের অঙ্গ হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ভালো-মন্দ নিয়ে একটু কথা বলা বোধ হয় অসমীচীন হবে না।
২. আজকের লেখাটা একটু ভারী হয়ে যেতে পারে। তবে তার দরকার আছে। গণতন্ত্রকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে টেকসই রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের আপাত পতনের পর গণতন্ত্রই নির্ভরযোগ্য শাসনব্যবস্থা হিসেবে টিকে আছে। কিন্তু দেখুন, রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদশাসিত দুই বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতে গণতন্ত্রের যে হাল, তাতে এই ‘তন্ত্র’ পরিবর্তিত হয়ে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, সেটাই ব্যথিত মনে দেখতে হয়। নরেন্দ্র মোদির গণতন্ত্রের সঙ্গে হিন্দুত্বের মিলন এখন ভারতের গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখোমুখি করেছে। দেশভাগের আগে বা পরে জাতীয় কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলত, বর্তমান ভারত সেই জায়গা থেকে অনেক দূর সরে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র তো এলিট শ্রেণির কবজায় সেই কবে থেকেই বন্দী। পুঁজির বিকাশ হচ্ছে সেখানে, কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে গায়ের জোরে গণতন্ত্রী করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার অপচয় করছে তারা। ফলে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করতে হয়। আমাদের দেশে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের পুনরাগমনের সময়টা হলো নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। কিন্তু সেই গণতন্ত্র কতটা কোন দিকে বিকশিত হয়েছে, সেই আলোচনা করা খুবই জরুরি।
৩. এরশাদের পতনের পর প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরেফিরে ক্ষমতায় এসেছে। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সফলভাবেই নির্বাচন ও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এরপর বিএনপির আমলে হঠাৎ করেই ইয়াজউদ্দিন-ম্যাজিক গোটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের চিন্তকেরা প্রশাসনের সর্বত্র নিজের লোকদের বসিয়ে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসনের জন্ম দিতে চেয়েছিলেন। সেই সময়কার তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল যে ফখরুদ্দীন আহমদের কেয়ারটেকার সরকার, তারাও নানাভাবে সমালোচিত হয়েছিল। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
আমরা দেখতে পেয়েছি, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য নানা চেষ্টা করে এসেছে। আমরা এ-ও দেখেছি, ক্ষমতায় এসে সমাজ থেকে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ঘুষ ইত্যাদি নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেছে সেনাসমর্থিত কিংবা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর হয় তারা নিজেরাই যুক্ত হয়ে গেছে এই সব অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অথবা কেউ এই অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে আইনের শাসন শিথিল হয়ে পড়ে, একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী অপরাধ করতে থাকে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রভাবে পার পেয়ে যায়—এটা সর্বত্রই দেখা যায়। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
এ কারণেই সমাজের ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়তে থাকে, বুদ্ধিজীবীশ্রেণির বড় অংশটাই হয়ে ওঠে ক্ষমতার তাঁবেদার, সরকারও বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে প্রতিবাদী মেধাবীদের ‘উপহার’ দিয়ে তাঁদের হাতে রাখে। আর আইনশৃঙ্খলা? সেটা ‘যেমনে নাচাও তেমনে নাচি, পুতুলের কী দোষ’ বলে নিজের দোষ ঢেকে রাখার প্রয়াস নিতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
৪. বৃহৎ এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই ধরে ধরে বলার থাকতে পারে। কিন্তু আজকের আলোচনায় সেদিকে যাব না। গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় যে আপদটি বড় করে বাসা বেঁধেছে, তা নিয়েই এখন বলব। ওপরে যা বলা হলো, তার কারণগুলো হয়তো এই আলোচনায় পাওয়া যেতেও পারে। এই আলোচনা আমাদের গণতন্ত্রের দৈন্যদশা নিয়ে খানিকটা ভাবতে সাহায্য করবে বলে আমার ধারণা।
দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তান পর্যায়ের নিরন্তর আন্দোলনের কথা কমবেশি সবাই জানেন। সেই সময়টা পেরিয়ে এসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির যখন জন্ম হলো, তখন যা দেখা গেল, তা থেকেই কথার শুরু হোক। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশের নাম পরিবর্তন হয়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হলো, তা ছিল অর্থনৈতিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত এক দেশ। ভেঙে পড়া অর্থনীতির দেশটার হাল ধরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিছুদিন বাদেই ছাত্রলীগে এল ভাঙন, তৈরি হলো জাসদ। ডান-বামের প্রবল বিরোধিতার মধ্য দিয়ে পথ কেটে এগিয়ে যেতে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারকে। পাকিস্তানি দালালেরাও করছিল সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র।
এই বিভিন্ন আক্রমণের মধ্যেই আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগেও নৈতিক স্খলন দেখা গেছে। দিনে দিনে বঙ্গবন্ধু একা হয়ে যেতে থাকলেন। শেখ মুজিব-তাজউদ্দীন বন্ধনটিও থাকল না। সে এক অস্থির সময়ে সমাজতান্ত্রিক পথ বেছে নিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বাকশাল গঠনের পরপরই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তিনি নিহত হলেন।
এই ইতিহাস নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ হলো, সামরিক সরকার দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর জিয়াউর রহমানের সরকার নব্য উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা শুরু করেছিল। একধরনের পুঁজিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে। অনভ্যস্ত সাধারণ মানুষের পক্ষে এই নতুন পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল শক্ত। তার ফল হয়েছিল কী?
৫. পুঁজিবাদের উত্থান মানেই বিপুল নগরায়ণ বা নগরসভ্যতার দিকে যাওয়া। ইউরোপে দেখা গেছে, নগরায়ণের ফলে গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহরে চলে আসে। কাজ নেয় কারখানায়। তাদের মনে গ্রামীণ সংস্কৃতির জায়গায় শহুরে সংস্কৃতি জায়গা করে নিতে থাকে।
নগরসভ্যতা হচ্ছে শিল্প বিকাশের সঙ্গে যুক্ত জীবনধারার শৈল্পিক রূপ। চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রেও শীলিত পরিবর্তন আসে তাতে। শিল্পের উন্নতিকে বাধাহীন করতে হলে প্রয়োজন পড়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের। রক্ষণশীল পশ্চাৎপদ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার দরকার হয়। ফলে তখন গড়ে তুলতে হয় নয়া নয়া জ্ঞানকেন্দ্র। গড়ে তুলতে হয় শিক্ষাব্যবস্থা। যে শিক্ষা জীবনে কাজে লাগে, সেই শিক্ষাকেই তুলে আনতে হয়। আর শহুরে মানুষের বিনোদনের খোরাক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় শিল্পকেন্দ্র। সংগীত, নৃত্য, ভাস্কর্য, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। কিন্তু এগুলো গড়ে তুলতে হলে দেশজ উপাদানের ওপর গড়ে তুলতে হয় ভিত্তিমূল। আমাদের এই নগরায়ণ দেশীয় না হয়ে বহুজাতিক করপোরেশন ও কোম্পানির শিকড়ে বাঁধা পড়েছে। ফলে লোকজ, দেশীয় উপাদানের অভাবে সেই সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে শিকড়বিহীন। এই আধ্যাত্মিকভাবে শিকড়হীন মানুষের পক্ষে দেশপ্রেম, উন্নত নৈতিক অবস্থা, রুচিবোধের জন্ম দেওয়া কঠিন।
সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জীবনে সাম্যের একটা স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে পারত। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সেটি ধাক্কা খাওয়ার পর গণতান্ত্রিক আচরণও স্বৈরাচারী আচরণের দিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বলে রাখা ভালো, পাকিস্তান আমলে যে স্বাধিকার আন্দোলন হয়েছে, তাতে রাজনীতি আর সংস্কৃতি চলেছে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে। এরপর তা কোথায় হারিয়ে গেল, চলে গেল সবার অগোচরে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক শক্তি কি কিছু ভাবে?
৬. অর্থাৎ শিকড়বিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছে আমাদের দেশে। প্রশাসনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখে আসছেন, উপরি পাওনাটা জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজ দল ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রতিভাবান কর্মীরা দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা এবং মানবসেবার বদলে বেছে নিচ্ছেন ঠিকাদারি। কারণ, তাঁরা জানেন, ভাগ্য ভালো থাকলে এই পেশায় এক নিমেষে কোটিপতি হয়ে যাওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশের সরকারি কেনাকাটায় একটা ৫০০ টাকার বালিশের দাম ২২ হাজার টাকা হওয়াটা তাই কোনো ব্যাপার নয়। আমরা যে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকি, তা ব্যক্তিজীবনেই পালন করি না বলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের চিন্তার ফাঁকফোকরগুলো ধরে ফেলে। তাই পূর্ব-প্রজন্মের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা থাকে না। তারা বুঝতে পারে, নৈতিকভাবে অবক্ষয়িত এই পূর্ব-প্রজন্ম তাদের নৈতিক শক্তি দিতে পারে না। কিন্তু যে বলয়ের মধ্যে বসবাস, সেই বলয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে ওই ঘুষ আর দুর্নীতির পথই বেছে নিতে হয় তাদেরও। এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
আমাদের এই অঞ্চলে ঘুষের শুরু করেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস—এ রকম একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। মীরজাফরের পত্নী মুন্নী বেগমের কাছ থেকে নাকি হেস্টিংস ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। মুন্নী বেগমের ছেলে নাজিমউদ্দৌলা ১৫ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছিল।
কে প্রথম ঘুষ নিয়েছিলেন, সেটা খুব বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সেই ঘুষপ্রথা অলিখিতভাবে আমাদের সমাজে ভিত্তি পেয়েছে। জরিপ হওয়া দরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঘুষখোরের সংখ্যা বেশি, নাকি সৎমানুষের সংখ্যা বেশি? অনেক সময় আমরা লক্ষ করেছি, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য ঘুষখোরদের কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘আমি নিজে ঘুষ খাই না।
সিস্টেমে এমনিতেই আমার কাছে ঘুষের টাকা চলে আসে। আমি না নিলে বরং আমাকে একঘরে করে ফেলা হবে।’ কথাটা হাস্যকর শোনালেও এ কথার মধ্যে সত্যতা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বুঝতে পারে, এখানে ঘুষ নেওয়া হলে কেউ এসে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করবে না, তখন সেই প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ঘুষের প্রচলন হতে পারে। আমাদের দেশে এই ঘুষপ্রবণতা যেন গণতন্ত্রের অঙ্গ হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ভালো-মন্দ নিয়ে একটু কথা বলা বোধ হয় অসমীচীন হবে না।
২. আজকের লেখাটা একটু ভারী হয়ে যেতে পারে। তবে তার দরকার আছে। গণতন্ত্রকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে টেকসই রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের আপাত পতনের পর গণতন্ত্রই নির্ভরযোগ্য শাসনব্যবস্থা হিসেবে টিকে আছে। কিন্তু দেখুন, রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদশাসিত দুই বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতে গণতন্ত্রের যে হাল, তাতে এই ‘তন্ত্র’ পরিবর্তিত হয়ে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, সেটাই ব্যথিত মনে দেখতে হয়। নরেন্দ্র মোদির গণতন্ত্রের সঙ্গে হিন্দুত্বের মিলন এখন ভারতের গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখোমুখি করেছে। দেশভাগের আগে বা পরে জাতীয় কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলত, বর্তমান ভারত সেই জায়গা থেকে অনেক দূর সরে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র তো এলিট শ্রেণির কবজায় সেই কবে থেকেই বন্দী। পুঁজির বিকাশ হচ্ছে সেখানে, কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে গায়ের জোরে গণতন্ত্রী করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার অপচয় করছে তারা। ফলে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করতে হয়। আমাদের দেশে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের পুনরাগমনের সময়টা হলো নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। কিন্তু সেই গণতন্ত্র কতটা কোন দিকে বিকশিত হয়েছে, সেই আলোচনা করা খুবই জরুরি।
৩. এরশাদের পতনের পর প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরেফিরে ক্ষমতায় এসেছে। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সফলভাবেই নির্বাচন ও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এরপর বিএনপির আমলে হঠাৎ করেই ইয়াজউদ্দিন-ম্যাজিক গোটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের চিন্তকেরা প্রশাসনের সর্বত্র নিজের লোকদের বসিয়ে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসনের জন্ম দিতে চেয়েছিলেন। সেই সময়কার তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল যে ফখরুদ্দীন আহমদের কেয়ারটেকার সরকার, তারাও নানাভাবে সমালোচিত হয়েছিল। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
আমরা দেখতে পেয়েছি, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য নানা চেষ্টা করে এসেছে। আমরা এ-ও দেখেছি, ক্ষমতায় এসে সমাজ থেকে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ঘুষ ইত্যাদি নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেছে সেনাসমর্থিত কিংবা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর হয় তারা নিজেরাই যুক্ত হয়ে গেছে এই সব অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অথবা কেউ এই অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে আইনের শাসন শিথিল হয়ে পড়ে, একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী অপরাধ করতে থাকে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রভাবে পার পেয়ে যায়—এটা সর্বত্রই দেখা যায়। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
এ কারণেই সমাজের ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়তে থাকে, বুদ্ধিজীবীশ্রেণির বড় অংশটাই হয়ে ওঠে ক্ষমতার তাঁবেদার, সরকারও বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে প্রতিবাদী মেধাবীদের ‘উপহার’ দিয়ে তাঁদের হাতে রাখে। আর আইনশৃঙ্খলা? সেটা ‘যেমনে নাচাও তেমনে নাচি, পুতুলের কী দোষ’ বলে নিজের দোষ ঢেকে রাখার প্রয়াস নিতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
৪. বৃহৎ এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই ধরে ধরে বলার থাকতে পারে। কিন্তু আজকের আলোচনায় সেদিকে যাব না। গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় যে আপদটি বড় করে বাসা বেঁধেছে, তা নিয়েই এখন বলব। ওপরে যা বলা হলো, তার কারণগুলো হয়তো এই আলোচনায় পাওয়া যেতেও পারে। এই আলোচনা আমাদের গণতন্ত্রের দৈন্যদশা নিয়ে খানিকটা ভাবতে সাহায্য করবে বলে আমার ধারণা।
দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তান পর্যায়ের নিরন্তর আন্দোলনের কথা কমবেশি সবাই জানেন। সেই সময়টা পেরিয়ে এসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির যখন জন্ম হলো, তখন যা দেখা গেল, তা থেকেই কথার শুরু হোক। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশের নাম পরিবর্তন হয়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হলো, তা ছিল অর্থনৈতিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত এক দেশ। ভেঙে পড়া অর্থনীতির দেশটার হাল ধরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিছুদিন বাদেই ছাত্রলীগে এল ভাঙন, তৈরি হলো জাসদ। ডান-বামের প্রবল বিরোধিতার মধ্য দিয়ে পথ কেটে এগিয়ে যেতে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারকে। পাকিস্তানি দালালেরাও করছিল সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র।
এই বিভিন্ন আক্রমণের মধ্যেই আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগেও নৈতিক স্খলন দেখা গেছে। দিনে দিনে বঙ্গবন্ধু একা হয়ে যেতে থাকলেন। শেখ মুজিব-তাজউদ্দীন বন্ধনটিও থাকল না। সে এক অস্থির সময়ে সমাজতান্ত্রিক পথ বেছে নিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বাকশাল গঠনের পরপরই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তিনি নিহত হলেন।
এই ইতিহাস নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ হলো, সামরিক সরকার দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর জিয়াউর রহমানের সরকার নব্য উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা শুরু করেছিল। একধরনের পুঁজিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে। অনভ্যস্ত সাধারণ মানুষের পক্ষে এই নতুন পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল শক্ত। তার ফল হয়েছিল কী?
৫. পুঁজিবাদের উত্থান মানেই বিপুল নগরায়ণ বা নগরসভ্যতার দিকে যাওয়া। ইউরোপে দেখা গেছে, নগরায়ণের ফলে গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহরে চলে আসে। কাজ নেয় কারখানায়। তাদের মনে গ্রামীণ সংস্কৃতির জায়গায় শহুরে সংস্কৃতি জায়গা করে নিতে থাকে।
নগরসভ্যতা হচ্ছে শিল্প বিকাশের সঙ্গে যুক্ত জীবনধারার শৈল্পিক রূপ। চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রেও শীলিত পরিবর্তন আসে তাতে। শিল্পের উন্নতিকে বাধাহীন করতে হলে প্রয়োজন পড়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের। রক্ষণশীল পশ্চাৎপদ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার দরকার হয়। ফলে তখন গড়ে তুলতে হয় নয়া নয়া জ্ঞানকেন্দ্র। গড়ে তুলতে হয় শিক্ষাব্যবস্থা। যে শিক্ষা জীবনে কাজে লাগে, সেই শিক্ষাকেই তুলে আনতে হয়। আর শহুরে মানুষের বিনোদনের খোরাক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় শিল্পকেন্দ্র। সংগীত, নৃত্য, ভাস্কর্য, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। কিন্তু এগুলো গড়ে তুলতে হলে দেশজ উপাদানের ওপর গড়ে তুলতে হয় ভিত্তিমূল। আমাদের এই নগরায়ণ দেশীয় না হয়ে বহুজাতিক করপোরেশন ও কোম্পানির শিকড়ে বাঁধা পড়েছে। ফলে লোকজ, দেশীয় উপাদানের অভাবে সেই সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে শিকড়বিহীন। এই আধ্যাত্মিকভাবে শিকড়হীন মানুষের পক্ষে দেশপ্রেম, উন্নত নৈতিক অবস্থা, রুচিবোধের জন্ম দেওয়া কঠিন।
সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জীবনে সাম্যের একটা স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে পারত। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সেটি ধাক্কা খাওয়ার পর গণতান্ত্রিক আচরণও স্বৈরাচারী আচরণের দিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বলে রাখা ভালো, পাকিস্তান আমলে যে স্বাধিকার আন্দোলন হয়েছে, তাতে রাজনীতি আর সংস্কৃতি চলেছে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে। এরপর তা কোথায় হারিয়ে গেল, চলে গেল সবার অগোচরে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক শক্তি কি কিছু ভাবে?
৬. অর্থাৎ শিকড়বিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছে আমাদের দেশে। প্রশাসনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখে আসছেন, উপরি পাওনাটা জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজ দল ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রতিভাবান কর্মীরা দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা এবং মানবসেবার বদলে বেছে নিচ্ছেন ঠিকাদারি। কারণ, তাঁরা জানেন, ভাগ্য ভালো থাকলে এই পেশায় এক নিমেষে কোটিপতি হয়ে যাওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশের সরকারি কেনাকাটায় একটা ৫০০ টাকার বালিশের দাম ২২ হাজার টাকা হওয়াটা তাই কোনো ব্যাপার নয়। আমরা যে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকি, তা ব্যক্তিজীবনেই পালন করি না বলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের চিন্তার ফাঁকফোকরগুলো ধরে ফেলে। তাই পূর্ব-প্রজন্মের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা থাকে না। তারা বুঝতে পারে, নৈতিকভাবে অবক্ষয়িত এই পূর্ব-প্রজন্ম তাদের নৈতিক শক্তি দিতে পারে না। কিন্তু যে বলয়ের মধ্যে বসবাস, সেই বলয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে ওই ঘুষ আর দুর্নীতির পথই বেছে নিতে হয় তাদেরও। এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
আমাদের এই অঞ্চলে ঘুষের শুরু করেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস—এ রকম একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। মীরজাফরের পত্নী মুন্নী বেগমের কাছ থেকে নাকি হেস্টিংস ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। মুন্নী বেগমের ছেলে নাজিমউদ্দৌলা ১৫ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছিল।
কে প্রথম ঘুষ নিয়েছিলেন, সেটা খুব বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সেই ঘুষপ্রথা অলিখিতভাবে আমাদের সমাজে ভিত্তি পেয়েছে। জরিপ হওয়া দরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঘুষখোরের সংখ্যা বেশি, নাকি সৎমানুষের সংখ্যা বেশি? অনেক সময় আমরা লক্ষ করেছি, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য ঘুষখোরদের কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘আমি নিজে ঘুষ খাই না।
সিস্টেমে এমনিতেই আমার কাছে ঘুষের টাকা চলে আসে। আমি না নিলে বরং আমাকে একঘরে করে ফেলা হবে।’ কথাটা হাস্যকর শোনালেও এ কথার মধ্যে সত্যতা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বুঝতে পারে, এখানে ঘুষ নেওয়া হলে কেউ এসে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করবে না, তখন সেই প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ঘুষের প্রচলন হতে পারে। আমাদের দেশে এই ঘুষপ্রবণতা যেন গণতন্ত্রের অঙ্গ হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ভালো-মন্দ নিয়ে একটু কথা বলা বোধ হয় অসমীচীন হবে না।
২. আজকের লেখাটা একটু ভারী হয়ে যেতে পারে। তবে তার দরকার আছে। গণতন্ত্রকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে টেকসই রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের আপাত পতনের পর গণতন্ত্রই নির্ভরযোগ্য শাসনব্যবস্থা হিসেবে টিকে আছে। কিন্তু দেখুন, রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদশাসিত দুই বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতে গণতন্ত্রের যে হাল, তাতে এই ‘তন্ত্র’ পরিবর্তিত হয়ে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, সেটাই ব্যথিত মনে দেখতে হয়। নরেন্দ্র মোদির গণতন্ত্রের সঙ্গে হিন্দুত্বের মিলন এখন ভারতের গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখোমুখি করেছে। দেশভাগের আগে বা পরে জাতীয় কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলত, বর্তমান ভারত সেই জায়গা থেকে অনেক দূর সরে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র তো এলিট শ্রেণির কবজায় সেই কবে থেকেই বন্দী। পুঁজির বিকাশ হচ্ছে সেখানে, কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে গায়ের জোরে গণতন্ত্রী করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার অপচয় করছে তারা। ফলে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করতে হয়। আমাদের দেশে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের পুনরাগমনের সময়টা হলো নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। কিন্তু সেই গণতন্ত্র কতটা কোন দিকে বিকশিত হয়েছে, সেই আলোচনা করা খুবই জরুরি।
৩. এরশাদের পতনের পর প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরেফিরে ক্ষমতায় এসেছে। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সফলভাবেই নির্বাচন ও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এরপর বিএনপির আমলে হঠাৎ করেই ইয়াজউদ্দিন-ম্যাজিক গোটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের চিন্তকেরা প্রশাসনের সর্বত্র নিজের লোকদের বসিয়ে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসনের জন্ম দিতে চেয়েছিলেন। সেই সময়কার তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল যে ফখরুদ্দীন আহমদের কেয়ারটেকার সরকার, তারাও নানাভাবে সমালোচিত হয়েছিল। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
আমরা দেখতে পেয়েছি, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য নানা চেষ্টা করে এসেছে। আমরা এ-ও দেখেছি, ক্ষমতায় এসে সমাজ থেকে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ঘুষ ইত্যাদি নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেছে সেনাসমর্থিত কিংবা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর হয় তারা নিজেরাই যুক্ত হয়ে গেছে এই সব অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অথবা কেউ এই অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে আইনের শাসন শিথিল হয়ে পড়ে, একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী অপরাধ করতে থাকে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রভাবে পার পেয়ে যায়—এটা সর্বত্রই দেখা যায়। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
এ কারণেই সমাজের ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়তে থাকে, বুদ্ধিজীবীশ্রেণির বড় অংশটাই হয়ে ওঠে ক্ষমতার তাঁবেদার, সরকারও বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে প্রতিবাদী মেধাবীদের ‘উপহার’ দিয়ে তাঁদের হাতে রাখে। আর আইনশৃঙ্খলা? সেটা ‘যেমনে নাচাও তেমনে নাচি, পুতুলের কী দোষ’ বলে নিজের দোষ ঢেকে রাখার প্রয়াস নিতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
৪. বৃহৎ এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই ধরে ধরে বলার থাকতে পারে। কিন্তু আজকের আলোচনায় সেদিকে যাব না। গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় যে আপদটি বড় করে বাসা বেঁধেছে, তা নিয়েই এখন বলব। ওপরে যা বলা হলো, তার কারণগুলো হয়তো এই আলোচনায় পাওয়া যেতেও পারে। এই আলোচনা আমাদের গণতন্ত্রের দৈন্যদশা নিয়ে খানিকটা ভাবতে সাহায্য করবে বলে আমার ধারণা।
দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তান পর্যায়ের নিরন্তর আন্দোলনের কথা কমবেশি সবাই জানেন। সেই সময়টা পেরিয়ে এসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির যখন জন্ম হলো, তখন যা দেখা গেল, তা থেকেই কথার শুরু হোক। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশের নাম পরিবর্তন হয়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হলো, তা ছিল অর্থনৈতিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত এক দেশ। ভেঙে পড়া অর্থনীতির দেশটার হাল ধরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিছুদিন বাদেই ছাত্রলীগে এল ভাঙন, তৈরি হলো জাসদ। ডান-বামের প্রবল বিরোধিতার মধ্য দিয়ে পথ কেটে এগিয়ে যেতে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারকে। পাকিস্তানি দালালেরাও করছিল সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র।
এই বিভিন্ন আক্রমণের মধ্যেই আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগেও নৈতিক স্খলন দেখা গেছে। দিনে দিনে বঙ্গবন্ধু একা হয়ে যেতে থাকলেন। শেখ মুজিব-তাজউদ্দীন বন্ধনটিও থাকল না। সে এক অস্থির সময়ে সমাজতান্ত্রিক পথ বেছে নিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বাকশাল গঠনের পরপরই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তিনি নিহত হলেন।
এই ইতিহাস নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ হলো, সামরিক সরকার দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর জিয়াউর রহমানের সরকার নব্য উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা শুরু করেছিল। একধরনের পুঁজিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে। অনভ্যস্ত সাধারণ মানুষের পক্ষে এই নতুন পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল শক্ত। তার ফল হয়েছিল কী?
৫. পুঁজিবাদের উত্থান মানেই বিপুল নগরায়ণ বা নগরসভ্যতার দিকে যাওয়া। ইউরোপে দেখা গেছে, নগরায়ণের ফলে গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহরে চলে আসে। কাজ নেয় কারখানায়। তাদের মনে গ্রামীণ সংস্কৃতির জায়গায় শহুরে সংস্কৃতি জায়গা করে নিতে থাকে।
নগরসভ্যতা হচ্ছে শিল্প বিকাশের সঙ্গে যুক্ত জীবনধারার শৈল্পিক রূপ। চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রেও শীলিত পরিবর্তন আসে তাতে। শিল্পের উন্নতিকে বাধাহীন করতে হলে প্রয়োজন পড়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের। রক্ষণশীল পশ্চাৎপদ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার দরকার হয়। ফলে তখন গড়ে তুলতে হয় নয়া নয়া জ্ঞানকেন্দ্র। গড়ে তুলতে হয় শিক্ষাব্যবস্থা। যে শিক্ষা জীবনে কাজে লাগে, সেই শিক্ষাকেই তুলে আনতে হয়। আর শহুরে মানুষের বিনোদনের খোরাক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় শিল্পকেন্দ্র। সংগীত, নৃত্য, ভাস্কর্য, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। কিন্তু এগুলো গড়ে তুলতে হলে দেশজ উপাদানের ওপর গড়ে তুলতে হয় ভিত্তিমূল। আমাদের এই নগরায়ণ দেশীয় না হয়ে বহুজাতিক করপোরেশন ও কোম্পানির শিকড়ে বাঁধা পড়েছে। ফলে লোকজ, দেশীয় উপাদানের অভাবে সেই সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে শিকড়বিহীন। এই আধ্যাত্মিকভাবে শিকড়হীন মানুষের পক্ষে দেশপ্রেম, উন্নত নৈতিক অবস্থা, রুচিবোধের জন্ম দেওয়া কঠিন।
সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জীবনে সাম্যের একটা স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে পারত। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সেটি ধাক্কা খাওয়ার পর গণতান্ত্রিক আচরণও স্বৈরাচারী আচরণের দিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বলে রাখা ভালো, পাকিস্তান আমলে যে স্বাধিকার আন্দোলন হয়েছে, তাতে রাজনীতি আর সংস্কৃতি চলেছে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে। এরপর তা কোথায় হারিয়ে গেল, চলে গেল সবার অগোচরে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক শক্তি কি কিছু ভাবে?
৬. অর্থাৎ শিকড়বিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছে আমাদের দেশে। প্রশাসনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখে আসছেন, উপরি পাওনাটা জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজ দল ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রতিভাবান কর্মীরা দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা এবং মানবসেবার বদলে বেছে নিচ্ছেন ঠিকাদারি। কারণ, তাঁরা জানেন, ভাগ্য ভালো থাকলে এই পেশায় এক নিমেষে কোটিপতি হয়ে যাওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশের সরকারি কেনাকাটায় একটা ৫০০ টাকার বালিশের দাম ২২ হাজার টাকা হওয়াটা তাই কোনো ব্যাপার নয়। আমরা যে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকি, তা ব্যক্তিজীবনেই পালন করি না বলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের চিন্তার ফাঁকফোকরগুলো ধরে ফেলে। তাই পূর্ব-প্রজন্মের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা থাকে না। তারা বুঝতে পারে, নৈতিকভাবে অবক্ষয়িত এই পূর্ব-প্রজন্ম তাদের নৈতিক শক্তি দিতে পারে না। কিন্তু যে বলয়ের মধ্যে বসবাস, সেই বলয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে ওই ঘুষ আর দুর্নীতির পথই বেছে নিতে হয় তাদেরও। এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
আমাদের এই অঞ্চলে ঘুষের শুরু করেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস—এ রকম একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। মীরজাফরের পত্নী মুন্নী বেগমের কাছ থেকে নাকি হেস্টিংস ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। মুন্নী বেগমের ছেলে নাজিমউদ্দৌলা ১৫ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছিল।
কে প্রথম ঘুষ নিয়েছিলেন, সেটা খুব বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সেই ঘুষপ্রথা অলিখিতভাবে আমাদের সমাজে ভিত্তি পেয়েছে। জরিপ হওয়া দরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঘুষখোরের সংখ্যা বেশি, নাকি সৎমানুষের সংখ্যা বেশি? অনেক সময় আমরা লক্ষ করেছি, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য ঘুষখোরদের কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘আমি নিজে ঘুষ খাই না।
সিস্টেমে এমনিতেই আমার কাছে ঘুষের টাকা চলে আসে। আমি না নিলে বরং আমাকে একঘরে করে ফেলা হবে।’ কথাটা হাস্যকর শোনালেও এ কথার মধ্যে সত্যতা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বুঝতে পারে, এখানে ঘুষ নেওয়া হলে কেউ এসে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করবে না, তখন সেই প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ঘুষের প্রচলন হতে পারে। আমাদের দেশে এই ঘুষপ্রবণতা যেন গণতন্ত্রের অঙ্গ হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ভালো-মন্দ নিয়ে একটু কথা বলা বোধ হয় অসমীচীন হবে না।
২. আজকের লেখাটা একটু ভারী হয়ে যেতে পারে। তবে তার দরকার আছে। গণতন্ত্রকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে টেকসই রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের আপাত পতনের পর গণতন্ত্রই নির্ভরযোগ্য শাসনব্যবস্থা হিসেবে টিকে আছে। কিন্তু দেখুন, রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদশাসিত দুই বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতে গণতন্ত্রের যে হাল, তাতে এই ‘তন্ত্র’ পরিবর্তিত হয়ে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, সেটাই ব্যথিত মনে দেখতে হয়। নরেন্দ্র মোদির গণতন্ত্রের সঙ্গে হিন্দুত্বের মিলন এখন ভারতের গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখোমুখি করেছে। দেশভাগের আগে বা পরে জাতীয় কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলত, বর্তমান ভারত সেই জায়গা থেকে অনেক দূর সরে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র তো এলিট শ্রেণির কবজায় সেই কবে থেকেই বন্দী। পুঁজির বিকাশ হচ্ছে সেখানে, কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে গায়ের জোরে গণতন্ত্রী করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার অপচয় করছে তারা। ফলে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করতে হয়। আমাদের দেশে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের পুনরাগমনের সময়টা হলো নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। কিন্তু সেই গণতন্ত্র কতটা কোন দিকে বিকশিত হয়েছে, সেই আলোচনা করা খুবই জরুরি।
৩. এরশাদের পতনের পর প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘুরেফিরে ক্ষমতায় এসেছে। একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সফলভাবেই নির্বাচন ও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এরপর বিএনপির আমলে হঠাৎ করেই ইয়াজউদ্দিন-ম্যাজিক গোটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের চিন্তকেরা প্রশাসনের সর্বত্র নিজের লোকদের বসিয়ে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসনের জন্ম দিতে চেয়েছিলেন। সেই সময়কার তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল যে ফখরুদ্দীন আহমদের কেয়ারটেকার সরকার, তারাও নানাভাবে সমালোচিত হয়েছিল। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
আমরা দেখতে পেয়েছি, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য নানা চেষ্টা করে এসেছে। আমরা এ-ও দেখেছি, ক্ষমতায় এসে সমাজ থেকে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ঘুষ ইত্যাদি নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেছে সেনাসমর্থিত কিংবা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর হয় তারা নিজেরাই যুক্ত হয়ে গেছে এই সব অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অথবা কেউ এই অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে আইনের শাসন শিথিল হয়ে পড়ে, একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী অপরাধ করতে থাকে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রভাবে পার পেয়ে যায়—এটা সর্বত্রই দেখা যায়। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
এ কারণেই সমাজের ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়তে থাকে, বুদ্ধিজীবীশ্রেণির বড় অংশটাই হয়ে ওঠে ক্ষমতার তাঁবেদার, সরকারও বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে প্রতিবাদী মেধাবীদের ‘উপহার’ দিয়ে তাঁদের হাতে রাখে। আর আইনশৃঙ্খলা? সেটা ‘যেমনে নাচাও তেমনে নাচি, পুতুলের কী দোষ’ বলে নিজের দোষ ঢেকে রাখার প্রয়াস নিতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
৪. বৃহৎ এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই ধরে ধরে বলার থাকতে পারে। কিন্তু আজকের আলোচনায় সেদিকে যাব না। গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় যে আপদটি বড় করে বাসা বেঁধেছে, তা নিয়েই এখন বলব। ওপরে যা বলা হলো, তার কারণগুলো হয়তো এই আলোচনায় পাওয়া যেতেও পারে। এই আলোচনা আমাদের গণতন্ত্রের দৈন্যদশা নিয়ে খানিকটা ভাবতে সাহায্য করবে বলে আমার ধারণা।
দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তান পর্যায়ের নিরন্তর আন্দোলনের কথা কমবেশি সবাই জানেন। সেই সময়টা পেরিয়ে এসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির যখন জন্ম হলো, তখন যা দেখা গেল, তা থেকেই কথার শুরু হোক। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশের নাম পরিবর্তন হয়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হলো, তা ছিল অর্থনৈতিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত এক দেশ। ভেঙে পড়া অর্থনীতির দেশটার হাল ধরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিছুদিন বাদেই ছাত্রলীগে এল ভাঙন, তৈরি হলো জাসদ। ডান-বামের প্রবল বিরোধিতার মধ্য দিয়ে পথ কেটে এগিয়ে যেতে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারকে। পাকিস্তানি দালালেরাও করছিল সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র।
এই বিভিন্ন আক্রমণের মধ্যেই আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগেও নৈতিক স্খলন দেখা গেছে। দিনে দিনে বঙ্গবন্ধু একা হয়ে যেতে থাকলেন। শেখ মুজিব-তাজউদ্দীন বন্ধনটিও থাকল না। সে এক অস্থির সময়ে সমাজতান্ত্রিক পথ বেছে নিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বাকশাল গঠনের পরপরই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তিনি নিহত হলেন।
এই ইতিহাস নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ হলো, সামরিক সরকার দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর জিয়াউর রহমানের সরকার নব্য উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা শুরু করেছিল। একধরনের পুঁজিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে। অনভ্যস্ত সাধারণ মানুষের পক্ষে এই নতুন পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল শক্ত। তার ফল হয়েছিল কী?
৫. পুঁজিবাদের উত্থান মানেই বিপুল নগরায়ণ বা নগরসভ্যতার দিকে যাওয়া। ইউরোপে দেখা গেছে, নগরায়ণের ফলে গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহরে চলে আসে। কাজ নেয় কারখানায়। তাদের মনে গ্রামীণ সংস্কৃতির জায়গায় শহুরে সংস্কৃতি জায়গা করে নিতে থাকে।
নগরসভ্যতা হচ্ছে শিল্প বিকাশের সঙ্গে যুক্ত জীবনধারার শৈল্পিক রূপ। চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রেও শীলিত পরিবর্তন আসে তাতে। শিল্পের উন্নতিকে বাধাহীন করতে হলে প্রয়োজন পড়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের। রক্ষণশীল পশ্চাৎপদ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার দরকার হয়। ফলে তখন গড়ে তুলতে হয় নয়া নয়া জ্ঞানকেন্দ্র। গড়ে তুলতে হয় শিক্ষাব্যবস্থা। যে শিক্ষা জীবনে কাজে লাগে, সেই শিক্ষাকেই তুলে আনতে হয়। আর শহুরে মানুষের বিনোদনের খোরাক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় শিল্পকেন্দ্র। সংগীত, নৃত্য, ভাস্কর্য, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। কিন্তু এগুলো গড়ে তুলতে হলে দেশজ উপাদানের ওপর গড়ে তুলতে হয় ভিত্তিমূল। আমাদের এই নগরায়ণ দেশীয় না হয়ে বহুজাতিক করপোরেশন ও কোম্পানির শিকড়ে বাঁধা পড়েছে। ফলে লোকজ, দেশীয় উপাদানের অভাবে সেই সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে শিকড়বিহীন। এই আধ্যাত্মিকভাবে শিকড়হীন মানুষের পক্ষে দেশপ্রেম, উন্নত নৈতিক অবস্থা, রুচিবোধের জন্ম দেওয়া কঠিন।
সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জীবনে সাম্যের একটা স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে পারত। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সেটি ধাক্কা খাওয়ার পর গণতান্ত্রিক আচরণও স্বৈরাচারী আচরণের দিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বলে রাখা ভালো, পাকিস্তান আমলে যে স্বাধিকার আন্দোলন হয়েছে, তাতে রাজনীতি আর সংস্কৃতি চলেছে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে। এরপর তা কোথায় হারিয়ে গেল, চলে গেল সবার অগোচরে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক শক্তি কি কিছু ভাবে?
৬. অর্থাৎ শিকড়বিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছে আমাদের দেশে। প্রশাসনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখে আসছেন, উপরি পাওনাটা জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজ দল ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রতিভাবান কর্মীরা দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা এবং মানবসেবার বদলে বেছে নিচ্ছেন ঠিকাদারি। কারণ, তাঁরা জানেন, ভাগ্য ভালো থাকলে এই পেশায় এক নিমেষে কোটিপতি হয়ে যাওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশের সরকারি কেনাকাটায় একটা ৫০০ টাকার বালিশের দাম ২২ হাজার টাকা হওয়াটা তাই কোনো ব্যাপার নয়। আমরা যে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকি, তা ব্যক্তিজীবনেই পালন করি না বলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের চিন্তার ফাঁকফোকরগুলো ধরে ফেলে। তাই পূর্ব-প্রজন্মের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা থাকে না। তারা বুঝতে পারে, নৈতিকভাবে অবক্ষয়িত এই পূর্ব-প্রজন্ম তাদের নৈতিক শক্তি দিতে পারে না। কিন্তু যে বলয়ের মধ্যে বসবাস, সেই বলয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে ওই ঘুষ আর দুর্নীতির পথই বেছে নিতে হয় তাদেরও। এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
২৯ এপ্রিল ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
২৯ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
২৯ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ঘুষ বা দুর্নীতির খবর আমাদের দেশে যে খুব একটা পাত্তা পায় না, তার একটি বড় কারণ হলো, সবাই মেনে নিয়েছে, এই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। যদি নতুন কিছু করতে হয়, ঘাটে ঘাটে পয়সা গুনতে হবে। এমনকি যদি চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা তুলতে যাওয়া হয়, তাহলেও ঘুষ দেওয়াটাই রীতি।
২৯ এপ্রিল ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫