আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ

তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা না থাকলেও স্বতন্ত্র হিসেবে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। সবকটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নির্বাচন করছেন। এই নির্বাচনে উপজেলায় একমাত্র ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দলীয় প্রার্থী ছাড়া বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রার্থী নেই। তবে নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের দলীয় পদধারী বা আওয়ামী বলয়ের লোকজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াই করছেন। এ কারণে স্থানীয় অনেকে মনে করছেন, গোসাইরহাটে ভোটের মাঠে এখন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাটের ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ইদিলপুর ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৭ টিতে আগামী ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৭টি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে মোট ৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে নাগেরপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সামন্তসার ইউনিয়নে ৭ জন, গোসাইরহাট ইউনিয়নে ৭ জন, কোদালপুর ইউনিয়নে ৬ জন, কুচইপট্টি ইউনিয়নে ৩ জন, আলাওলপুর ইউনিয়নে ৪ জন, নলমুড়ি ইউনিয়নে ৪ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত আসনে মোট ৭২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২০২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নৌকা প্রতীক না থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় পদধারী বা আওয়ামী বলয়ের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে অন্য দলের তেমন কোনো প্রভাব না থাকায় নিজেদের দলীয় প্রার্থীরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে লড়াই করছেন। আলাওলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য উসমান গনি ব্যাপারী চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাঁর সঙ্গে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন। এ ছাড়া এই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জালাল আহমেদ হাতপাখা নিয়ে ও মিসেস ফাতেমা পান্না আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 
কোদালপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খবির উদ্দিন খান। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুজ্জামান (বশির) ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। এ ছাড়া কোদালপুর ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আল আমিন হাতপাখা নিয়ে ও সৈয়দ বোরহান উদ্দিন টেবিলফ্যান প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গোসাইরহাট ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মুজাফফর হোসেন সরদার এবার নির্বাচনে না দাঁড়ালেও তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাঁর সঙ্গে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চৌধুরী আহসান সিদ্দিকী (লাবু)। ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চৌধুরী মনিরুজ্জামান মানিক, টেলিফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আলমগীর হোসেন, ঢোল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আনিসুজ্জামান সোহেল, চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মতিউর রহমান, টেবিলফ্যান প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাহিমা খাতুন।

কুচইপট্টি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাছির উদ্দিন (স্বপন) আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাঁর সঙ্গে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবুল বাসার। চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাহবুব হোসেন।

নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এনায়েত করিম মিলু। তাঁর সঙ্গে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক। উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল জলিল চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন হাতপাখা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সামন্তসার ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আ. রব মিয়া রজনীগন্ধা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর সঙ্গে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য আমির হোসেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ আহমেদ চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন টেবিলফ্যান প্রতীক নিয়ে। এ ছাড়া রুবেল রাড়ী ঘোড়া প্রতীক, বিল্লাল খান মোটরসাইকেল ও তানভীর আহম্মেদ বিল্লাল অটোরিকশা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নলমুড়ি ইউপিতে আওয়ামী লীগে নেতা মাহফুজুল হক মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর সঙ্গে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক আওয়ামী লীগে  আজাহার হোসেন সরদার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহজাহান শিকদার বলেন, ‘এখানে উন্মুক্ত প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এ কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।’