Ajker Patrika

বিপাকে মধ্যবিত্ত মানুষও

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ১৩
Thumbnail image

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও বিপাকে রয়েছে। গতকাল শুক্রবার উপজেলার কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামগঞ্জ বাজারের এক রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আপনারা বাজারে গেলে বিক্রেতা বা সরকারকে কিছু বলতে পারেন, আমরা তাও পারি না। মুখ বুঝে সহ্য করি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ সরকারকে ইঙ্গিত করে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে। আমরা কাকে বলব! ওপরে থুতু ফেললে নিজের গায়েই পড়ে।’

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ সরকারকে অনেক কিছুই বলতে পারে। কিন্তু আমরা তা পারি না। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় আমরা সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি লোক। কিন্তু রড-সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেচাবিক্রিও নাই। করোনার দুই বছরে পথের ফকির হয়ে গেছি। এখন এক কেজি করলা কিনতে গিয়ে বেহুঁশ হই।’

গতকাল সকালে রামগঞ্জে কাঁচাবাজারে গেলে তিনিসহ আরও কিছু ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। এ সময় স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা মাসে কত টাকা বেতন পাই? পরিবারের সাত সদস্যের তিন বেলার খাবার কিনতে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা গুনতে হয়। কে শুনবে আমাদের কথা!’

কাপড় ব্যবসায়ী মো. ইমাম হোসেন স্বপন বলেন, ‘মানুষের ভেতরে হাহাকার চলছে। খেতে পারে না, জামাকাপড় কিনবে কী দিয়ে। দিনের পর দিন দোকানে এক টাকাও বিক্রি হয় না। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই কীভাবে চলছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। সে তুলনায় মানুষের রোজগার তো বাড়েনি। নিম্ন আয়ের মানুষ তাও হাত পাততে পারে, আমাদের পক্ষে তো তা সম্ভব না।’

সরেজমিনে রামগঞ্জ মাছ ও কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, করলা কেজি প্রতি ১২০, কুমড়া ৩৫, কচুর চড়া ৪০, ধনেপাতা ১০০, টমেটো ৪০, মুলা ৩০, বেগুন ৬০, ফুলকপি ৫০, তরি ৬০, গাজর ৪০, শসা ৬০, পাতা কপি ৫০, শিমের বিচি ১২০, লাল শাক ৫০, কাঁচা মরিচ ৮০, কলার হালি (ছোট) ৫০, লেবুর হালি (ছোট) ৬০ ও কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া হাড় ছাড়া গরুর গোশত ৭০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৫৫, কক মুরগি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা, ছোট রুই মাছ ২৭০ টাকা কেজি, পেঁয়াজের কেজি ৪৫, সয়াবিন তেলের লিটার ১৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তরকারি বিক্রেতা আরিফ হোসেন জানান, মহাজনের গদিতে বাজারের প্রতিটি দোকানদার লাখ লাখ টাকা দেনা। ১৫টি আড়তদার প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে টাকার জন্য। এক আড়ত মালিক পাবেন ৯৪ হাজার টাকা। তাঁকে দিয়েছেন ১ হাজার টাকা। প্রতিদিনই দেনার বোঝা বাড়ছে।

রামগঞ্জ কাঁচা বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সুমা ভাণ্ডারের পরিচালক রাশেদ কাজী বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কুমিল্লার নিমসার। সেখানে বাজারদরের ওঠানামা আমাদের এলাকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।’ তিনি আরও বলেন, গত তিন মাসে বেশ কয়েকবার টানা বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কারণে তরি-তরকারি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন রোপণ করা গাছে এখনো ফসল আসেনি। যে কারণে বাজার এখন থমকে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত