Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

শিল্পকলা একাডেমি যেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে

শিল্পকলা একাডেমি যেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে

দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেলেন নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদ। দায়িত্ব বুঝে নিয়ে গতকাল কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। শিল্পকলা একাডেমিকে সাংস্কৃতিক কর্মীবান্ধব করা, শিল্পী ও সাধারণ মানুষের নাগালে আনা, দুর্নীতি দূর করে নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম চালু করাসহ পুরো শিল্পকলা একাডেমিকে ঢেলে সাজানোর মতো বড় দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে। এসব নিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে কথা বলেছেন এম এস রানা।

মহাপরিচালক হিসেবে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন?
আমি বুঝতে শুরু করেছি, ভেতরের জটিলতাগুলো কোথায়। এদের অনেক ক্ষোভ আছে, সেই জায়গাগুলো পরিষ্কার হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, আস্থার একটা জায়গা তৈরি হচ্ছে বা হবে। আমিও পরিষ্কার বলেছি, আমরা ডিসিপ্লিন ওয়েতে কাজ করব। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ও ফিন্যান্সিয়াল—দুটো ক্ষেত্রেই ডিসিপ্লিনটা খুব জরুরি। আরও বুঝতে পারলাম, সেনাবাহিনীর একটা বড় দল ওখানে থাকে। রাষ্ট্রও চাইছে নিরাপত্তার প্রয়োজনে তারা যেন আপাতত এখানে থাকে। কাজেই তারা যত দিন আছে, হলগুলো খোলা সম্ভব হচ্ছে না। আরও বেশ কিছু সমস্যা আছে, সমস্যাগুলো জটিল; এটা বুঝতে পেরেছি আজ।

তার মানে, দ্রুতই হলগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না? 
এটা এখনই বলতে পারছি না কারও সঙ্গে কথা না বলে। আজ শিল্পকলার কর্মচারীদের সঙ্গেই মূলত কথা বলেছি। আরও পক্ষ আছে, সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। সেনাবাহিনী ওখানে আছে, এ বিষয়েও সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখানে সবকিছু যেন সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে, সেটাও দেখতে হবে। কাজেই দু-একটা দিন যাক, তারপর সব পরিষ্কারভাবে বলতে পারব। 

দীর্ঘদিন ধরে শিল্পকলার নানা বিষয় নিয়ে নাট্যকর্মী ও শিল্পীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। আপনার কী মনে হয়, কোন কোন বিষয়ে সংস্কারের প্রয়োজন আছে?
দুটো জায়গায়। একটা হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যাপারে স্বচ্ছতা, আরেকটা হলো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ জায়গায় স্বচ্ছতা। আজ যেটা বুঝলাম, অনেকের নিয়োগ আটকে আছে, অনেকের পদায়ন-পদোন্নতি আটকে আছে। এসবের একটা সুষ্ঠু সমাধানের প্রয়োজন আছে। 

শিল্পকলা একাডেমিকে নতুন করে কীভাবে ঢেলে সাজাবেন ভাবছেন?
ফিন্যান্সিয়াল এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্বচ্ছতা যদি আসে, তাহলে ভেতরের ক্ষোভ দূর হবে বলে মনে করি। তা হলে কর্মীরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। আর হলগুলো খুলে দিয়ে, যে কারণে শিল্পকলা একাডেমি তৈরি করা হয়েছে, সেসব কাজ যেন করা যায়, সেই চেষ্টাটা থাকবে। 

ঢেলে সাজাতে কিছু সময় লাগবে। তবু সবদিক বিবেচনা করে এক মাসের মধ্যেই পরিষদের একটি সভা করে আমরা পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব।

কোন বিষয়গুলো শুরুতে প্রাধান্য পাবে?
ফিন্যান্সিয়াল এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্বচ্ছতা। এ বিষয়ে আজকে আলোচনাও করেছি। আর যেটা চাইব, আমাদের এখানে একটা কাউন্সিল থাকার কথা, এই পরিষদ কিন্তু সবকিছু নির্ধারণ করে। এই পরিষদের এখন কার্যকরী কোনো ভূমিকা নেই। পরিষদ দ্রুত চালু করতে হবে। আমি যেটা করব, ডিরেক্টর জেনারেলের যেন ওই পরিষদের কাছে জবাবদিহি থাকে, সেটা নিশ্চিত করব। এই পরিষদ তিন মাসে অন্তত একবার বসবে। আরেকটা বিষয় আছে, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ একটি এক্সিকিউটিভ কমিটি হওয়ার কথা। পরিষদ থেকে সাতজন সদস্য নিয়ে এই কমিটি হওয়ার কথা এবং এই কমিটি প্রতি মাসে একটা সভা করে করণীয় নির্ধারণ করবে। এখন কিছু জটিলতা আছে; কারণ, এই পরিষদে আবার তিনজন এমপি থাকার কথা রয়েছে। এখন তো কোনো এমপি নেই। এই জায়গাগুলো তাই ঢেলে সাজাতে কিছু সময় লাগবে। তবু সবদিক বিবেচনা করে এক মাসের মধ্যেই পরিষদের একটি সভা করে আমরা পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব। 

এক যুগের বেশি সময় এই প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। সাবেক মহাপরিচালককে দুদকের মুখোমুখিও হতে হয়েছে। সেই সব ঘটনা নতুন কাজে কতটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? বাধা হলে কীভাবে সেটা মোকাবিলা করবেন?
এটা নিয়ে তো একটা নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। দেখেন নিয়ম আছে, আবার আইনও আছে। কিন্তু নিয়মের বাইরে যখন যাচ্ছেন, তখনই সেটা অনিয়ম, সেটা এক টাকার জন্য হোক কিংবা কোটি টাকার জন্য। আগে যা হয়েছে, তার একটি অডিট করা হবে। এরপর আমি যেটা করব, যেখানে যা নিয়ম আছে, সেই নিয়মের ভেতরেই সব কাজ করার চেষ্টা করব। এবং কাজে কোনো ধরনের ফাঁকি যেন না হয়, আমিসহ সবাই সেই চেষ্টাটা করব।

শিল্পকলার দুর্নীতি দমনে এবং ভবিষ্যতে যেন প্রতিটি কাজ নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়, সেই লক্ষ্যে আপনার করণীয় বা পরিকল্পনা কী? 
এটি তো ফিলোসফিক্যাল একটা প্রশ্ন। দেখুন, সবকিছুতেই একটা সিস্টেম বা স্ট্রাকচার থাকে। আমার মনে হয়, স্ট্রাকচারের সঙ্গে এজেন্সিও গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে, অনিয়ম ব্যক্তিও করতে পারে। কাজেই, আমার পরে যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজেদের ইচ্ছাপূরণে সেই স্ট্রাকচার ভাঙতে চায়, তাহলে তারা পথ খুঁজে বের করবেই। আল্লাহ মানুষকে বুদ্ধি দিয়েছেন, এখন সেই বুদ্ধিটা সে কোথায় প্রয়োগ করবে, সেটা নির্ভর করে তার ওপর। তাই আমার মনে হয় না, এ বিষয়ে কেউ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবে। তবে আমার চেষ্টা থাকবে। আপনাদের তরফ থেকেও কোনো পরামর্শ থাকলে দিতে পারেন। সবাই মিলে চেষ্টা করতে পারি। 

শিল্পকলা একাডেমিকে সাধারণ শিল্পী ও মানুষের নাগালে আনতে কী পদক্ষেপ নেবেন?
এটা বিশাল বড় প্রশ্ন। শুধু নাটকের ক্ষেত্রেই যদি দেখেন, ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এল, ওইখান থেকেই মনে হয়, আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা রাষ্ট্রের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করি। ধীরে ধীরে গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে দু-একজন ছাড়া আমাদের অবস্থান ছিল কোনো রকম ক্রিটিক উপস্থাপন না করা। আমি যখন ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ করেছিলাম, তখন আমার ওপর চড়াও হয়েছিল অনেকে। আমি নাকি ইতিহাস বিকৃত করছি। সবাই যখন নিজ নিজ ভূমিকা পরিষ্কার করবেন, বিশেষ করে শিল্পীরা—যে তাঁদের ভূমিকাটা কী, সিভিল সোসাইটির ভূমিকা রাষ্ট্রকে কতটা ক্রিটিক করবে, যেটা সত্তর-আশির দশকে ছিল, তারা বলেছে রাষ্ট্র কী করছে, কী বলছে, এগুলো ভুল, এগুলো ঠিক। এ রকম নানাবিধ ক্রিটিক কিন্তু তখন ছিল। মামুনুর রশীদ এক রকম চিন্তা করছেন, তিনি মার্ক্সবাদ নিয়ে বলছেন, আবদুল্লাহ আল-মামুনের নাটকে মধ্যবিত্ত জীবনের কথা আছে, ওদিকে নাটকের দল নাগরিক ইউরোপীয় নাটক নিয়ে করেছে রাষ্ট্রকে ক্রিটিসিজম। গত ১৫ বছরে এসব কিন্তু হারিয়ে গেছে। আমাদের এখানে শিল্পকলার কাজ করার জায়গাটা খুব কম, এখানে জায়গাটা বেশি সাংস্কৃতিক কর্মীর। আমরা বা শিল্পকলা যেটা করতে পারি, সেটা হচ্ছে সাপোর্ট এবং এই সাপোর্টটা হবে একেবারে জেলা বা গ্রাম পর্যায়ে। আমরা যদি উৎসব করতে পারি, যাঁরা গান করেন তাঁদের নিয়ে নানা আয়োজন করতে পারি। কবিগানের মতো অসাধারণ একটা বিষয় যদি ফিরিয়ে আনতে পারি; যেখানে ডিবেট হয়, নারী-পুরুষ, মুসলিম-হিন্দু—এ রকম নানা বিষয় নিয়ে। ধর্ম, রাষ্ট্র, জীবন—সব ধরনের কথা হোক পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে। এভাবে যদি শিকড় পর্যায়ে কাজ করা যায়, তখন আমার মনে হয় একটা সাংস্কৃতিক জাগরণ আসবে। আবারও বলছি, সব ধরনের মানুষ, সব ধরনের শিল্পী আসুক এসব জায়গায়। একটা কথা না বললেই নয়, সবাই চায়, আমাকে এটা দিতে হবে, ওটা দিতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, চাচ্ছেন তো; কিন্তু আপনি কী দেবেন, কিছু তো দিতে হবে, আপনাকে কিন্তু কোয়ালিটি এনশিওর করতে হবে, ভালো নাটক দিতে হবে। 

শিল্পচর্চাকে সারা দেশে আরও ছড়িয়ে দিতে কী করা যেতে পারে?
শিল্পকলার সাপোর্টটা জোরালো করা হবে। তবে কোয়ালিটি কনফার্ম করতে হবে। আমি বলব, যাঁরা গান করছেন, তাঁরা গ্রামে চলে যান। দেখুন, মানুষ আপনার গানের গ্রামটাকে বোঝে কি না, ওই জনপ্রিয়তাটা নিয়ে আসেন, হাততালিটা নিয়ে আসেন ওইখান থেকে। আবার গ্রামটাকেও নিয়ে আসতে পারেন শহরে। আমাদের পাহাড় আছে, নানা কমিউনিটি আছে, তাদের কাজ ঢাকায় নিয়ে আসুন, ঢাকার কাজ পাহাড়ে যাক। আমরা যেন বুঝি, পাহাড়ে সমস্যাটা কী। এই রকম নানা আদান-প্রদান ঘটুক আমাদের চিন্তায়।

শিল্পকলার নানা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে আছে বলে দাবি করছেন শিল্পীরা। কোনো কিছু নষ্ট হলে সেটা নানা নিয়মের ফাঁদে পড়ে চট করে সারানোও যায় না বলে অভিযোগ আছে। এতে নাট্যকর্মীদের কাজে অসুবিধা হয়। নিয়মের এই দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? 
চেষ্টা করব, যত দ্রুত সম্ভব এগুলো ঠিক করার। আমিও দেখেছি, যেমন লাইটগুলো নষ্ট পড়ে আছে। কেন? এগুলো কেন আসবে না? কার সুবিধা এতে? এগুলো অবশ্যই ঠিক করা হবে। তবে এগুলো যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদেরও একটা দায়বদ্ধতা আছে, এগুলো সঠিকভাবে যত্ন করে ব্যবহার করতে হবে। এগুলো বড় সমস্যা নয়, এটা সহজে সমাধান করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস। 

সাদাচোখে শিল্পকলায় আমরা নাট্য প্রদর্শনীটাই নিয়মিত দেখি। বাকি বিভাগগুলো অবহেলিত রয়ে গেছে। যদিও শিল্পকলা একাডেমিতে চলচ্চিত্র, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, প্রযোজনাসহ নানা বিষয়ে ছয়টি বিভাগ রয়েছে। অন্য বিভাগগুলোকে সক্রিয় করতে কী করা যেতে পারে? 
হ্যাঁ, এটা আমিও দেখেছি। এই বিভাগগুলোর সব কটি যেন চালু থাকে এবং উজ্জীবিত রাখা যায়, সে ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে আবার তাঁদের (শিল্পকলার কর্মী) কথা হচ্ছে, গত বছরগুলোতে শিল্পকলা বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানই করে গেছে, শিল্পকলা একাডেমি যেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। ধীরেসুস্থে এগুলো অবশ্যই ঠিক করতে হবে। 

মেইনস্ট্রিম চলচ্চিত্র, সংগীত বা ব্যান্ডের শিল্পীদের সঙ্গে শিল্পকলার নিয়মিত সম্পৃক্ততা চোখে পড়ে না। অন্যান্য বিভাগের কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা নেই বললেই চলে। এসব কীভাবে দূর করা সম্ভব?
দূর করা তো অবশ্যই সম্ভব। সময় দিন। ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই এসব নিয়ে আমরা কাজ করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত