Ajker Patrika

ইউরোপে চাকরির কথা বলে ভারতে পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৩৬
ইউরোপে চাকরির কথা বলে ভারতে পাচার

ভারতেই থেমে যায় জাহাঙ্গীরের অস্ট্রেলিয়াযাত্রার স্বপ্ন। ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা পাওয়া সহজ, তাই এখন ভারতেই যেতে হবে আগে—এমন কথা বলে তারা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রতারণা করে। জাহাঙ্গীরের ভাগনে আকাশকেও ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে একইভাবে ভারতে পাঠায় তারা। এই দুজনকে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে দুই দফায় ১৪ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ভারতের কলকাতায় যাওয়ার পর চিত্র পাল্টে যায়। ওদের আটকে রেখে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। এমনকি পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে পরে আরও ৯ লাখ টাকা নিয়ে নেয়। জাহাঙ্গীর কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে পারলেও আটকে যান আকাশ।

এই ঘটনায় জড়িত থাকায় একটি মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, নকল ভিসা ও বিভিন্ন দলিলপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানায় র‍্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক ও ডিআইজি মোজাম্মেল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চক্রের বাংলাদেশের হোতা মল্লিক রেজাউল হক ওরফে সেলিম (৬২), তাঁর সহযোগী মো. বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)।

মোজাম্মেল হক বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে জাহাঙ্গীর নামে একজনকে ভারতে পাচার করে দেয় এই চক্রটি। পাচারের পর জাহাঙ্গীরকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বেশ কিছুদিন আটকে নির্যাতন করে বাংলাদেশে থাকা তাঁর পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে চক্রটি।

সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে দেশে এসে জাহাঙ্গীর র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক বরাবর মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি মানব পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে কীভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়েছিলেন, আটক অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন ইত্যাদি ঘটনার বর্ণনা দেন। এরপর তদন্ত শুরু করে র‍্যাব।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে চক্রটির আরও পাঁচ থেকে সাতজন সহযোগী আছেন। তা ছাড়া, ভারতেও তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, কয়েক বছর ধরে এই চক্রটি সক্রিয়ভাবে মানব পাচারের মতো অপরাধ করে আসছে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদেশ গমনপ্রত্যাশী নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে। তাঁদের অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স এবং মাল্টায় উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। এরপর তাঁদের বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হয়।

মোজাম্মেল হক জানান, চক্রটি ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক সংগ্রহ করত। পরে তাঁদের ইউরোপের প্রলোভন দেখাত। চক্রটি অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপে চাকরি দেওয়ার নামে প্রথমে ১২-১৫ লাখ, এরপর ভারতে আটক রেখে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চায় ১৫-২০ লাখ টাকা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত