Ajker Patrika

চরিত্রগুলো বড় একা

এম এস রানা, ঢাকা
চরিত্রগুলো বড় একা

শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ড্রোনের চোখে দেখা মিলল সবুজ বাংলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের। সেই সঙ্গে চোখ বুলিয়ে নেওয়া সিনেমার টাইটেল আর ক্রেডিট লাইনে। সিনেমার নাম মেঘের কপাট। নির্মাতা ওয়ালিদ আহমেদের প্রথম সিনেমা এটি। সিনেমার চিত্রনাট্য রচনার পাশাপাশি সহ-প্রযোজক হিসেবেও রয়েছেন ওয়ালিদ। মুক্তি পেয়েছে ৩ নভেম্বর।

সাদামাটা এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে নির্মিত সিনেমার গল্পটাও সাদামাটা, সাধারণ, তবে উপভোগ্য। ভিলেনের হুমকি-ধমকি নেই, হুড়োহুড়ি-মারামারি নেই, নেই চিৎকার-চেঁচামেচি। একেবারেই ড্রামাফিল্ম বলতে যা বোঝায় মেঘের কপাট নিয়ে সেই লাইন বরাবর হাঁটার চেষ্টা করলেন পরিচালক। সুন্দর ফ্রেম, দারুণ কালার কম্বিনেশন, চোখ-জুড়ানো ড্রোন শট নিয়ে খেলতে খেলতে পরিচালক যেন ভুলেই গেলেন এটা সিনেমা, কিছু সিনেমাটিক আর ড্রামাটিক এক্সাইটমেন্টের উপকরণগুলো অধরাই রেখে দিলেন।

গল্পটা যেমন: ধ্রুব একটি চা-বাগানে কাজ করে। বসের স্নেহের ছায়া রয়েছে তার ওপর। মা নীলা গানের মানুষ, ছোট ছেলেমেয়েদের গান শেখান। আর অতি যত্নে আগলে রাখেন নিজের ছেলেকে। ধ্রুবর বন্ধু বলতে পাওয়া গেল গানের মানুষ এক বড় ভাই সাইফকে। তিনি গান সুর করেন, ধ্রুব গান লেখেন। চাকরিটা ধ্রুবর ভালো লাগে না। প্রেম করে তানিয়ার সঙ্গে। ধ্রুবর অফিসের একটি প্রজেক্ট ভিজিটে বিদেশ থেকে আসা জারা ধ্রুবর সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে প্রেমে পড়ে যায় তাঁর। ধ্রুব আর তানিয়ার প্রেমের বাগানে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া।

ত্রিভুজ প্রেমের খেলায় স্বাভাবিকভাবেই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় ধ্রুব-তানিয়ার প্রেম। কষ্ট পায় জারা। এর মধ্যে হঠাৎ করেই হাজির হন ধ্রুবর বাবা আকাশ। জানা যায়, ধ্রুবর জন্মের আগে স্ত্রীর আত্মহত্যার খবরে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন তিনি। এতদিন পর খুঁজে পেয়েছেন নিজের স্ত্রী-সন্তানকে। কিন্তু দীর্ঘদিনের একাকিত্বে গড়ে তোলা নিজের জগতে তাকে আর জায়গা দিতে চান না ধ্রুবর মা।

খটকা লাগল: স্ত্রীর লাশ না দেখেই আত্মহত্যার খবরে সব ছেড়ে বছরের পর বছর ধ্রুবর বাবার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়াটা। পুরো সিনেমায় চরিত্রগুলো একা একা দৌড়ুল। বড় একা। আশপাশের মানুষ খুব কম। এই যেমন, তন্বী তার বাবার কথা বলল, অথচ তার পরিবারের কাউকেই গল্পের ক্যানভাসের কোথাও দেখা গেল না। সাইফ থেকে শুরু করে কারও পরিবার-স্বজনের ছায়া পর্যন্ত দেখা গেল না। দ্বৈত চরিত্রে ধ্রুবর বাবার ভূমিকায় ইভনকে দিয়ে অভিনয় না করালেই ভালো করতেন পরিচালক। বেশ কয়েকটি দৃশ্যে অভিনয়শিল্পীদের মুভমেন্ট, কন্টিনিউটি না মেলাটা চোখে লেগেছে। কিছু দৃশ্যকে বিনা প্রয়োজনে টেনে বড় করা, একই দৃশ্যের রিপিটেশন, স্বল্পসংখ্যক অভিনেতা নিয়ে সিনেমা নির্মাণের চেষ্টা, বাজেটস্বল্পতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। প্রথম দৃশ্যটি ছাড়া সিনেমার মধ্যবিরতি পর্যন্ত না দেখলেও দ্বিতীয়ার্ধে কোনো প্রভাব ফেলে না। জারা যে প্রজেক্ট ভিজিটে এল সেই প্রজেক্টের আগামাথা কিছুই বোঝা গেল না। পুরো সিনেমায় অতিকষ্টেও কোনো চা-শ্রমিক বা স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি যেমন চোখে পড়েনি, তেমনি একটা অফিস মাত্র দুজন কর্মী দিয়ে চালিয়ে দেওয়াটাও কেমন জানি লাগল।

ভালো লাগল: সিনেমার গানগুলো অসাধারণ হয়েছে। গানের কথা ও সুর কানে লেগে থাকবে অনেক দিন। অভিনয়টা ভালোই করেছেন সবাই। তবে, ইভনের অভিনয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নজর কাড়বে। একেবারেই সাধারণ ছেলেটার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, বাচনভঙ্গি আর পুরোটা সময় সাবলীল অভিনয় ইভনের সুন্দর ক্যারিয়ারের ইঙ্গিত দেয়। প্রথম সিনেমা হিসেবে গল্পে টুইস্টের ঘাটতি থাকলেও নির্মাণে উতরে গেছেন ওয়ালিদ। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, মেইনস্ট্রিম সিনেমা সবসময়ই বাণিজ্য আর প্রতিযোগিতার জায়গা। এখানে প্রথম নির্মাণ বা শেষ নির্মাণ বড় কথা নয়, দর্শকের মন জয় করে জয়ী হওয়াটাই মূলকথা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত