Ajker Patrika

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: বিকল সরঞ্জামে সেবায় বঞ্চনা

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: বিকল সরঞ্জামে  সেবায় বঞ্চনা

নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলার অন্তঃসত্ত্বা রাহেলা (২২) নিরাপদ প্রসবের আশায় দীর্ঘ পথ পেরিয়ে গভীর রাতে পৌঁছান হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে সামনের বেসরকারি ক্লিনিকে। কারণ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে যন্ত্রটি বিকল ১৩ বছর ধরে, দুটি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রও নষ্ট। অধিকাংশ প্যাথলজি পরীক্ষাও হয় না। যাদের সংগতি আছে, তারা বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে এখানে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। দরিদ্রদের ফিরতে হয় সেবা ছাড়াই।

দেশের ২২ জেলার ৩১ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে অধিকাংশ স্থানে চিকিৎসকসহ দক্ষ জনবল এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও সরঞ্জামের সংকটে স্বাস্থ্যসেবার এমন নাজুক চিত্র পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা। যদিও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘চিকিৎসকের ঘাটতির তথ্য সঠিক নয়। তবে জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে ঘাটতি আছে। সেটি নিরসনের কাজ চলেছে। আইনি জটিলতায় টেকনোলজিস্ট নিয়োগে বিলম্ব হয়েছে। তবে দ্রুত টেকনোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তা ছাড়া সারা দেশে মেরামত অযোগ্য যেসব যন্ত্রপাতির তালিকা করা হয়েছে, সেগুলো কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণরূপে চালু করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসাযন্ত্রের তালিকা বানিয়েছে। সেই তালিকায় দেখা যায়, ৪২৭ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৮২টিতে অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি) অচল। সচল আছে ১৯৩টি। মোট ৫৮৬টি এক্স-রে যন্ত্রের মধ্যে ২৯৪টি সচল আর ২৯২টি অচল, যেগুলোর মধ্যে ৩৯টি মেরামতের অযোগ্য। ৪১৪টি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রের মধ্যে অচল ১১৪টি, সচল ২৩৩টি। কোনো কোনো উপজেলায় একাধিক যন্ত্র থাকলেও ৬৭ উপজেলায় একটিও নেই। ১ হাজার ১০টি ইসিজি যন্ত্রের মধ্যে ৬৩২টি সচল, ২৭৪টি অচল। ৬৬টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওটি টেবিল নেই। ৯৯টি অস্ত্রোপচার কক্ষে নেই ওটি লাইট। ১৪৪টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পোর্টেবল ওটি টেবিলও নেই। অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র না থাকায় ৯৯টি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয় না। ৫৮টিতে নেই ওটি ডায়াথার্মি যন্ত্র। এসব প্রতিষ্ঠানে ৭৭২টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নষ্ট ৩৪৩টি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষ জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি নিয়ে তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। 

 শুরু থেকেই বিকল
জানা গেছে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ বছর ধরে বিকল দুটি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র। টেকনোলজিস্ট না থাকায় বন্ধ এক্স-রে সেবাও। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট অবসরে যাওয়ায় এক্স-রে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র দুটি সরবরাহের পর থেকেই নষ্ট।

রাজশাহীর পুঠিয়ায় চালু করার ১০ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় এক্স-রে যন্ত্র। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে জেনারেটর ও পানির ফিল্টার। ইউএইচও আলী মাজরুই রহমান বলেন, ‘বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। আশা করা যায়, সমাধান হবে।’ 

পরামর্শ ছাড়া সবই বন্ধ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেকনোলজিস্ট না থাকায় ১৬ বছর ধরে বন্ধ এক্স-রে বিভাগ। পাঁচ বছর ধরে তালাবদ্ধ প্যাথলজি বিভাগ। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য সব সেবাই বন্ধ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন দীপ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সব পদই শূন্য। এগুলো পূরণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। 

যন্ত্র-সরঞ্জাম অচল 
হবিগঞ্জের সাত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে যন্ত্র বিকল দেড় যুগ ধরে। শায়েস্তাগঞ্জে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনই নেই। সিভিল সার্জন নূরুল হক বলেন, ‘হবিগঞ্জ সদর, বানিয়াচং, লাখাই, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুরে দেড় যুগ ধরে এক্স-রে মেশিন বিকল। প্রতি মাসে ঢাকায় লোকবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের তথ্য লিখিতভাবে জানিয়েও আমরা প্রতিকার পাচ্ছি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ বছর ধরে বিকল এক্স-রে যন্ত্র। হয় না আলট্রাসনোগ্রামও। ইউএইচও (ভারপ্রাপ্ত) খাদিজা রহমান বলেন, ‘মেরামতের জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে এখনো বরাদ্দ আসেনি।’

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম এবং ইসিজি যন্ত্র নষ্ট। নেই ওটি টেবিল, ওটি লাইট। ইউএইচও আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সাত বছর ধরে নষ্ট এক্স-রে যন্ত্র। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন এক্স-রে মেশিন বসানোর জন্য একটি কক্ষ মেরামত করা হয়েছে। ঢাকার দোহার উপজেলায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে অটোক্লেভ ও আলট্রাসনোগ্রাম। চারটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেও তিনটি নষ্ট। যদিও ইউএইচও জসীমউদ্দিনের দাবি, অন্যান্য উপজেলার চেয়ে দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক এগিয়ে।

অর্থ-জনবল নেই, বাক্সবন্দী যন্ত্র
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে জনবলসংকটে ১৮ বছর ধরে বাক্সবন্দী এক্স-রে যন্ত্র। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবদাস দেব বলেন, ‘আমাদের প্রায় সব মেশিনই নষ্ট। এক্স-রের টেকনিশিয়ান নেই।’ তিতাসেও দুটি এক্স-রে যন্ত্র কাজে লাগছে না। ইউএইচও সরফরাজ হোসেন খান বলেন, ‘টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্স-রে সেবা দিতে পারছি না।’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ৩ বছর এবং টাঙ্গাইলের সখীপুরে ১৪ বছর ধরে বাক্সবন্দী ৫০ কেভি জেনারেটর। ঈশ্বরগঞ্জের ইউএইচও লোপা চৌধুরী বলেন, ঘণ্টায় পাঁচ লিটার ডিজেল লাগে। এর জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দেও জেনারেটর টাকার অভাবে বাক্সবন্দী।

টেকনোলজিস্ট না থাকায় সাত বছর এক্স-রে হয় না বরগুনার বেতাগী উপজেলায়। কক্সবাজারের চকরিয়ায় ১৭ বছর ধরে নেই অ্যাম্বুলেন্স, প্রিন্টারের অভাবে চালু হয়নি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চালু হয়নি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যন্ত্র থাকলেও লোকবলের অভাবে অস্ত্রোপচার বন্ধ সাড়ে তিন বছর। বাগেরহাটের কচুয়ায় টেকনোলজিস্ট না থাকায় বন্ধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

৪৬% চিকিৎসকের পদ শূন্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পর্যায়ে ৪৬ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য। ৪২৭টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত ৬ হাজার ৭৯০ পদের বিপরীতে কর্মরত ৩ হাজার ৬৯৪ চিকিৎসক। নার্স ও মিডওয়াইফ পদের ১৩ শতাংশ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের ৩৫ শতাংশ, ডেন্টাল সার্জন পদের ৪৬ শতাংশ শূন্য। এ ছাড়া সাপোর্ট স্টাফ ৫০ শতাংশ; মাঠকর্মী ৩২ শতাংশ এবং অন্যান্য পদের ৪৩ শতাংশ পদ শূন্য আছে। সব মিলিয়ে ৩৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ শূন্য পদ নিয়ে চলেছে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা।

দেশে ৪২৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ৫টি ১০০ শয্যার, ৬টি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের পর্যায়ে, ৩৫১টি ৫০ শয্যার।

জনবল, যন্ত্রপাতি সরবরাহের তাগিদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে; কিন্তু যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের দায়িত্ববোধের ঘাটতি রয়েছে। প্রধান সমস্যা হলো, শূন্য পদে নিয়োগদানে দেরি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে হবে। লোকবলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে। জবাবদিহিমূলক প্রশাসন সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান সম্ভব হবে না।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা দিতে হলে দক্ষ জনবল ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুসারে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স এবং পাঁচজন টেকনোলজিস্ট থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে সম্পূর্ণ বিপরীত।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমেই শূন্য পদে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ দিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে। এসবের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে অধিদপ্তরের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।’ 

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আজকের পত্রিকার হাতিয়া, বাগাতিপাড়া, রাজৈর, কচুয়া, ঈশ্বরগঞ্জ, ত্রিশাল, কোটচাঁদপুর, বড়লেখা, কাপাসিয়া, পুঠিয়া, সখীপুর, চৌদ্দগ্রাম, তিতাস, ভেড়ামারা, জীবননগর, কামারখন্দ, ভূরুঙ্গামারী, ভাঙ্গুড়া, জগন্নাথপুর, দোহার, বেতাগী, চকরিয়া ও কেন্দুয়া প্রতিনিধি।] 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত