Ajker Patrika

ঘণ্টা বাজে, মিঠাই তৈরি হয়, আসে না শিশুরা

হোসাইন আহাম্মেদ সুলভ, মুক্তাগাছা
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ১৯
ঘণ্টা বাজে, মিঠাই তৈরি হয়, আসে না শিশুরা

মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের রামপুর এলাকার বাসিন্দা আ. রহিম। বয়স ৬৩ বছর। এর মধ্যে ৩২ বছরই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে চালিয়েছেন সংসার। এখনো চলছে। মিঠাই বিক্রি করেই এক ছেলেকে পড়িয়েছেন কলেজ পর্যন্ত। মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। জমি কিনেছেন, তাতেই ঘর করে থাকেন তিনি। বর্তমানে নিজ এলাকায় হাওয়াই মিঠাই কারিগর হিসেবেই পরিচিত তিনি।

এক সময় হাওয়ার মিঠাই বিক্রি করতে ঘুরে বেড়াতেন নিজ এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা শহর। এখন শরীর চলে না আগের মতো। ব্যবসার জৌলুশ হারিয়েছে। আগে হাওয়াই মিঠাইয়ের ঘণ্টার আওয়াজ শুনলে ছেলে-মেয়েরা ছোটাছুটি শুরু করত। বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরতো মিঠাই কিনতে।

এখন সেই দিন আর নেই। পাল্টে গেছে শিশুদের খাবারের চাহিদা। এ অবস্থায় প্রতিদিনই ভাবেন মিঠাইয়ের ব্যবসা ছেড়ে দেবেন।

কর্মজীবনের শুরুর দিকে ৩২ বছর আগে নেত্রকোনায় ভাঙ্গারির ব্যবসা করতেন আ. রহিম। সেখান থেকেই হাওয়াই মিঠাই তৈরির হাতেখড়ি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জামালপুরের ইসলামপুর থেকে হাওয়াই মিঠাই তৈরির মেশিন কিনে নিয়ে আসেন। শুরু করেন ব্যবসা। নিজ বাড়িতে বসেই তৈরি করতেন এই মিঠাই।

সকাল হলেই হকাররা ভিড় করত বাড়ির আঙিনায়। কাচের বাক্সে লাল রঙের বল আকৃতির মিঠাই নিয়ে যে যার মতো বেরিয়ে পড়ত। নিজেও বেরিয়ে পড়তেন কোনো এলাকায়। সন্ধ্যায় ফিরে এসে সবাই বাক্স জমা দিয়ে যেতো। এখন আর হাওয়ার মিঠাই বিক্রি করার মতো হকার পাওয়া যায় না। শুধু শখের পেশা বলে এখনো ধরে রেখেছেন তিনি।

আ. রহিম বলেন, ‘একসময় এর চাহিদা ছিল অনেক। ছোট ছেলে-মেয়েরা যেমন পছন্দ করত, বড়রাও। এখন তো শহরের মানুষ চিনিই কম খায়। বাচ্চারা দোকানের চিপস্ খায়। হাওয়ার মিঠাই এখন অনেকের ভালো লাগে না। আগে চিনির সঙ্গে খাবার রং দিতাম। এখন আর রং টং দিই না।

আ. রহিম আরও বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিনই কই ব্যবসা ছাইড়া দিমু। আবার ভাবি এটা ছাইড়া কি কইরা খামু। শখের পেশা ছিল তাই করতাছি।’

পৌর এলাকার বাসিন্দা রিপন সারওয়ার বলেন, ‘আমরা ছোট থেকেই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে দেখছি। তার তৈরি হাওয়াই মিঠাই খেয়ে আমরাও বড় হয়েছি। এখন মাঝে মাঝে তাঁকে ছোট শিশুদের স্কুলের সামনে লম্বা সময় বসে থাকতে দেখা যায়। তবে পাল্টেছে ব্যবসার ধরন। আগে বাড়ি থেকে তৈরি করে এনে বিক্রি করতেন। এখন মেশিন কাঁধে নিয়ে ঘুরে ঘুরে তৈরি করেন আর বিক্রি করেন।’

কারিগর আ. রহিম জানান, সারা দিন ঘুরলে দেড় থেকে দুই কেজি চিনির মিঠাই তৈরি করা যায়। এতে তিন থেকে চার শ টাকা আয় হয়। তাতেই চালে সংসার। বয়স বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো ঘুরতে পারেন না। তা ছাড়া করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ব্যবসা আরও কমে গেছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত