অজয় দাশগুপ্ত

এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বাঙালির জন্য ঝুঁকি নেওয়ার তিনি কেউ ছিলেন না। না বাঙালি, না বাংলাদেশি, না ভারতীয় বা পাকিস্তানি। ডাচ, মানে হল্যাল্ডের মানুষ। পরে আমাদের মতো অভিবাসী হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাটার বড় পদবির রাশভারী কর্মকর্তা। আর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় সামরিক কমান্ডো অফিসার উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড।
যে দেশে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ থেকে খালেদ মোশাররফের কথা মানুষকে ভুলিয়ে রাখা হতো, সেই সমাজে তাঁকে মনে করবে কে?আর যারা যখন সরকারে তারা মুখে যা-ই বলুক, সব সময় নিজেদের হাইলাইট করতেই ব্যস্ত। ফলে এসব মানুষকে আমরা জানি না। জানলেও চিনি না। আর চিনলেও মনে রাখি না। অথচ তাঁরাই আমাদের সেই সব মানুষ, যাঁদের কারণে আজ কেউ মন্ত্রী, কেউ আমলা, কেউ রাজনীতিক।
ওডারল্যান্ডের কথা জানার পরপরই আমি উতলা হয়ে পড়েছিলাম তাঁর সান্নিধ্য আর দেখা পাওয়ার জন্য। তখন তিনি সিডনি থেকে বহু দূরে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে শেষ দিনগুলো পার করছিলেন। ভীষণ ইচ্ছে ছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু তখন আমি নতুন অভিবাসী। মাত্রই এসেছি এ দেশে। নিজেরা থিতু হওয়ার সংগ্রাম করছি। সে সময় সম্ভব ছিল না অতটা পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমি প্রায়ই ফোন করতাম। নম্বর জোগাড় হওয়ার পর আমার অবিরাম চেষ্টার ফলে তাঁর স্ত্রী একবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বারণ ছিল উত্তেজিত করার। জানা যায় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর উল্লাসরত তাঁর এক কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ও তাজউদ্দীনের মৃত্যু তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তলায় জমে থাকা বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুরাগ ছিল স্পষ্ট।
আর পাঁচজন বিদেশির মতোই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড চাকরি করতে এসেছিলেন বাংলাদেশে। দেশ তখন পাকিস্তানের পূর্বাংশ। ১৯৭১ সাল। পরিস্থিতি সুবিধাজনক নয়। স্বাধিকারের দাবিতে দৃঢ়সংকল্প বাঙালির আন্দোলনে উত্তাল সমগ্র দেশ।ওডারল্যান্ড ওই বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে যোগ দিয়েছেন বাটা শু কোম্পানিতে। টঙ্গীতে তাঁর কার্যালয়। দেশের পরিস্থিতি আঁচ করতে মোটেই অসুবিধা হয়নি তাঁর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫ মার্চ বাঙালিদের গণহত্যা ওডারল্যান্ডকে অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। জঘন্য গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিকাণ্ড, নারী নির্যাতন ওডারল্যান্ডের মনে এক পুরোনো ক্ষত যেন নতুন করে জাগিয়ে তোলে। রক্তের ভেতর আবার সেই পুরোনো ডাক অনুভব করেন তিনি যুদ্ধে যাওয়ার। বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ৫৪ বছর বয়সী ওডারল্যান্ড আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন যোদ্ধার ভূমিকায়।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে অবাধে চলাচলের সুযোগ ছিল তাঁর। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হত্যা-নির্যাতনের ছবি তুলে সেসব ছবি গোপনে বিদেশের গণমাধ্যমে পাঠাতে থাকেন। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যোগাযোগ সৃষ্টির। একটা পর্যায়ে তিনি গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি, রাও ফরমান আলীসহ পাকিস্তানি সেনাদের মাথা-মুরব্বিদের সঙ্গে দহরম-মহরম করে তথ্য সংগ্রহের কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করছিলেন। যেমন করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাশিবিরে গিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া ওডারল্যান্ডের পিতৃভূমি হলেও ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে। জীবিকার তাগিদে ১৭ বছর বয়সে তিনি একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, পরে সেখান থেকে বাটা শু কোম্পানিতে। জার্মানির নাৎসি বাহিনী হল্যান্ড আক্রমণ করলে তিনি ডাচ সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেন। নাৎসিরা ১৯৪০ সালে বিমান হামলা করে তাঁর জন্মশহর বিধ্বস্ত করে দেয়, হল্যান্ড চলে যায় তাদের দখলে। ওডারল্যান্ড বন্দী হন জার্মানদের হাতে। তবে কৌশলে তিনি বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের ক্যাম্পে কাজ করতে থাকেন। যোগ দেন ডাচ-প্রতিরোধ আন্দোলনে। ডাচদের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জার্মান ভাষা রপ্ত ছিল তাঁর। এই সুযোগ নিয়ে তিনি জার্মানদের গোপন আস্তানায় ঢুকে পড়েন। তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাতে থাকেন মিত্রবাহিনীর কাছে। ১৯৪৩ সালে তিনি কমান্ডো বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো সৈনিক ওডারল্যান্ড এ অভিজ্ঞতাই কাজে লাগিয়েছেন ঢাকায় নানাভাবে। প্রথম পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করলেও শুধু এতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি তিনি। এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আমাদের সঙ্গে, যিনি নিজের পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে নিয়াজির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। আর সেই সুযোগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সব খবর পৌঁছে যেত মুক্তিবাহিনীর কাছে। পদে পদে বিপদকে মাথায় রেখে এই মানুষটি লড়াই করেছেন। বাংলাদেশে ঢাকায় তাঁর নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীনের পর সম্ভবত একবার গিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি আর মুক্তিযুদ্ধের অপমান মানতে পারতেন না বলে আর যাননি।আমাদের সমাজে এখনো যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি, এখনো যে তর্ক, তা নিরসনে এই মানুষদের জানা জরুরি। এত বছর পর আমরা কিন্তু আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণদের জানাতে পারিনি তাঁদের কথা। ওডারল্যান্ড বাংলাদেশকে কেমন ভালোবাসতেন, তা তাঁর একমাত্র সন্তান অ্যানি হ্যামিলটনের কথাতেই জেনেছি। অ্যানি এসেছিলেন সিডনিতে বাংলা সংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজনে। বাবা তাঁকে বলতেন, ‘বাংলাদেশ আমার মন। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’ এই মানুষটি আমাদের পতাকা, সংগীত ও স্বাধীনতার এক মূর্ত প্রতীক। জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্কর, আঁদ্রে মারলো—এমন কিছু মানুষের পাশাপাশি তিনিও আমাদের মনে করিয়ে দেন, আমরা একা না। আমাদের মা জননী দেশ কখনো একা ছিল না।
শেষ জীবনেও ওডারল্যান্ড থাকতেন বাংলাদেশের ভাবনায় ব্যাকুল। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো লেখা পেলেই চোখের সামনে মেলে ধরতেন। নিকটজনকে বলতেন পড়ে শোনাতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় তিনি বিক্ষুব্ধ হতেন। তাঁর জন্য এটাই ছিল স্বাভাবিক, কারণ তিনি স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, নিজে যুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি নিজের ছেলের মতো দেখতেন।
অকুতোভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে আমাদের হয়ে শুধু যুদ্ধ করেননি, এখনো তাঁর পরিচয়ে সে স্মৃতি বহন করে চলেছেন। তাঁর প্যাডে দেখেছি ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড বি.পি. লেখা। এই যে বীর প্রতীক (বি.পি.) খেতাবটি, নিজের নামের সঙ্গে তাঁর সংযুক্ত বজায় রেখে ‘তিনি আমাদের লোক’ এই পরিচয় তুলে ধরেছেন আজীবন।
এই একমাত্র বিদেশি বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড তাঁর একমাত্র কন্যাকে সব সময় বলতেন, ‘মনে রেখো, বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা। পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি আবেগের এ ধারাটা অব্যাহত রেখো।’ শুভ জন্মদিন ওডারল্যান্ড।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বাঙালির জন্য ঝুঁকি নেওয়ার তিনি কেউ ছিলেন না। না বাঙালি, না বাংলাদেশি, না ভারতীয় বা পাকিস্তানি। ডাচ, মানে হল্যাল্ডের মানুষ। পরে আমাদের মতো অভিবাসী হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাটার বড় পদবির রাশভারী কর্মকর্তা। আর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় সামরিক কমান্ডো অফিসার উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড।
যে দেশে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ থেকে খালেদ মোশাররফের কথা মানুষকে ভুলিয়ে রাখা হতো, সেই সমাজে তাঁকে মনে করবে কে?আর যারা যখন সরকারে তারা মুখে যা-ই বলুক, সব সময় নিজেদের হাইলাইট করতেই ব্যস্ত। ফলে এসব মানুষকে আমরা জানি না। জানলেও চিনি না। আর চিনলেও মনে রাখি না। অথচ তাঁরাই আমাদের সেই সব মানুষ, যাঁদের কারণে আজ কেউ মন্ত্রী, কেউ আমলা, কেউ রাজনীতিক।
ওডারল্যান্ডের কথা জানার পরপরই আমি উতলা হয়ে পড়েছিলাম তাঁর সান্নিধ্য আর দেখা পাওয়ার জন্য। তখন তিনি সিডনি থেকে বহু দূরে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে শেষ দিনগুলো পার করছিলেন। ভীষণ ইচ্ছে ছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু তখন আমি নতুন অভিবাসী। মাত্রই এসেছি এ দেশে। নিজেরা থিতু হওয়ার সংগ্রাম করছি। সে সময় সম্ভব ছিল না অতটা পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমি প্রায়ই ফোন করতাম। নম্বর জোগাড় হওয়ার পর আমার অবিরাম চেষ্টার ফলে তাঁর স্ত্রী একবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বারণ ছিল উত্তেজিত করার। জানা যায় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর উল্লাসরত তাঁর এক কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ও তাজউদ্দীনের মৃত্যু তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তলায় জমে থাকা বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুরাগ ছিল স্পষ্ট।
আর পাঁচজন বিদেশির মতোই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড চাকরি করতে এসেছিলেন বাংলাদেশে। দেশ তখন পাকিস্তানের পূর্বাংশ। ১৯৭১ সাল। পরিস্থিতি সুবিধাজনক নয়। স্বাধিকারের দাবিতে দৃঢ়সংকল্প বাঙালির আন্দোলনে উত্তাল সমগ্র দেশ।ওডারল্যান্ড ওই বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে যোগ দিয়েছেন বাটা শু কোম্পানিতে। টঙ্গীতে তাঁর কার্যালয়। দেশের পরিস্থিতি আঁচ করতে মোটেই অসুবিধা হয়নি তাঁর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫ মার্চ বাঙালিদের গণহত্যা ওডারল্যান্ডকে অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। জঘন্য গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিকাণ্ড, নারী নির্যাতন ওডারল্যান্ডের মনে এক পুরোনো ক্ষত যেন নতুন করে জাগিয়ে তোলে। রক্তের ভেতর আবার সেই পুরোনো ডাক অনুভব করেন তিনি যুদ্ধে যাওয়ার। বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ৫৪ বছর বয়সী ওডারল্যান্ড আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন যোদ্ধার ভূমিকায়।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে অবাধে চলাচলের সুযোগ ছিল তাঁর। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হত্যা-নির্যাতনের ছবি তুলে সেসব ছবি গোপনে বিদেশের গণমাধ্যমে পাঠাতে থাকেন। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যোগাযোগ সৃষ্টির। একটা পর্যায়ে তিনি গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি, রাও ফরমান আলীসহ পাকিস্তানি সেনাদের মাথা-মুরব্বিদের সঙ্গে দহরম-মহরম করে তথ্য সংগ্রহের কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করছিলেন। যেমন করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাশিবিরে গিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া ওডারল্যান্ডের পিতৃভূমি হলেও ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে। জীবিকার তাগিদে ১৭ বছর বয়সে তিনি একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, পরে সেখান থেকে বাটা শু কোম্পানিতে। জার্মানির নাৎসি বাহিনী হল্যান্ড আক্রমণ করলে তিনি ডাচ সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেন। নাৎসিরা ১৯৪০ সালে বিমান হামলা করে তাঁর জন্মশহর বিধ্বস্ত করে দেয়, হল্যান্ড চলে যায় তাদের দখলে। ওডারল্যান্ড বন্দী হন জার্মানদের হাতে। তবে কৌশলে তিনি বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের ক্যাম্পে কাজ করতে থাকেন। যোগ দেন ডাচ-প্রতিরোধ আন্দোলনে। ডাচদের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জার্মান ভাষা রপ্ত ছিল তাঁর। এই সুযোগ নিয়ে তিনি জার্মানদের গোপন আস্তানায় ঢুকে পড়েন। তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাতে থাকেন মিত্রবাহিনীর কাছে। ১৯৪৩ সালে তিনি কমান্ডো বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো সৈনিক ওডারল্যান্ড এ অভিজ্ঞতাই কাজে লাগিয়েছেন ঢাকায় নানাভাবে। প্রথম পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করলেও শুধু এতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি তিনি। এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আমাদের সঙ্গে, যিনি নিজের পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে নিয়াজির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। আর সেই সুযোগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সব খবর পৌঁছে যেত মুক্তিবাহিনীর কাছে। পদে পদে বিপদকে মাথায় রেখে এই মানুষটি লড়াই করেছেন। বাংলাদেশে ঢাকায় তাঁর নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীনের পর সম্ভবত একবার গিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি আর মুক্তিযুদ্ধের অপমান মানতে পারতেন না বলে আর যাননি।আমাদের সমাজে এখনো যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি, এখনো যে তর্ক, তা নিরসনে এই মানুষদের জানা জরুরি। এত বছর পর আমরা কিন্তু আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণদের জানাতে পারিনি তাঁদের কথা। ওডারল্যান্ড বাংলাদেশকে কেমন ভালোবাসতেন, তা তাঁর একমাত্র সন্তান অ্যানি হ্যামিলটনের কথাতেই জেনেছি। অ্যানি এসেছিলেন সিডনিতে বাংলা সংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজনে। বাবা তাঁকে বলতেন, ‘বাংলাদেশ আমার মন। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’ এই মানুষটি আমাদের পতাকা, সংগীত ও স্বাধীনতার এক মূর্ত প্রতীক। জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্কর, আঁদ্রে মারলো—এমন কিছু মানুষের পাশাপাশি তিনিও আমাদের মনে করিয়ে দেন, আমরা একা না। আমাদের মা জননী দেশ কখনো একা ছিল না।
শেষ জীবনেও ওডারল্যান্ড থাকতেন বাংলাদেশের ভাবনায় ব্যাকুল। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো লেখা পেলেই চোখের সামনে মেলে ধরতেন। নিকটজনকে বলতেন পড়ে শোনাতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় তিনি বিক্ষুব্ধ হতেন। তাঁর জন্য এটাই ছিল স্বাভাবিক, কারণ তিনি স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, নিজে যুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি নিজের ছেলের মতো দেখতেন।
অকুতোভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে আমাদের হয়ে শুধু যুদ্ধ করেননি, এখনো তাঁর পরিচয়ে সে স্মৃতি বহন করে চলেছেন। তাঁর প্যাডে দেখেছি ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড বি.পি. লেখা। এই যে বীর প্রতীক (বি.পি.) খেতাবটি, নিজের নামের সঙ্গে তাঁর সংযুক্ত বজায় রেখে ‘তিনি আমাদের লোক’ এই পরিচয় তুলে ধরেছেন আজীবন।
এই একমাত্র বিদেশি বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড তাঁর একমাত্র কন্যাকে সব সময় বলতেন, ‘মনে রেখো, বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা। পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি আবেগের এ ধারাটা অব্যাহত রেখো।’ শুভ জন্মদিন ওডারল্যান্ড।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

অজয় দাশগুপ্ত

এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বাঙালির জন্য ঝুঁকি নেওয়ার তিনি কেউ ছিলেন না। না বাঙালি, না বাংলাদেশি, না ভারতীয় বা পাকিস্তানি। ডাচ, মানে হল্যাল্ডের মানুষ। পরে আমাদের মতো অভিবাসী হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাটার বড় পদবির রাশভারী কর্মকর্তা। আর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় সামরিক কমান্ডো অফিসার উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড।
যে দেশে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ থেকে খালেদ মোশাররফের কথা মানুষকে ভুলিয়ে রাখা হতো, সেই সমাজে তাঁকে মনে করবে কে?আর যারা যখন সরকারে তারা মুখে যা-ই বলুক, সব সময় নিজেদের হাইলাইট করতেই ব্যস্ত। ফলে এসব মানুষকে আমরা জানি না। জানলেও চিনি না। আর চিনলেও মনে রাখি না। অথচ তাঁরাই আমাদের সেই সব মানুষ, যাঁদের কারণে আজ কেউ মন্ত্রী, কেউ আমলা, কেউ রাজনীতিক।
ওডারল্যান্ডের কথা জানার পরপরই আমি উতলা হয়ে পড়েছিলাম তাঁর সান্নিধ্য আর দেখা পাওয়ার জন্য। তখন তিনি সিডনি থেকে বহু দূরে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে শেষ দিনগুলো পার করছিলেন। ভীষণ ইচ্ছে ছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু তখন আমি নতুন অভিবাসী। মাত্রই এসেছি এ দেশে। নিজেরা থিতু হওয়ার সংগ্রাম করছি। সে সময় সম্ভব ছিল না অতটা পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমি প্রায়ই ফোন করতাম। নম্বর জোগাড় হওয়ার পর আমার অবিরাম চেষ্টার ফলে তাঁর স্ত্রী একবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বারণ ছিল উত্তেজিত করার। জানা যায় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর উল্লাসরত তাঁর এক কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ও তাজউদ্দীনের মৃত্যু তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তলায় জমে থাকা বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুরাগ ছিল স্পষ্ট।
আর পাঁচজন বিদেশির মতোই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড চাকরি করতে এসেছিলেন বাংলাদেশে। দেশ তখন পাকিস্তানের পূর্বাংশ। ১৯৭১ সাল। পরিস্থিতি সুবিধাজনক নয়। স্বাধিকারের দাবিতে দৃঢ়সংকল্প বাঙালির আন্দোলনে উত্তাল সমগ্র দেশ।ওডারল্যান্ড ওই বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে যোগ দিয়েছেন বাটা শু কোম্পানিতে। টঙ্গীতে তাঁর কার্যালয়। দেশের পরিস্থিতি আঁচ করতে মোটেই অসুবিধা হয়নি তাঁর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫ মার্চ বাঙালিদের গণহত্যা ওডারল্যান্ডকে অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। জঘন্য গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিকাণ্ড, নারী নির্যাতন ওডারল্যান্ডের মনে এক পুরোনো ক্ষত যেন নতুন করে জাগিয়ে তোলে। রক্তের ভেতর আবার সেই পুরোনো ডাক অনুভব করেন তিনি যুদ্ধে যাওয়ার। বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ৫৪ বছর বয়সী ওডারল্যান্ড আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন যোদ্ধার ভূমিকায়।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে অবাধে চলাচলের সুযোগ ছিল তাঁর। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হত্যা-নির্যাতনের ছবি তুলে সেসব ছবি গোপনে বিদেশের গণমাধ্যমে পাঠাতে থাকেন। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যোগাযোগ সৃষ্টির। একটা পর্যায়ে তিনি গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি, রাও ফরমান আলীসহ পাকিস্তানি সেনাদের মাথা-মুরব্বিদের সঙ্গে দহরম-মহরম করে তথ্য সংগ্রহের কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করছিলেন। যেমন করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাশিবিরে গিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া ওডারল্যান্ডের পিতৃভূমি হলেও ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে। জীবিকার তাগিদে ১৭ বছর বয়সে তিনি একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, পরে সেখান থেকে বাটা শু কোম্পানিতে। জার্মানির নাৎসি বাহিনী হল্যান্ড আক্রমণ করলে তিনি ডাচ সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেন। নাৎসিরা ১৯৪০ সালে বিমান হামলা করে তাঁর জন্মশহর বিধ্বস্ত করে দেয়, হল্যান্ড চলে যায় তাদের দখলে। ওডারল্যান্ড বন্দী হন জার্মানদের হাতে। তবে কৌশলে তিনি বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের ক্যাম্পে কাজ করতে থাকেন। যোগ দেন ডাচ-প্রতিরোধ আন্দোলনে। ডাচদের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জার্মান ভাষা রপ্ত ছিল তাঁর। এই সুযোগ নিয়ে তিনি জার্মানদের গোপন আস্তানায় ঢুকে পড়েন। তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাতে থাকেন মিত্রবাহিনীর কাছে। ১৯৪৩ সালে তিনি কমান্ডো বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো সৈনিক ওডারল্যান্ড এ অভিজ্ঞতাই কাজে লাগিয়েছেন ঢাকায় নানাভাবে। প্রথম পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করলেও শুধু এতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি তিনি। এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আমাদের সঙ্গে, যিনি নিজের পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে নিয়াজির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। আর সেই সুযোগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সব খবর পৌঁছে যেত মুক্তিবাহিনীর কাছে। পদে পদে বিপদকে মাথায় রেখে এই মানুষটি লড়াই করেছেন। বাংলাদেশে ঢাকায় তাঁর নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীনের পর সম্ভবত একবার গিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি আর মুক্তিযুদ্ধের অপমান মানতে পারতেন না বলে আর যাননি।আমাদের সমাজে এখনো যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি, এখনো যে তর্ক, তা নিরসনে এই মানুষদের জানা জরুরি। এত বছর পর আমরা কিন্তু আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণদের জানাতে পারিনি তাঁদের কথা। ওডারল্যান্ড বাংলাদেশকে কেমন ভালোবাসতেন, তা তাঁর একমাত্র সন্তান অ্যানি হ্যামিলটনের কথাতেই জেনেছি। অ্যানি এসেছিলেন সিডনিতে বাংলা সংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজনে। বাবা তাঁকে বলতেন, ‘বাংলাদেশ আমার মন। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’ এই মানুষটি আমাদের পতাকা, সংগীত ও স্বাধীনতার এক মূর্ত প্রতীক। জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্কর, আঁদ্রে মারলো—এমন কিছু মানুষের পাশাপাশি তিনিও আমাদের মনে করিয়ে দেন, আমরা একা না। আমাদের মা জননী দেশ কখনো একা ছিল না।
শেষ জীবনেও ওডারল্যান্ড থাকতেন বাংলাদেশের ভাবনায় ব্যাকুল। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো লেখা পেলেই চোখের সামনে মেলে ধরতেন। নিকটজনকে বলতেন পড়ে শোনাতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় তিনি বিক্ষুব্ধ হতেন। তাঁর জন্য এটাই ছিল স্বাভাবিক, কারণ তিনি স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, নিজে যুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি নিজের ছেলের মতো দেখতেন।
অকুতোভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে আমাদের হয়ে শুধু যুদ্ধ করেননি, এখনো তাঁর পরিচয়ে সে স্মৃতি বহন করে চলেছেন। তাঁর প্যাডে দেখেছি ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড বি.পি. লেখা। এই যে বীর প্রতীক (বি.পি.) খেতাবটি, নিজের নামের সঙ্গে তাঁর সংযুক্ত বজায় রেখে ‘তিনি আমাদের লোক’ এই পরিচয় তুলে ধরেছেন আজীবন।
এই একমাত্র বিদেশি বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড তাঁর একমাত্র কন্যাকে সব সময় বলতেন, ‘মনে রেখো, বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা। পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি আবেগের এ ধারাটা অব্যাহত রেখো।’ শুভ জন্মদিন ওডারল্যান্ড।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বাঙালির জন্য ঝুঁকি নেওয়ার তিনি কেউ ছিলেন না। না বাঙালি, না বাংলাদেশি, না ভারতীয় বা পাকিস্তানি। ডাচ, মানে হল্যাল্ডের মানুষ। পরে আমাদের মতো অভিবাসী হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাটার বড় পদবির রাশভারী কর্মকর্তা। আর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় সামরিক কমান্ডো অফিসার উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড।
যে দেশে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ থেকে খালেদ মোশাররফের কথা মানুষকে ভুলিয়ে রাখা হতো, সেই সমাজে তাঁকে মনে করবে কে?আর যারা যখন সরকারে তারা মুখে যা-ই বলুক, সব সময় নিজেদের হাইলাইট করতেই ব্যস্ত। ফলে এসব মানুষকে আমরা জানি না। জানলেও চিনি না। আর চিনলেও মনে রাখি না। অথচ তাঁরাই আমাদের সেই সব মানুষ, যাঁদের কারণে আজ কেউ মন্ত্রী, কেউ আমলা, কেউ রাজনীতিক।
ওডারল্যান্ডের কথা জানার পরপরই আমি উতলা হয়ে পড়েছিলাম তাঁর সান্নিধ্য আর দেখা পাওয়ার জন্য। তখন তিনি সিডনি থেকে বহু দূরে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে শেষ দিনগুলো পার করছিলেন। ভীষণ ইচ্ছে ছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু তখন আমি নতুন অভিবাসী। মাত্রই এসেছি এ দেশে। নিজেরা থিতু হওয়ার সংগ্রাম করছি। সে সময় সম্ভব ছিল না অতটা পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমি প্রায়ই ফোন করতাম। নম্বর জোগাড় হওয়ার পর আমার অবিরাম চেষ্টার ফলে তাঁর স্ত্রী একবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বারণ ছিল উত্তেজিত করার। জানা যায় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর উল্লাসরত তাঁর এক কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ও তাজউদ্দীনের মৃত্যু তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তলায় জমে থাকা বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুরাগ ছিল স্পষ্ট।
আর পাঁচজন বিদেশির মতোই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড চাকরি করতে এসেছিলেন বাংলাদেশে। দেশ তখন পাকিস্তানের পূর্বাংশ। ১৯৭১ সাল। পরিস্থিতি সুবিধাজনক নয়। স্বাধিকারের দাবিতে দৃঢ়সংকল্প বাঙালির আন্দোলনে উত্তাল সমগ্র দেশ।ওডারল্যান্ড ওই বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে যোগ দিয়েছেন বাটা শু কোম্পানিতে। টঙ্গীতে তাঁর কার্যালয়। দেশের পরিস্থিতি আঁচ করতে মোটেই অসুবিধা হয়নি তাঁর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫ মার্চ বাঙালিদের গণহত্যা ওডারল্যান্ডকে অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। জঘন্য গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিকাণ্ড, নারী নির্যাতন ওডারল্যান্ডের মনে এক পুরোনো ক্ষত যেন নতুন করে জাগিয়ে তোলে। রক্তের ভেতর আবার সেই পুরোনো ডাক অনুভব করেন তিনি যুদ্ধে যাওয়ার। বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ৫৪ বছর বয়সী ওডারল্যান্ড আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন যোদ্ধার ভূমিকায়।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে অবাধে চলাচলের সুযোগ ছিল তাঁর। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হত্যা-নির্যাতনের ছবি তুলে সেসব ছবি গোপনে বিদেশের গণমাধ্যমে পাঠাতে থাকেন। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যোগাযোগ সৃষ্টির। একটা পর্যায়ে তিনি গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি, রাও ফরমান আলীসহ পাকিস্তানি সেনাদের মাথা-মুরব্বিদের সঙ্গে দহরম-মহরম করে তথ্য সংগ্রহের কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করছিলেন। যেমন করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাশিবিরে গিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া ওডারল্যান্ডের পিতৃভূমি হলেও ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে। জীবিকার তাগিদে ১৭ বছর বয়সে তিনি একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, পরে সেখান থেকে বাটা শু কোম্পানিতে। জার্মানির নাৎসি বাহিনী হল্যান্ড আক্রমণ করলে তিনি ডাচ সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেন। নাৎসিরা ১৯৪০ সালে বিমান হামলা করে তাঁর জন্মশহর বিধ্বস্ত করে দেয়, হল্যান্ড চলে যায় তাদের দখলে। ওডারল্যান্ড বন্দী হন জার্মানদের হাতে। তবে কৌশলে তিনি বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের ক্যাম্পে কাজ করতে থাকেন। যোগ দেন ডাচ-প্রতিরোধ আন্দোলনে। ডাচদের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জার্মান ভাষা রপ্ত ছিল তাঁর। এই সুযোগ নিয়ে তিনি জার্মানদের গোপন আস্তানায় ঢুকে পড়েন। তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাতে থাকেন মিত্রবাহিনীর কাছে। ১৯৪৩ সালে তিনি কমান্ডো বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো সৈনিক ওডারল্যান্ড এ অভিজ্ঞতাই কাজে লাগিয়েছেন ঢাকায় নানাভাবে। প্রথম পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করলেও শুধু এতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি তিনি। এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আমাদের সঙ্গে, যিনি নিজের পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে নিয়াজির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। আর সেই সুযোগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সব খবর পৌঁছে যেত মুক্তিবাহিনীর কাছে। পদে পদে বিপদকে মাথায় রেখে এই মানুষটি লড়াই করেছেন। বাংলাদেশে ঢাকায় তাঁর নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীনের পর সম্ভবত একবার গিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি আর মুক্তিযুদ্ধের অপমান মানতে পারতেন না বলে আর যাননি।আমাদের সমাজে এখনো যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি, এখনো যে তর্ক, তা নিরসনে এই মানুষদের জানা জরুরি। এত বছর পর আমরা কিন্তু আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণদের জানাতে পারিনি তাঁদের কথা। ওডারল্যান্ড বাংলাদেশকে কেমন ভালোবাসতেন, তা তাঁর একমাত্র সন্তান অ্যানি হ্যামিলটনের কথাতেই জেনেছি। অ্যানি এসেছিলেন সিডনিতে বাংলা সংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজনে। বাবা তাঁকে বলতেন, ‘বাংলাদেশ আমার মন। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’ এই মানুষটি আমাদের পতাকা, সংগীত ও স্বাধীনতার এক মূর্ত প্রতীক। জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্কর, আঁদ্রে মারলো—এমন কিছু মানুষের পাশাপাশি তিনিও আমাদের মনে করিয়ে দেন, আমরা একা না। আমাদের মা জননী দেশ কখনো একা ছিল না।
শেষ জীবনেও ওডারল্যান্ড থাকতেন বাংলাদেশের ভাবনায় ব্যাকুল। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো লেখা পেলেই চোখের সামনে মেলে ধরতেন। নিকটজনকে বলতেন পড়ে শোনাতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় তিনি বিক্ষুব্ধ হতেন। তাঁর জন্য এটাই ছিল স্বাভাবিক, কারণ তিনি স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, নিজে যুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি নিজের ছেলের মতো দেখতেন।
অকুতোভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে আমাদের হয়ে শুধু যুদ্ধ করেননি, এখনো তাঁর পরিচয়ে সে স্মৃতি বহন করে চলেছেন। তাঁর প্যাডে দেখেছি ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড বি.পি. লেখা। এই যে বীর প্রতীক (বি.পি.) খেতাবটি, নিজের নামের সঙ্গে তাঁর সংযুক্ত বজায় রেখে ‘তিনি আমাদের লোক’ এই পরিচয় তুলে ধরেছেন আজীবন।
এই একমাত্র বিদেশি বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড তাঁর একমাত্র কন্যাকে সব সময় বলতেন, ‘মনে রেখো, বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা। পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি আবেগের এ ধারাটা অব্যাহত রেখো।’ শুভ জন্মদিন ওডারল্যান্ড।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য,
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য,
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য,
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


এখন বিজয়ের মাস। এ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। গর্ব করি। কিন্তু ইতিহাস বিষয়ে পালনীয় কর্তব্য পালন করি কি? আজ আমি এমন একজন মানুষের কথা লিখব, যিনি মারা যেতে পারেন জেনেও বাঙালির জন্য,
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫