Ajker Patrika

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৯: ০৮
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

ডেঙ্গুর মৌসুম আগস্ট-সেপ্টেম্বর। তবে এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। এর আগে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগে এই জ্বরে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্‌-মৌসুম জরিপে মিলেছে আরও দুঃসংবাদ। এতে দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়ই এবার এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ‘বিপৎসীমার’ চেয়ে অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্রুটো ইনডেক্স বা এডিস মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্‌-মৌসুম জরিপের তথ্য বলছে, উত্তর সিটির বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর দক্ষিণ সিটিতে এই হার ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সার্বিকভাবে দুই সিটিতে এডিসের ঘনত্ব ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ ড. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, ‘দুই সিটিতে যে পরিমাণ এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, তা ভয়াবহ। এখন যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে আর পানি জমে থাকছে, তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্‌-মৌসুম জরিপ
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা গত ১৮ জুন থেকে ২৫ জুন রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে এডিস মশার প্রাক্‌-মৌসুম জরিপ পরিচালনা করেছে। এতে দুই সিটিতেই বহুতল ভবনগুলোয় সবচেয়ে বেশি এডিসের লার্ভার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির বহুতল ভবনগুলোয় লার্ভার ঘনত্ব ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর দক্ষিণ সিটির বহুতল ভবনগুলোয় লার্ভার ঘনত্ব ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন স্থাপনা, খালি জমিতেও উদ্বেগজনক হারে লার্ভা পাওয়া গেছে। পাশাপাশি প্লাস্টিকের ড্রাম, মগ, টায়ার ও সিমেন্টের পানির ট্যাংকেও লার্ভার উপস্থিতি মিলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম

আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মৌসুম-পূর্ববর্তী জরিপের কার্যক্রম এখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে প্রাথমিক ফলাফলে উভয় সিটিতেই মশার লার্ভার উপস্থিতি অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে। ডেঙ্গুর প্রকৃত মৌসুম আগস্ট-সেপ্টেম্বর। কিন্তু এ বছর এখনই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা লক্ষণীয়। আমরা এই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশের চেষ্টা করছি। এরপর মশা নিয়ন্ত্রণের বাকি কাজ সিটি করপোরেশনের।’ তিনি আরও বলেন, এবার কোনো সরকারি হাসপাতালকেই ডেঙ্গু নিবেদিত করা হবে না। সব হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হবে। অসংক্রামক রোগীদের চিকিৎসায় যেন বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকেও লক্ষ রাখা হবে।

২৪ ঘণ্টায় ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৫০৯
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গতকাল রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫০৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২২৪ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৮৫ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২ জন মারা গেছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৩৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৯৬৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ৪২২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

ডেঙ্গুতে এ বছর মৃত্যুর পর্যালোচনা
চলতি বছর দেশে এ পর্যন্ত, অর্থাৎ মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুতে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮ হাজার ৭৫৭ জন। এর মধ্যে গত ১ জানুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৫০ জন। তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশ নারী, ৩৮ শতাংশ পুরুষ। ৮০ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে হাসপাতালে ভর্তির ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশের বয়স ১৯ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। প্রায় ১১ শতাংশ ১১ বছরের কম বয়সী শিশু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত