Ajker Patrika

রাজনৈতিক সংকট: চাপে পড়ে সংলাপে জোর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজনৈতিক সংকট: চাপে পড়ে সংলাপে জোর

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সংকট দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। চোখ রাঙাচ্ছে সংঘাতের শঙ্কাও। সেই শঙ্কা-অনিশ্চয়তা এড়াতে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে দেশে ও দেশের বাইরে থেকে। শান্তিপূর্ণ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা শক্তিগুলো।

এই অবস্থায় সংলাপের বিষয়টি আবার সামনে আনল নির্বাচন কমিশন। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার বৈঠক করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর এক টেবিলে বসা উচিত। একসঙ্গে চা খাওয়া উচিত। তারপরে আলোচনা করে এই সংকটগুলো নিরসনের চেষ্টা করা উচিত।’

ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন সিইসির সঙ্গে বৈঠক করছেন, তার আগ দিয়ে সোমবার ওয়াশিংটনে প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে সংঘাত-হানাহানি বন্ধের কথা বলেছেন। বলেছেন, বিরোধী দলগুলোর ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ঘটেছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘও একই বিষয়ে কথা বলেছে একই দিন। বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্লেমেন্ত নাইলেতসোসি ভোলে। আর জাতিসংঘ মহাসচিবের দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করছে বিশ্ব সংস্থাটি। 

সিইসি-রাষ্ট্রদূত বৈঠক
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। পরে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, দেশে যে সংকট বিরাজ করছে, তা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রকট কতগুলো বিষয় রয়েছে, যেকোনো মূল্যে সুরাহা করে স্থিতিশীলতা ফেরানো দরকার। যদি রাজনৈতিকভাবে এর মীমাংসা হয়, তাহলে নির্বাচন আয়োজন করা অনেক সহজ হবে।

রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য দলগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন, এমনটি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতকে তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর এক টেবিলে বসা উচিত। একসঙ্গে চা খাওয়া উচিত। তারপরে আলোচনা করে এই সংকটগুলো নিরসনের চেষ্টা করা উচিত।’

তবু ভিন্ন মেরুতে দুই পক্ষ রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়টি কমিশন বারবার সামনে আনলেও এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান ভিন্ন।

সিইসির ওই মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান গতকাল রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংলাপ নিয়ে এখনো আওয়ামী লীগের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।

বিএনপি সরকারের সঙ্গে সংলাপ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, ‘এ কারণে সরকারের কাছ থেকে সংলাপের প্রস্তাব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’

ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, নির্বাচন কীভাবে হবে, সেই সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধান এবং নির্বাচনসংক্রান্ত আইনে সব লেখা আছে। তাই নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো দরকার নেই।

প্রকাশ্যে সংলাপ নিয়ে আগ্রহ না দেখালেও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সংকট নিরসনে সংলাপের প্রয়োজনকে অস্বীকার করছে না বিএনপি। সে ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ বিবেচনায় নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন দলের নেতারা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের দায় এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি। তারা এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবে, তার ওপর নির্ভর করবে আমরা পরে কী পদক্ষেপ নেব।’

ভোটে পুলিশের ভূমিকা জানতে চাইলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত 
সিইসির সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে অন্য বিষয়ের মধ্যে রাষ্ট্রদূত জানতে চান, নির্বাচনের সময় পুলিশ কীভাবে কাজ করে। সিইসি তাঁকে জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পুলিশ কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করে। কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন, আগে থেকেই তালিকা করা হয়।

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থা বা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে পিটার হাস কিছু জানতে চাননি বলে জানান সিইসি। তিনি জানান, নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের কাজ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে জানতে চান রাষ্ট্রদূত। সিইসি জানান, আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে কীভাবে কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, তা রাষ্ট্রদূতকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বৈঠকে বলেন, সক্রিয় কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে তেমন সক্রিয় নয়, এমন দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছে, কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিধি কঠোরভাবে মেনে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। 

কার্যকর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চায় যুক্তরাষ্ট্র 
বৈঠক শেষে পিটার হাস সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ শুধু অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অক্টোবরের শুরুতে প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। দলে থাকবেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতির বিষয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) বিশেষজ্ঞরা।

এনডিআই ও আইআরআই পর্যবেক্ষণে আসবে, এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশে কাজ করে যাওয়া সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ডেনিলোউইজ এক টুইটে বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্ভরযোগ্য বিদেশি ও দেশীয় পর্যবেক্ষকের সমন্বয়ে একটি ব্যাপক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। তবে অতীতের নির্বাচনগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, শুধু পর্যবেক্ষকেরা অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন না।

হিরো আলম প্রসঙ্গে বিবৃতি ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন নয় 
সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৩ দেশ ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা কূটনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে। এ ধরনের ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হয় না।

রাজনৈতিক সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্র
শনিবার বিরোধী দলগুলোর ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ঘটেছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার ওয়াশিংটনে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তদন্তের তাগিদ দেন। 
রাজনৈতিক প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এই মুখপাত্র ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানান। মিলার বাংলাদেশে সব পক্ষকে মৌলিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে সম্মান করা এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

ভিন্নমত দমনে বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ 
বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্লেমেন্ত নাইলেতসোসি ভোলে। সোমবার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা যুক্ত করে করা এক টুইটে তিনি এই আহ্বান জানান।

জনগণের সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে তিনি সব পক্ষ ও কর্তৃপক্ষকে সংযম প্রদর্শনেরও আহ্বান জানান। ভিন্নমতকে সম্মান করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে ভোলে উল্লেখ করেন।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় জাতিসংঘ 
জাতিসংঘ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব সংস্থাটির মহাসচিবের দপ্তর। জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক নিউইয়র্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের পোস্টে কমেন্ট করে বরখাস্ত মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

নূর ধান-২: এক চালেই হবে ভাত পোলাও খিচুড়ি বিরিয়ানি তেহারি

‘৩ শর্তে’ সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ স্থগিত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত