Ajker Patrika

স্কুলে ফেরেনি ৩০% শিক্ষার্থী

আবুল কালাম আজাদ, চারঘাট
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৩১
স্কুলে ফেরেনি ৩০% শিক্ষার্থী

চারঘাট উপজেলার মেরামতপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে শাওন। বয়স ৯ বছর। করোনার শুরুতে পিরোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। ভ্যানচালক বাবা মন্টু মিয়া (৫০) অসুস্থ হলে পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবার ভ্যান চালাতে শুরু করে শাওন। ভ্যান চালিয়ে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়, তা দিয়ে চলছে সংসার। স্কুল খুললেও শাওনের আর যাওয়া হয়নি।

করোনাকালে দীর্ঘ ছুটির পর ফের পাঠদান শুরু হলেও শাওনের মতো চারঘাটের মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফেরেনি।

দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। তাদের আর ফেরানো যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্লাসে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসও স্বীকার করেছে।

সরেজমিনে উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের চকগোচর এলাকায় দেখা যায়, সেখানে একটি স্টিলের ফার্নিচার কারখানায় তিন-চারজন শিশু কাজ করছে। তাদের সবাই করোনার প্রকোপ শুরুর আগে স্কুল বা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করত।

এদের মধ্যে লেদের কারখানায় কাজ করছে ৯ বছরের শিশু সুব্রত। তার বাবা কাঞ্চন প্রামাণিক একজন কৃষক। সুব্রত ওই এলাকার চকগোচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সেও গত এক বছর ধরে ৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করছে।

চারঘাটে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাল্যবিবাহ, প্রজনন স্বাস্থ্য ও নেতৃত্ব বিকাশ নিয়ে কাজ করছে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট। হাঙ্গার প্রজেক্টের উপজেলা সমন্বয়কারী আশরাফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় এ এলাকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র কারখানা, ওয়ার্কশপ ও রাজমিস্ত্রির কাজ করছে শিশুরা। এখন তারা কাজ শিখে গেছে, তাতে আয়ও হচ্ছে। আর সে কারণেই অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না। বিপুলসংখ্যক কন্যাশিশুর বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেশিক্ষার্থীদের ৩০ ভাগ এবং মেয়েশিক্ষার্থীদের ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী এখনো স্কুলে ফেরেনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলাজুড়ে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। বাল্যবিবাহ এর অন্যতম কারণ। আমার নিজের প্রতিষ্ঠানেই এসএসসি পরীক্ষার্থী ২৩ জন ছাত্রীর মধ্যে ১৭ জনের বিয়ে হয়ে গেছে।’

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলগুলো নিয়মিত উপস্থিতির হারের হিসাব পাঠায়, তাতে দেখা যায় উপস্থিতির হার ৮১ শতাংশ। তবে গত কয়দিন তিনি ১৫টির মতো স্কুল পরিদর্শন করেছেন, এতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে উপস্থিত পেয়েছেন। কী পরিমাণ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে, সেটা আরও পরে জানা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত