Ajker Patrika

সাকামের ৫৭১তম পরিবেশনা

নাইমুর রহমান, নাটোর
সাকামের ৫৭১তম পরিবেশনা

কারাগারের ভেতরে ফাঁসির মঞ্চ। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ক মণ্ডলকে ফাঁসি দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। বিপত্তি বাধল তাঁর কাঁচা মরিচ দিয়ে পান্তা খাওয়ার শেষ ইচ্ছাপূরণে। অন্তিম এ ইচ্ছাপূরণে সৃষ্ট হাস্যরস এক বিষাদে ভরা সমাপ্তির রূপ নিয়ে এগোল। দণ্ডিত ক মণ্ডল শেষমেশ জানালেন, কোন কারণে তাঁকে চড়তে হলো ফাঁসিকাষ্ঠে। নিস্তব্ধ এক ফাঁসির মঞ্চ এভাবেই জীবনবোধের গভীর বেদনার বার্তা দিল শোষক শ্রেণির চরম নিষ্ঠুর পরিহাসে শ্রমিক শ্রেণির দুঃসহ দিনযাপনের।

নাটোর শহরের শুকুলপট্টির সাকাম মিলনায়তনে গত শনিবার রাতে মঞ্চস্থ হলো বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক ‘একটি অবাস্তব গল্প’। করোনা মহামারির পর এটি সাকামের প্রথম এবং ৫৭১তম পরিবেশনা। এই পরিবেশনার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে সরব হলো সাকাম। নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন আশীষ কুমার সান্যাল।

নাটকটিতে ক মণ্ডল চরিত্রে অভিনয় করেন অধ্যাপক সুবীধ কুমার মৈত্র। এ ছাড়া নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নুরুজ্জামান, পরিতোষ অধিকারী, রফিকুল ইসলাম নান্টু, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, অমল ব্যানার্জি, শাহাদাত হোসেন, শংকর দাস ও দেবাশীষ সরকার। আবহসংগীতে মাহবুব হোসেন, আলোকসম্পাতে এস এম পারভেজ ও সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন আতিকুল হক লিটন।

১৯৭২ সালের ৫ মে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সাকাম’ প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলার তিনজন নাট্যব্যক্তিত্ব—প্রয়াত সাদেক নবী, কালিদাস রায় এবং মন্মথ প্রামাণিকের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে সংগঠনটির নাম রাখা হয় ‘সাকাম’। প্রতিষ্ঠার পর ৫০ বছর ধরে নাটোর-রাজশাহী অঞ্চলে নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে সাকাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। সংগঠনটি প্রচুর দর্শকপ্রিয় নাটক মঞ্চস্থ করেছে গত ৫০ বছরে। ‘একটি অবাস্তব গল্প’ সেই জনপ্রিয় নাটকগুলোর একটি।

নাটকের দৃশ্যে স্ত্রী হত্যার দায়ে দিনমজুর ক মণ্ডলকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পূর্বে শেষ ইচ্ছার কথা শুনতে চান জেলার। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে ক মণ্ডল মরিচ দিয়ে পান্তাভাত খেতে চান। কিন্তু পান্তা আর মরিচ জোগাড় হয় না। অবশেষে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর পর দেখা যায়—ক মণ্ডল মারা যাননি। তাঁকে ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে নামিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কিছুই বলতে পারেন না। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতে শুরু হয় নাটকের ভেতর নাটক। সে নাটকে অভিনয় করতে থাকেন পুলিশই। একপর্যায়ে অভিনয় করতে গিয়ে সত্যি সত্যি পুরোহিত বাচস্পতিকে খুন করে ফেলেন জেলার। ঘটনার একপর্যায়ে স্মৃতি ফেরে ক মণ্ডলের। এভাবে এগিয়ে যায় কাহিনি।

নাটকটি দেখতে এসেছিলেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পৌর মেয়র ও সাকাম সভাপতি উমা চৌধুরী, পুলিশ কর্মকর্তা কাজী জালাল উদ্দীন আহমেদ, চিত্তরঞ্জন সাহাসহ গণমান্য ব্যক্তিরা।
চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, গভীর জীবনবোধের নির্মম উপলব্ধি ‘একটি অবাস্তব গল্প’-এর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে।

উমা চৌধুরী বলেন, ‘করোনা মহামারির পর নাট্য আয়োজন প্রায় ছিলই না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নাটকের অভিনেতা ও কলাকুশলীরা নিজ নিজ পেশাগত কাজে নিয়োজিত হওয়ায় এখন শিল্পীসংকট চলছে। এ ছাড়া কারিগরি নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নাট্যচর্চার ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে এই পরিবেশনা সাকামের।’  

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ নাটকের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সাকাম নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করলে নাটোরের মানুষ উপকৃত হবে। সামাজিক অসংগতি, সমস্যা ও সম্ভাবনার নানা দিক উঠে আসে নাটকের মধ্য দিয়ে। ভবিষ্যতে নাট্যায়োজনে সাকামকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত