মোনায়েম সরকার

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির মুখের ভাষাকে ‘অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা’ দিতেও রাজি ছিল না শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতা বলে বিবেচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পর্যন্ত এই প্রশ্নে অত্যন্ত নেতিবাচক অবস্থান নিলে এই অঞ্চলের ছাত্র ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা।
ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার ধারাবাহিকতায়, এর কয়েক বছর পর, ১৯৫৬ সালে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নেয় পাকিস্তান সরকার। কিন্তু তত দিনে অসন্তোষ চরমে ওঠে, পাকিস্তান সরকারের ওপর আস্থা বিনষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক যে ঘটনা ঘটে, তা হলো ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয় চেতনার উদ্ভব। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, বিশেষত বাঙালিরা তাদের স্বদেশকে দেখতে পায় এবং আবিষ্কার করে নিজেদের অস্তিত্ব। তাই এ কথা বলা হয়ে থাকে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সন্ধান দিয়েছে। তারই প্রভাব লক্ষ করা যায় ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিরাট বিজয়ে। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মুসলিম লীগ বলতে গেলে মুছে যায় এই অঞ্চল থেকে এবং বাঙালির মন থেকেও। শুরু হয় এক নতুন পথচলা।
ভাষা আন্দোলনে জেগে ওঠা চেতনাই আমাদের মধ্যে নিয়ে আসে স্বাধিকারের বোধ। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে এর অবমাননা করতে থাকলে সেটা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আমাদের স্বতন্ত্র ইতিহাস, ঐতিহ্য সামনে চলে আসে ক্রমে। আমাদের নিজস্বতা ও অধিকারের প্রশ্ন প্রবলভাবে উঠে আসতে থাকে সাহিত্যেও। ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার পর তার প্রতিক্রিয়ায় যেসব কবিতা লেখেন এই অঞ্চলের বাঙালি কবিরা, সেগুলো আজও পঠিত হয় গভীর আবেগের সঙ্গে। কেবল নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা নয়, নিজ জনগোষ্ঠীর কল্যাণচিন্তা প্রবলভাবে সামনে আসে এভাবেই। দানা বাঁধতে থাকে স্বায়ত্তশাসনের দাবি। দশকব্যাপী সামরিক শাসন দিয়েও তা দমনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরই মধ্যে চালানো হয় বাঙালির যা কিছু গৌরবের, তাকে খাটো ও বিনষ্ট করার চেষ্টা। মুসলমানিত্বের নামে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকারের চেষ্টা চালানো হলে সেটা বরং বুমেরাং হয়। পূর্ব বাংলার গ্রামীণ সমাজ থেকে উঠে আসা শিক্ষিত সম্প্রদায় নজরুলের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথকেও তার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রধান অবলম্বন বলে ঘোষণা করে। ষাটের দশকজুড়ে বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ চলে পাশাপাশি, কখনো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে। সেটা অবধারিতভাবে আমাদের নিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এ কথা বলা তাই খুব যুক্তিযুক্ত যে, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে স্বাধীনতা তথা স্বাধীন বাংলাদেশ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বিপুলসংখ্যক বাঙালি বসবাস করলেও বাঙালির নিজস্ব দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে দিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাঙালিকে চেনে ও সম্মান দেয়। তারা এ জন্য সম্মান দেয় যে, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালি কেবল আত্মদান করেনি, তাকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিতও করেছে। বিশ্বের মানুষ আজ জানে, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার ভিত্তিতে একটি দেশও প্রতিষ্ঠা করেছে এই অঞ্চলের মানুষ। স্বাধীনতা অর্জনের পর রচিত সংবিধানে তারা সেই রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদকেও স্থান দিয়েছিল, পরে যাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালায় একটি সামরিক সরকার। জাতীয়তা ও নাগরিকতাকে গুলিয়ে ফেলে তারা এ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল নিয়েছিল। কিন্তু মানুষকে বেশি দিন বিভ্রান্ত করে রাখা যায়নি। তারা আবারও ফিরে এসেছে জাতীয়তাবাদের মূল স্রোতে। আমাদের জাতীয় চেতনা আরও শক্তিশালী হয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেশ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরে আসায়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে দেশে। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারও কঠোর মনোভাব নিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। একদা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বর্ণিত দেশটি আজ চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ উন্নতি করেছে কেবল বিদেশে জনশক্তি পাঠিয়ে নয়, বরং দেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করতে পারে বাংলাদেশ, এমনকি নিজস্ব অর্থায়নে। ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট দেশে না খেয়ে কিংবা আধপেটা থাকা জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে। গ্রামেও মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের চিত্রই গেছে বদলে। কৃষি থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পের দিকে এবং এখানে সেবা খাতেরও বিকাশ ঘটে চলেছে। বায়ান্ন ও একাত্তরের শহীদেরা এমন একটি দেশের স্বপ্নই নিশ্চয় দেখেছিলেন।
বাংলাদেশে আমরা প্রত্যাশিত সবকিছু পেয়ে গেছি, সেটা অবশ্য বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার কথাটা শুরুতেই বলতে হয়। শিক্ষার বিস্তার আমরা ঘটাতে পেরেছি সন্দেহ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে তুলতে পেরেছি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও অনেক; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও কম না। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রাথমিক স্তর থেকে বিভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের নতুন প্রজন্মকে একই ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা ভিন্ন প্রকৃতির শিক্ষা পেয়ে জীবন গঠনে এগিয়ে যাওয়ায় সেটা আবার বৈষম্য সৃষ্টির কারণ হচ্ছে। মাতৃভাষাকে শিক্ষার বাহন করব বা সর্বস্তরে বাংলা চালু করব—এটি ছিল আমাদের অঙ্গীকার। সেটা পরিপূরণের জন্য যে সমন্বিত কর্মপ্রয়াস প্রয়োজন, তা আমরা কতখানি নিতে সমর্থ হয়েছি? উচ্চশিক্ষা স্তরে বাংলায় মানসম্মত বইপুস্তক রচনা, এমনকি অনুবাদের কাজে আসলে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছি? ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাসে বইমেলার আয়োজন করে আসছে বাংলা একাডেমি। এই মেলা কালক্রমে অনেক প্রসারিত হয়েছে এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। এ উপলক্ষে সাহিত্যসহ নানা ধরনের বইপত্রও কম প্রকাশিত হচ্ছে না। কিন্তু মানের দিকে লক্ষ করলে অনেক ক্ষেত্রেই কি হতাশ হতে হয় না? ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চলছে অরাজকতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। তবে অনলাইনে বাংলায় লেখালেখি অনেক বেড়েছে। তাতে তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আমাদের প্রয়োজন ইংরেজিসহ বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোয় বাংলায় রচিত উচ্চমানের সাহিত্যের অনুবাদ এবং তা প্রচারের উদ্যোগ। ‘জাতির মননের প্রতীক’ বাংলা একাডেমিকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলা একাডেমি হলো ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল।
একুশে ফেব্রুয়ারি অবশ্য এখন জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এ স্বীকৃতিও আমাদের জন্য গৌরবের। এ ধরনের স্বীকৃতির মর্যাদা রক্ষায় আমাদের আবার নজর দিতে হবে নিজ দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মুখের ভাষা রক্ষায়। তাদের শিশুরা যেন মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে, একই সঙ্গে উন্নয়নের মূল স্রোতে এসে মিশতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবান্বিত যেমন করেছে, তেমনি কিছু কাজে দায়বদ্ধও করে ফেলেছে, যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। নিজ ভাষা ও দেশকে আমরা গৌরবান্বিত করতে পারব না নিজেরা শিক্ষা, সংস্কৃতিতে এগিয়ে যেতে না পারলে এবং উন্নত মানবসম্পদ হয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে। এ ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বৈষম্য দূরীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট এ দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নও নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা যে সাংস্কৃতিক বিভাজন অস্বীকার করে গণতান্ত্রিক চেতনা লালনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছিলাম, সেটা পরিহার করা চলবে না। বিভাজন নয়, বরং ঐক্যের পথেই এগিয়ে যেতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিস্তার এক বড় অন্তরায় এ ক্ষেত্রে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে দেশে এসব পশ্চাৎপদ উপাদান মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার মধ্যে ভিন্ন পথে এগিয়ে যাওয়া কঠিন বৈকি। এই ধারায় অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্পও নেই। বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রশ্নে সুবিধাবাদ ও আপসকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সেটা জাতীয় জীবনে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। এর ফলে একসময় হয়তো দেখা যাবে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলেও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এই লড়াইয়ের মূলে রয়েছে শিক্ষা। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভাজনের বদলে ঐক্যের ভিত্তিকে তাই মজবুত করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক যে, এত অগ্রগতির মধ্যেও রাষ্ট্রীয় অর্থে লিখিত ও মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপ্রত্যাশিত বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাতে বিভাজনের শক্তি উটকো বক্তব্য নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগও পাচ্ছে। এসব বিষয়ে সতর্ক হয়েই পথ চলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের মধ্যে যেন আত্মবিশ্লেষণেরও সুযোগ এনে দেয়। বড় বড় অর্জন নিয়ে উচ্ছ্বসিত আলোচনার নিচে যেন চাপা পড়ে না যায়, যা এখনো অর্জন করা যায়নি কিংবা খর্ব হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির মুখের ভাষাকে ‘অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা’ দিতেও রাজি ছিল না শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতা বলে বিবেচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পর্যন্ত এই প্রশ্নে অত্যন্ত নেতিবাচক অবস্থান নিলে এই অঞ্চলের ছাত্র ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা।
ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার ধারাবাহিকতায়, এর কয়েক বছর পর, ১৯৫৬ সালে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নেয় পাকিস্তান সরকার। কিন্তু তত দিনে অসন্তোষ চরমে ওঠে, পাকিস্তান সরকারের ওপর আস্থা বিনষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক যে ঘটনা ঘটে, তা হলো ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয় চেতনার উদ্ভব। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, বিশেষত বাঙালিরা তাদের স্বদেশকে দেখতে পায় এবং আবিষ্কার করে নিজেদের অস্তিত্ব। তাই এ কথা বলা হয়ে থাকে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সন্ধান দিয়েছে। তারই প্রভাব লক্ষ করা যায় ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিরাট বিজয়ে। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মুসলিম লীগ বলতে গেলে মুছে যায় এই অঞ্চল থেকে এবং বাঙালির মন থেকেও। শুরু হয় এক নতুন পথচলা।
ভাষা আন্দোলনে জেগে ওঠা চেতনাই আমাদের মধ্যে নিয়ে আসে স্বাধিকারের বোধ। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে এর অবমাননা করতে থাকলে সেটা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আমাদের স্বতন্ত্র ইতিহাস, ঐতিহ্য সামনে চলে আসে ক্রমে। আমাদের নিজস্বতা ও অধিকারের প্রশ্ন প্রবলভাবে উঠে আসতে থাকে সাহিত্যেও। ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার পর তার প্রতিক্রিয়ায় যেসব কবিতা লেখেন এই অঞ্চলের বাঙালি কবিরা, সেগুলো আজও পঠিত হয় গভীর আবেগের সঙ্গে। কেবল নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা নয়, নিজ জনগোষ্ঠীর কল্যাণচিন্তা প্রবলভাবে সামনে আসে এভাবেই। দানা বাঁধতে থাকে স্বায়ত্তশাসনের দাবি। দশকব্যাপী সামরিক শাসন দিয়েও তা দমনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরই মধ্যে চালানো হয় বাঙালির যা কিছু গৌরবের, তাকে খাটো ও বিনষ্ট করার চেষ্টা। মুসলমানিত্বের নামে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকারের চেষ্টা চালানো হলে সেটা বরং বুমেরাং হয়। পূর্ব বাংলার গ্রামীণ সমাজ থেকে উঠে আসা শিক্ষিত সম্প্রদায় নজরুলের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথকেও তার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রধান অবলম্বন বলে ঘোষণা করে। ষাটের দশকজুড়ে বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ চলে পাশাপাশি, কখনো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে। সেটা অবধারিতভাবে আমাদের নিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এ কথা বলা তাই খুব যুক্তিযুক্ত যে, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে স্বাধীনতা তথা স্বাধীন বাংলাদেশ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বিপুলসংখ্যক বাঙালি বসবাস করলেও বাঙালির নিজস্ব দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে দিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাঙালিকে চেনে ও সম্মান দেয়। তারা এ জন্য সম্মান দেয় যে, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালি কেবল আত্মদান করেনি, তাকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিতও করেছে। বিশ্বের মানুষ আজ জানে, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার ভিত্তিতে একটি দেশও প্রতিষ্ঠা করেছে এই অঞ্চলের মানুষ। স্বাধীনতা অর্জনের পর রচিত সংবিধানে তারা সেই রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদকেও স্থান দিয়েছিল, পরে যাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালায় একটি সামরিক সরকার। জাতীয়তা ও নাগরিকতাকে গুলিয়ে ফেলে তারা এ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল নিয়েছিল। কিন্তু মানুষকে বেশি দিন বিভ্রান্ত করে রাখা যায়নি। তারা আবারও ফিরে এসেছে জাতীয়তাবাদের মূল স্রোতে। আমাদের জাতীয় চেতনা আরও শক্তিশালী হয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেশ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরে আসায়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে দেশে। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারও কঠোর মনোভাব নিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। একদা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বর্ণিত দেশটি আজ চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ উন্নতি করেছে কেবল বিদেশে জনশক্তি পাঠিয়ে নয়, বরং দেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করতে পারে বাংলাদেশ, এমনকি নিজস্ব অর্থায়নে। ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট দেশে না খেয়ে কিংবা আধপেটা থাকা জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে। গ্রামেও মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের চিত্রই গেছে বদলে। কৃষি থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পের দিকে এবং এখানে সেবা খাতেরও বিকাশ ঘটে চলেছে। বায়ান্ন ও একাত্তরের শহীদেরা এমন একটি দেশের স্বপ্নই নিশ্চয় দেখেছিলেন।
বাংলাদেশে আমরা প্রত্যাশিত সবকিছু পেয়ে গেছি, সেটা অবশ্য বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার কথাটা শুরুতেই বলতে হয়। শিক্ষার বিস্তার আমরা ঘটাতে পেরেছি সন্দেহ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে তুলতে পেরেছি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও অনেক; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও কম না। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রাথমিক স্তর থেকে বিভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের নতুন প্রজন্মকে একই ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা ভিন্ন প্রকৃতির শিক্ষা পেয়ে জীবন গঠনে এগিয়ে যাওয়ায় সেটা আবার বৈষম্য সৃষ্টির কারণ হচ্ছে। মাতৃভাষাকে শিক্ষার বাহন করব বা সর্বস্তরে বাংলা চালু করব—এটি ছিল আমাদের অঙ্গীকার। সেটা পরিপূরণের জন্য যে সমন্বিত কর্মপ্রয়াস প্রয়োজন, তা আমরা কতখানি নিতে সমর্থ হয়েছি? উচ্চশিক্ষা স্তরে বাংলায় মানসম্মত বইপুস্তক রচনা, এমনকি অনুবাদের কাজে আসলে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছি? ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাসে বইমেলার আয়োজন করে আসছে বাংলা একাডেমি। এই মেলা কালক্রমে অনেক প্রসারিত হয়েছে এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। এ উপলক্ষে সাহিত্যসহ নানা ধরনের বইপত্রও কম প্রকাশিত হচ্ছে না। কিন্তু মানের দিকে লক্ষ করলে অনেক ক্ষেত্রেই কি হতাশ হতে হয় না? ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চলছে অরাজকতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। তবে অনলাইনে বাংলায় লেখালেখি অনেক বেড়েছে। তাতে তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আমাদের প্রয়োজন ইংরেজিসহ বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোয় বাংলায় রচিত উচ্চমানের সাহিত্যের অনুবাদ এবং তা প্রচারের উদ্যোগ। ‘জাতির মননের প্রতীক’ বাংলা একাডেমিকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলা একাডেমি হলো ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল।
একুশে ফেব্রুয়ারি অবশ্য এখন জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এ স্বীকৃতিও আমাদের জন্য গৌরবের। এ ধরনের স্বীকৃতির মর্যাদা রক্ষায় আমাদের আবার নজর দিতে হবে নিজ দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মুখের ভাষা রক্ষায়। তাদের শিশুরা যেন মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে, একই সঙ্গে উন্নয়নের মূল স্রোতে এসে মিশতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবান্বিত যেমন করেছে, তেমনি কিছু কাজে দায়বদ্ধও করে ফেলেছে, যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। নিজ ভাষা ও দেশকে আমরা গৌরবান্বিত করতে পারব না নিজেরা শিক্ষা, সংস্কৃতিতে এগিয়ে যেতে না পারলে এবং উন্নত মানবসম্পদ হয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে। এ ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বৈষম্য দূরীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট এ দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নও নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা যে সাংস্কৃতিক বিভাজন অস্বীকার করে গণতান্ত্রিক চেতনা লালনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছিলাম, সেটা পরিহার করা চলবে না। বিভাজন নয়, বরং ঐক্যের পথেই এগিয়ে যেতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিস্তার এক বড় অন্তরায় এ ক্ষেত্রে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে দেশে এসব পশ্চাৎপদ উপাদান মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার মধ্যে ভিন্ন পথে এগিয়ে যাওয়া কঠিন বৈকি। এই ধারায় অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্পও নেই। বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রশ্নে সুবিধাবাদ ও আপসকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সেটা জাতীয় জীবনে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। এর ফলে একসময় হয়তো দেখা যাবে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলেও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এই লড়াইয়ের মূলে রয়েছে শিক্ষা। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভাজনের বদলে ঐক্যের ভিত্তিকে তাই মজবুত করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক যে, এত অগ্রগতির মধ্যেও রাষ্ট্রীয় অর্থে লিখিত ও মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপ্রত্যাশিত বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাতে বিভাজনের শক্তি উটকো বক্তব্য নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগও পাচ্ছে। এসব বিষয়ে সতর্ক হয়েই পথ চলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের মধ্যে যেন আত্মবিশ্লেষণেরও সুযোগ এনে দেয়। বড় বড় অর্জন নিয়ে উচ্ছ্বসিত আলোচনার নিচে যেন চাপা পড়ে না যায়, যা এখনো অর্জন করা যায়নি কিংবা খর্ব হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
মোনায়েম সরকার

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির মুখের ভাষাকে ‘অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা’ দিতেও রাজি ছিল না শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতা বলে বিবেচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পর্যন্ত এই প্রশ্নে অত্যন্ত নেতিবাচক অবস্থান নিলে এই অঞ্চলের ছাত্র ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা।
ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার ধারাবাহিকতায়, এর কয়েক বছর পর, ১৯৫৬ সালে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নেয় পাকিস্তান সরকার। কিন্তু তত দিনে অসন্তোষ চরমে ওঠে, পাকিস্তান সরকারের ওপর আস্থা বিনষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক যে ঘটনা ঘটে, তা হলো ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয় চেতনার উদ্ভব। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, বিশেষত বাঙালিরা তাদের স্বদেশকে দেখতে পায় এবং আবিষ্কার করে নিজেদের অস্তিত্ব। তাই এ কথা বলা হয়ে থাকে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সন্ধান দিয়েছে। তারই প্রভাব লক্ষ করা যায় ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিরাট বিজয়ে। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মুসলিম লীগ বলতে গেলে মুছে যায় এই অঞ্চল থেকে এবং বাঙালির মন থেকেও। শুরু হয় এক নতুন পথচলা।
ভাষা আন্দোলনে জেগে ওঠা চেতনাই আমাদের মধ্যে নিয়ে আসে স্বাধিকারের বোধ। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে এর অবমাননা করতে থাকলে সেটা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আমাদের স্বতন্ত্র ইতিহাস, ঐতিহ্য সামনে চলে আসে ক্রমে। আমাদের নিজস্বতা ও অধিকারের প্রশ্ন প্রবলভাবে উঠে আসতে থাকে সাহিত্যেও। ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার পর তার প্রতিক্রিয়ায় যেসব কবিতা লেখেন এই অঞ্চলের বাঙালি কবিরা, সেগুলো আজও পঠিত হয় গভীর আবেগের সঙ্গে। কেবল নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা নয়, নিজ জনগোষ্ঠীর কল্যাণচিন্তা প্রবলভাবে সামনে আসে এভাবেই। দানা বাঁধতে থাকে স্বায়ত্তশাসনের দাবি। দশকব্যাপী সামরিক শাসন দিয়েও তা দমনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরই মধ্যে চালানো হয় বাঙালির যা কিছু গৌরবের, তাকে খাটো ও বিনষ্ট করার চেষ্টা। মুসলমানিত্বের নামে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকারের চেষ্টা চালানো হলে সেটা বরং বুমেরাং হয়। পূর্ব বাংলার গ্রামীণ সমাজ থেকে উঠে আসা শিক্ষিত সম্প্রদায় নজরুলের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথকেও তার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রধান অবলম্বন বলে ঘোষণা করে। ষাটের দশকজুড়ে বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ চলে পাশাপাশি, কখনো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে। সেটা অবধারিতভাবে আমাদের নিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এ কথা বলা তাই খুব যুক্তিযুক্ত যে, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে স্বাধীনতা তথা স্বাধীন বাংলাদেশ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বিপুলসংখ্যক বাঙালি বসবাস করলেও বাঙালির নিজস্ব দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে দিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাঙালিকে চেনে ও সম্মান দেয়। তারা এ জন্য সম্মান দেয় যে, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালি কেবল আত্মদান করেনি, তাকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিতও করেছে। বিশ্বের মানুষ আজ জানে, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার ভিত্তিতে একটি দেশও প্রতিষ্ঠা করেছে এই অঞ্চলের মানুষ। স্বাধীনতা অর্জনের পর রচিত সংবিধানে তারা সেই রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদকেও স্থান দিয়েছিল, পরে যাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালায় একটি সামরিক সরকার। জাতীয়তা ও নাগরিকতাকে গুলিয়ে ফেলে তারা এ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল নিয়েছিল। কিন্তু মানুষকে বেশি দিন বিভ্রান্ত করে রাখা যায়নি। তারা আবারও ফিরে এসেছে জাতীয়তাবাদের মূল স্রোতে। আমাদের জাতীয় চেতনা আরও শক্তিশালী হয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেশ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরে আসায়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে দেশে। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারও কঠোর মনোভাব নিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। একদা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বর্ণিত দেশটি আজ চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ উন্নতি করেছে কেবল বিদেশে জনশক্তি পাঠিয়ে নয়, বরং দেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করতে পারে বাংলাদেশ, এমনকি নিজস্ব অর্থায়নে। ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট দেশে না খেয়ে কিংবা আধপেটা থাকা জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে। গ্রামেও মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের চিত্রই গেছে বদলে। কৃষি থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পের দিকে এবং এখানে সেবা খাতেরও বিকাশ ঘটে চলেছে। বায়ান্ন ও একাত্তরের শহীদেরা এমন একটি দেশের স্বপ্নই নিশ্চয় দেখেছিলেন।
বাংলাদেশে আমরা প্রত্যাশিত সবকিছু পেয়ে গেছি, সেটা অবশ্য বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার কথাটা শুরুতেই বলতে হয়। শিক্ষার বিস্তার আমরা ঘটাতে পেরেছি সন্দেহ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে তুলতে পেরেছি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও অনেক; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও কম না। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রাথমিক স্তর থেকে বিভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের নতুন প্রজন্মকে একই ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা ভিন্ন প্রকৃতির শিক্ষা পেয়ে জীবন গঠনে এগিয়ে যাওয়ায় সেটা আবার বৈষম্য সৃষ্টির কারণ হচ্ছে। মাতৃভাষাকে শিক্ষার বাহন করব বা সর্বস্তরে বাংলা চালু করব—এটি ছিল আমাদের অঙ্গীকার। সেটা পরিপূরণের জন্য যে সমন্বিত কর্মপ্রয়াস প্রয়োজন, তা আমরা কতখানি নিতে সমর্থ হয়েছি? উচ্চশিক্ষা স্তরে বাংলায় মানসম্মত বইপুস্তক রচনা, এমনকি অনুবাদের কাজে আসলে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছি? ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাসে বইমেলার আয়োজন করে আসছে বাংলা একাডেমি। এই মেলা কালক্রমে অনেক প্রসারিত হয়েছে এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। এ উপলক্ষে সাহিত্যসহ নানা ধরনের বইপত্রও কম প্রকাশিত হচ্ছে না। কিন্তু মানের দিকে লক্ষ করলে অনেক ক্ষেত্রেই কি হতাশ হতে হয় না? ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চলছে অরাজকতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। তবে অনলাইনে বাংলায় লেখালেখি অনেক বেড়েছে। তাতে তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আমাদের প্রয়োজন ইংরেজিসহ বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোয় বাংলায় রচিত উচ্চমানের সাহিত্যের অনুবাদ এবং তা প্রচারের উদ্যোগ। ‘জাতির মননের প্রতীক’ বাংলা একাডেমিকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলা একাডেমি হলো ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল।
একুশে ফেব্রুয়ারি অবশ্য এখন জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এ স্বীকৃতিও আমাদের জন্য গৌরবের। এ ধরনের স্বীকৃতির মর্যাদা রক্ষায় আমাদের আবার নজর দিতে হবে নিজ দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মুখের ভাষা রক্ষায়। তাদের শিশুরা যেন মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে, একই সঙ্গে উন্নয়নের মূল স্রোতে এসে মিশতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবান্বিত যেমন করেছে, তেমনি কিছু কাজে দায়বদ্ধও করে ফেলেছে, যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। নিজ ভাষা ও দেশকে আমরা গৌরবান্বিত করতে পারব না নিজেরা শিক্ষা, সংস্কৃতিতে এগিয়ে যেতে না পারলে এবং উন্নত মানবসম্পদ হয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে। এ ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বৈষম্য দূরীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট এ দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নও নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা যে সাংস্কৃতিক বিভাজন অস্বীকার করে গণতান্ত্রিক চেতনা লালনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছিলাম, সেটা পরিহার করা চলবে না। বিভাজন নয়, বরং ঐক্যের পথেই এগিয়ে যেতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিস্তার এক বড় অন্তরায় এ ক্ষেত্রে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে দেশে এসব পশ্চাৎপদ উপাদান মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার মধ্যে ভিন্ন পথে এগিয়ে যাওয়া কঠিন বৈকি। এই ধারায় অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্পও নেই। বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রশ্নে সুবিধাবাদ ও আপসকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সেটা জাতীয় জীবনে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। এর ফলে একসময় হয়তো দেখা যাবে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলেও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এই লড়াইয়ের মূলে রয়েছে শিক্ষা। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভাজনের বদলে ঐক্যের ভিত্তিকে তাই মজবুত করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক যে, এত অগ্রগতির মধ্যেও রাষ্ট্রীয় অর্থে লিখিত ও মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপ্রত্যাশিত বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাতে বিভাজনের শক্তি উটকো বক্তব্য নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগও পাচ্ছে। এসব বিষয়ে সতর্ক হয়েই পথ চলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের মধ্যে যেন আত্মবিশ্লেষণেরও সুযোগ এনে দেয়। বড় বড় অর্জন নিয়ে উচ্ছ্বসিত আলোচনার নিচে যেন চাপা পড়ে না যায়, যা এখনো অর্জন করা যায়নি কিংবা খর্ব হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির মুখের ভাষাকে ‘অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা’ দিতেও রাজি ছিল না শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতা বলে বিবেচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পর্যন্ত এই প্রশ্নে অত্যন্ত নেতিবাচক অবস্থান নিলে এই অঞ্চলের ছাত্র ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা।
ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার ধারাবাহিকতায়, এর কয়েক বছর পর, ১৯৫৬ সালে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নেয় পাকিস্তান সরকার। কিন্তু তত দিনে অসন্তোষ চরমে ওঠে, পাকিস্তান সরকারের ওপর আস্থা বিনষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক যে ঘটনা ঘটে, তা হলো ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয় চেতনার উদ্ভব। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, বিশেষত বাঙালিরা তাদের স্বদেশকে দেখতে পায় এবং আবিষ্কার করে নিজেদের অস্তিত্ব। তাই এ কথা বলা হয়ে থাকে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সন্ধান দিয়েছে। তারই প্রভাব লক্ষ করা যায় ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিরাট বিজয়ে। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মুসলিম লীগ বলতে গেলে মুছে যায় এই অঞ্চল থেকে এবং বাঙালির মন থেকেও। শুরু হয় এক নতুন পথচলা।
ভাষা আন্দোলনে জেগে ওঠা চেতনাই আমাদের মধ্যে নিয়ে আসে স্বাধিকারের বোধ। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে এর অবমাননা করতে থাকলে সেটা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আমাদের স্বতন্ত্র ইতিহাস, ঐতিহ্য সামনে চলে আসে ক্রমে। আমাদের নিজস্বতা ও অধিকারের প্রশ্ন প্রবলভাবে উঠে আসতে থাকে সাহিত্যেও। ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের ঘটনার পর তার প্রতিক্রিয়ায় যেসব কবিতা লেখেন এই অঞ্চলের বাঙালি কবিরা, সেগুলো আজও পঠিত হয় গভীর আবেগের সঙ্গে। কেবল নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা নয়, নিজ জনগোষ্ঠীর কল্যাণচিন্তা প্রবলভাবে সামনে আসে এভাবেই। দানা বাঁধতে থাকে স্বায়ত্তশাসনের দাবি। দশকব্যাপী সামরিক শাসন দিয়েও তা দমনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরই মধ্যে চালানো হয় বাঙালির যা কিছু গৌরবের, তাকে খাটো ও বিনষ্ট করার চেষ্টা। মুসলমানিত্বের নামে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকারের চেষ্টা চালানো হলে সেটা বরং বুমেরাং হয়। পূর্ব বাংলার গ্রামীণ সমাজ থেকে উঠে আসা শিক্ষিত সম্প্রদায় নজরুলের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথকেও তার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রধান অবলম্বন বলে ঘোষণা করে। ষাটের দশকজুড়ে বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ চলে পাশাপাশি, কখনো একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে। সেটা অবধারিতভাবে আমাদের নিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এ কথা বলা তাই খুব যুক্তিযুক্ত যে, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে স্বাধীনতা তথা স্বাধীন বাংলাদেশ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বিপুলসংখ্যক বাঙালি বসবাস করলেও বাঙালির নিজস্ব দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে দিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাঙালিকে চেনে ও সম্মান দেয়। তারা এ জন্য সম্মান দেয় যে, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালি কেবল আত্মদান করেনি, তাকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিতও করেছে। বিশ্বের মানুষ আজ জানে, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার ভিত্তিতে একটি দেশও প্রতিষ্ঠা করেছে এই অঞ্চলের মানুষ। স্বাধীনতা অর্জনের পর রচিত সংবিধানে তারা সেই রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদকেও স্থান দিয়েছিল, পরে যাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালায় একটি সামরিক সরকার। জাতীয়তা ও নাগরিকতাকে গুলিয়ে ফেলে তারা এ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল নিয়েছিল। কিন্তু মানুষকে বেশি দিন বিভ্রান্ত করে রাখা যায়নি। তারা আবারও ফিরে এসেছে জাতীয়তাবাদের মূল স্রোতে। আমাদের জাতীয় চেতনা আরও শক্তিশালী হয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেশ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরে আসায়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে দেশে। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারও কঠোর মনোভাব নিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। একদা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বর্ণিত দেশটি আজ চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ উন্নতি করেছে কেবল বিদেশে জনশক্তি পাঠিয়ে নয়, বরং দেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করতে পারে বাংলাদেশ, এমনকি নিজস্ব অর্থায়নে। ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট দেশে না খেয়ে কিংবা আধপেটা থাকা জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে। গ্রামেও মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের চিত্রই গেছে বদলে। কৃষি থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে শিল্পের দিকে এবং এখানে সেবা খাতেরও বিকাশ ঘটে চলেছে। বায়ান্ন ও একাত্তরের শহীদেরা এমন একটি দেশের স্বপ্নই নিশ্চয় দেখেছিলেন।
বাংলাদেশে আমরা প্রত্যাশিত সবকিছু পেয়ে গেছি, সেটা অবশ্য বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার কথাটা শুরুতেই বলতে হয়। শিক্ষার বিস্তার আমরা ঘটাতে পেরেছি সন্দেহ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে তুলতে পেরেছি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও অনেক; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও কম না। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রাথমিক স্তর থেকে বিভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের নতুন প্রজন্মকে একই ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা ভিন্ন প্রকৃতির শিক্ষা পেয়ে জীবন গঠনে এগিয়ে যাওয়ায় সেটা আবার বৈষম্য সৃষ্টির কারণ হচ্ছে। মাতৃভাষাকে শিক্ষার বাহন করব বা সর্বস্তরে বাংলা চালু করব—এটি ছিল আমাদের অঙ্গীকার। সেটা পরিপূরণের জন্য যে সমন্বিত কর্মপ্রয়াস প্রয়োজন, তা আমরা কতখানি নিতে সমর্থ হয়েছি? উচ্চশিক্ষা স্তরে বাংলায় মানসম্মত বইপুস্তক রচনা, এমনকি অনুবাদের কাজে আসলে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছি? ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাসে বইমেলার আয়োজন করে আসছে বাংলা একাডেমি। এই মেলা কালক্রমে অনেক প্রসারিত হয়েছে এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। এ উপলক্ষে সাহিত্যসহ নানা ধরনের বইপত্রও কম প্রকাশিত হচ্ছে না। কিন্তু মানের দিকে লক্ষ করলে অনেক ক্ষেত্রেই কি হতাশ হতে হয় না? ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চলছে অরাজকতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। তবে অনলাইনে বাংলায় লেখালেখি অনেক বেড়েছে। তাতে তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। আমাদের প্রয়োজন ইংরেজিসহ বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোয় বাংলায় রচিত উচ্চমানের সাহিত্যের অনুবাদ এবং তা প্রচারের উদ্যোগ। ‘জাতির মননের প্রতীক’ বাংলা একাডেমিকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলা একাডেমি হলো ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল।
একুশে ফেব্রুয়ারি অবশ্য এখন জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এ স্বীকৃতিও আমাদের জন্য গৌরবের। এ ধরনের স্বীকৃতির মর্যাদা রক্ষায় আমাদের আবার নজর দিতে হবে নিজ দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মুখের ভাষা রক্ষায়। তাদের শিশুরা যেন মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে, একই সঙ্গে উন্নয়নের মূল স্রোতে এসে মিশতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবান্বিত যেমন করেছে, তেমনি কিছু কাজে দায়বদ্ধও করে ফেলেছে, যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। নিজ ভাষা ও দেশকে আমরা গৌরবান্বিত করতে পারব না নিজেরা শিক্ষা, সংস্কৃতিতে এগিয়ে যেতে না পারলে এবং উন্নত মানবসম্পদ হয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে। এ ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বৈষম্য দূরীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের ধারায় সৃষ্ট এ দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নও নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা যে সাংস্কৃতিক বিভাজন অস্বীকার করে গণতান্ত্রিক চেতনা লালনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছিলাম, সেটা পরিহার করা চলবে না। বিভাজন নয়, বরং ঐক্যের পথেই এগিয়ে যেতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিস্তার এক বড় অন্তরায় এ ক্ষেত্রে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে দেশে এসব পশ্চাৎপদ উপাদান মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার মধ্যে ভিন্ন পথে এগিয়ে যাওয়া কঠিন বৈকি। এই ধারায় অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্পও নেই। বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রশ্নে সুবিধাবাদ ও আপসকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সেটা জাতীয় জীবনে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। এর ফলে একসময় হয়তো দেখা যাবে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলেও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এই লড়াইয়ের মূলে রয়েছে শিক্ষা। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভাজনের বদলে ঐক্যের ভিত্তিকে তাই মজবুত করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক যে, এত অগ্রগতির মধ্যেও রাষ্ট্রীয় অর্থে লিখিত ও মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপ্রত্যাশিত বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাতে বিভাজনের শক্তি উটকো বক্তব্য নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগও পাচ্ছে। এসব বিষয়ে সতর্ক হয়েই পথ চলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের মধ্যে যেন আত্মবিশ্লেষণেরও সুযোগ এনে দেয়। বড় বড় অর্জন নিয়ে উচ্ছ্বসিত আলোচনার নিচে যেন চাপা পড়ে না যায়, যা এখনো অর্জন করা যায়নি কিংবা খর্ব হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবাহী মাস ফেব্রুয়ারি এসে গেছে আমাদের মাঝে। এই মাসজুড়েই আমরা স্মরণ করি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে যাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালির
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫