Ajker Patrika

পার্কের পাশেই ময়লার ভাগাড়

সাইফুল মাসুম ও আবির হাকিম, ঢাকা
আপডেট : ১৩ মে ২০২২, ১০: ০১
পার্কের পাশেই ময়লার ভাগাড়

পাঁচ বছর বয়সী সাফি বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মত্ত। মা পারুল আক্তার অন্য অভিভাবকদের সঙ্গে বেঞ্চে বসে আছেন। নাক চেপে কোনোরকমে অপেক্ষা করছেন। ময়লার উৎকট গন্ধে তাঁর নিজেরই দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হলেও বাসার পাশে তো খেলার জায়গা বলতে এটাই আছে।

নয়াটোলা শিশুপার্কে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের চিত্র এটি। ছয় বছর ধরে নয়াটোলা এলাকায় বসবাস করেন সুমি। ছেলেকে নিয়ে প্রায়ই ঘুরতে আসেন এ পার্কে। কিন্তু পার্কটির পাশেই ময়লার ভাগাড় থাকায় দুর্গন্ধে বেশি সময় এখানে থাকতে পারেন না মা-ছেলে। আজকের পত্রিকাকে সুমি বলেন, ‘আমরা এখানে আসি একটু আলো-বাতাসের জন্য, প্রশান্তির জন্য। অথচ ময়লার দুর্গন্ধ দম আটকে আসে। বাচ্চাটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। মশা-মাছি আর ময়লার দুর্গন্ধ তো ক্ষতিকর।’

নয়াটোলা শিশুপার্ক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। শুধু এটিই নয়, ঢাকার দুই সিটির অধিকাংশ পার্কের পাশেই ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটিতে মোট ৫১টি পার্ক-মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে ২৬টি আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মধ্যে রয়েছে ২৫টি পার্ক।

গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের উল্টো পাশে ওসমানী উদ্যানের পাশে মধু বিশ্বাসের চায়ের দোকান। তার পাশেই ওসমানী উদ্যানের সীমানা ঘেঁষে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা। ময়লার দুর্গন্ধে মধু বিশ্বাসের চায়ের দোকানে সহজে কেউ বসতে চান না। মধু বিশ্বাস বলেন, ‘পার্কে আসা লোকজন যে আমার দোকানে বসে একটু চা খাবে, তা-ও হয় না। দোকানে বসে অনেকেই ময়লার ভাগাড় নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন। আমিও তাঁদের আলাপে শাণ দিই।’ তিনি আরও বলেন, ওসমানী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক একটা জায়গার পাশেই আবর্জনার উৎকট গন্ধ, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি-সংলগ্ন গেটের পাশেও ময়লার ভাগাড়। আবর্জনার দুর্গন্ধে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত জিনিসপত্র, ভাসমান রেস্তোরাঁর পচা ভাত-তরকারি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগকেন্দ্রিক বিভিন্ন ভাসমান দোকানের ময়লা এনে এখানে ফেলা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ময়লা না ফেলার আহ্বান জানিয়ে বড় করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। তারপরও মানুষ ময়লার ভাগাড় বানিয়ে রেখেছে জায়গাটাকে। পরিষ্কার করলে আবার ময়লা ফেলা হচ্ছে।’

ক্লান্ত পথচারীদের আশ্রয় ও বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বাংলামোটর পান্থকুঞ্জ পার্ক। অথচ পার্কটির কাঁঠালবাগান অংশের পাশেই রয়েছে সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেট। আরেক পাশে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস)। প্রস্রাব আর ময়লার দুর্গন্ধে পার্কটি উল্টো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান পথচারীরা।

মিরপুর জল্লাদখানার উল্টো দিকে রাস্তার পাশে শিশুদের জন্য একটি পার্ক করেছে ডিএনসিসি। এই পার্কের পাশেও ময়লার ভাগাড়। ডিএনসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, আগে থেকে এখানে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) রয়েছে। ওটার পাশে আগে মাদকের আখড়া বসত। এসব উচ্ছেদ করে শিশুপার্ক করা হয়েছে। পরিকল্পনা আছে এসটিএস দূরে সরিয়ে নেওয়ার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ১০ বছর আগের চিত্র আর এখনকার চিত্র একেবারে আলাদা। সবকিছুতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এসটিএসগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়া গেলে গন্ধ ওপরে ছড়াবে না। এমন পরিকল্পনা রয়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পার্কগুলোর চারপাশ আবর্জনামুক্ত রাখতে আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি।’

পার্কের পাশে ভাগাড় গড়ে তোলার সমালোচনা করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, রাষ্ট্রের নাগরিক সুবিধার জন্য করা স্থানগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ময়লার ভাগাড়গুলোতে এলাকা থেকে ময়লা সংগ্রহ করে জমা করা হয়। দীর্ঘ সময় ময়লা পড়ে থাকে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। এটা সিটি করপোরেশনের অক্ষমতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শতকোটি টাকার পাওনা বকেয়া রেখেই ‘দেশ ছাড়লেন’ ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিকেরা

‘অনিয়ম হয়নি’ বলায় এলজিইডি কর্মচারীকে পিটুনি

যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা শুল্ক ছাড় পাবে বাংলাদেশ: বিজিএমইএ

দলীয় প্রধান আসবেন, তাই পুলিশ এনে খোলা হলো কার্যালয়ের তালা

যেভাবে চীনা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত