Ajker Patrika

অসম্পূর্ণ চামড়াশিল্প নগর: দায় এড়ানো যাবে না

হাসান মামুন
অসম্পূর্ণ চামড়াশিল্প নগর: দায় এড়ানো যাবে না

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয় ছিল। এর আওতায় হেমায়েতপুরে একটি ‘কমপ্লায়েন্ট’ বা মানসম্মত চামড়াশিল্প নগর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৩ সালে। কিন্তু প্রকল্পটি যথাসময়ে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল এবং তাতে এর ব্যয়ও যাচ্ছিল বেড়ে। এ ধরনের প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণেই লেগে যায় দীর্ঘ সময়। তারপর শিল্পের জন্য জরুরি সেবাগুলো নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জও থাকে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সংস্থাটি এর যোগ্য কি না, সে প্রশ্ন অবশ্য উঠেছে অনেক পরে—যখন প্রায় ২০ বছর লেগে গেল প্রকল্পটি কোনোমতে সম্পন্ন করতে। কথা ছিল, দুই বছরের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে।

চামড়াশিল্প নগর গড়ে তুলতে বিরাট দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি হাজারীবাগের অনিচ্ছুক ট্যানারিগুলোকে ওখানে নিয়ে যাওয়াটাও ছিল চ্যালেঞ্জের। শেষ পর্যন্ত তাদের হেমায়েতপুরে যেতে বাধ্য করা হয় বিদ্যুৎসহ সেবাসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে। কিন্তু ট্যানারিগুলো সেখানে গিয়ে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর পর দেখা গেল, কমপ্লায়েন্ট চামড়াশিল্প নগরের জন্য জরুরি কাজটিই সম্পন্ন হয়নি। যথাযথভাবে হয়নি সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (সিইটিপি) নির্মাণকাজ। এর বাস্তবায়ন নিয়েও হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। চীনা একটি প্রতিষ্ঠানকে এর কাজ দেওয়া হয়েছিল শিল্পনগরটি গড়ে তোলার একপর্যায়ে। আশ্চর্যের কথা, এর পরিকল্পনায় নাকি সিইটিপির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে এর অপরিহার্যতা সামনে এলে ট্যানারির মালিকেরা এটির ব্যয় নির্বাহে সম্মত হননি। সরকার অতঃপর কাঁধে তুলে নেয় এর দায়িত্ব। কিন্তু চীনা ঠিকাদার দফায় দফায় সময় নিয়েও কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করেনি। এ প্রশ্নও ওঠে, এই কাজের তদারকিতে নিয়োজিতরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কি না? আর এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন না করে কীভাবে সরে পড়ল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সেটাও এক রহস্য।

ট্যানারির উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বিশেষত কোরবানির ঈদের পর সারা বছরের কমপক্ষে অর্ধেক পশুর চামড়া একযোগে প্রক্রিয়াজাত করার সময় সিইটিপিটি উৎপাদিত তরল বর্জ্য পরিশোধনে অক্ষম হয়ে পড়ে। কেননা, এর পরিশোধন ক্ষমতা ওই সময়ের চাহিদার প্রায় অর্ধেক। এ অবস্থায় বাকি বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই প্রকৃতিতে নিক্ষেপ করতে হচ্ছে। তাতে যথারীতি দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী। বুড়িগঙ্গা ও এর পার্শ্ববর্তী জনপদকে দূষণ থেকে রক্ষায় ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে নেওয়া হলেও দেখা যাচ্ছে ফলাফল প্রায় অভিন্ন। ট্যানারিতে তৈরি হওয়া কঠিন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনাও ওখানে নিশ্চিত করা যায়নি। কোরবানির ঈদ বাদে অন্য সময় ট্যানারিগুলোয় চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ চলাকালে এ নিয়ে অবশ্য তেমন আলোচনা হতে দেখা যায় না। তখনো কি সিইটিপি তরল বর্জ্য পরিশোধনের চাহিদা পূরণ করতে পারে না? এর কার্যক্রম দেখভালের জন্য নিয়োজিত কোম্পানি কতটা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে, সেটা অবশ্য বলতে পারবে ট্যানারি-সংশ্লিষ্টরাই। তারা বলে চলেছে, আর কয়েক শ কোটি টাকা সরকার খরচ করলেই সিইটিপির অসম্পূর্ণতা দূর করা যাবে। তাতে শিল্পনগরটি কমপ্লায়েন্ট বলে বিবেচিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। মূলত এ কারণেই নাকি বড় বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী সংগঠন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ মিলছে না। এ কারণে ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোয় হেমায়েতপুরের ট্যানারিগুলো পারছে না চামড়া রপ্তানি করতে। বাধ্য হয়ে চীনসহ যেসব দেশে এটা রপ্তানি করতে হচ্ছে, সেখানে প্রাপ্য দামের অর্ধেকও মিলছে না। চামড়াশিল্প নগরের বাইরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই কেবল এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে এবং ভালো দামে পণ্য রপ্তানি করছে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যগুলোয়। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নাকি এই সনদপ্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের কাজটি তাদের করতে হচ্ছে নিজ উদ্যোগে। হেমায়েতপুরে জড়ো হওয়া ট্যানারিগুলোরও অগত্যা এই প্রক্রিয়ায় যাওয়া প্রয়োজন। সেটা হতে পারে নিজেদের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে তোলার মাধ্যমে। 

সরকারের তরফ থেকে বিসিক বলছে, ট্যানারিগুলোর দায়িত্ব রয়েছে কারখানার অভ্যন্তরীণ শর্ত পূরণ করে পশ্চিমা ক্রেতাগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করা। এর মধ্যে শ্রম পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। ট্যানারিতে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি, স্বাস্থ্যঝুঁকি, কর্মঘণ্টা প্রভৃতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যে রাসায়নিক ও পানি ব্যবহৃত হয় ট্যানারিতে, তার মান ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার শর্তও রয়েছে ক্রেতাগোষ্ঠীর। কম পানি ব্যবহৃত হলে তরল বর্জ্যও কম উৎপাদিত হয়; তাতে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ওপর চাপ পড়ে কম। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের বিষয় রয়েছে। আছে নতুন বিনিয়োগের প্রশ্ন। বিনিয়োগের প্রশ্ন এলেই ব্যাংকঋণের প্রসঙ্গ আসে। বেশ কিছু ট্যানারি প্রতিষ্ঠান তো দীর্ঘদিনের ঋণখেলাপি। অবশ্য বলা হয়, হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরের সময় দীর্ঘদিন স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে না পারায় তাদের ঋণখেলাপি হয়ে পড়তে হয়েছে। হাজারীবাগে রেখে আসা তাদের জমির বিষয়টির নিষ্পত্তিও এখন পর্যন্ত করা হয়নি। হেমায়েতপুরেও জমির লিজ আটকে থাকায় ওটাকে বন্ধক রেখে তারা পারছে না নতুন ঋণ নিতে। কোরবানির ঈদ এলে প্রায় প্রতিবার এমন খবরও বেরোয়, ট্যানারিগুলোর হাতে যথেষ্ট অর্থকড়ি নেই কাঁচা চামড়া সংগ্রহের। তাদের কাছে নাকি অনেক পাওনা আটকে আছে আড়তদারদের। আড়তদারদের কাছে আবার টাকাপয়সা পায় রাজধানীসহ প্রত্যন্ত এলাকার চামড়া সংগ্রহকারীরা। এভাবে একটা বকেয়ার চক্রেও ঘুরপাক খাচ্ছে খাতটি। অথচ বেশ কয়েক বছর বলা যায় পানির দামে কোরবানির পশুর চামড়া সংগৃহীত হয়ে অটোমেটিক চলে আসছে হেমায়েতপুরে কেন্দ্রীভূত ট্যানারিগুলোয়। মাঝে তো দাম এত পড়ে গিয়েছিল যে লোকে কোরবানির চামড়া রাস্তায় ফেলে দেয়; গর্তে পুঁতে ফেলে। তখনো অনেক চামড়া নিশ্চয়ই অত্যন্ত কম দামে কিনতে পেরেছিল ট্যানারিগুলো। সেসব প্রক্রিয়াজাত করে তারা নিশ্চয়ই বিক্রি করেছে। দেশেও রয়েছে এর ভালো চাহিদা। জুতাসহ চামড়াপণ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এদের সবাই পশ্চিমে রপ্তানি করতে না পারলেও দেশের বাজারে ঠিকই বিক্রি করতে পারছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আবার পশ্চিমা ক্রেতাগোষ্ঠীর শর্ত মেনে বিদেশি কমপ্লায়েন্ট কারখানা থেকে চামড়া এনে পণ্য বানিয়ে রপ্তানি করছে। এ কারণে পাকা চামড়ার আমদানিও হচ্ছে বেশ। আর এটা হলো দুর্ভাগ্যজনক। পরিবেশসম্মতভাবে কাজটা করা যাচ্ছে না বলে এত সহজলভ্য চামড়ার দেশে উল্টো সেটা আমদানি করতে মূল্যবান বিদেশি মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে।

কোরবানির পশুর একাংশও এখন আর সীমান্তপথে আনতে হয় না। দেশে উৎপাদিত পশু এ সময়ে বরং অবিক্রীত থেকে যায়। সারা বছর জবাই হওয়া গরু-ছাগলও ‘চাহিদামতো’ উৎপাদিত হচ্ছে দেশে। এর চামড়াও কম দামে মিলছে; যেহেতু এগুলো সীমান্তপথে পাচার হতেও পারছে না। পাচার হলে কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ওঠা কমপ্লায়েন্ট কারখানাগুলোয় তা ভালো দামে বিক্রি হতে পারত! এ অবস্থায় অর্থাৎ ‘আবদ্ধ বাজার সুবিধা’ পেয়েও আমাদের সিংহভাগ ট্যানারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশসম্মতভাবে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যর্থ বলে এর ভালো দাম পাচ্ছে না। কমপ্লায়েন্সের ব্যাপারে নন-সিরিয়াস দেশে আধা প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানিতে একরকম অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। এই চামড়া আবার চীনের মতো দেশ থেকে পরিপূর্ণভাবে প্রক্রিয়াজাত হয়ে রপ্তানি হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোয়। এমনকি ঘুরেফিরে চলে আসছে এ দেশে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে! এদিকে বেশ কয়েক বছর কমবেশি এক বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াপণ্য রপ্তানিতে আটকে আছি আমরা। সেখানে চামড়ার হিস্যা আবার কম। এ অবস্থায়ও আমরা অবশ্য স্বপ্ন দেখছি ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানিতে সক্ষম হয়ে ওঠার। এটা অর্জন করা অবশ্য অসম্ভব নয়। কিন্তু সে জন্য তো সরকার ও বেসরকারি খাতকে তার দায়িত্ব বুঝে অবহেলিত কাজগুলো করতে, অর্থাৎ শর্ত পূরণে এগিয়ে আসতে হবে।

গেল কোরবানির ঈদের আগ দিয়ে অবশ্য চামড়া খাতে একটি পৃথক ‘কর্তৃপক্ষ’ গঠনে আইন প্রণয়নের খবর দেওয়া হলো। সেটা হতে কত সময় লাগবে, কে জানে! তবে একটা কর্তৃপক্ষ হলে সম্ভাবনাময় এ খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়াটা হয়তো সহজ হবে। তার আগে অবশ্য এ দায়দায়িত্ব নির্ণয় করা জরুরি যে কেন একটিমাত্র কমপ্লায়েন্ট চামড়াশিল্প নগর গড়ে তুলতে এত কাণ্ড হলো! তারপরও কেন এত ঘাটতি রয়ে গেল, যে কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকা চামড়ার বিশ্ববাজার ধরতে আমরা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ? যে খাতে অনেক বেশি মূল্য সংযোজন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয়ের সুযোগ ছিল—এতগুলো বছরেও কেন আমরা তা নিতে পারলাম না, সেটা কি এড়িয়ে যাওয়ার মতো প্রশ্ন?

লেখক: হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত