Ajker Patrika

ঈদ ঘিরে অর্থনীতি চাঙা হয়

ঈদ ঘিরে অর্থনীতি চাঙা হয়

আজকের পত্রিকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে গত দুই বছর ঈদের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা গেছে। এবার কেমন হবে বলে আশা করছেন?
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ: যতটা চাঙা হবে বলে আশা করা হয়েছিল এবার ততটা হয়নি। এবার পণ্য বিক্রি কম হওয়ার কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষ সারা বছর মুখিয়ে থাকে এই উৎসবের জন্য। এ সময় কাপড়-চোপড় কিনবে বলে অনেকে টাকা খরচ না করে জমায়। স্বাভাবিকভাবে মানুষ যেভাবে খরচ করে, উৎসবে তারচেয়ে বেশি খরচ করে। পশ্চিমাবিশ্বে যেমন ক্রিসমাস ডে কেন্দ্র করে বিক্রিবাট্টা হয়। ওই সময় প্রচুর গিফট দেয় মানুষ। খরচ করার জন্য ওই সময় প্রচুর মানুষ বসে থাকে।

আজকের পত্রিকা: কিন্তু মার্কেটগুলোয় ভিড় দেখা যাচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতা না থাকলে নিশ্চয় ক্রেতাসংকট হতো?
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ: দোকানে ভিড় আছে কিন্তু লোকেরা কিনতে পারছেন না। একদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। এবার একাধিক কারণে জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। প্রথমত. ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, গত দুই বছরে যে লোকসান করেছি, সেটা তুলে নেব। এ প্রবণতার প্রভাব পড়েছে জিনিসপত্রের দামে। দ্বিতীয়ত. আমাদের অর্থনীতিতে যে একটা বৈষম্য তৈরি হয়ে আছে অর্থাৎ কতিপয় মানুষের কাছে প্রচুর টাকা আছে, অন্যদিকে অধিকাংশের কাছে টাকা নাই। কতিপয় যেসব মানুষের কাছে টাকা আছে, তারাই মার্কেটে হুমড়ি খেয়ে জিনিসের দাম না জিজ্ঞেস করে কিনছে। ফলে বিক্রেতার একটা ধারণা জন্মেছে যে দাম বাড়ালেও সেটা কেনার মতো লোক তো আছে। তাহলে তিনি কেন দাম কমাবেন? আর সাধারণ মানুষ কিনতে না পেরে তাকিয়ে দেখে।

আজকের পত্রিকা: ঈদের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য দিক কী বলে মনে করেন?
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ: ঈদের বাজারে সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে রয়েছে বস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী। বস্ত্রের মধ্যে পায়জামা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, লুঙ্গি ও টুপি প্রধান। এরপর রয়েছে জুতা, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার। আর উচ্চবিত্তের জন্য রয়েছে সোনা, হীরার অলংকার ও গাড়ি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত এবং ঋণের অংশ হিসেবে গ্রামের অংশ শহরের তুলনায় অনেক কম। গ্রাম থেকে যতটুকু আমানত নেওয়া হচ্ছে, তার অর্ধেক বিনিয়োগ হচ্ছে শহরে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এ চিত্র একেবারে উল্টে যায়। শহরের মানুষ হয় গ্রামমুখী। আর সারা বছর স্তিমিত হয়ে থাকা গ্রামের হাটবাজার কয়েক দিনের জন্য দারুণ চাঙা হয়ে ওঠে।

আজকের পত্রিকা: আমাদের ঈদ উৎসবের অর্থনীতির আকার কত বড়?
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ: ঈদে চাকরিজীবীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ অর্থ বাজারে চলে যায়। কারণ, তাঁরা একই মাসে বেতন এবং বোনাস পান। ব্যাংকগুলোয় এ সময় টাকার চাহিদা বাড়ে। এ সময় প্রবাসী আয়টা ভালো আসে। তার মানে ওই টাকাটা এখানে এসে খরচ হয়। ঈদুল ফিতরে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করে। এর ফলে পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়। এই ঈদের প্রাক্কালে মানুষ জাকাত-ফিতরা দেয়, এই বাবদও একটা খরচ বাড়ে। এই ঈদে সালামি দেওয়া হয় বেশি। সালামি বাবদও টাকা লেনদেন হয়। এই ঈদেই মানুষ নতুন পোশাক পেতে চায়। বিদেশ থেকেও আসে। আর ঈদুল আজহায় হজ বাবদ একটা বড় পরিমাণের অর্থ লেনদেন হয়। পশু কোরবানিতেও অনেক টাকার লেনদেন হয়। পশুর চামড়ারও একটা বড় ব্যবসা হয়। শুধু গরুর মাংশের মসলাই বিক্রি হয় ৯০০ কোটি টাকার মতো। হজ, কোরবানি এবং যাতায়াত মিলিয়েও দুই ঈদে টাকার লেনদেন মোটামুটি সমান 
সমান যায়।

আজকের পত্রিকা: ঈদের অর্থনীতিতে সবাই কীভাবে সুফল পেতে পারে বলে আপনি মনে করেন? 
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ: অব্যবস্থাপনার ফাঁকফোকরে পরিবহন খাতে ভোগান্তি বাড়ছে, পণ্য ও সেবামূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপদসংকুল হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা হারানো সীমিত আয়ের মধ্য ও নিম্নবিত্তদের। কতিপয় মানুষের হাতে অস্বাভাবিক আয়ের টাকা বেশি হওয়ায় তারা কেনাকাটায় জৌলুস সৃষ্টি করায় অর্থনীতিতে উন্নয়নের ছায়া প্রমাণের চেষ্টা অধিকাংশ মানুষের নিতান্ত সাদামাটা থাকাকে অসম্ভব করে তুলছে। সীমিত একপক্ষের কাছে যা উচ্ছ্বাসের অপব্যয়ের উৎসব, আমজনতার কাছে তা বঞ্চনা বেদনার। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে এবারের ঈদ উৎসব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত