Ajker Patrika

বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষে কৃষকের দিনবদল

মো. রিপন হোসেন, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) 
Thumbnail image

‘আগে আমার কিছুই ছিল না। ঘাস চাষ করে আমার ভাগ্য ঘুরেছে। সাড়ে তিন বিঘা জমি কিনেছি। মুরগির খামার করেছি। পরিবারে এখন আর কোনো অভাব নেই। নিয়মিত ছয় বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করি। বছরে চার লাখের বেশি টাকার ঘাস বিক্রি করি।’

কথাগুলো বলেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা মনোহরপুর মাঠপাড়ার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান, ২০০৪ সালে জীবননগর প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের তৎকালীন চিকিৎসক মো. জোয়াহেরুল ইসলামের সহযোগিতায় গবাদিপশুর জন্য ১০ কাঠা জমিতে ঘাস চাষ করেছিলেন। পরের বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষ শুরু করেন।

শাহাদাত বলেন, আগে জীবননগরে ঘাসের বাজার ছিল না। তাই পাশের উপজেলার দর্শনায় ঘাস বিক্রি করতে নিয়ে যেতেন। এখন জীবননগরে প্রতিদিন ঘাস বিক্রি হয়। ঘাসের বাজার আছে।

ব্যবসায়ীরা খেত থেকে পাইকারি ঘাস কিনে নিয়ে যান।

জীবননগর পৌরসভার বাসিন্দা ঘাসচাষি আবুল বাশার বাদশা বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেছেন। বাজারে নিজেই ঘাস বিক্রি করেন। খেত থেকে পাইকারি বিক্রি করলে বছরে এক বিঘা জমির ঘাস ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রি করলে এক লাখের বেশি টাকায় বিক্রি করা যায়।

জীবননগর ঘাস বাজারের ব্যবসায়ী সমরেশ বলেন, প্রতিদিন তিনি ছয় হাজার হালা (আঁটি) ঘাস বিক্রি করেন। ৬০০ টাকার বেশি লাভ হয়। এক হালা ঘাস পাঁচ টাকা করে বিক্রি করেন। অনেক চাষি ঘাস কেটে এনে বাজারে পাইকারি দিয়ে যান আবার তিনিও খেত থেকে পাইকারি কিনে আনেন।

ঘাস ক্রেতা আবদুল মান্নান বলেন, পশুকে খাওয়ানোর জন্য তাঁর নিজের জমিতে ঘাস আছে। যেদিন কাজের চাপ বেশি থাকে, সেদিন বাজার থেকে ঘাস কিনে নিয়ে যান। তিনি ৯ হালা ঘাস ৪০ টাকায় কিনেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তানভীর হাসান বলেন, ‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা ঘাস চাষ সম্প্রসারণে খামারিদের মধ্যে বিনা মূল্যে উন্নত ঘাসের জাত বিতরণ করি। বর্তমানে জীবননগরে অন্তত ৮০০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ হচ্ছে।’

তানভীর হাসান বলেন, ‘আমাদের সবুজ নেপিয়ার, লাল নেপিয়ার, পাকচং, জার্মান, পারা, গিনিসহ বিভিন্ন জাতের ঘাস রয়েছে। খামারিরা উচ্চমূল্যের দানাদার খাবার না খাইয়ে ঘাস খাওয়ানোর মাধ্যমে গরুর দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়াতে পারেন।

জীবননগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে ঘাস অন্য চাষের থেকে লাভজনক। সম্ভাবনাময় খাতে চাষিদের উৎসাহী করতে ও নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত