Ajker Patrika

বাড়িওয়ালাও পেলেন ভূমিহীনের পাকা ঘর

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
Thumbnail image

বসতভিটায় নির্মাণাধীন সেমি পাকা ঘর। আছে প্রায় পৌনে এক একর ফসলি জমি। নিজেদের আবাদ করা ধানেই সংসারের খাবার জোটে। এমন ব্যক্তিদের ভূমিহীন দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি। অথচ পাশেই ভূমিহীন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির বাস হলেও উপেক্ষিত হয়েছেন তিনি। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিতরণে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, কেউ তথ্য গোপন করে ভূমিহীনের ঘর পেয়ে থাকলে সংশোধন করা হবে।

২৬ এপ্রিল আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ভূমিহীনদের মাঝে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর ও জমি হস্তান্তর করা হয়। তৃতীয় দফায় কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৬৩১ ভূমিহীনকে ঘর দেওয়া হয়। এর মধ্যে উলিপুর উপজেলায় ১৮০ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর উপহার দেওয়া হয়। এসব ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সরেজমিন উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়ন ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

পান্ডুল ইউনিয়নের আপুয়ারখাতা গ্রামে ভূমিহীনের ঘর ও জমি পেয়েছেন শ্যামল চন্দ্র বর্মণ। তাঁর পাশের ঘরটি পেয়েছেন প্রতিবেশী ধনঞ্জয় কুমার বর্মণ। গত বুধবার দুপুরে শ্যামল ও ধনঞ্জয়ের পাওয়া ঘরে গিয়ে প্রথম দফায় তাঁদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, পাশেই তাঁদের বসতবাড়ি। তাঁরা সেখানেই থাকেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে সাংবাদিক এসেছে—এমন খবরে কিছু সময় পর স্ত্রীদের নিয়ে নিজেদের পাওয়া ঘরে আসেন শ্যামল ও ধনঞ্জয়। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার সনদ দেখতে চাইলে তাঁরা উভয়ই নিজেদের স্ত্রীদের মূল বাড়িতে পাঠিয়ে সনদ নিয়ে আসেন। স্থানীয়দের দাবির সত্যতা মেলে। শ্যামল ও ধনঞ্জয় ভূমিহীনদের ঘর ও জমি বরাদ্দের সনদ পেয়েছেন।

শ্যামল জানান, যে জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করে তাঁদের দেওয়া হয়েছে। ওই জমিটি সিএস খতিয়ান মূলে তাঁদের পূর্বপুরুষের। তাঁদের নিজেদের নামে কোনো জমি নেই। এ জন্য পান্ডুল ইউপির তহশিলদার মোহন্ত কুমার সরকার ওই জমিতে ঘর করে তাঁদের দিয়েছেন। তবে স্থানীদের অভিযোগ, শ্যামল ও ধনঞ্জয়ের পৈতৃক ভিটা ও আবাদি জমি রয়েছে। বাড়িতে ইট ও টিনের তৈরি ঘরও রয়েছে।

শ্যামল চন্দ্র বর্মণের বাড়িতে গিয়ে দেওয়া যায়, প্রায় ১০ শতক আয়তনের ভিটেবাড়িতে ইট দিয়ে দুটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। বাড়িতে আছে টিনের তৈরি ঘর। এ বিষয়ে শ্যামলের বাবা কামিনী কান্ত রায় জানান, তাঁর দুই ছেলে। এক ছেলেকে পাশেই জায়গা দিয়েছেন বাড়ি করার। শ্যামল তাঁর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন। তাঁদের বসতভিটার আয়তন প্রায় ১০ শতক। আর আবাদি জমি আছে প্রায় ৮০ শতাংশ।

পৈতৃক জমি থাকার পরও ছেলে শ্যামলের নামে ভূমিহীনের ঘর বরাদ্দের বিষয়ে কামিনী কান্ত বলেন, ‘জমি তো আমার নামে। ছেলের নামে জমি নাই।’ 
বাড়িতে ঘর কে নির্মাণ করছে, এমন প্রশ্নে কামিনী কান্ত বলেন, ‘শ্যামলের ছেলে ঢাকায় কাজ করে। সে টাকা পাঠায় দিছে, সেই টাকায় ঘর তৈরি করা হচ্ছে।’ 
ভূমিহীনের ঘর পাওয়ার বিষয়ে ধনঞ্জয় বলেন, ‘বাড়ি ও জমি বাবার নামে। আমার নিজের নামে কোনো জমি নেই।’

বাবার সম্পদ থাকার পরও সন্তানকে ভূমিহীন বলা যায় কি না এমন প্রশ্নে ধনঞ্জয়ের বাবা করুণা চন্দ্র বর্মণ কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। জানতে চাইলে পান্ডুল ইউপির তহশিলদার মোহন্ত কুমার সরকার বলেন, ‘আমি এসব জানি না। ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছে উপজেলা ভূমিহীন কমিটি।’ইউএনও বিপুল কুমার বলেন, ‘ভূমিহীনদের সনদ দেন চেয়ারম্যানরা, তহশিলদার ও চেয়ারম্যান এগুলো তদন্ত করে আমাদের প্রতিবেদন দেন। শ্যামল ও ধনঞ্জয় বাবার কী পরিমাণ সম্পত্তি আছে, তা আমার জানা নেই। আমরা আবারও তদন্ত করব। তথ্য গোপনের সত্যতা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত