Ajker Patrika

শিক্ষক-সংকটে পাঠদান ব্যাহত

মহসিন রেজা, দেওয়ানগঞ্জ
আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ১০: ০৭
শিক্ষক-সংকটে পাঠদান ব্যাহত

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক-সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকেরা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। সে সময় বিদ্যালয়টির নাম ছিল দেওয়ানগঞ্জ কো-অপারেটিভ হাই স্কুল। পরে ১৯৮৬ সালে সরকারীকরণ হওয়ার পর আগের নাম পাল্টে দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় করা হয়। বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান খুবই ভালো। এই অঞ্চলের প্রাচীন ও সুখ্যাত স্কুল এটি। এ কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। শিক্ষার্থী বেশি হওয়া প্রতি শ্রেণিতে দুটি করে শাখা বিভক্ত করে পাঠদান চালাতে হয়।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ছাত্রসংখ্যা ৬২৯। তার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ক ও খ শাখা মিলিয়ে ১৪৪ জন, সপ্তমে ১৩১, অষ্টমে ১২৬, নবমে ১২৫ ও দশম শ্রেণিতে ১০৩ জন।

শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিদ্যালয়টিতে বিষয়ভিত্তিক সিনিয়র ও সহকারী শিক্ষক প্রয়োজন ২৫ জন। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৯ জন। শিক্ষকের সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিদিনই পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি শাখায় ছাত্রদের পাঠদানে হাঁপিয়ে উঠেছেন কর্মরত ৯ শিক্ষক। প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলছে টানা পাঠদান।

দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল অর্গানোগ্রাম ও পদ বিভাজনের নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় ২৫ জন সিনিয়র ও সহকারী শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছে ৯ জন।

দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য শওকাতুল হক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষকের সংখ্যা কম বিধায় পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। যে কারণে দুশ্চিন্তায় বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। উপজেলার একমাত্র মাধ্যমিক স্তরের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতবর্ষের গৌরব অর্জন করলেও শিক্ষক-সংকটে হারাতে বসেছে সে সুখ্যাতি। যুগোপযোগী ও উন্নত শিক্ষা লাভের আশায় বিদ্যালয়টিতে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ভালো ফলাফলের আশায় তাদের অভিভাবকেরাও সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে স্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু শিক্ষক-সংকটে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্যাম বর্মণের পিতা শুধাংশু বর্মণ বলেন, এই অঞ্চলের মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি বিদ্যালয় এই একটিই। এর প্রধান সমস্যা শিক্ষক-সংকট। এ কারণে যেমন পড়ালেখা হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান তিনি।

দশম শ্রেণির ছাত্র শ্রাবণ ইসলাম সুমন বলেন, ‘সরকারি বিদ্যালয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক থাকবে, ভালো লেখাপড়া হবে এবং ভালো ফলাফল করতে পারবৎ—এই আশা নিয়ে এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। প্রতিদিনই আমাদের প্রয়োজনীয় ক্লাস মিস হচ্ছে।’

বিদ্যালয়টির সদ্যবদলি হওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-সংকট। এতে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ১৬টি সিনিয়র ও সহকারী শিক্ষকের পদ সৃজনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেছি।’

শিক্ষক-সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংকট রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল অর্গানোগ্রাম ও পদ বিভাজনের নীতিমালা অনুযায়ী সিনিয়র/সহকারী শিক্ষকের পদ সৃজনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত