মনিরা শরমিন

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে আশপাশে দেখছি না। অগত্যা নিজেই দরজা ঠেলে হলে প্রবেশ করলাম। ভেতরে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার, পর্দার আলোটা পর্যন্ত জ্বলেনি তখনো। চোখে অন্ধকার সয়ে এলে দেখি, পুরো প্রেক্ষাগৃহে আর কোনো মানুষ নেই। আমি চিৎকার করে উঠি, ‘কেউ কি আছেন?’ খুব সামনে থেকে কে একজন বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আছি।’ আমার আতঙ্কের বোধ যায় না। এক হাতে টিকিট, আর অন্য হাতে ফোন নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। না এমন নয় যে শুধু এই অদ্ভুত আঁধারে একাকিত্বের অনুভূতি আমাকে সন্ত্রস্ত করে তোলে, বরং রাজধানীর কেন্দ্রের এক প্রেক্ষাগৃহে এই দর্শকহীনতা আমার মধ্যে এক দ্বিধার বোধ হাজির করে।
পরে লিখতে বসে আমার মনে হতে থাকে, আমাদের দেশি চলচ্চিত্রও আদতে এ মুহূর্তে সেদিনের আমার মতো একটি দোলাচলের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। যে দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে বিগত দুই দশকের দেশি চলচ্চিত্র, নিজ ইন্ডাস্ট্রি, এর অন্তর্বর্তী সংস্কৃতি-মানুষসহ সবকিছুকেই কারণে অথবা অকারণে খারিজ করার চর্চা, ইন্ডাস্ট্রির মানুষের একটি বিশাল অংশের অদক্ষতা, অসততা, কালোটাকা সাদা করার হাতিয়ার হিসেবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহার, মূল এবং বিকল্পধারার দ্বন্দ্ব, সেন্সরশিপের খড়্গ এবং সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের ইতিহাস। আর সামনে রয়েছে একঝাঁক স্বপ্নবাজ এবং কুশলী তরুণ নির্মাতা, নতুন গল্প, দক্ষ অভিনয়শিল্পী, নতুন নির্মাণ পদ্ধতির প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক সম্মাননা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাধ্যম হিসেবে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব। ফলে এখন হিসাব কষার সময় এসেছে।
আমরা এত দিন জেনেছি, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ঝুলিতে তেমন কোনো অর্জন নেই। এমনকি অলটাইম ব্লকব্লাস্টার বলতে যা ধরে নেওয়া হয়, তেমন কোনো চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়নি এই সময়টাতে। আমরা জেনেছি, বিগত ২০ বছরে সুপারহিট সিনেমা হাতে গুনলে মনপুরা (২০০৯), আয়নাবাজি (২০১৬), শিকারি (২০১৬), পোড়ামন ২ (২০১৮)-এর মতো মাত্র ১০-১২টার বেশি হবে না।
চলতি বছর ভারতে কোভিড মহামারির প্রকোপ কমতেই সে দেশের প্রায় ৪১% নাগরিক প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন এবং দেখছেনও। বাংলাদেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ২০ বছরে ১ হাজার ২৩৫ থেকে মাত্র ৬০-এ এসে থেমেছে। সব মিলিয়ে এমনই বিপন্ন বিষণ্ন ক্লিশে আলাপে আটকে গেছে দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক কথামালা।
এত নেতিবাচক আলাপের ভিড়েও ২০২১ সালে বিভিন্ন কারণে চলচ্চিত্রে দিনবদলের চিহ্ন চোখে পড়ে। যদিও কোভিডের প্রথম বছর; অর্থাৎ, ২০২০ সালে দেশি চলচ্চিত্রে স্মরণকালের মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। টানা আট মাস প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ২০২০ সালে তানভীর মোকাম্মেলের ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ এবং চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’সহ প্রায় ১২টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও কোনোটি ব্যবসাসফল হয়নি। আর এরপরই ২০২১ সালের হাত ধরে কিছুটা স্বপ্ন, আশা আর বিকল্প বাতাস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় নতুন জমানার নতুন ধরনের চলচ্চিত্র।
ওটিটি ও দেশি কনটেন্ট: বাঁকবদলের আভাস
কোভিড মহামারি সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। এ সময় চলচ্চিত্রের জগতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। সারা পৃথিবীতে ওটিটির (ওভার দ্য টপ) বাজারের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। এর অবস্থান বাংলাদেশেও রমরমা হয়ে উঠছে। পরিবর্তিত মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার দর্শকের শ্রেণিতেও পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রমিক নয়, বরং মধ্যবিত্ত শ্রেণি হয়ে উঠছে চলচ্চিত্রের প্রথম দর্শক। বিজ্ঞাপনবিহীন আর স্বল্প খরচে দেখা যায় বলে দর্শকের পছন্দের তালিকায় ওটিটি এখন প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। বর্তমানে মোটামুটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা অন্তত ১০টি।
২০২০ সালে হইচই-তে প্রচারিত ‘তকদীর’ এবং বিঞ্জ-এ ‘আগস্ট ২৪’-এর মধ্য দিয়ে জনগণ দেশি সিরিজের প্রতি আলাদা মনোযোগ দিতে শুরু করে। কোভিড মহামারি চলাকালে এবং এর পরবর্তী সময়ে হইচই, নেটফ্লিক্স, জি ফাইভ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম দেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে চরকি-এর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। প্ল্যাটফর্মটির ‘ঊনলৌকিক’ (২০২১) ‘জাগো বাহে’ (২০২১) ‘নিখোঁজ’ (২০২২)-সহ নুহাশ হুমায়ূনের হরর সিরিজ ‘ষ’ (২০২২) দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপমা চোপড়া তাঁর রিভিউয়ে বাংলা সেরা ওয়েব সিরিজের তালিকায় চরকির ‘ঊনলৌকিক’-এর কথা বলেছেন। শিবব্রত বর্মনের গল্পে রবিউল আলম রবি পরিচালিত এই সাইকো থ্রিলার এনথোলজির প্রথম মৌসুমে রয়েছে পাঁচটি গল্প।
এ ছাড়া সম্পূর্ণ রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায়, আঞ্চলিক শিল্পীদের নিয়ে বানানো ফিল্ম নোয়ার জনরার সিরিজ ‘শাটিকাপ’ (২০২২) বোদ্ধাশ্রেণিকে সম্পূর্ণ নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এরই পরম্পরায় আমরা চরকিতে সম্প্রতি মুক্তি পেতে দেখি, বাগেরহাটের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সাহস’ (২০২২)। তবে ‘শাটিকাপ’ থেকে এর নির্মাণ আলাদা।
অন্যদিকে, ওটিটির জন্যও নতুন নীতিমালা গৃহীত হতে যাচ্ছে, যাতে করে ওটিটি মাধ্যমেও সিরিজ, সিনেমা এবং যাবতীয় অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট নির্মাণে নির্মাতাদের স্বাধীনতা আগের থেকে কমবে বলে মনে করা হচ্ছে, যার জলজ্যান্ত উদাহরণ সাজ্জাদ খান পরিচালিত সাহস (২০২২)।
এ ছাড়া আশফাক নিপুণের ‘সাবরিনা’ (২০২২) এবং ‘মহানগর’ (২০২১), ইমতিয়াজ সজীবের ‘রিফিউজি’ (২০২২), মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ (২০২১) সিরিজগুলো নারীকেন্দ্রিক, রাজনৈতিক এবং সংখ্যালঘু মানুষদের নিয়ে করা ভিন্নধর্মী গল্প ও বয়ানরীতির জন্য দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র
করোনা-পরবর্তীকালে যেমন নয়া মাধ্যম দেশি চলচ্চিত্রের বড় একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তেমনি এই সময়টাতে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ নির্মাতা তাঁদের চলচ্চিত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশ্বদরবারে। বিগত বছরে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ (২০২১) বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম কানে অফিশিয়াল মনোনয়ন পায়। সিনেমাটি এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডেও (অ্যাপসা) যৌথভাবে গ্র্যান্ড জুরি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এদিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ (২০২১) চলচ্চিত্র নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব কায়রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। চলচ্চিত্রটি বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ও ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এনএফডিসি) থেকেও সম্মাননা পায়। গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে প্রদর্শিত হয় রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’ (২০২১)। রাশেদ এন চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ‘চন্দ্রাবতী কথা’ (২০২১)। একাধিক দেশজ ফর্ম ব্যবহার করে নির্মিত চলচ্চিত্রটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। আর প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব টরন্টোতে প্রদর্শিত হয়।
এই চলচ্চিত্রগুলোর বিকল্প গল্প এবং বয়ানরীতি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সার্বিক পরিসরে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। খুব নিকট না হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের চলচ্চিত্রের হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রের বাঁকবদলের আশা আমরা করতেই পারি।
শেষের কথা
সময়টা এখনো দেশি চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ অনুকূলে নেই। সিনেমা হলের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। দর্শকও হলবিমুখ। অনেকেই আবার বলছেন, নারী দর্শক বাড়াতে হবে। কারণ হিসেবে জানাচ্ছেন, নারীরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে হলে যেতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। এদিকে বরাদ্দ থাকলেও বিগত দুই বছরে কোনো ডকুমেন্টারি ফিল্মই সরকারি অনুদানের জন্য মনোনীত হয়নি। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলোই বারবার সরকারি অনুদান পাচ্ছে বলে কথা উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিকল্পধারার চলচ্চিত্রগুলোকে অনুদান এবং বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রকে সরকারি প্রণোদনা বা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই সংকট নিরসনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
চলচ্চিত্র বাঁচাতে গ্রাম-বাংলার আপামর মানুষের গল্প, নিজস্ব বয়ানরীতি, আর একটি সংগঠিত ইন্ডাস্ট্রি এখন সময়ের দাবি। আমরা সবাই জানি, অত্যন্ত অল্প পুঁজি এবং যান্ত্রিক সহায়তা নিয়ে একঝাঁক দেশি তরুণ বিশ্বজয়ের সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সফলও হচ্ছেন তাঁরা। কে বলতে পারে, আরেকটু সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সব দোলাচলকে অতিক্রম করে এই তরুণদের হাত ধরেই পাল্টে যেতে পারে দেশি চলচ্চিত্রের গতিপথ। তখন হয়তো বাংলা ছবির এই বিষণ্নতার বয়ানগুলো বিস্মৃত হবে, আর বিশ্ব আমাদের চিনবে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ফিনিক্স পাখির মতো উত্থানের গল্পের জন্য।
লেখক: শিক্ষক ও চলচ্চিত্র সমালোচক

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে আশপাশে দেখছি না। অগত্যা নিজেই দরজা ঠেলে হলে প্রবেশ করলাম। ভেতরে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার, পর্দার আলোটা পর্যন্ত জ্বলেনি তখনো। চোখে অন্ধকার সয়ে এলে দেখি, পুরো প্রেক্ষাগৃহে আর কোনো মানুষ নেই। আমি চিৎকার করে উঠি, ‘কেউ কি আছেন?’ খুব সামনে থেকে কে একজন বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আছি।’ আমার আতঙ্কের বোধ যায় না। এক হাতে টিকিট, আর অন্য হাতে ফোন নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। না এমন নয় যে শুধু এই অদ্ভুত আঁধারে একাকিত্বের অনুভূতি আমাকে সন্ত্রস্ত করে তোলে, বরং রাজধানীর কেন্দ্রের এক প্রেক্ষাগৃহে এই দর্শকহীনতা আমার মধ্যে এক দ্বিধার বোধ হাজির করে।
পরে লিখতে বসে আমার মনে হতে থাকে, আমাদের দেশি চলচ্চিত্রও আদতে এ মুহূর্তে সেদিনের আমার মতো একটি দোলাচলের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। যে দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে বিগত দুই দশকের দেশি চলচ্চিত্র, নিজ ইন্ডাস্ট্রি, এর অন্তর্বর্তী সংস্কৃতি-মানুষসহ সবকিছুকেই কারণে অথবা অকারণে খারিজ করার চর্চা, ইন্ডাস্ট্রির মানুষের একটি বিশাল অংশের অদক্ষতা, অসততা, কালোটাকা সাদা করার হাতিয়ার হিসেবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহার, মূল এবং বিকল্পধারার দ্বন্দ্ব, সেন্সরশিপের খড়্গ এবং সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের ইতিহাস। আর সামনে রয়েছে একঝাঁক স্বপ্নবাজ এবং কুশলী তরুণ নির্মাতা, নতুন গল্প, দক্ষ অভিনয়শিল্পী, নতুন নির্মাণ পদ্ধতির প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক সম্মাননা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাধ্যম হিসেবে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব। ফলে এখন হিসাব কষার সময় এসেছে।
আমরা এত দিন জেনেছি, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ঝুলিতে তেমন কোনো অর্জন নেই। এমনকি অলটাইম ব্লকব্লাস্টার বলতে যা ধরে নেওয়া হয়, তেমন কোনো চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়নি এই সময়টাতে। আমরা জেনেছি, বিগত ২০ বছরে সুপারহিট সিনেমা হাতে গুনলে মনপুরা (২০০৯), আয়নাবাজি (২০১৬), শিকারি (২০১৬), পোড়ামন ২ (২০১৮)-এর মতো মাত্র ১০-১২টার বেশি হবে না।
চলতি বছর ভারতে কোভিড মহামারির প্রকোপ কমতেই সে দেশের প্রায় ৪১% নাগরিক প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন এবং দেখছেনও। বাংলাদেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ২০ বছরে ১ হাজার ২৩৫ থেকে মাত্র ৬০-এ এসে থেমেছে। সব মিলিয়ে এমনই বিপন্ন বিষণ্ন ক্লিশে আলাপে আটকে গেছে দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক কথামালা।
এত নেতিবাচক আলাপের ভিড়েও ২০২১ সালে বিভিন্ন কারণে চলচ্চিত্রে দিনবদলের চিহ্ন চোখে পড়ে। যদিও কোভিডের প্রথম বছর; অর্থাৎ, ২০২০ সালে দেশি চলচ্চিত্রে স্মরণকালের মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। টানা আট মাস প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ২০২০ সালে তানভীর মোকাম্মেলের ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ এবং চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’সহ প্রায় ১২টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও কোনোটি ব্যবসাসফল হয়নি। আর এরপরই ২০২১ সালের হাত ধরে কিছুটা স্বপ্ন, আশা আর বিকল্প বাতাস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় নতুন জমানার নতুন ধরনের চলচ্চিত্র।
ওটিটি ও দেশি কনটেন্ট: বাঁকবদলের আভাস
কোভিড মহামারি সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। এ সময় চলচ্চিত্রের জগতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। সারা পৃথিবীতে ওটিটির (ওভার দ্য টপ) বাজারের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। এর অবস্থান বাংলাদেশেও রমরমা হয়ে উঠছে। পরিবর্তিত মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার দর্শকের শ্রেণিতেও পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রমিক নয়, বরং মধ্যবিত্ত শ্রেণি হয়ে উঠছে চলচ্চিত্রের প্রথম দর্শক। বিজ্ঞাপনবিহীন আর স্বল্প খরচে দেখা যায় বলে দর্শকের পছন্দের তালিকায় ওটিটি এখন প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। বর্তমানে মোটামুটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা অন্তত ১০টি।
২০২০ সালে হইচই-তে প্রচারিত ‘তকদীর’ এবং বিঞ্জ-এ ‘আগস্ট ২৪’-এর মধ্য দিয়ে জনগণ দেশি সিরিজের প্রতি আলাদা মনোযোগ দিতে শুরু করে। কোভিড মহামারি চলাকালে এবং এর পরবর্তী সময়ে হইচই, নেটফ্লিক্স, জি ফাইভ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম দেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে চরকি-এর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। প্ল্যাটফর্মটির ‘ঊনলৌকিক’ (২০২১) ‘জাগো বাহে’ (২০২১) ‘নিখোঁজ’ (২০২২)-সহ নুহাশ হুমায়ূনের হরর সিরিজ ‘ষ’ (২০২২) দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপমা চোপড়া তাঁর রিভিউয়ে বাংলা সেরা ওয়েব সিরিজের তালিকায় চরকির ‘ঊনলৌকিক’-এর কথা বলেছেন। শিবব্রত বর্মনের গল্পে রবিউল আলম রবি পরিচালিত এই সাইকো থ্রিলার এনথোলজির প্রথম মৌসুমে রয়েছে পাঁচটি গল্প।
এ ছাড়া সম্পূর্ণ রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায়, আঞ্চলিক শিল্পীদের নিয়ে বানানো ফিল্ম নোয়ার জনরার সিরিজ ‘শাটিকাপ’ (২০২২) বোদ্ধাশ্রেণিকে সম্পূর্ণ নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এরই পরম্পরায় আমরা চরকিতে সম্প্রতি মুক্তি পেতে দেখি, বাগেরহাটের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সাহস’ (২০২২)। তবে ‘শাটিকাপ’ থেকে এর নির্মাণ আলাদা।
অন্যদিকে, ওটিটির জন্যও নতুন নীতিমালা গৃহীত হতে যাচ্ছে, যাতে করে ওটিটি মাধ্যমেও সিরিজ, সিনেমা এবং যাবতীয় অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট নির্মাণে নির্মাতাদের স্বাধীনতা আগের থেকে কমবে বলে মনে করা হচ্ছে, যার জলজ্যান্ত উদাহরণ সাজ্জাদ খান পরিচালিত সাহস (২০২২)।
এ ছাড়া আশফাক নিপুণের ‘সাবরিনা’ (২০২২) এবং ‘মহানগর’ (২০২১), ইমতিয়াজ সজীবের ‘রিফিউজি’ (২০২২), মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ (২০২১) সিরিজগুলো নারীকেন্দ্রিক, রাজনৈতিক এবং সংখ্যালঘু মানুষদের নিয়ে করা ভিন্নধর্মী গল্প ও বয়ানরীতির জন্য দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র
করোনা-পরবর্তীকালে যেমন নয়া মাধ্যম দেশি চলচ্চিত্রের বড় একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তেমনি এই সময়টাতে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ নির্মাতা তাঁদের চলচ্চিত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশ্বদরবারে। বিগত বছরে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ (২০২১) বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম কানে অফিশিয়াল মনোনয়ন পায়। সিনেমাটি এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডেও (অ্যাপসা) যৌথভাবে গ্র্যান্ড জুরি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এদিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ (২০২১) চলচ্চিত্র নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব কায়রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। চলচ্চিত্রটি বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ও ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এনএফডিসি) থেকেও সম্মাননা পায়। গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে প্রদর্শিত হয় রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’ (২০২১)। রাশেদ এন চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ‘চন্দ্রাবতী কথা’ (২০২১)। একাধিক দেশজ ফর্ম ব্যবহার করে নির্মিত চলচ্চিত্রটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। আর প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব টরন্টোতে প্রদর্শিত হয়।
এই চলচ্চিত্রগুলোর বিকল্প গল্প এবং বয়ানরীতি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সার্বিক পরিসরে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। খুব নিকট না হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের চলচ্চিত্রের হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রের বাঁকবদলের আশা আমরা করতেই পারি।
শেষের কথা
সময়টা এখনো দেশি চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ অনুকূলে নেই। সিনেমা হলের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। দর্শকও হলবিমুখ। অনেকেই আবার বলছেন, নারী দর্শক বাড়াতে হবে। কারণ হিসেবে জানাচ্ছেন, নারীরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে হলে যেতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। এদিকে বরাদ্দ থাকলেও বিগত দুই বছরে কোনো ডকুমেন্টারি ফিল্মই সরকারি অনুদানের জন্য মনোনীত হয়নি। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলোই বারবার সরকারি অনুদান পাচ্ছে বলে কথা উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিকল্পধারার চলচ্চিত্রগুলোকে অনুদান এবং বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রকে সরকারি প্রণোদনা বা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই সংকট নিরসনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
চলচ্চিত্র বাঁচাতে গ্রাম-বাংলার আপামর মানুষের গল্প, নিজস্ব বয়ানরীতি, আর একটি সংগঠিত ইন্ডাস্ট্রি এখন সময়ের দাবি। আমরা সবাই জানি, অত্যন্ত অল্প পুঁজি এবং যান্ত্রিক সহায়তা নিয়ে একঝাঁক দেশি তরুণ বিশ্বজয়ের সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সফলও হচ্ছেন তাঁরা। কে বলতে পারে, আরেকটু সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সব দোলাচলকে অতিক্রম করে এই তরুণদের হাত ধরেই পাল্টে যেতে পারে দেশি চলচ্চিত্রের গতিপথ। তখন হয়তো বাংলা ছবির এই বিষণ্নতার বয়ানগুলো বিস্মৃত হবে, আর বিশ্ব আমাদের চিনবে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ফিনিক্স পাখির মতো উত্থানের গল্পের জন্য।
লেখক: শিক্ষক ও চলচ্চিত্র সমালোচক
মনিরা শরমিন

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে আশপাশে দেখছি না। অগত্যা নিজেই দরজা ঠেলে হলে প্রবেশ করলাম। ভেতরে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার, পর্দার আলোটা পর্যন্ত জ্বলেনি তখনো। চোখে অন্ধকার সয়ে এলে দেখি, পুরো প্রেক্ষাগৃহে আর কোনো মানুষ নেই। আমি চিৎকার করে উঠি, ‘কেউ কি আছেন?’ খুব সামনে থেকে কে একজন বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আছি।’ আমার আতঙ্কের বোধ যায় না। এক হাতে টিকিট, আর অন্য হাতে ফোন নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। না এমন নয় যে শুধু এই অদ্ভুত আঁধারে একাকিত্বের অনুভূতি আমাকে সন্ত্রস্ত করে তোলে, বরং রাজধানীর কেন্দ্রের এক প্রেক্ষাগৃহে এই দর্শকহীনতা আমার মধ্যে এক দ্বিধার বোধ হাজির করে।
পরে লিখতে বসে আমার মনে হতে থাকে, আমাদের দেশি চলচ্চিত্রও আদতে এ মুহূর্তে সেদিনের আমার মতো একটি দোলাচলের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। যে দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে বিগত দুই দশকের দেশি চলচ্চিত্র, নিজ ইন্ডাস্ট্রি, এর অন্তর্বর্তী সংস্কৃতি-মানুষসহ সবকিছুকেই কারণে অথবা অকারণে খারিজ করার চর্চা, ইন্ডাস্ট্রির মানুষের একটি বিশাল অংশের অদক্ষতা, অসততা, কালোটাকা সাদা করার হাতিয়ার হিসেবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহার, মূল এবং বিকল্পধারার দ্বন্দ্ব, সেন্সরশিপের খড়্গ এবং সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের ইতিহাস। আর সামনে রয়েছে একঝাঁক স্বপ্নবাজ এবং কুশলী তরুণ নির্মাতা, নতুন গল্প, দক্ষ অভিনয়শিল্পী, নতুন নির্মাণ পদ্ধতির প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক সম্মাননা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাধ্যম হিসেবে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব। ফলে এখন হিসাব কষার সময় এসেছে।
আমরা এত দিন জেনেছি, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ঝুলিতে তেমন কোনো অর্জন নেই। এমনকি অলটাইম ব্লকব্লাস্টার বলতে যা ধরে নেওয়া হয়, তেমন কোনো চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়নি এই সময়টাতে। আমরা জেনেছি, বিগত ২০ বছরে সুপারহিট সিনেমা হাতে গুনলে মনপুরা (২০০৯), আয়নাবাজি (২০১৬), শিকারি (২০১৬), পোড়ামন ২ (২০১৮)-এর মতো মাত্র ১০-১২টার বেশি হবে না।
চলতি বছর ভারতে কোভিড মহামারির প্রকোপ কমতেই সে দেশের প্রায় ৪১% নাগরিক প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন এবং দেখছেনও। বাংলাদেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ২০ বছরে ১ হাজার ২৩৫ থেকে মাত্র ৬০-এ এসে থেমেছে। সব মিলিয়ে এমনই বিপন্ন বিষণ্ন ক্লিশে আলাপে আটকে গেছে দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক কথামালা।
এত নেতিবাচক আলাপের ভিড়েও ২০২১ সালে বিভিন্ন কারণে চলচ্চিত্রে দিনবদলের চিহ্ন চোখে পড়ে। যদিও কোভিডের প্রথম বছর; অর্থাৎ, ২০২০ সালে দেশি চলচ্চিত্রে স্মরণকালের মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। টানা আট মাস প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ২০২০ সালে তানভীর মোকাম্মেলের ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ এবং চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’সহ প্রায় ১২টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও কোনোটি ব্যবসাসফল হয়নি। আর এরপরই ২০২১ সালের হাত ধরে কিছুটা স্বপ্ন, আশা আর বিকল্প বাতাস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় নতুন জমানার নতুন ধরনের চলচ্চিত্র।
ওটিটি ও দেশি কনটেন্ট: বাঁকবদলের আভাস
কোভিড মহামারি সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। এ সময় চলচ্চিত্রের জগতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। সারা পৃথিবীতে ওটিটির (ওভার দ্য টপ) বাজারের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। এর অবস্থান বাংলাদেশেও রমরমা হয়ে উঠছে। পরিবর্তিত মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার দর্শকের শ্রেণিতেও পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রমিক নয়, বরং মধ্যবিত্ত শ্রেণি হয়ে উঠছে চলচ্চিত্রের প্রথম দর্শক। বিজ্ঞাপনবিহীন আর স্বল্প খরচে দেখা যায় বলে দর্শকের পছন্দের তালিকায় ওটিটি এখন প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। বর্তমানে মোটামুটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা অন্তত ১০টি।
২০২০ সালে হইচই-তে প্রচারিত ‘তকদীর’ এবং বিঞ্জ-এ ‘আগস্ট ২৪’-এর মধ্য দিয়ে জনগণ দেশি সিরিজের প্রতি আলাদা মনোযোগ দিতে শুরু করে। কোভিড মহামারি চলাকালে এবং এর পরবর্তী সময়ে হইচই, নেটফ্লিক্স, জি ফাইভ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম দেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে চরকি-এর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। প্ল্যাটফর্মটির ‘ঊনলৌকিক’ (২০২১) ‘জাগো বাহে’ (২০২১) ‘নিখোঁজ’ (২০২২)-সহ নুহাশ হুমায়ূনের হরর সিরিজ ‘ষ’ (২০২২) দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপমা চোপড়া তাঁর রিভিউয়ে বাংলা সেরা ওয়েব সিরিজের তালিকায় চরকির ‘ঊনলৌকিক’-এর কথা বলেছেন। শিবব্রত বর্মনের গল্পে রবিউল আলম রবি পরিচালিত এই সাইকো থ্রিলার এনথোলজির প্রথম মৌসুমে রয়েছে পাঁচটি গল্প।
এ ছাড়া সম্পূর্ণ রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায়, আঞ্চলিক শিল্পীদের নিয়ে বানানো ফিল্ম নোয়ার জনরার সিরিজ ‘শাটিকাপ’ (২০২২) বোদ্ধাশ্রেণিকে সম্পূর্ণ নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এরই পরম্পরায় আমরা চরকিতে সম্প্রতি মুক্তি পেতে দেখি, বাগেরহাটের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সাহস’ (২০২২)। তবে ‘শাটিকাপ’ থেকে এর নির্মাণ আলাদা।
অন্যদিকে, ওটিটির জন্যও নতুন নীতিমালা গৃহীত হতে যাচ্ছে, যাতে করে ওটিটি মাধ্যমেও সিরিজ, সিনেমা এবং যাবতীয় অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট নির্মাণে নির্মাতাদের স্বাধীনতা আগের থেকে কমবে বলে মনে করা হচ্ছে, যার জলজ্যান্ত উদাহরণ সাজ্জাদ খান পরিচালিত সাহস (২০২২)।
এ ছাড়া আশফাক নিপুণের ‘সাবরিনা’ (২০২২) এবং ‘মহানগর’ (২০২১), ইমতিয়াজ সজীবের ‘রিফিউজি’ (২০২২), মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ (২০২১) সিরিজগুলো নারীকেন্দ্রিক, রাজনৈতিক এবং সংখ্যালঘু মানুষদের নিয়ে করা ভিন্নধর্মী গল্প ও বয়ানরীতির জন্য দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র
করোনা-পরবর্তীকালে যেমন নয়া মাধ্যম দেশি চলচ্চিত্রের বড় একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তেমনি এই সময়টাতে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ নির্মাতা তাঁদের চলচ্চিত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশ্বদরবারে। বিগত বছরে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ (২০২১) বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম কানে অফিশিয়াল মনোনয়ন পায়। সিনেমাটি এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডেও (অ্যাপসা) যৌথভাবে গ্র্যান্ড জুরি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এদিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ (২০২১) চলচ্চিত্র নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব কায়রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। চলচ্চিত্রটি বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ও ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এনএফডিসি) থেকেও সম্মাননা পায়। গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে প্রদর্শিত হয় রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’ (২০২১)। রাশেদ এন চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ‘চন্দ্রাবতী কথা’ (২০২১)। একাধিক দেশজ ফর্ম ব্যবহার করে নির্মিত চলচ্চিত্রটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। আর প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব টরন্টোতে প্রদর্শিত হয়।
এই চলচ্চিত্রগুলোর বিকল্প গল্প এবং বয়ানরীতি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সার্বিক পরিসরে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। খুব নিকট না হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের চলচ্চিত্রের হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রের বাঁকবদলের আশা আমরা করতেই পারি।
শেষের কথা
সময়টা এখনো দেশি চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ অনুকূলে নেই। সিনেমা হলের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। দর্শকও হলবিমুখ। অনেকেই আবার বলছেন, নারী দর্শক বাড়াতে হবে। কারণ হিসেবে জানাচ্ছেন, নারীরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে হলে যেতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। এদিকে বরাদ্দ থাকলেও বিগত দুই বছরে কোনো ডকুমেন্টারি ফিল্মই সরকারি অনুদানের জন্য মনোনীত হয়নি। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলোই বারবার সরকারি অনুদান পাচ্ছে বলে কথা উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিকল্পধারার চলচ্চিত্রগুলোকে অনুদান এবং বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রকে সরকারি প্রণোদনা বা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই সংকট নিরসনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
চলচ্চিত্র বাঁচাতে গ্রাম-বাংলার আপামর মানুষের গল্প, নিজস্ব বয়ানরীতি, আর একটি সংগঠিত ইন্ডাস্ট্রি এখন সময়ের দাবি। আমরা সবাই জানি, অত্যন্ত অল্প পুঁজি এবং যান্ত্রিক সহায়তা নিয়ে একঝাঁক দেশি তরুণ বিশ্বজয়ের সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সফলও হচ্ছেন তাঁরা। কে বলতে পারে, আরেকটু সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সব দোলাচলকে অতিক্রম করে এই তরুণদের হাত ধরেই পাল্টে যেতে পারে দেশি চলচ্চিত্রের গতিপথ। তখন হয়তো বাংলা ছবির এই বিষণ্নতার বয়ানগুলো বিস্মৃত হবে, আর বিশ্ব আমাদের চিনবে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ফিনিক্স পাখির মতো উত্থানের গল্পের জন্য।
লেখক: শিক্ষক ও চলচ্চিত্র সমালোচক

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে আশপাশে দেখছি না। অগত্যা নিজেই দরজা ঠেলে হলে প্রবেশ করলাম। ভেতরে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার, পর্দার আলোটা পর্যন্ত জ্বলেনি তখনো। চোখে অন্ধকার সয়ে এলে দেখি, পুরো প্রেক্ষাগৃহে আর কোনো মানুষ নেই। আমি চিৎকার করে উঠি, ‘কেউ কি আছেন?’ খুব সামনে থেকে কে একজন বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আছি।’ আমার আতঙ্কের বোধ যায় না। এক হাতে টিকিট, আর অন্য হাতে ফোন নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। না এমন নয় যে শুধু এই অদ্ভুত আঁধারে একাকিত্বের অনুভূতি আমাকে সন্ত্রস্ত করে তোলে, বরং রাজধানীর কেন্দ্রের এক প্রেক্ষাগৃহে এই দর্শকহীনতা আমার মধ্যে এক দ্বিধার বোধ হাজির করে।
পরে লিখতে বসে আমার মনে হতে থাকে, আমাদের দেশি চলচ্চিত্রও আদতে এ মুহূর্তে সেদিনের আমার মতো একটি দোলাচলের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। যে দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে বিগত দুই দশকের দেশি চলচ্চিত্র, নিজ ইন্ডাস্ট্রি, এর অন্তর্বর্তী সংস্কৃতি-মানুষসহ সবকিছুকেই কারণে অথবা অকারণে খারিজ করার চর্চা, ইন্ডাস্ট্রির মানুষের একটি বিশাল অংশের অদক্ষতা, অসততা, কালোটাকা সাদা করার হাতিয়ার হিসেবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহার, মূল এবং বিকল্পধারার দ্বন্দ্ব, সেন্সরশিপের খড়্গ এবং সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের ইতিহাস। আর সামনে রয়েছে একঝাঁক স্বপ্নবাজ এবং কুশলী তরুণ নির্মাতা, নতুন গল্প, দক্ষ অভিনয়শিল্পী, নতুন নির্মাণ পদ্ধতির প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক সম্মাননা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাধ্যম হিসেবে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব। ফলে এখন হিসাব কষার সময় এসেছে।
আমরা এত দিন জেনেছি, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ঝুলিতে তেমন কোনো অর্জন নেই। এমনকি অলটাইম ব্লকব্লাস্টার বলতে যা ধরে নেওয়া হয়, তেমন কোনো চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়নি এই সময়টাতে। আমরা জেনেছি, বিগত ২০ বছরে সুপারহিট সিনেমা হাতে গুনলে মনপুরা (২০০৯), আয়নাবাজি (২০১৬), শিকারি (২০১৬), পোড়ামন ২ (২০১৮)-এর মতো মাত্র ১০-১২টার বেশি হবে না।
চলতি বছর ভারতে কোভিড মহামারির প্রকোপ কমতেই সে দেশের প্রায় ৪১% নাগরিক প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন এবং দেখছেনও। বাংলাদেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ২০ বছরে ১ হাজার ২৩৫ থেকে মাত্র ৬০-এ এসে থেমেছে। সব মিলিয়ে এমনই বিপন্ন বিষণ্ন ক্লিশে আলাপে আটকে গেছে দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক কথামালা।
এত নেতিবাচক আলাপের ভিড়েও ২০২১ সালে বিভিন্ন কারণে চলচ্চিত্রে দিনবদলের চিহ্ন চোখে পড়ে। যদিও কোভিডের প্রথম বছর; অর্থাৎ, ২০২০ সালে দেশি চলচ্চিত্রে স্মরণকালের মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। টানা আট মাস প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ২০২০ সালে তানভীর মোকাম্মেলের ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ এবং চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’সহ প্রায় ১২টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও কোনোটি ব্যবসাসফল হয়নি। আর এরপরই ২০২১ সালের হাত ধরে কিছুটা স্বপ্ন, আশা আর বিকল্প বাতাস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় নতুন জমানার নতুন ধরনের চলচ্চিত্র।
ওটিটি ও দেশি কনটেন্ট: বাঁকবদলের আভাস
কোভিড মহামারি সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। এ সময় চলচ্চিত্রের জগতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। সারা পৃথিবীতে ওটিটির (ওভার দ্য টপ) বাজারের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। এর অবস্থান বাংলাদেশেও রমরমা হয়ে উঠছে। পরিবর্তিত মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার দর্শকের শ্রেণিতেও পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রমিক নয়, বরং মধ্যবিত্ত শ্রেণি হয়ে উঠছে চলচ্চিত্রের প্রথম দর্শক। বিজ্ঞাপনবিহীন আর স্বল্প খরচে দেখা যায় বলে দর্শকের পছন্দের তালিকায় ওটিটি এখন প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। বর্তমানে মোটামুটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা অন্তত ১০টি।
২০২০ সালে হইচই-তে প্রচারিত ‘তকদীর’ এবং বিঞ্জ-এ ‘আগস্ট ২৪’-এর মধ্য দিয়ে জনগণ দেশি সিরিজের প্রতি আলাদা মনোযোগ দিতে শুরু করে। কোভিড মহামারি চলাকালে এবং এর পরবর্তী সময়ে হইচই, নেটফ্লিক্স, জি ফাইভ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম দেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে চরকি-এর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। প্ল্যাটফর্মটির ‘ঊনলৌকিক’ (২০২১) ‘জাগো বাহে’ (২০২১) ‘নিখোঁজ’ (২০২২)-সহ নুহাশ হুমায়ূনের হরর সিরিজ ‘ষ’ (২০২২) দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপমা চোপড়া তাঁর রিভিউয়ে বাংলা সেরা ওয়েব সিরিজের তালিকায় চরকির ‘ঊনলৌকিক’-এর কথা বলেছেন। শিবব্রত বর্মনের গল্পে রবিউল আলম রবি পরিচালিত এই সাইকো থ্রিলার এনথোলজির প্রথম মৌসুমে রয়েছে পাঁচটি গল্প।
এ ছাড়া সম্পূর্ণ রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায়, আঞ্চলিক শিল্পীদের নিয়ে বানানো ফিল্ম নোয়ার জনরার সিরিজ ‘শাটিকাপ’ (২০২২) বোদ্ধাশ্রেণিকে সম্পূর্ণ নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এরই পরম্পরায় আমরা চরকিতে সম্প্রতি মুক্তি পেতে দেখি, বাগেরহাটের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সাহস’ (২০২২)। তবে ‘শাটিকাপ’ থেকে এর নির্মাণ আলাদা।
অন্যদিকে, ওটিটির জন্যও নতুন নীতিমালা গৃহীত হতে যাচ্ছে, যাতে করে ওটিটি মাধ্যমেও সিরিজ, সিনেমা এবং যাবতীয় অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট নির্মাণে নির্মাতাদের স্বাধীনতা আগের থেকে কমবে বলে মনে করা হচ্ছে, যার জলজ্যান্ত উদাহরণ সাজ্জাদ খান পরিচালিত সাহস (২০২২)।
এ ছাড়া আশফাক নিপুণের ‘সাবরিনা’ (২০২২) এবং ‘মহানগর’ (২০২১), ইমতিয়াজ সজীবের ‘রিফিউজি’ (২০২২), মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ (২০২১) সিরিজগুলো নারীকেন্দ্রিক, রাজনৈতিক এবং সংখ্যালঘু মানুষদের নিয়ে করা ভিন্নধর্মী গল্প ও বয়ানরীতির জন্য দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র
করোনা-পরবর্তীকালে যেমন নয়া মাধ্যম দেশি চলচ্চিত্রের বড় একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তেমনি এই সময়টাতে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ নির্মাতা তাঁদের চলচ্চিত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশ্বদরবারে। বিগত বছরে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ (২০২১) বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম কানে অফিশিয়াল মনোনয়ন পায়। সিনেমাটি এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডেও (অ্যাপসা) যৌথভাবে গ্র্যান্ড জুরি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এদিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ (২০২১) চলচ্চিত্র নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব কায়রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। চলচ্চিত্রটি বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ও ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এনএফডিসি) থেকেও সম্মাননা পায়। গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে প্রদর্শিত হয় রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’ (২০২১)। রাশেদ এন চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ‘চন্দ্রাবতী কথা’ (২০২১)। একাধিক দেশজ ফর্ম ব্যবহার করে নির্মিত চলচ্চিত্রটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। আর প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব টরন্টোতে প্রদর্শিত হয়।
এই চলচ্চিত্রগুলোর বিকল্প গল্প এবং বয়ানরীতি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সার্বিক পরিসরে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছে। খুব নিকট না হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের চলচ্চিত্রের হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রের বাঁকবদলের আশা আমরা করতেই পারি।
শেষের কথা
সময়টা এখনো দেশি চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ অনুকূলে নেই। সিনেমা হলের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। দর্শকও হলবিমুখ। অনেকেই আবার বলছেন, নারী দর্শক বাড়াতে হবে। কারণ হিসেবে জানাচ্ছেন, নারীরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে হলে যেতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। এদিকে বরাদ্দ থাকলেও বিগত দুই বছরে কোনো ডকুমেন্টারি ফিল্মই সরকারি অনুদানের জন্য মনোনীত হয়নি। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলোই বারবার সরকারি অনুদান পাচ্ছে বলে কথা উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিকল্পধারার চলচ্চিত্রগুলোকে অনুদান এবং বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রকে সরকারি প্রণোদনা বা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই সংকট নিরসনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
চলচ্চিত্র বাঁচাতে গ্রাম-বাংলার আপামর মানুষের গল্প, নিজস্ব বয়ানরীতি, আর একটি সংগঠিত ইন্ডাস্ট্রি এখন সময়ের দাবি। আমরা সবাই জানি, অত্যন্ত অল্প পুঁজি এবং যান্ত্রিক সহায়তা নিয়ে একঝাঁক দেশি তরুণ বিশ্বজয়ের সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সফলও হচ্ছেন তাঁরা। কে বলতে পারে, আরেকটু সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সব দোলাচলকে অতিক্রম করে এই তরুণদের হাত ধরেই পাল্টে যেতে পারে দেশি চলচ্চিত্রের গতিপথ। তখন হয়তো বাংলা ছবির এই বিষণ্নতার বয়ানগুলো বিস্মৃত হবে, আর বিশ্ব আমাদের চিনবে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ফিনিক্স পাখির মতো উত্থানের গল্পের জন্য।
লেখক: শিক্ষক ও চলচ্চিত্র সমালোচক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে...
২৯ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে...
২৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে...
২৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি প্রেক্ষাগৃহপন্থী। ফলে সেদিন ক্লাস ও কাজের চাপ একটু কমতেই বড় পর্দায় ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছুট লাগালাম। সিনেমা শুরু হতে আর এক-দুই মিনিট বাকি। আমি ছাড়া আর তেমন কাউকে...
২৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫