ড. মঞ্জুরে খোদা

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি। কিন্তু সেটা না করে নতুন শিক্ষাক্রম ঘোষণা করাতেই বিপত্তি হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০২১ সালে যে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে, সেই আলোচনাটা অনেক বড়। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের প্রতিটি পাঠ্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু এখানে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি:
১. প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে। প্রাথমিকে কোনো পুস্তক থাকবে না। শিক্ষকেরা নিজেরাই তাদের লেখাপড়া তথা কারিকুলাম তৈরি করবেন। এর সবকিছু খারাপ মনে করি না। কিন্তু এখানে একটা বড় আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে, এই ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করার বাস্তব অবস্থা দেশে বিদ্যমান আছে কি না? জাপানে প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের মান ও শিক্ষার পরিবেশের অনেক কিছুই আমাদের দেশে নেই। তাই এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে এখানে একটা বড় সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
২. শিক্ষাকে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের করে অনুশীলন ও প্রয়োগনির্ভর শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, এই ধারণা অংশত ঠিক আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন ভাবনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন গণিত, বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য নামতা, সূত্র, তত্ত্ব মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। জাপানের শিক্ষার্থীদের চার থেকে পাঁচ হাজার কানজি (অক্ষর) মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়। এ জন্য জাপানের শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তির প্রতিভা বিশ্বে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে।
৩. শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় এই ধারা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তবে আমাদের দেশের যে শিক্ষাকাঠামো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, তাতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার আগে অনেক প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মতামত জেনেছি। তাঁদের মন্তব্য, এ জন্য শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল খুবই নিম্নমানের। মাস্টার ট্রেইনারদের অবস্থাও ছিল করুণ।
পরীক্ষা, টেস্ট নাকচ করার ধারণা ঠিক নয়। প্রচলিত পদ্ধতির না হলেও নানা পর্যায়ে ও স্তরে মাস-বছরের লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটা না হলে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, সাহিত্যের বই পড়বে না। পাঠ এড়ানোর প্রবণতা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তারা কম পড়ে, কম পরিশ্রম করে অধিক ফল পেতে চায়। এ জন্য শিক্ষার ধারাবাহিক মান নির্ধারণে এ পদ্ধতি প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বত্রই এ ব্যবস্থা কার্যকর আছে।
৪. বিজ্ঞান শিক্ষায় অধিক গুরুত্বের কথা বলা হলেও, তাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। আগে যে মান-পরিধি ছিল, এখন তাকে আরও নিম্নমানের করা হয়েছে। দেশে এমনিতেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই এর পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য বিভাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলার আগে যেটা বলতে চাই—নতুন কারিকুলামে বিভাগ বিভাজন না থাকলেও, সমস্যা হতো না, যদি বিজ্ঞানের বই তিন খণ্ডে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ পুস্তক হিসেবে থাকত। কিন্তু সেটা নেই। বিজ্ঞান বইয়ের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, অপ্রতুল গাণিতিক প্রশ্ন। গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান শেখা অসম্ভব। জীববিজ্ঞান ও রসায়নেও একই সংকট। পাঠ্যবইয়ে অনুশীলনী না থাকাটা বেমানান।
৫. ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পরিবেশ ও আয়োজন নেই। এ জন্য ব্যাপক অর্থায়ন, প্রস্তুতি, প্রশিক্ষক ও সময়ের প্রয়োজন ছিল। সেটা বিবেচনা করা হয়নি।
৬. প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বের কথা বলা হলেও, মাধ্যমিকে গণিতের পরিসর ও গুরুত্বকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এখানে একটা বড় বিতর্ক আছে। পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক দক্ষতা না থাকলে, ভালো প্রযুক্তিবিদ কিংবা পদার্থবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়।
৭. শিক্ষার লক্ষ্যের স্থানে-চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সাম্য, মৈত্রীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধারার শিক্ষার যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা বিলুপ্ত করার কোনো কথা নেই। নতুন শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলা হলেও, সেটা মূলত সরকারনিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষার ধারা কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। তারা এই ধারার বাইরেই থেকে যাবে। সে অবস্থা-ব্যবস্থা বজায় রেখে এই নীতি কার্যকর করার বিষয়টি প্রহসন ও রাজনৈতিক বুলিবাগিশ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৮. কোচিংনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হোক, সেটা চাই। কিন্তু তা বন্ধ করতে গণিত-বিজ্ঞানকে অবহেলা করে যেনতেন প্রকারে একটি কারিকুলাম তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোচিং-বাণিজ্য এভাবে বন্ধ হবে না; বরং মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রথম গ্রেডে দিতে হবে।
কোচিং-ব্যবসা কেন রমরমা হচ্ছে? এর কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। এর প্রধান কারণ ভালো শিক্ষকের সংকট। শিক্ষকেরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লাসে পড়ান না। আর যা পড়াচ্ছেন, ছাত্ররা তা বুঝতে পারছে না। তখন শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ না দিলে, এই নীতির বাস্তবায়ন হবে না।
৯. ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, বিশেষায়িত, প্রযুক্তি শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের মধ্য থেকে আবশ্যিক বিষয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
১০. যুগ যুগ ধরে আমরা একটি আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ একই ধরনের শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার দাবি করে আসছি। এমনকি এগুলো আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে ছাত্রদের ১১ দফা এবং নব্বইয়ের ১০ দফার প্রধান দাবি ছিল। কিন্তু সময়োপযোগিতার কথা বলে এই সময়ে এমন এক শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে, যা কেউ দাবি করেনি। আর না চাইতেই যখন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেখানে দুরভিসন্ধি ব্যাপার থাকার সন্দেহ করাটা অমূলক নয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেটা ছাত্রদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, সেটা তারা মানছে না।
সদ্য ঘোষিত কারিকুলাম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ধারাবাহিক নির্মোহ বিতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে কি এমনটা ঘটেছে? একটি ভালো ব্যবস্থা চালু করার আগে আলাপ-বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই গিনিপিগে পরিণত করা চলবে না।
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। বিষয় ছিল ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন’। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে ‘ওপরমহলের নির্দেশে’ এই আলোচনার নির্ধারিত স্থান আর সি মজুমদার হলের অনুমতি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্কের সামনে থাকবে, এতে যে ভুলত্রুটি, সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও অসংগতি আছে, সেগুলো তুলে ধরবে, সরকারকে বাধ্য করবে নীতির সংশোধন করতে—তা না করে নিজেরাই সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক?
লেখক-গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি। কিন্তু সেটা না করে নতুন শিক্ষাক্রম ঘোষণা করাতেই বিপত্তি হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০২১ সালে যে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে, সেই আলোচনাটা অনেক বড়। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের প্রতিটি পাঠ্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু এখানে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি:
১. প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে। প্রাথমিকে কোনো পুস্তক থাকবে না। শিক্ষকেরা নিজেরাই তাদের লেখাপড়া তথা কারিকুলাম তৈরি করবেন। এর সবকিছু খারাপ মনে করি না। কিন্তু এখানে একটা বড় আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে, এই ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করার বাস্তব অবস্থা দেশে বিদ্যমান আছে কি না? জাপানে প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের মান ও শিক্ষার পরিবেশের অনেক কিছুই আমাদের দেশে নেই। তাই এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে এখানে একটা বড় সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
২. শিক্ষাকে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের করে অনুশীলন ও প্রয়োগনির্ভর শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, এই ধারণা অংশত ঠিক আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন ভাবনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন গণিত, বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য নামতা, সূত্র, তত্ত্ব মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। জাপানের শিক্ষার্থীদের চার থেকে পাঁচ হাজার কানজি (অক্ষর) মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়। এ জন্য জাপানের শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তির প্রতিভা বিশ্বে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে।
৩. শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় এই ধারা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তবে আমাদের দেশের যে শিক্ষাকাঠামো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, তাতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার আগে অনেক প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মতামত জেনেছি। তাঁদের মন্তব্য, এ জন্য শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল খুবই নিম্নমানের। মাস্টার ট্রেইনারদের অবস্থাও ছিল করুণ।
পরীক্ষা, টেস্ট নাকচ করার ধারণা ঠিক নয়। প্রচলিত পদ্ধতির না হলেও নানা পর্যায়ে ও স্তরে মাস-বছরের লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটা না হলে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, সাহিত্যের বই পড়বে না। পাঠ এড়ানোর প্রবণতা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তারা কম পড়ে, কম পরিশ্রম করে অধিক ফল পেতে চায়। এ জন্য শিক্ষার ধারাবাহিক মান নির্ধারণে এ পদ্ধতি প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বত্রই এ ব্যবস্থা কার্যকর আছে।
৪. বিজ্ঞান শিক্ষায় অধিক গুরুত্বের কথা বলা হলেও, তাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। আগে যে মান-পরিধি ছিল, এখন তাকে আরও নিম্নমানের করা হয়েছে। দেশে এমনিতেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই এর পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য বিভাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলার আগে যেটা বলতে চাই—নতুন কারিকুলামে বিভাগ বিভাজন না থাকলেও, সমস্যা হতো না, যদি বিজ্ঞানের বই তিন খণ্ডে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ পুস্তক হিসেবে থাকত। কিন্তু সেটা নেই। বিজ্ঞান বইয়ের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, অপ্রতুল গাণিতিক প্রশ্ন। গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান শেখা অসম্ভব। জীববিজ্ঞান ও রসায়নেও একই সংকট। পাঠ্যবইয়ে অনুশীলনী না থাকাটা বেমানান।
৫. ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পরিবেশ ও আয়োজন নেই। এ জন্য ব্যাপক অর্থায়ন, প্রস্তুতি, প্রশিক্ষক ও সময়ের প্রয়োজন ছিল। সেটা বিবেচনা করা হয়নি।
৬. প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বের কথা বলা হলেও, মাধ্যমিকে গণিতের পরিসর ও গুরুত্বকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এখানে একটা বড় বিতর্ক আছে। পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক দক্ষতা না থাকলে, ভালো প্রযুক্তিবিদ কিংবা পদার্থবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়।
৭. শিক্ষার লক্ষ্যের স্থানে-চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সাম্য, মৈত্রীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধারার শিক্ষার যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা বিলুপ্ত করার কোনো কথা নেই। নতুন শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলা হলেও, সেটা মূলত সরকারনিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষার ধারা কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। তারা এই ধারার বাইরেই থেকে যাবে। সে অবস্থা-ব্যবস্থা বজায় রেখে এই নীতি কার্যকর করার বিষয়টি প্রহসন ও রাজনৈতিক বুলিবাগিশ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৮. কোচিংনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হোক, সেটা চাই। কিন্তু তা বন্ধ করতে গণিত-বিজ্ঞানকে অবহেলা করে যেনতেন প্রকারে একটি কারিকুলাম তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোচিং-বাণিজ্য এভাবে বন্ধ হবে না; বরং মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রথম গ্রেডে দিতে হবে।
কোচিং-ব্যবসা কেন রমরমা হচ্ছে? এর কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। এর প্রধান কারণ ভালো শিক্ষকের সংকট। শিক্ষকেরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লাসে পড়ান না। আর যা পড়াচ্ছেন, ছাত্ররা তা বুঝতে পারছে না। তখন শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ না দিলে, এই নীতির বাস্তবায়ন হবে না।
৯. ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, বিশেষায়িত, প্রযুক্তি শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের মধ্য থেকে আবশ্যিক বিষয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
১০. যুগ যুগ ধরে আমরা একটি আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ একই ধরনের শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার দাবি করে আসছি। এমনকি এগুলো আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে ছাত্রদের ১১ দফা এবং নব্বইয়ের ১০ দফার প্রধান দাবি ছিল। কিন্তু সময়োপযোগিতার কথা বলে এই সময়ে এমন এক শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে, যা কেউ দাবি করেনি। আর না চাইতেই যখন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেখানে দুরভিসন্ধি ব্যাপার থাকার সন্দেহ করাটা অমূলক নয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেটা ছাত্রদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, সেটা তারা মানছে না।
সদ্য ঘোষিত কারিকুলাম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ধারাবাহিক নির্মোহ বিতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে কি এমনটা ঘটেছে? একটি ভালো ব্যবস্থা চালু করার আগে আলাপ-বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই গিনিপিগে পরিণত করা চলবে না।
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। বিষয় ছিল ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন’। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে ‘ওপরমহলের নির্দেশে’ এই আলোচনার নির্ধারিত স্থান আর সি মজুমদার হলের অনুমতি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্কের সামনে থাকবে, এতে যে ভুলত্রুটি, সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও অসংগতি আছে, সেগুলো তুলে ধরবে, সরকারকে বাধ্য করবে নীতির সংশোধন করতে—তা না করে নিজেরাই সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক?
লেখক-গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা
ড. মঞ্জুরে খোদা

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি। কিন্তু সেটা না করে নতুন শিক্ষাক্রম ঘোষণা করাতেই বিপত্তি হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০২১ সালে যে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে, সেই আলোচনাটা অনেক বড়। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের প্রতিটি পাঠ্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু এখানে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি:
১. প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে। প্রাথমিকে কোনো পুস্তক থাকবে না। শিক্ষকেরা নিজেরাই তাদের লেখাপড়া তথা কারিকুলাম তৈরি করবেন। এর সবকিছু খারাপ মনে করি না। কিন্তু এখানে একটা বড় আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে, এই ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করার বাস্তব অবস্থা দেশে বিদ্যমান আছে কি না? জাপানে প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের মান ও শিক্ষার পরিবেশের অনেক কিছুই আমাদের দেশে নেই। তাই এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে এখানে একটা বড় সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
২. শিক্ষাকে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের করে অনুশীলন ও প্রয়োগনির্ভর শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, এই ধারণা অংশত ঠিক আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন ভাবনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন গণিত, বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য নামতা, সূত্র, তত্ত্ব মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। জাপানের শিক্ষার্থীদের চার থেকে পাঁচ হাজার কানজি (অক্ষর) মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়। এ জন্য জাপানের শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তির প্রতিভা বিশ্বে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে।
৩. শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় এই ধারা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তবে আমাদের দেশের যে শিক্ষাকাঠামো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, তাতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার আগে অনেক প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মতামত জেনেছি। তাঁদের মন্তব্য, এ জন্য শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল খুবই নিম্নমানের। মাস্টার ট্রেইনারদের অবস্থাও ছিল করুণ।
পরীক্ষা, টেস্ট নাকচ করার ধারণা ঠিক নয়। প্রচলিত পদ্ধতির না হলেও নানা পর্যায়ে ও স্তরে মাস-বছরের লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটা না হলে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, সাহিত্যের বই পড়বে না। পাঠ এড়ানোর প্রবণতা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তারা কম পড়ে, কম পরিশ্রম করে অধিক ফল পেতে চায়। এ জন্য শিক্ষার ধারাবাহিক মান নির্ধারণে এ পদ্ধতি প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বত্রই এ ব্যবস্থা কার্যকর আছে।
৪. বিজ্ঞান শিক্ষায় অধিক গুরুত্বের কথা বলা হলেও, তাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। আগে যে মান-পরিধি ছিল, এখন তাকে আরও নিম্নমানের করা হয়েছে। দেশে এমনিতেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই এর পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য বিভাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলার আগে যেটা বলতে চাই—নতুন কারিকুলামে বিভাগ বিভাজন না থাকলেও, সমস্যা হতো না, যদি বিজ্ঞানের বই তিন খণ্ডে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ পুস্তক হিসেবে থাকত। কিন্তু সেটা নেই। বিজ্ঞান বইয়ের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, অপ্রতুল গাণিতিক প্রশ্ন। গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান শেখা অসম্ভব। জীববিজ্ঞান ও রসায়নেও একই সংকট। পাঠ্যবইয়ে অনুশীলনী না থাকাটা বেমানান।
৫. ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পরিবেশ ও আয়োজন নেই। এ জন্য ব্যাপক অর্থায়ন, প্রস্তুতি, প্রশিক্ষক ও সময়ের প্রয়োজন ছিল। সেটা বিবেচনা করা হয়নি।
৬. প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বের কথা বলা হলেও, মাধ্যমিকে গণিতের পরিসর ও গুরুত্বকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এখানে একটা বড় বিতর্ক আছে। পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক দক্ষতা না থাকলে, ভালো প্রযুক্তিবিদ কিংবা পদার্থবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়।
৭. শিক্ষার লক্ষ্যের স্থানে-চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সাম্য, মৈত্রীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধারার শিক্ষার যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা বিলুপ্ত করার কোনো কথা নেই। নতুন শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলা হলেও, সেটা মূলত সরকারনিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষার ধারা কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। তারা এই ধারার বাইরেই থেকে যাবে। সে অবস্থা-ব্যবস্থা বজায় রেখে এই নীতি কার্যকর করার বিষয়টি প্রহসন ও রাজনৈতিক বুলিবাগিশ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৮. কোচিংনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হোক, সেটা চাই। কিন্তু তা বন্ধ করতে গণিত-বিজ্ঞানকে অবহেলা করে যেনতেন প্রকারে একটি কারিকুলাম তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোচিং-বাণিজ্য এভাবে বন্ধ হবে না; বরং মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রথম গ্রেডে দিতে হবে।
কোচিং-ব্যবসা কেন রমরমা হচ্ছে? এর কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। এর প্রধান কারণ ভালো শিক্ষকের সংকট। শিক্ষকেরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লাসে পড়ান না। আর যা পড়াচ্ছেন, ছাত্ররা তা বুঝতে পারছে না। তখন শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ না দিলে, এই নীতির বাস্তবায়ন হবে না।
৯. ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, বিশেষায়িত, প্রযুক্তি শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের মধ্য থেকে আবশ্যিক বিষয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
১০. যুগ যুগ ধরে আমরা একটি আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ একই ধরনের শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার দাবি করে আসছি। এমনকি এগুলো আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে ছাত্রদের ১১ দফা এবং নব্বইয়ের ১০ দফার প্রধান দাবি ছিল। কিন্তু সময়োপযোগিতার কথা বলে এই সময়ে এমন এক শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে, যা কেউ দাবি করেনি। আর না চাইতেই যখন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেখানে দুরভিসন্ধি ব্যাপার থাকার সন্দেহ করাটা অমূলক নয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেটা ছাত্রদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, সেটা তারা মানছে না।
সদ্য ঘোষিত কারিকুলাম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ধারাবাহিক নির্মোহ বিতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে কি এমনটা ঘটেছে? একটি ভালো ব্যবস্থা চালু করার আগে আলাপ-বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই গিনিপিগে পরিণত করা চলবে না।
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। বিষয় ছিল ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন’। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে ‘ওপরমহলের নির্দেশে’ এই আলোচনার নির্ধারিত স্থান আর সি মজুমদার হলের অনুমতি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্কের সামনে থাকবে, এতে যে ভুলত্রুটি, সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও অসংগতি আছে, সেগুলো তুলে ধরবে, সরকারকে বাধ্য করবে নীতির সংশোধন করতে—তা না করে নিজেরাই সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক?
লেখক-গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি। কিন্তু সেটা না করে নতুন শিক্ষাক্রম ঘোষণা করাতেই বিপত্তি হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০২১ সালে যে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে, সেই আলোচনাটা অনেক বড়। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের প্রতিটি পাঠ্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু এখানে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি:
১. প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে। প্রাথমিকে কোনো পুস্তক থাকবে না। শিক্ষকেরা নিজেরাই তাদের লেখাপড়া তথা কারিকুলাম তৈরি করবেন। এর সবকিছু খারাপ মনে করি না। কিন্তু এখানে একটা বড় আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে, এই ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাস্তবায়ন এবং কার্যকর করার বাস্তব অবস্থা দেশে বিদ্যমান আছে কি না? জাপানে প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের মান ও শিক্ষার পরিবেশের অনেক কিছুই আমাদের দেশে নেই। তাই এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে এখানে একটা বড় সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
২. শিক্ষাকে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের করে অনুশীলন ও প্রয়োগনির্ভর শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, এই ধারণা অংশত ঠিক আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন ভাবনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন গণিত, বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য নামতা, সূত্র, তত্ত্ব মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। জাপানের শিক্ষার্থীদের চার থেকে পাঁচ হাজার কানজি (অক্ষর) মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়। এ জন্য জাপানের শিক্ষার্থীদের স্মরণশক্তির প্রতিভা বিশ্বে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে।
৩. শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় এই ধারা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তবে আমাদের দেশের যে শিক্ষাকাঠামো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, তাতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার আগে অনেক প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মতামত জেনেছি। তাঁদের মন্তব্য, এ জন্য শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল খুবই নিম্নমানের। মাস্টার ট্রেইনারদের অবস্থাও ছিল করুণ।
পরীক্ষা, টেস্ট নাকচ করার ধারণা ঠিক নয়। প্রচলিত পদ্ধতির না হলেও নানা পর্যায়ে ও স্তরে মাস-বছরের লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটা না হলে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, সাহিত্যের বই পড়বে না। পাঠ এড়ানোর প্রবণতা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তারা কম পড়ে, কম পরিশ্রম করে অধিক ফল পেতে চায়। এ জন্য শিক্ষার ধারাবাহিক মান নির্ধারণে এ পদ্ধতি প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বত্রই এ ব্যবস্থা কার্যকর আছে।
৪. বিজ্ঞান শিক্ষায় অধিক গুরুত্বের কথা বলা হলেও, তাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। আগে যে মান-পরিধি ছিল, এখন তাকে আরও নিম্নমানের করা হয়েছে। দেশে এমনিতেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই এর পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য বিভাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলার আগে যেটা বলতে চাই—নতুন কারিকুলামে বিভাগ বিভাজন না থাকলেও, সমস্যা হতো না, যদি বিজ্ঞানের বই তিন খণ্ডে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ পুস্তক হিসেবে থাকত। কিন্তু সেটা নেই। বিজ্ঞান বইয়ের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, অপ্রতুল গাণিতিক প্রশ্ন। গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান শেখা অসম্ভব। জীববিজ্ঞান ও রসায়নেও একই সংকট। পাঠ্যবইয়ে অনুশীলনী না থাকাটা বেমানান।
৫. ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পরিবেশ ও আয়োজন নেই। এ জন্য ব্যাপক অর্থায়ন, প্রস্তুতি, প্রশিক্ষক ও সময়ের প্রয়োজন ছিল। সেটা বিবেচনা করা হয়নি।
৬. প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বের কথা বলা হলেও, মাধ্যমিকে গণিতের পরিসর ও গুরুত্বকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। এখানে একটা বড় বিতর্ক আছে। পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক দক্ষতা না থাকলে, ভালো প্রযুক্তিবিদ কিংবা পদার্থবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়।
৭. শিক্ষার লক্ষ্যের স্থানে-চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সাম্য, মৈত্রীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধারার শিক্ষার যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা বিলুপ্ত করার কোনো কথা নেই। নতুন শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলা হলেও, সেটা মূলত সরকারনিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষার ধারা কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। তারা এই ধারার বাইরেই থেকে যাবে। সে অবস্থা-ব্যবস্থা বজায় রেখে এই নীতি কার্যকর করার বিষয়টি প্রহসন ও রাজনৈতিক বুলিবাগিশ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৮. কোচিংনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হোক, সেটা চাই। কিন্তু তা বন্ধ করতে গণিত-বিজ্ঞানকে অবহেলা করে যেনতেন প্রকারে একটি কারিকুলাম তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোচিং-বাণিজ্য এভাবে বন্ধ হবে না; বরং মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রথম গ্রেডে দিতে হবে।
কোচিং-ব্যবসা কেন রমরমা হচ্ছে? এর কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। এর প্রধান কারণ ভালো শিক্ষকের সংকট। শিক্ষকেরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লাসে পড়ান না। আর যা পড়াচ্ছেন, ছাত্ররা তা বুঝতে পারছে না। তখন শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ না দিলে, এই নীতির বাস্তবায়ন হবে না।
৯. ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, বিশেষায়িত, প্রযুক্তি শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের মধ্য থেকে আবশ্যিক বিষয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
১০. যুগ যুগ ধরে আমরা একটি আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ একই ধরনের শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার দাবি করে আসছি। এমনকি এগুলো আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে ছাত্রদের ১১ দফা এবং নব্বইয়ের ১০ দফার প্রধান দাবি ছিল। কিন্তু সময়োপযোগিতার কথা বলে এই সময়ে এমন এক শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে, যা কেউ দাবি করেনি। আর না চাইতেই যখন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেখানে দুরভিসন্ধি ব্যাপার থাকার সন্দেহ করাটা অমূলক নয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেটা ছাত্রদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি, সেটা তারা মানছে না।
সদ্য ঘোষিত কারিকুলাম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ধারাবাহিক নির্মোহ বিতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে কি এমনটা ঘটেছে? একটি ভালো ব্যবস্থা চালু করার আগে আলাপ-বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই গিনিপিগে পরিণত করা চলবে না।
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। বিষয় ছিল ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন’। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে ‘ওপরমহলের নির্দেশে’ এই আলোচনার নির্ধারিত স্থান আর সি মজুমদার হলের অনুমতি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্কের সামনে থাকবে, এতে যে ভুলত্রুটি, সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও অসংগতি আছে, সেগুলো তুলে ধরবে, সরকারকে বাধ্য করবে নীতির সংশোধন করতে—তা না করে নিজেরাই সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক?
লেখক-গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি।
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি।
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি।
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটা একটা নিয়মিত বিষয়। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে আগাম ভাবনায় সেটা করা সংগত। এটা শুধু নীতিতে নয়, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও কাঠামো তৈরি করাও জরুরি।
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫