Ajker Patrika

গোয়ালন্দে তামাকের বিষ

ফিরোজ আহম্মেদ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ১৩: ৫৭
গোয়ালন্দে তামাকের বিষ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের চাষিরা দেশি-বিদেশি টোব্যাকো কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বিষাক্ত তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তামাক চাষ মাটি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও এটি চাষের দিকে ঝুঁকছেন তাঁরা। ফলে উপজেলায় দিন দিন তামাক চাষ বাড়ছে।

উপজেলার উজানচর, ছোটভাকলা, দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় দিনে দিনে ব্যাপক হারে তামাক চাষ বাড়ছে। এতে জমির উর্বরতাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন তামাক চাষে জমিতে অন্য ফসল চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও তামাক চাষ করছেন উপজেলার চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, উপজেলার পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন হেক্টর আবাদি জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে উজানচর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোর কৃষকেরাও তামাক চাষে ঝুঁকছেন। অর্থাৎ মাঠ পর্যায়ে তামাক চাষের পরিমাণ আরও বেশি রয়েছে। উপজেলার এসব ইউনিয়নগুলোতে টোব্যাকো কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে চাষিদের দিয়ে তামাক চাষ করিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয় তামাক চাষিরা জানান, জমিতে খাদ্যশস্য চাষ করে তাঁরা খুব বেশি লাভবান হতে পারেননি। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে বীজ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ মোট ব্যয় হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। যার একটা অংশ সহজ শর্তে ব্যয় করে টোব্যাকো কোম্পানিগুলো। দামও ভালো পাওয়া যায়, লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ কারণেই তাঁরা তামাক চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমুদ্দিপাড়ার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, তামাক চাষে প্রচুর পরিশ্রম ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে, তবুও বিষাক্ত তামাক চাষ করছেন। কারণ, তামাক চাষ ও বিক্রি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই এবং লোকসানেরও সম্ভাবনা নেই।

আরেক কৃষক হাসেম শেখ বলেন, টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর সার্বিক সহযোগিতায় দেড় বিঘা জমিতে তামাকের আবাদ করেছেন। এতে সব মিলিয়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তামাক বিক্রি করেছেন ৯৬ হাজার টাকার। এর মধ্যে টোব্যাকো কোম্পানি কেটে রেখেছে ১২ হাজার টাকা। তারপরও তাঁরা লাভবান হয়েছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই কৃষকেরা ধীরে ধীরে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

কৃষক বাবু খাঁ বলেন, গত বছর বিভিন্ন খাদ্যশস্য চাষাবাদ করে তাঁর প্রচুর লোকসান হয়। তিনি দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে যখন অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তা করছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে টোব্যাকো কোম্পানির লোকদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতায় পৌনে চার বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেন। সেই তামাক ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় বিক্রি করে টোব্যাকো কোম্পানির টাকাসহ সকলের দেনা শোধ করে এখন তাঁরা ভালো আছেন। আগে বিভিন্ন খাদ্যশস্য চাষাবাদ করলেও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা তো দুরে থাক, তাঁদের খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শাহ মো. শরীফ বলেন, তামাক ও তামাকজাত পণ্য শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তামাক থেকে জর্দা, গুল, বিড়ি, সিগারেটসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্য তৈরি হয়। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারের ফলে মুখে ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি হয়ে ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো ঝুঁকিও থাকে। এ ছাড়া যে এলাকায় তামাক চাষ হয়, তার আশপাশের মানুষেরও শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, তামাক চাষ ক্ষতিকর, এটা কম-বেশি সবাই জানেন। শুনেছেন, তামাকচাষিরা সিগারেট কোম্পানির সহযোগিতায় সাথি ফসলের সঙ্গে অধিক মুনাফার জন্য তামাক চাষ করছেন। ক্ষতিকর তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য তাঁরা মাঠপর্যায়ে নিয়মিত কাজ করছেন এবং কৃষকদের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন। যাতে তাঁরা তামাক চাষ বাদ দিয়ে খাদ্যশস্য চাষে ফিরে আসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত