Ajker Patrika

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশেহারা

ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৩: ৪৫
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশেহারা

জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়িসহ ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য স্থাপনা।

এদিকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। গত এক মাসে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত তিন শতাধিক পরিবার। ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁরা দীর্ঘদিন বন্যায় পানিবন্দী হয়ে থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো দেখা নেই। তাঁরা কী খাচ্ছেন, কোথায় ঘুমাচ্ছেন, কী করবেন এসব নিয়েও জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বানভাসি মানুষের জন্য সরকারিভাবে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হলেও অধিকাংশ এলাকায় সেই ত্রাণ না পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জামালপুর উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামটি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া চরপুটিমারীর চারনংচর গ্রাম এবং গোয়ালেরচরের মোহাম্মদপুর বালুচর গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে ভাঙন হুমকির মুখে পড়েছে চারনংচর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, চারনংচর বাজার, ইসলামপুর-সভুকুড়া-সভারচর-মহলগিরী সড়ক, বালুচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য স্থাপনা।

বন্যাকবলিত এলাকায় ফসলাদি, আসবাবপত্র, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজসহ নানা জিনিসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বানভাসি এসব মানুষ কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা ফজলু, তোতা, কামাল ও শহিদ মিয়া বলেন, ‘ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

চরপুটিমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান সুরুজ মাস্টার বলেন, 'প্রতিনিয়তই ভাঙনকবলিত এলাকায় যাচ্ছি। খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কিন্তু ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য স্থাপনা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।'

গোয়ালেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, 'পানি কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, অসংখ্য স্থাপনা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।'

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, 'ভাঙন ঠেকাতে ইতিমধ্যে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মোহাম্মদপুর বালুচর গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য স্থানেও ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আলোচনা চলছে।'

এদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের পোল্যাকান্দি গ্রামের নামাপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হওয়া এ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো গ্রামটাই নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।

নামাপাড়ার বাসিন্দা আঙ্গুরি বেগম বলেন, ‘বিশ বছর আগে এই নদে ভিটেমাটি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে সরকারি বাঁধের পাড়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করেছি। বছর দশেক আগে নদে চর জাগে। সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস এখন আবারও ভাঙন। সব ভেঙে নিলে শেষ বারে কোথায় দাঁড়াব?’

স্থানীয় বাসিন্দা আ. রাজ্জাক, নুদু মিয়া, খুদু মিয়া, আফসার আলী, এনামুল হক জানান, পঁয়তাল্লিশ বছর থেকে এ অঞ্চলে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র। ইতিমধ্যে পোল্যাকান্দি, মদনেরচর, মাদারেরচর, ফারাজিপাড়া, গুমেরচর বিলীন হয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে। আগের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে গ্রামগুলো। অথচ ভাঙন রোধে সরকারি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা আরও বলেন, নদটির নাব্যতা ফেরাতে খনন করে গভীর করা হলে ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাবে এ অঞ্চলসহ অন্যান্য ভাঙন কবলিত অঞ্চল।

এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিবেদন পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু সাঈদ মুঠোফোনে জানান, পোল্যাকান্দি নামাপাড়ায় বন্যা পরবর্তী নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থানেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত